আল্লাহর রাস্তায় দান করার ফজিলত

আল্লাহর রাস্তায় দান করার ফজিলত

আল্লাহর রাস্তায় দান করার ফজিলত

হযরত আদি ইবনে হাতিম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একথা বলতে শুনেছি, 'তোমাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তির হিসাব এমনভাবে গ্রহণ করা হবে যে, আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে ওকালতি ও ব্যাখ্যা করার মত কেউ থাকবে না।

সে নিজের ডান দিকে দেখলে নিজের আমল ছাড়া আর কিছু দেখতে পাবে না, আর বাম দিকে দেখলে সেদিকেও নিজের আমল ছাড়া আর কিছু পাবে না। আবার সে যখন সামনের দিকে দেখবে তখন জাহান্নামকে নিজের সামনে দেখতে পাবে।”

(এ যখন সত্য তখন তোমরা আগুন থেকে বাঁচার চিন্তা করো। যদি তোমার কাছে এক খেজুরের অদ্ধাংশও থাকে তবে তা দিয়েও আগুন থেকে বাঁচো।) (বোখারী)

  • ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের অর্থ হলো, কিয়ামতের দিন হিসাব কিতাবের সময় বান্দা একাকী আল্লাহর আদালতে হাজির হবে। সামনে পিছনে তার ওকালতি করার জন্যে কেউ থাকবে না। সে যেদিকেই দেখবে কেবল নিজের আমলই দেখতে পাবে এবং সামনে থাকবে জাহান্নাম। তাই যতদূর সম্ভব দান খয়রাত করুন, জাহান্নাম থেকে বাঁচতে এটা খুবই সাহায্যকারী প্রমাণিত হবে। সামান্য জিনিসকেও দান করতে লজ্জা করা উচিত নয় ৷

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'বান্দা বলে, এটা আমার সম্পদ, ওটা আমার সম্পদ। ' কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে তার জন্যে তার সম্পদে তিনটি অংশ আছে:

১. যা সে খেয়ে নিয়েছে। যদিও তা শেষ হয়ে গেছে।

২. যা সে পরে আছে। তাও লুপ্ত হয়ে যাবে।

৩. আর যা সে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছে। এটুকুই কেবল তার সম্পদ, যা আল্লাহর কাছে জমা আছে।

এ ছাড়া আর যা কিছু আছে তা তার নয়। তা সে নিজের উত্তরাধিকারদের জন্যে রেখে যাবে এবং নিজে খালি হাতে চলে যাবে।” (মুসলিম)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'কিয়ামতের দিন আল্লাহ নিজের দুই বান্দাকে তার সামনে হাজির করবেন, যাদের তিনি অঢেল সম্পদ ও সন্তান দান করছিলেন। তারপর একজনকে বলবেন, 'হে অমুকের পুত্র অমুক।'

তখন আল্লাহ তাকে বলবেন, 'আমি কি তোমাকে অনেক সম্পদ ও সন্তান দান করিনি?' সে বলবে, 'হ্যাঁ, হে আমার আল্লাহ, আপনি আমাকে অনেক সম্পদ ও সন্তান দান করেছিলেন।

আল্লাহতায়ালা তখন তাকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘আমার নেয়ামত পেয়ে তুমি কি কাজ করেছো?' সে বলবে, যাতে তারা দারিদ্র ও অসচ্ছলতার মধ্যে না পড়ে সে জন্যে আমি সমস্ত সম্পদ আমার সন্তানদের জন্যে রেখে এসেছি।'

তখন আল্লাহতায়ালা বলবেন, 'প্রকৃত অবস্থা যদি তুমি জানতে তাহলে তুমি কম হাসতে ও কাঁদতে বেশী। শোন, আপন সন্তানের ব্যাপারে তোমার যে জিনিসের আশংকা ছিল সে জিনিস তুমি তাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে এসেছো, অর্থাৎ দারিদ্রও অসচ্ছলতা।' তাঁর পর তিনি অন্যজনকে বলবেন, হে অমুকের পুত্র অমুক।' সে বলবে, “হে আমার আল্লাহ, আমি হাজির আছি, বলুন।' 

আল্লাহতায়ালা জিজ্ঞেস করবেন, 'আমি কি তোমাকে অনেক সম্পদ ও সন্তান দান করিনি?' সে বলবে, হ্যাঁ, হে আমার আল্লাহ, আপনি আমাকে অনেক সম্পদ ও সন্তান দান করেছিলেন। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, 'আমার নেয়ামত পেয়ে তুমি কি কাজ করেছো?'

