ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত হাদিস

ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত হাদিস

ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত হাদিস

ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত হাদিস এই আরবী বাক্যটির বাংলা অর্থ হলোঃ সকল কাজকর্ম নিয়ত এর উপর নির্ভরশীল। হাদিসটি সহিহ বোখারী শরীফের প্রথম হাদিস। 

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন মানুষকে কেবলমাত্র তার নিজের নিয়তের উপরই উঠানো হবে।” (ইবনে মাজাহ শরীফ ও বুখারী শরীফ)

ইন্নামাল আমালু বিন নিয়ত

মানুষের জীবনের প্রত্যেকটি কাজ-কর্ম নিয়তের উপর নির্ভর করে। পৃথিবীর সকল মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী আখেরাতের দিনে তার কর্মের ফলাফল পাবে। তাই যে ব্যক্তির নিয়ত হবে দুনিয়া লাভের জন্য বা দুনিয়ার শান-সৌকত ভোগ করার লক্ষ্যে তাহলে সেই উদ্দেশ্যেই হবে তার কাজের ফলাফল।

ব্যাখ্যাঃ ইন্নামাল আমালু বিন নিয়ত- এর অর্থ হলো, আখেরাতে মানুষের বাহ্যিক দিক দেখা হবে না; বরং দেখা হবে সে যে নেক কাজ করেছে তা কোন নিয়তে করেছে। তার অন্তরের ইচ্ছা ও আকাংখা কি ছিল তার ভিত্তিতেই তার আমল কবুল হবে বা বাতিল করা হবে।

innamal a'malu binniyat in bangla

আমাদের সকল কাজই নির্ভর করে নিয়তের ওপর। আমরা যা মনে মনে নিয়ত করি সেটা কিন্তু আমরা নিজেরা জানি। তাই মুমিন বান্দার সকল প্রকারের কাজ হবে সৎ ও হালাল নিয়তের ওপর ভিত্তি করে। তাহলে মহান আল্লাহপাক আমাদের জান্নাতি বাসীদের কাতারে শামিল করবেন ইনশাআল্লাহ!

ইন্নামাল আমালু বিন নিয়ত এর ব্যাখা জানার পর নিচে আমরা জান্নাত লাভের কিছু বিষয়ে আলোচনা করবো আপনারা পুরো পোস্টটি ভালো করে পড়বেন তাহলে অনেক নেকী লাভ করবেন আশা করি।

ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত হাদিসটি কি?

হাদীসটি হলো নবিজী (সাঃ) বলেন; “কিয়ামতের দিন মানুষকে কেবলমাত্র তার নিজের কর্মের নিয়তের উপরই উঠানো হবে।” (বুখারী শরীফ)

পরকালে প্রতিদান লাভের ভিত্তি

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি (একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে জিহাদ ও যুদ্ধ সম্পর্কে বলুন (কোন্ জিহাদে সওয়াব পাওয়া যায় আর কোন্ অবস্থায় মুজাহিদ আপন আমলের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়?)' 

জওয়াবে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'হে আবদুল্লাহ, যদি তুমি আখেরাতে প্রতিদান পাওয়ার নিয়তে জিহাদ করে থাকো এবং শেষ পর্যন্ত তার ওপর অটল থেকে থাকো তবে আল্লাহর কাছ থেকে তুমি তোমার আমলের প্রতিফল পাবে এবং ধৈর্য ধারণকারীদের নামের তালিকায় তোমার নাম লেখা হবে। 

আর তুমি যদি লোক দেখানোর জন্যে বা গর্ব করার জন্যে যুদ্ধ করে থাকো তবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তোমাকে ঐ অবস্থায় উঠাবেন। হে আবদুল্লাহ, যে নিয়তে তুমি লড়াই করবে বা নিহত হবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তোমাকে ঐ অবস্থায় উঠাবেন।” (আবু দাউদ)

দুনিয়ার প্রতি লোভ আলেমদের পরিণতি

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা দ্বীনের ইলম দান করেছেন অথচ সে আল্লাহর বান্দাদেরকে ওই ইলম শিখাতে কৃপণতা করেছে, কিংবা যদি শিখিয়েও থাকে তো তার বিনিময়ে অর্থ নিয়েছে এবং সেই অর্থে দুনিয়া গড়ার কাজ করেছে, সে ব্যক্তিকে আগুনের লাগাম পরানো হবে। 

