জান্নাতের বর্ণনা

জান্নাতের বর্ণনা

জান্নাতের বর্ণনা

জান্নাতের বর্ণনা বলে শেষ করার মত নয়। মহান আল্লাহপাক আমাদের মৃত্যুর পর জান্নাত ও জাহন্নাম নামক দুটি জায়গা তৈরি করে রেখেছেন। যারা জান্নাত লাভ করবে তাদের সুখের শেষ নেই। আজকের পোস্টের মাধ্যমে আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে জান্নাতের নাজ নিয়ামতের কথা কুরআন ও হাদীসের আলোকে জানতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

জান্নাতের স্তর কয়টি ও কি কি

জান্নাতের উন্নত স্থানসমূহ জান্নাতীদের স্তর অনুযায়ী উঁচু নীচু হয়:

অর্থ: “কিন্তু যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, তাদের জন্য নির্মিত রয়েছে প্রাসাদের উপর প্রাসাদ, এগুলোর তলদেশে নদী প্রবাহিত। আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আল্লাহ প্রতিশ্রুতি খেলাফ করেন না।” (সূরা যুমার: ২০)

মাসআলা-৯৮: জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানজনক স্তর “ওসীলা” যার রওনাক বখস হবেন আমাদের প্রিয় নবী:

মাসআলা-৯৯: জান্নাতে শত স্তর আর প্রত্যেক স্তরের মাঝে এত দূরত্ব যেমন আকাশ ও যমীনের মাঝে দূরত্ব:

জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর জান্নাতুল ফেরদৌস

মাসআলা- ১০০: জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরের নাম “জান্নাতুল ফেরদৌস”। যা থেকে জান্নাতের চারটি ঝর্ণা প্রবাহিত।

মাসআলা-১০১: প্রত্যেক মু'মিনের উচিত জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর জান্নাতুল ফেরদৌস পাওয়ার জন্য দু'আ করা।

আরশ অর্থ কি

আরশ অর্থ কি হলো সিংহাসন। অর্থাৎ জান্নাতুল ফেরদৌসের উপরে আল্লাহর আরশ অবস্থিত হয়ে আছে।

জান্নাতুল ফেরদৌসের উপরে আল্লাহর আরশ

আর সেখান থেকেই জান্নাতের চারটি ঝর্ণা প্রবাহমান। এর উপরে রয়েছে আরশ। তোমরা আল্লাহর নিকট জান্নাতের জন্য দুআ করলে জান্নাতুল ফেরদৌসের জন্য দুআ করবে। (তিরমিযী ৪/২৫৩১)

মাসআলা-১০৩: জান্নাতের নিচের স্তরে অবস্থানকারীরা উপরের স্তরের জান্নাতীদেরকে দেখে মনে করবে এ যেন দূরবর্তী কোনো নক্ষত্ৰ:

জান্নাতী লোকেরা

অর্থ: “আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন: জান্নাতী লোকেরা তাদের উপরস্ত জান্নাতীদেরকে দেখে মনে করবে যে দূরবর্তী আকাশের পূর্ব বা পশ্চিম প্রান্তের কোনো তারকা চমকাচ্ছে।

আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা কেন গুরুত্বপূর্ণ

এত দূরত্ব হবে জান্নাতীদের পরস্পরের স্তরের পার্থক্যের কারণে। সাহাবাগণ বললো হে আল্লাহর রাসূল! ঐ উচ্চস্তরে নবীগণ ব্যতীত আর কেউ পৌঁছতে পারবে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন: কেন নয়, ঐ সত্ত্বার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, তারা সমস্ত লোক হবে, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তার রাসূলকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে। (বুখারী ৪/৩২৫৬)

জান্নাতের স্তর কয়টি

মাসআলা-১০৪: জান্নাতে শতস্তর রয়েছে, আর প্রত্যেক স্তরের মাঝে রয়েছে শতবছরের রাস্তার দূরত্ব:

অর্থ: “আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন: জান্নাতে শতস্তর রয়েছে। আর প্রত্যেক স্তরের মাঝে দূরত্ব হলো শত বছরের (তিরমিযী ৪/২৫২৯)

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে

মাসআলা-১০৫: আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে একে অপরকে মহাব্বত কারীর ঘর (জান্নাতে) পূর্ব প্রান্তে বা পশ্চিম প্রান্তে উদিত উজ্জ্বল তারকার ন্যায় মনে হবে: উদিত কোনো তারকা। লোকেরা জিজ্ঞেস করবে ইনি কে? তাদেরকে বলা হবে এরা হলো: আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে একে অপরকে মহাব্বত কারী।” (আহমদ ১১৮২৯)