সে বলবে, ‘হে আমার আল্লাহ, আমি আপনার দেয়া সম্পদ আপনার আনুগত্যের পথে খরচ করেছি এবং নিজের সন্তানদের ব্যাপারে আমি আপনার রহমতের উপর ভরসা করেছি।' তখন আল্লাহ বলবেন, 'তুমি যদি প্রকৃত অবস্থা জানতে তবে দুনিয়াতে তুমি হাসতে বেশী এবং কাঁদতে কম। 

শোন, আপন সন্তানদের ব্যাপারে তুমি যে কথার উপর আস্থা রেখেছিলে তাদেরকে সে জিনিসই দান করেছি (অর্থাৎ সচ্ছলতা ও অর্থ)। (তারগীব ও তারহীব, তাবরানী)

  • ব্যাখ্যা: এ হাদীস এ কথার উপর জোর দেয় যে যারা আপন সন্তান ও নিকট আত্মীয়দের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতকে উজ্জল করার জন্যে সম্পদ সঞ্চয় করে রাখে এবং আনুগত্য ও বন্দেগীর পথে খরচ করে না, তাদের সন্তান দারিদ্র ও অস্বচ্ছলতার শিকারে পরিণত হয়ে যেতে পারে। 
  • আর যারা আপন সম্পদ আল্লাহর বন্দেগীর পথে ব্যয় করে এবং আপন সন্তানের ভবিষ্যত আল্লাহর কুদরত ও রহমতের উপর ছেড়ে দেয় তাদের জীবন সচ্ছলতায় কাটানোর সম্ভাবনা খুব বেশী। প্রথমোক্ত ব্যক্তির পরিকল্পনা থেকে না তার সন্তানদের মঙ্গল হয়, আর না তার নিজের কোন উপকার হয়।

হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি মসজিদে নববীর মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, 'জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। যদি তোমার কাছে মাত্র অর্ধেক খেজুরও থাকে তবুও তা দিয়ে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। দান মানুষের বক্রতা দূর করে, খারাপ মরণ থেকে বাঁচায় এবং ক্ষুধার্থের পেট ভরিয়ে দেয়।” (তারগীব ও তারহীব

  • ব্যাখ্যাঃ এর অর্থ হলো, সদকা ও দান খয়রাত মানুষকে হক ও সত্যের উপর দৃঢ় থাকার শক্তি জোগায়। এর বদৌলতে তার ভালভাবে মৃত্যু হয় এবং তা আকস্মিক দুর্ঘটনা থেকে তাকে বাঁচায়। আর দানের ফলে ক্ষুধার্থের ক্ষুধা দূর হয়ে যায়। সুতরাং যদি কারো কাছে সামান্য জিনিসও থাকে তাহলেও তাতে কুণ্ঠিত না হয়ে সে যেন সেটুকু আল্লাহর রাস্তায় দিয়ে দেয়। কারণ আল্লাহ জিনিসের পরিমাণ দেখেন না, তিনি তো নিয়ত ও অনুভূতির প্রতি লক্ষ্য করেন।

দান করার ফজিলত

হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি এক খেজুরের দাম বা সে পরিমাণ কোন জিনিস সদকা হিসেবে দান করে আর তা হালাল উপার্জন থেকে (কারণ আল্লাহতায়ালা পাক পবিত্র জিনিস ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেন না), তাহলে 

আল্লাহতায়ালা তার সেই পবিত্র দান ও সদকাকে নিজের ডান হাত দিয়ে গ্রহণ করবেন এবং তারপর তা বৃদ্ধি করতে থাকবেন। যেমন তোমরা পশুর বাচ্চাকে লালন পালন করো ও বাড়াতে থাকো। এমন কি সেই সামান্য পবিত্র দান পাহাড় প্রমাণ হয়ে যাবে। ”