দ্বীন শেখানোর কাজে কৃপণতা করার ফল

এক ঘোষণাকারী ফেরেশতা ঘোষণা করবে, ‘এই হলো সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ দ্বীনের এলেম দান করেছিলেন, কিন্তু সে মানুষকে দ্বীন শেখানোর কাজে কৃপণতা করেছিল আর যাকে শিখিয়েছিল তার কাছ থেকে অর্থ নিয়েছিল এবং নিজের জন্য দুনিয়া গড়ার কাজ করেছিল।' সেই ফেরেশতা হাশরের হিসাব নিকাশ শেষ হওয়া পর্যন্ত লাগাতার এভাবে ঘোষণা করতে থাকবে।” (তারগীব ও তারহীব)

দুনিয়া লাভের জন্য দ্বীনি ইলম শিক্ষা করার পরিণতি

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'হে মানুষ! তোমাদের অবস্থা তখন কি হবে, যখন তোমাদের উপর এমন ফেতনা এসে পড়বে যার ফলে তোমাদের শিশুরা বয়স্ক হয়ে যাবে আর বয়স্করা বৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং ফেতনাকে সুন্নাত মনে করা হবে? যখন কোন লোক সেই ফেতনাকে দূর করার জন্যে উঠে দাঁড়াবে তখন মানুষ বলবে, 

এ লোক তো অপছন্দনীয় ও খারাব করছে!' এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, 'এমন অবস্থা উম্মতের উপর কখন দেখা দেবে?' উত্তরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'যখন তোমাদের মধ্যে প্রকৃত ঈমানদার লোক কমে যাবে এবং ক্ষমতালোভী লোক বেশী হয়ে যাবে। 

দ্বীনের প্রকৃত আলেম কমে যাবে

দ্বীনের প্রকৃত আলেম কমে যাবে এবং সাধারণ শিক্ষিত লোক বেশি হয়ে যাবে। (মানুষ) দুনিয়া লাভের জন্যে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করতে থাকবে। মানুষ ভাল কাজ করবে, তবে তার উদ্দেশ্য থাকবে দুনিয়া লাভ করা।” (তারগীব ও তারহীব)

ব্যাখ্যাঃ ফেতনার অর্থ হলো দ্বীনি সংকীর্ণতা ও অধঃপতনের এমন অবস্থা যার মধ্যে বংশের পর বংশ অতিক্রান্ত হয়ে যাবে এবং তা এতদূর পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছবে যে, ওই দ্বীনি অধঃপতন ও গোমরাহীকে লোক সঠিক বলে মনে করবে। আর যে সমস্ত মানুষ ওই গোমরাহীকে দূর করার জন্য চেষ্টা করবে লোকেরা তাদেরকে বেকুব বলবে। তারা বলবে, এ সব মানুষ যে আন্দোলন করছে তা হলো বাতিল এবং এদের এ সমস্ত প্রচেষ্টাই গায়ের ইসলামী (ইসলাম বহির্ভূত)।

তাদের নিয়ত থাকবে অপরিষ্কার

যে অবস্থার কথা উপরে বর্ণনা করা হয়েছে তা সেই সময় দেখা দেবে, যখন দ্বীনের ইলম শিক্ষাকারী আলেম ও ফকীহ্দের সংখ্যা থাকবে অনেক বেশী, কিন্তু তাদের নিয়ত থাকবে অপরিষ্কার। তারা হবে পেশাদার আলেম। দৃশ্যত তারা আখেরাতের জন্যই কাজ করতে থাকবে মনে হলেও তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকবে দুনিয়া লাভ করা। অর্থাৎ দুনিয়ার লোভ ও ক্ষমতার লালসা তাদের সব সৎ কাজকে ছেয়ে ফেলবে।

কুরআনের ইলম ও নিয়তের এখলাস

হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “এক দিন তিনি এমন এক ব্যক্তির কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন যিনি কুরআন পাঠ করছিলেন (এবং কুরআন পাঠ করে লোকদেরকে নসিহত করছিলেন)। তিনি তার বক্তব্য শেষ করে সবার কাছে কিছু অর্থ সাহায্য চাইলেন।

কুরআন পাঠ করে মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করবে

এ দৃশ্য দেখে ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘ইন্না লিল্লাহি' পাঠ করে বললেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে, তার কেবল আল্লাহর কাছেই চাওয়া উচিত। কারণ আমার উম্মতের মধ্যে এমন অনেক লোক জন্মগ্রহণ করবে, যারা কুরআন পাঠ করে মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করবে।”(তিরমিযী)