'আবওয়াবুল জান্না, বাব মাযায়া ফী সিফাত দারাজাতিল জান্না (২/২০৫৪) ২৭ কিতাবু আহলিল জান্না, বাব মানাযিলুল মোতাহাব্বিনা ফীল্লাহি তাআলা।

জান্নাতের বাগানের নাম

মাসআলা-১০৬: জান্নাতের বাগানের নাম “সাবেকীন”-দের জন্য স্বর্ণের দু'টি করে বাগান আর আসহাবুল ইয়ামিনদের জন্য রূপার দু'টি করে বাগান:

অর্থ: আবুবকর বিন আবু মূসা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন: জান্নাতে ‘সাবেকীনদের' জন্য দু'টি স্বর্ণের বাগান এবং ‘আসহাবুল ইয়ামিনদের' জন্য দু'টি করে রূপার বাগান থাকবে” (বাইহাকী ৪/১৪১৫)

নোট: সাবেকীন বলা হয় সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারীগণকে। আর আসহাবুল ইয়ামিন বলা হয় সমস্ত নেককার লোকদেরকে। সাবেকীনগণ আসহাবুল ইয়ামিন থেকে উত্তম। (এ ব্যাপারে আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত)

জান্নাতের অট্টালিকাসমূহ

মাসআলা-১০৭: জান্নাতের অট্টালিকাসমূহ সর্বপ্রকার ছোট বড় নাপাকী এবং ময়লা-আবর্জনা থেকে পাক-পবিত্র থাকবে:

অর্থ: আল্লাহ মু'মিন পুরুষ ও মু'মিন নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, তাতে তারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে পবিত্র বাসস্থানসমূহের। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই মহাসফলতা। (সূরা তওবা ৭২)

মাসআলা-১০৮: জান্নাতের অট্টালিকাসমূহে সমস্ত প্লেটসমূহ হবে সোনা-চাঁদির:

মাসআলা-১০৯: জান্নাতীদের অট্টালিকাসমূহে সর্বদা চন্দন কাঠ জ্বলতে থাকবে, যার ফলে তাদের অট্টালিকাসমূহ সুঘ্রাণযুক্ত হবে:

জান্নাতীদের ঘাম থেকে মেশক আম্বরের ঘ্রাণ আসবে

মাসআলা-১১১ জান্নাতে থুথু, নাকের পানি, পায়খানা পেসাব হবে না:

আসআলা-১১২: সমস্ত জান্নাতী শোকরগুজার হবে কেউ কারো প্রতি কোনো হিংসা-বিদ্বেষ রাখবে না:

মাসআলা-১১৩: জান্নাতীরা প্রত্যেক শ্বাস-প্রশ্বাসে আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ পাঠ করবে:

অর্থ: “আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন: জান্নাতে সর্বপ্রথম প্রবেশকারী দলটির চেহারা হবে ১৪ তারিখের চাঁদের মতো উজ্জল। তাদের থুথু আসবে না আর না আসবে নাকের পানি। তাদের আংটি থেকে চন্দনের সুগন্ধি আসবে।

জান্নাতীদের ঘাম থেকে মেশক আম্বরের সুগন্ধি

জান্নাতীদের ঘাম থেকে মেশক আম্বরের সুগন্ধি আসবে। প্রত্যেক জান্নাতীর এমন দু'জন স্ত্রী থাকবে যাদের সৌন্দর্যের কারণে তাদের পায়ের গোছার গোশতের ভিতর দিয়ে হাড্ডির মজ্জা দেখা যাবে । জান্নাতীদের পরস্পরের মাঝে কোনো মতভেদ থাকবে না। না তাদের মাঝে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে। বরং তারা সমমনা হয়ে সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করবে।” (বুখারী ৪/৩২৪৫)

জান্নাতে মৃত্যু হবে না

মাসআলা-১১৪: জান্নাতের অট্টালিকাসমূহ সোনা-চাঁদির ইট দিয়ে নির্মিত হবে

মাসআলা-১১৫: জান্নাতের কঙ্করসমূহ হবে মোতি ও ইয়াকুতের, আর মাটি হবে জাফরানেরঃ

মাসআলা-১১৬: মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবন জান্নাতে মৃত্যু হবে না, জান্নাতী চিরকাল জিবিত থাকবে:

জান্নাতী চিরকাল যুবক থাকবে

জান্নাতে বার্ধক্যও আসবে না বরং জান্নাতী চিরকাল যুবক থাকবে:

অর্থ: “আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাসূলুল্লাহ সাঃ সৃষ্টিকে কি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন: পানি দিয়ে। আমি জিজ্ঞেস করলাম: জান্নাত কি দিয়ে নির্মিত? তিনি বললেন: একটি ইট চাঁদির এবং আরেকটি ইট স্বর্ণের।

