তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত ও নিয়ত

 

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত ও নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত, চার রাকাত, আট রাকাত, বার রাকাত যে যেমন পড়তে পারে। তবে চার রাকাত, বা বার রাকাত করে পড়া উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা কিরাত, সেজদা, রুকুতে দেরি করে পড়া উত্তম বলে ইসলামী শরিয়তে পাওয়া যায়।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

হে আল্লাহ আমি কিবলামুখী হয়ে তাহাজ্জুদের দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করছি আল্লাহু আকবার।

হযরত আবু উমামা আল বাহিনী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, “তিনি বলেছেন, 'তোমরা তাহাজ্জুদের নামাযকে নিজেদের উপর অপরিহার্য করে নাও। কারণ তোমাদের পূর্বে আল্লাহর যে সব নেক বান্দা অতীত হয়ে গেছেন এটা ছিল তাদের পদ্ধতি। এ নামায তোমাদেরকে তোমাদের প্রভুর নিকটবর্তী করবে, ছোটখাট গুনাহ দূর করে দেবে ও কঠিন পাপ থেকে রক্ষা করবে।” (তিরমিযী)

হযরত আমর বিন আনবাসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, 'আল্লাহপাক রাতের শেষ ভাগে আপন বান্দার সব থেকে নিকটবর্তী হয়ে থাকেন। সুতরাং যদি পারো রাতের শেষ ভাগে আল্লাহকে স্মরণকারীদের সঙ্গে শামিল হয়ে যাও।” (তিরমিযী)

  • ব্যাখ্যাঃ রাতের শেষ ভাগে মানুষ যখন আল্লাহর সামনে নামাযে দাঁড়ায় তখন সে সম্পূর্ণ হৃদয়-মনের প্রসন্নতা ও একাগ্রতা নিয়ে দাঁড়াতে পারে। আর এ মানসিক অবস্থায় যে নামায আদায় করা হয় স্পষ্টতঃ তা বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। অন্য হাদীস থেকে জানা যায় যে, রাতের শেষ দিকে বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত অধিক মাত্রায় এসে থাকে। সুতরাং আল্লাহকে নিজের কাছে পাবার জন্যে এবং নিজেকে আল্লাহর নিকটবর্তী করার জন্যে এ সময়টি সব থেকে উপযুক্ত।

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের শক্তির উৎস

হযরত সামুরা বিন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন, 'তাহাজ্জুদের নামায পড়ো, কম অথবা বেশী। আর তার শেষে বেতের পড়ো। (তারগীব, বাযযার ও তাবরানী)

  • ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, যদি রাতে উঠা কারো আয়ত্বের মধ্যে হয় তবে এশার পর যেন বেতের না পড়ে, বরং তাহাজ্জুদের নামায পড়ে তার পর যেন বেতের পড়ে, এটাই হলো উত্তম পন্থা।
  • হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, “তিনি বলেছেন, 'দিনে রোযা রাখার জন্যে সেহরীর সাহায্য নাও আর তাজ্জুদের নামায পড়ার জন্যে কায়দুলার (দুপুরে আহারের

  • ব্যাখ্যা: এর অর্থ হলো, সেহরী খান যাতে দিনের রোযা আরামের সঙ্গে কেটে যায় এবং ক্লান্তি ও দুর্বলতা না আসে। এমনিভাবে যারা রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে চান তারা দিনে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিন যাতে ঘুম পুরো হয়ে যায় এবং দিনের অন্যান্য কাজের উপর এর প্রভাব না পড়ে।

তাহাজ্জুদ পড়ার প্রতি উৎসাহ

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহ ওই ব্যক্তির প্রতি রহমত করুন যে রাতে ঘুম থেকে উঠে এবং নামায পড়ে আর নামায পড়ার জন্যে স্ত্রীকেও জাগায়। স্ত্রীর যদি ঘুমের ঘোর না কাটে তবে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।