রিয়াকারীদের জঘন্য পরিণাম

হযরত আবুদল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, “তিনি বলেছেন, 'জাহান্নামে এমন একটি স্থান আছে যা থেকে স্বয়ং জাহান্নামই প্রতিদিন চার'শ বার পানাহ চায়। এ স্থানটি উম্মতে মুহাম্মদীর সেইসব রিয়াকারীদের জন্যে তৈরী করা হয়েছে, যারা আল্লাহর কিতাবের আলেম, দান-খয়রাতকারী, আল্লাহর ঘরের হাজী এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী।” (তারগীব ও তারহীব, ইবনে মাজা)

নামাজ পড়ার সঠিক পদ্ধতি

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি অন্য মানুষের সামনে ভালভাবে নামাজ পড়ে (খুব খুশু-খুজুর সাথে); আর যখন একাকী পড়ে তখন কোন রকমভাবে নামাজ শেষ করে ফেলে, সে মূলতঃ আপন রবকেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে এবং তাঁর সঙ্গে তামাশা করে।” (তারগীব ও তারহীব)

নিয়তে ইখলাসের ফজিলত

হযরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেনঃ “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'যে ব্যক্তি আখেরাতে প্রতিদান পাবার জন্য এবং সেই সাথে দুনিয়াতে প্রশংসা লাভ করার জন্য জিহাদ করে, সে কি সওয়াব পাবে?'

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'সে কিছুই পাবে না।' প্রশ্নকারী একে একে তিন বার এই প্রশ্ন করেন এবং প্রত্যেকবারই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'সে কোন প্রতিদান সওয়াব পাবার অধিকারী নয়।'

এরপর তিনি বললেন, 'আল্লাহ তো কেবলমাত্র সেই আমলই কবুল করবেন যা কেবল তাঁর জন্যেই করা হয়ে থাকে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনই থাকে সেই আমলের উদ্দেশ্য। (আবু দাউদ, ইবনে নাসাঈ)

রিয়া অর্থ একটি শিরক

ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “তিনি একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদে উপস্থিত হয়ে দেখতে পান, মুয়াজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু নবী করীমের কবরের পাশে বসে কাঁদছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, 'কাঁদছো কেন?' 

মুয়াজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু বললেন, 'আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে একটা কথা শুনেছিলাম, সেই কথাই আমাকে কাঁদাচ্ছে। তিনি বলেছিলেন, 'সামান্যতম রিয়াও শিরক'।” (মিশকাত শরীফ, সুনানে ইবনে মাজাহ)

মূর্তির সামনে সিজদা করা

ব্যাখ্যাঃ কেবলমাত্র মূর্তির সামনে সিজদা করা ও মূর্তিকে অর্থ দান করাই শিরক নয়; বরং অন্যকে সন্তুষ্ট করার জন্যে, অন্যকে দেখানোর জন্যে বা অন্যের চোখে নিজেকে পাক ও পরহেজগার প্রমাণ করার নিয়তে কেউ যদি অধিক থেকে অধিক বড় নেক আমলও করে, তাহলেও সে বাস্তবিক পক্ষে শিরক করে। এর কারণ হলো, সে আল্লাহর অধিকার আল্লাহ ছাড়া অন্যকে প্রদান করেছে।

আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার অধিকারী কে?

মদীনার এক ব্যক্তি থেকে বর্ণিত, “হযরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে এক পত্রে এই নিবেদন করেন যে, আপনি আমাকে সংক্ষিপ্ত ভাষায় এক বিস্তৃত উপদেশ লিখে পাঠান। এর উত্তরে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু নিম্নলিখিত পত্রখানি লিখে পাঠানঃ “আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।

মানুষের দ্বারা তাদের কোন ক্ষতি হয়না

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় এবং সে জন্যে অন্য কারোর অসন্তুষ্টির পরোয়া করে না, তাদের আল্লাহতায়ালা সম্পূর্ণরূপে সাহায্য করে থাকেন এবং মানুষের দ্বারা তাদের কোন ক্ষতি হতে দেন না। 

আর যারা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে মানুষের সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় তাদের ওপর থেকে আল্লাহ সাহায্যের 

হাত সরিয়ে নেন এবং তাদেরকে মানুষের হাতেই ছেড়ে দেন। (এর পরিণামে তারা আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়ে যায় এবং যাদের সন্তুষ্টির জন্যে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করেছিল তাদের সাহায্যও পায় না) আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।” (তারগীব ও তারহীব, তিরমিযী)

