জানাজার নামাজের নিয়ম হানাফি

জুমার নামাজ ও জানাজার নামাজের নিয়ম ও দোয়া- Rules for jumar namaz and janajar namaz

জানাজার নামাজের নিয়ম হানাফি

আমাদের সকলকেই মরতে হবে। একজন মুসলমান ইন্তেকাল করলে ইসলাম কর্তৃক নির্ধারিত সহজ সরল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে কবর দেয়া হয়। প্রথমে তাকে গোসল দেয়া হয় ও কাফন পরানো হয়, এরপর জামাতে সালাতুল জানাযাহ (মৃতের সৎকারের নামাজ) আদায় করা হয়। জানাজার নামাজের নিয়ম ও দোয়া অন্যান্য নামাজ থেকে আলাদা। এতে রুকু ও সিজদাহ করতে হয় না এবং তাশাহ্হুদ পড়তে হয় না।

জানাজার নামাজের (janajar namaz) নিয়ম হচ্ছে ফরযে কিফায়া অর্থাৎ মুসলমানদের ওপর সমষ্টিগত ফরয যা সমষ্টির পক্ষ থেকে কিছু লোক আদায় করলেই আদায় হয়ে যায়। কিন্তু কেউই যদি তা আদায় না করে তাহলে সংশ্লিষ্ট মহল্লা বা জনপদের সকলেই আল্লাহর নিকট গুনাগার হবে।

জানাজার নামাজের নিয়ম হানাফি মতে নীচে উল্লেখ করা হল:

  • ১। এই মর্মে নিয়্যত করুন যে, আপনি মৃত ব্যক্তির জন্যে আল্লাহর নিকট দোয়ার উদ্দেশ্যে সালাতুল জানাযাহ আদায় করবেন জানাজার নামাজের নিয়ম হানাফি মাযহাব মতে।
  • ২। কিবলাহ্ মুখী হয়ে নামাজের কাতারে দাঁড়ান। উল্লেখ্য, জানাযাহর কফিন একটি মুর্দা-খাটের ওপরে সালাতুল জানাযাহর জামাতের সামনে রাখা হয়।
  • ৩। ইমাম সাহেব শব্দ করে 'আল্লাহু আকবার' বলার পর সাথে সাথে সকলের সাথে ‘আল্লাহু আকবার' বলুন ও দুই হাত কান পর্যন্ত উঁচু করুন। (মনে রাখবেন, একে তাক্বীরাতুল ইহরাম বলা হয়। এরপর আরো তিনটি তাকবীর বলতে হবে)। হাত নামিয়ে এনে নাভীর নীচে বা বুকের উপর বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখতে হবে। এরপর নীচের দু'আটি পড়ুন:
  • সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা'আলা জাদ্দুকা ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুক।
  • “হে আল্লাহ্! তোমারই পবিত্রতা ও তোমারই প্রশংসা, আর তোমার নাম বরকতময়, তোমার মহিমা সুমহান, তোমার প্রশংসা সমুদ্ভাসিত এবং আপনি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই।” (কোন কোন মতের অনুসারী মুসলমানরা এ দোয়ার পরিবর্তে সুরাতুল ফাতিহাহ্ পড়ে)।
  • ৪। এরপর ইমাম সাহেব শব্দ করে ‘আল্লাহু আকবার' বলবেন। তখন আপনাকেও চুপে চুপে এই তাকবীর বলতে হবে। (এ সময় কান পর্যন্ত হাত তোলার প্রয়োজন নেই) এরপর দরুদ পড়ুন।
  • ৫। এরপর ইমাম সাহেব শব্দ করে তাকবীর বলবেন এবং সালাতুল জানাযায় অংশগ্রহণকারী অন্য সকলে চুপে চুপে তাকবীর বলবে।

অতঃপর মৃতব্যক্তি বালেগ পুরুষ লোক হলে চুপে চুপে নীচের দু'আটি পড়তে হবে:

আল্লাহুম্মাগফির লিহাইয়িনা ওয়া মাইয়িতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া ছাগিরিনা ও কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উন্‌ছানা। আল্লাহুম্মা মান আহ্ইয়াইতাহু মিন্‌না ফাআয়িহি ‘আলাল ইসলাম। ওয়া মান্ তাওয়াফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ্‌ফাহু আলাল ঈমান

“হে আল্লাহ্! আমাদের জীবিতদের ও মৃতদের, আমাদের উপস্থিতদের ও অনুপস্থিতদের, আমাদের ছোটদের ও বড়দের এবং আমাদের পুরুষদের ও নারীদের ক্ষমা কর। হে আল্লাহ্! আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাকে বাঁচিয়ে রাখবে তাকে ইসলামের ওপর বাঁচিয়ে রাখ, আর আমাদের মধ্যে যাকে মৃত্যু দেবে তাকে ঈমানের ওপর মৃত্যু দাও।” (তিরমিযি ও আবু দাউদ)