আল্লাহ তায়ালা সেই স্ত্রীর প্রতি রহমত করুন যে রাতে ঘুম থেকে উঠে ও নামায পড়ে এবং স্বামীকেও তাহাজ্জুতের নামায পড়ার জন্য জাগিয়ে দেয়। যদি ঘুমের প্রভাবে স্বামী উঠতে না পারে তার মুখে পানি ছিটিয়ে জাগিয়ে দেয়।” (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

নফল নামায ঘরে পড়ার তাগিদ

হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “যখন তোমাদের কেউ মসজিদে নামায (ফরয) পড়া সম্পন্ন করে তখন সে যেন তার নামাযের এক অংশ (সুন্নত ও নফল) নিজের ঘরকেও দান করে। তাহলে আল্লাহ নামাযের জন্যে ঘরে মঙ্গল ও বরকত দান করবেন।” (মুসলিম)

নফল নামায দান খয়রাতের ফজিলত

হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহতায়ালা দ্বীনের মধ্যে সবার আগে যা ফরয করেছেন তা হল নামায, আর সবার শেষেও হলো নামায। কিয়ামতের দিন সবার আগে নামাযের হিসেব গ্রহণ করা হবে এবং আল্লাহ বলবেন, 'আমার এ বান্দার নামায দেখো।' যদি তা পূর্ণভাবে আদায় হয়ে থাকে তাহলে তা সম্পূর্ণ লেখা হবে।

আর যদি তার নামাযে কিছু অসম্পূর্ণতা থাকে তাহলে আল্লাহবলবেন, 'দেখো, আমার এ বান্দা কি কিছু নফল নামায পড়েছে? যদি ওর আমলনামায় নফল নামায থাকে তাহলে ফরয নামাযে যা অম্পূর্ণতা আছে তা এই নফল নামায দিয়ে পূরণ করে দেয়া হবে। তারপর যাকাতের হিসেব গ্রহণ করা হবে। 

তিনি ফেরেশতাদেরকে বলবেন, 'দেখ ওর যাকাত পুরো দেয়া আছে কি না? যদি সে যাকাত পুরোপুরি আদায় করে থাকে তবে ভাল কথা। আর যদি এ ব্যাপারে কিছু ত্রুটি থেকে থাকে তবে তিনি ফেরেশতাদেরকে বলবেন, 'দেখো, ওর আমলনামায় কিছু নফল সদকা আছে কি?' যদি কিছু নফল সদকা থাকে তবে ওর যাকাত দিতে যে দোষত্রুটি হয়েছে তা ক্ষমা করে দেয়া হবে।” (তারগীব, মুসনাদ)

  • ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস থেকে জানা গেল, আমাদের দ্বীনের প্রারম্ভ ও সমাপ্তি হলো নামায। কিয়ামতের দিন সবার আগে নামাযের হিসাব গ্রহণ করা হবে। আরো জানা গেল, ফরয নামাযের যা অসম্পূর্ণতা আছে তা নফল নামাযের দ্বারা পূরণ করা হবে। 
  • তাই ফরয নামাযের সঙ্গে সঙ্গে নফল নামাযের দিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। কেননা মানুষ প্রকৃতিগত দিক দিয়ে দুর্বল। সে যত ভাল ভাবেই নামায পড়ুক না কেন কিছু না কিছু অসম্পূর্ণতা থেকেই যাবে। এখন যদি তার আমলনামায় নফল নামায না থাকে ফরযের সম্পূর্ণতা কি দিয়ে পূরণ করা হবে।

এ হাদীস থেকে এও জানা গেল, নামাযের পর যাকাতের হিসাব দেখা হবে। যদি কিছু নফল দান সদকা না থাকে তাহলে ফরয আদায়ে যে ত্রুটি হবে এবং যে অসম্পূর্ণতা থেকে যাবে তা মাফ হবে কি দিয়ে?