পরকালের কল্যাণের আশায় কাজ করা

যায়েদ বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেছেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, 'যে ব্যক্তি দুনিয়াকে নিজের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করবে আল্লাহ তার মনের স্বস্তি ও শান্তি ছিনিয়ে নেবেন। সে সর্বদা অর্থ সংগ্রহের লালসা ও প্রয়োজন পূরণের জন্য ব্যস্ত থাকবে।

কিন্তু দুনিয়ার ততটুকুই সে লাভ করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তার জন্য প্রথমেই নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। আর যে ব্যক্তির উদ্দেশ্য হবে আখেরাত, আল্লাহ তা'আলা তার মনে স্বস্তি ও শাস্তি দান করবেন। অর্থের লালসা থেকে তার অন্তরকে হেফাজত করবেন এবং দুনিয়ার যতটুকু অংশ তার জন্যে নির্দিষ্ট ছিল ততটুকু তিনি অবশ্যই লাভ করবেন।” (তারগীব ও তারহীব

নিয়তের বিশুদ্ধতা

আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “তাবুক অভিযান শেষে আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ফিরে আসছিলাম তখন তিনি বললেন, 'কিছু লোক আমাদের পিছনে মদীনায় অবস্থান করছে। কিন্তু তারা এই সফরে প্রকৃতপক্ষে আমাদের সঙ্গেই আছে। আমরা যা কিছু অতিক্রম করছি এবং যা কিছু পার হয়ে এসেছি তারা সর্বত্রই আমাদের সঙ্গে ছিল। প্রকৃত সমস্যার কারণেই তারা এ সফরে শামিল হতে পারেনি।” (বুখারী, আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস থেকে জানা গেল, কেউ নেক আমল করার নিয়ত করলে এবং সঙ্গত কারণ ও অসুবিধার জন্যে আমলটি করতে না পারলেও মহান আল্লাহপাক তাকে আখেরাতে সেই আমলের প্রতিদান থেকে বঞ্চিত করবেন না।

নিয়তের বিশুদ্ধতা এবং আল্লাহর পুরস্কার
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, “তিনি বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি এই নিয়ত করে শয়ন করে যে সে রাতে তাহাজ্জুদের জন্যে উঠবে কিন্তু গভীর ঘুমে ডুবে থাকার কারণে সে সকাল পর্যন্ত উঠতে পারেনি, তাহলেও তার আমল নামায় সেই রাতের তাহাজ্জুদ নামায লেখা হয়ে যাবে। আর এ নিদ্রা তার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে পুরস্কার হিসাবে বিবেচিত হবে।” (নাসাঈ, ইবনে মাজাহ শরীফ)

১০ বার সুরা ইখলাস পড়ার ফজিলত

যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস ১০ বার পাঠ করবে, আল্লাহ সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে এক মহল নির্মাণ করবেন। এ কথা শুনে ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) বললেন, তাহলে আমরা বেশি বেশি করে পড়বো হে আল্লাহর রাসূল! রাসুল (সঃ) বললেন, আল্লাহও বেশি দানশীল ও বেশি পবিত্র।’

ইখলাসের ফজিলত

হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেছেন, “যখন তিনি (নবীজী (সাঃ) আমাকে ইয়েমেনের উদ্দেশ্যে যেতে বললেন তখন আমি বললাম, 'হে রাসূলুল্লাহ, আমাকে কিছু নসিহত করুন।' তিনি বললেন, 'আপন নিয়তকে সব রকম সংমিশ্রণ থেকে পাক রাখবে। যে আমল করবে তা কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করবে, তাহলে সামান্য আমলই তোমার পরিত্রাণের জন্যে যথেষ্ট। (তারগীব ও তারহীব)

পরিশেষেঃ

ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত হাদিসটির ব্যাখ্যা সংক্ষিপ্তভাবে আজকের পোস্টে দেওয়া হয়েছে। আশা করি আমরা যে আমল বা কাজই করিনা কেন তার সঠিক নিয়ত অর্থাৎ আল্লাহপাককে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে করতে হবে। আল্লাহপাক আমারদের সকল কাজকর্ম কবুল ও মঞ্জুর করুন আমিন।

পোস্ট ট্যাগঃ

ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত
ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত আরবি
ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত অর্থ
ইন্নামাল আমালু বিন নিয়ত
ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত বাংলা
innamal a'malu binniyat full hadith
innamal a'malu binniyat in bangla
innamal a'malu binniyat
ইসলামে বৈধ বা হালাল খাবারগুলো কি কি? 
ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত হাদিস

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url