অন্য এক হাদীসে আছে, ‘কেউ এক গ্রাস জিনিসও দান করলে তা ওহুদ পাহাড়ের সমান হয়ে যাবে।' (বোখারী, মুসলিম, তিরমিযী)

  • ব্যাখ্যাঃ এর অর্থ, হালাল উপার্জন থেকে দেয়া দান সদকা, তা যতই কম হোক না কেন, বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমনকি পাহাড়ের মত উঁচু স্তূপে পরিণত হয়ে যায়। এবং এ স্তূপ পরিমাণ বস্তুর সাওয়াবই আল্লাহতায়ালা তাকে দান করবেন, যেন সে এক আনা দু'আনার সদকা দান করেনি বরং পাহাড় পরিমাণ বস্তু দান করেছে।

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'দানে সম্পদ কমে না। যখন কোন বান্দা কোন প্রার্থীকে দান করার জন্যে হাত বাড়িয়ে দেয় তখন প্রার্থীর হাতে দান পৌঁছানোর পূর্বেই আল্লাহর হাতে তা পৌঁছে যায়।” (তারগীব ও তারহীব, তাবরানী)

দান খয়রাত হাশরের ময়দানে ছায়া দেবে

হযরত ওকবা বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, 'কিয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশ শেষ হওয়া পর্যন্ত দানকারী নিজের দানের ছায়ায় থাকবে। কিয়ামতের দিন দান মানুষের জন্যে ছায়ার রূপ ধারণ করবে যা সেদিনের চরম গরম থেকে দানকারীকে রক্ষা

দান জাহান্নাম থেকে মানুষকে রক্ষা করবে

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাঁর বক্তৃতায় বিশেষভাবে মহিলাদেরকে উদ্দেশ্য

করে বললেন, 'হে মহিলাগণ; দান খয়রাতে তোমরা বিশেষভাবে যত্নবান হও। কেননা, কিয়ামতের দিন তোমরাই বেশীর ভাগ জাহান্নামে যাবে।

এ কথা শুনে একজন মহিলা উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, 'হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্য থেকেই কেন বেশী জাহান্নামে যাবে?'

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'এটা এ জন্য যে, 'এটা এ জন্য যে, তোমরা খুব বেশী গালাগালি করো আর মানুষকে অভিশাপ দাও এবং স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা দেখিয়ে থাকো। (মুসনাদে আহমদ)

  • ব্যাখ্যাঃ এর অর্থ হলো, পুরুষ অপেক্ষা তোমাদের মুখ বেশী চলে। অন্যকে দোষ দেয়া, সমালোচনা করা, দোষ খুঁজে বের করা, গীবত করা, অপবাদ দেয়া এসবই হলো তোমাদের কাজ। তোমরা স্বামীর প্রতিও অকৃতজ্ঞ হয়ে থাকো। সুতরাং যদি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে চাও তাহলে স্বামীকে অভিশাপ দিয়ো না এবং স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ো না।

এ হাদীসের তাৎপর্য হলো, দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ মহিলারাই বেশী জাহান্নামে যাবে। আল্লাহকে ভয়কারী, জিহ্বা সংবরণকারী এবং স্বামীর অনুগত মহিলারা জান্নাতে যাবে। এ ব্যাপারে পুরুষ ও মহিলার মধ্যে কোন প্রভেদ নেই। মহিলাদেরকে নিকৃষ্ট করে দেখানো এ হাদীসের লক্ষ্য নয়। বরং তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, যেন এ ধরনের খারাপ কাজের অভ্যাস কারো থাকলে সে নিজেকে সংশোধন করে নিতে পারে।

পোস্ট ট্যাগঃ

আল্লাহর রাস্তায় দান করার ফজিলত
আল্লাহর রাস্তায় দানের ফজিলত
আল্লাহর রাস্তায় দান
আল্লাহর রাস্তায় দান করার ঘটনা
আল্লাহর রাস্তার ফজিলত
আল্লাহর রাস্তায়
আল্লাহর পথে খরচ
আল্লাহর পথে দান করার ফজিলত

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url