সংক্ষেপে বলা যায়, সর্ব প্রথম আমাদের ফরয ইবাদতের হিসাব দিতে হবে। যদি এ ফরযের সঙ্গে কিছু নফল না থাকে তবে হিসাবের সময় বিপদ থেকে বাঁচার কোন উপায় থাকবে না। অর্থাৎ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত প্রভৃতি সমস্ত ফরজ ইবাদতের সঙ্গে সঙ্গে নফল ইবাদতও পরিত্রাণের জন্য জরুরী।

আতিশয্য না করা এবং নফল তাহাজ্জুদ- এর উপর জোর

হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, “তিনি বলেছেন, 'এ দ্বীন (ইসলাম) সহজ। দ্বীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার চেষ্টা করা হলে প্রতিযোগী পরাস্ত হবে। সুতরাং তোমরা সোজা রাস্তায় চলো এবং আতিশয্য ও বাড়াবাড়ি করা থেকে বিরত থাকো। তোমরা আল্লাহর রহমত ও পরিত্রাণ থেকে হতাশ হয়ো না; বরং সন্তুষ্ট থাকো। আর সকাল ও সন্ধ্যায় এবং রাতের কিছু সময় ভ্রমণের জন্য বরাদ্দ করো।” (বোখারী)

  • ব্যাখ্যাঃ দ্বীন সহজ- এ কথার অর্থ, এর আহকাম ও নিয়ম কানুনগুলো সহজ। প্রত্যেক ব্যক্তি সহজভাবে যেন এ দ্বীনের উপর চলতে পারে সেভাবেই এর নিয়ম পদ্ধতি দেয়া হয়েছে। দ্বীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার অর্থ হলো, দ্বীন যেসব সহজ বিধান দান করেছে তাতে সীমিত না থেকে আতিশয্য বাড়াবাড়ি করে নিজের উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে নেওয়া। 
  • যে এ ধরনের বাড়াবাড়ি করবে শেষ পর্যন্ত সে ক্লান্ত হয়ে নিজের উপর স্বেচ্ছা আরোপিত বাধা-নিষেধ মানতে গিয়ে বেকায়দার পড়বে। সুতরাং এ ধরনের বাড়াবাড়ি থেকে বাঁচার জন্যে বলা হয়েছে, সোজা রাস্তায় চলা এবং দ্বীনের সহজ বিধি-বিধান অনুসরণ করো। এই সহজ আমলই বান্দার পরিত্রাণের জন্য যথেষ্ট। আর শেষ বাক্যের বক্তব্য কিছুটা প্রতীকি তাৎপর্যমণ্ডিত। 
  • এখানে যে কথা বলা হয়েছে তার অর্থ হলো, সকাল ও সন্ধ্যায় এবং রাতের কিছু সময় নফল নামায পড়ো। কথাটির বিশেষ ভঙ্গি এ তাৎপর্য বুঝানোর জন্যেই বলা হয়েছে যে, মোমিন যখন পৃথিবীতে থাকে তখন সে আখেরাতের পথের মুসাফির। কিন্তু গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্যে দিন-রাত সে চলতে থাকুক অর্থাৎ দিন-রাত ইবাদতে মশগুল থাকুক এমনটি জরুরী নয়। 
  • সকালে কিছু চলুক, সন্ধ্যায় কিছু চলুক এবং রাতের শেষ ভাগে কিছু চলুক - তাহলে ইনশাআল্লাহ সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাবে। কিন্তু যদি কেউ দিন-রাত একাকার করে দেয়, লাগাতার চলতে থাকে, তবে সম্ভাবনাই বেশী থাকে যে, সে ক্লান্ত হয়ে পড়বে এবং গন্তব্যস্থল পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। এ হেদায়াতের বাস্তব রূপ হলো এশরাক ও চাশতের নামায এবং মাগরিবের পরে নফল নামায, যার নমুনা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন উম্মতের জন্য রেখে গেছেন।

পোস্ট ট্যাগঃ

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত ও নিয়ত
তাহাজ্জুদের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত ও কি কি
তাহাজ্জুদ এর নামাজ কত রাকাত
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত কিভাবে পড়তে হয়
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত করে পড়তে হয়
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত পড়তে হয়
নামাজ তাহাজ্জুদ
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url