জান্নাতীদের কাপড় কখনো পুরানো হবে না
জান্নাতি পোশাক এর রং কি

তার সিমেন্ট সুগন্ধি যুক্ত মেশক আম্বর। তার কঙ্কর মোতি ও ইয়াকুতের। তার মাটি জাফরানের। যে ব্যক্তি সেখানে প্রবেশ করবে সে জীবন যাপন করবে, কোনো কষ্ট তার দৃষ্টিগোচর হবে না। চিরকাল জিবিত থাকবে মৃত্যু হবে না। জান্নাতীদের কাপড় কখনো পুরানো হবে না। আর তাদের যৌবন কখনো বিনষ্ট হবে না। (তিরমিযী)

জান্নাতুল আদন আল্লাহ স্বীয় হাতে নির্মাণ করেন

জান্নাতুল আদন আল্লাহ স্বীয় হাতে নির্মাণ করেছেন:

জান্নাতুল আদনের অট্টালিকাসমূহ এক ইট হবে সাদা মোতির আরেক ইট হবে কাল মোতির, এক ইট হবে লাল ইয়াকুতের আরেক ইট হবে সবুজ পান্নার। তার মাটি হবে মেশকের, তার কনকর হবে মুক্তার, তার ঘাস হবে জাফরানের:

অর্থ: “আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাঃ আলাইহি বলেছেন: জান্নাতুল আদন আল্লাহ স্বীয় হস্তে নির্মাণ করেছেন। যার একটি ইট সাদা মোতি, আরেকটি লাল ইয়াকুতের, আর অপরটি সবুজ পান্নার। তার মাটি মেশকের তার কঙ্করসমূহ মুক্তার, আর ঘাসসমূহ জাফরানের।

জান্নাত বলল ঈমানদার লোকেরা মুক্তি পেয়েছে

জান্নাত নির্মাণের পর, আল্লাহ জান্নাতকে জিজ্ঞেস করলেন কিছু বল: জান্নাত বলল ঈমানদার লোকেরা মুক্তি পেয়েছে। অতঃপর আল্লাহ এরশাদ করেন: আমার ইজ্জত ও মর্যাদার কসম! কোনো বখীল তোমার মাঝে প্রবেশ করবে না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাঃ এ আয়াত পাঠ করলেন: যে ব্যক্তি কার্পণ্য থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করেছে তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর: ৯)

নোট: উল্লেখিত হাদীসে বখীল অর্থ যারা যাকাত প্রদান করে না।

জান্নাতের অধিবাসী কারা ও অট্টালিকায় স্বর্ণের বাগান থাকবে

মাসআলা-১২০: জান্নাতের কোনো কোনো অট্টালিকায় স্বর্ণের বাগান থাকবে, যার প্রত্যেকটি জিনিস স্বর্ণের হবে। আবার কোনো কোনো অট্টালিকায় চাদির বাগান থাকবে যার প্রত্যেকটি জিনিস চাঁদির হবে:

জান্নাতুল আদনে আল্লাহকে দেখা

অর্থ: “আবদুল্লাহ বিন কায়েস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন: দু'টি বাগান হবে চাঁদির, যার পাত্র এবং সবকিছুই হবে চাঁদির। দু'টি বাগান হবে স্বর্ণের, যার পাত্র এবং সবকিছুই হবে স্বর্ণের। মানুষের জন্য জান্নাতে আদনে আল্লাহকে দেখার ব্যাপারে কোনো বাধা থাকবে না তবে একমাত্র তাঁর মহানুভবতার চাদর, যা তাঁর চেহারার উপর থাকবে।” (মুসলিম ১/১৮০)‍

জান্নাতের অট্টালিকা সাদা মোতির নির্মিত

মাসআলা-১২১: জান্নাতের অট্টালিকাসমূহে সাদা মোতির নির্মিত, বড় বড় সুন্দর গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে:

অর্থ: “আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে মেরাজের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন: অতঃপর আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হলো, যাতে সাদা মোতির নির্মিত গম্বুজ আছে, আর তার মাটি হলো মেশক আম্বরের।” (মুসলিম)

পোস্ট ট্যাগঃ

জান্নাতের বর্ণনা
জান্নাতের বর্ণনা pdf
জান্নাতের বর্ণনা বই
জান্নাতের বর্ণনা মিজানুর রহমান আজহারী
জান্নাতের বর্ণনা মিজানুর রহমান
জান্নাতের হুরের বর্ণনা pdf
জান্নাতের হুরের বর্ণনা
জান্নাতের বাংলা বর্ণনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url