জানাজার নামাজের তৃতীয় দোয়া

মৃত ব্যক্তি বালেগা স্ত্রীলোক হলে উক্ত দোয়ার দ্বিতীয় বাক্যটি এভাবে পড়তে হবে:

আল্লাহুম্মা মান্ আহ্ইয়াইতাহা মিন্না ফাআয়িহা ‘আলাল্ ইস্‌লাম। ওয়া মান্ তাওয়াফাইতাহা মিন্না ফাতাওয়াফ্ফাহা 'আলাল ঈমান।

“হে আল্লাহ্! আপনি আমাদের মধ্য থেকে যে নারীকে বাঁচিয়ে রাখবে তাকে ইসলামের ওপর বাঁচিয়ে রাখ, আর আমাদের মধ্য থেকে যে নারীকে মৃত্যু দেবে তাকে ঈমানের ওপর মৃত্যু দাও।”

মৃত ব্যক্তি নাবালেগ ছেলে হলে পড়তে হবে

আল্লাহুম্মাজ্‌ 'আল্‌হু লানা ফারাতাওঁ ওয়াজআল্হু লানা আজরাওঁ ওয়া যুথরাওঁ ওয়াজ 'আলহু লানা শাফি‘আওঁ ওয়া মুশাফা'আ।

“হে আল্লাহ্! তাকে আমাদের জন্য অগ্রবর্তী বানিয়ে দাও। তাকে আমাদের জন্য পুরস্কার ও সঞ্চয় স্বরূপ কর। তাকে আমাদের জন্য শাফা'আতকারী বানাও এবং তাকে এ মর্যাদা দাও যে, তার শাফা'আত যেন কবুল হয়।”

জানাজার নামাজের তৃতীয় দোয়া
মৃত ব্যক্তি নাবালিকা মেয়ে হলে পড়তে হবে

আল্লাহুম্মাজ্‌ আল্‌হা লানা ফারাত্বাওঁ ওয়াজআলহা লানা আজরাওঁ ওয়া যুখরাওঁ ওয়াজ আল্‌হা লানা শাফি আতাওঁ ওয়া মুশাফা'আহ্।

“হে আল্লাহ্! তাকে আমাদের জন্য অগ্রবর্তিনী বানিয়ে দাও। তাকে আমাদের জন্য পুরস্কার ও সঞ্চয় স্বরূপ কর, তাকে আমদের জন্য শাফা'আতকারিনী বানাও এবং তাকে এ মর্যাদা দাও যে, তার শাফা'আত যেন কবুল হয়।”

  • ৬। মৃত ব্যক্তির জন্য যে দু'আটি প্রযোজ্য তা পড়ার পর ইমাম সাহেব শব্দ করে চতুর্থ তাকবীর বলবেন এবং সালাতুল জানাযায় শরীক অন্য সকলে চুপেচুপে তাকবীর বলবেন।
  • ৭। এরপর ইমাম সাহেব প্রথমে ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে ও পরে বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ' বলবেন। অন্যরাও ইমামের অনুসরণে ডান-বামে মুখ ফিরিয়ে সালামের কথাগুলো চুপেচুপে বলবে।

এভাবে সালাতুল জানাযাহ্ (janajar namaz) শেষ করতে হবে। মহান আল্লাহপাক আমাদেরকে সঠিকভাবে এসকল নামাজসমূহ আদায় করার তৌফিক দান করুন আমিন!

জুমার নামাজের নিয়ত

হে আল্লাহ আমি কেবলাহ মুখী হয়ে এই ইমামের পিছনে দাড়িয়ে জুমার দুই রাকাত ফরয নামাজ আদায় করছি আল্লাহু আকবার।

সালাতুল জুমার নামাজ বা শুক্রবারের নামাজকে (অনেকে ভুলবশতঃ জুম্মা বা জুমা বলে থাকে)। শুক্রবার যোহরের ওয়াক্তে যোহরের চার রাক্ আহ্ ফরয নামাজের পরিবর্তে জামাতে দুই রাকাআত্ নামাজ আদায় করা হয়। একে সালাতুল জুমা বলা হয় ৷ 

সকল বালেগ ও সুস্থ মুসলমান পুরুষের জন্য সালাতুল জুমার নামাজ ফরয করা হয়েছে। মহিলাদের জন্য সালাতুল জুমা ফরয নয়। তবে ঘরের কাজ-কর্মে অসুবিধা না হলে তারাও সালাতুল জুমু'আয় শরীক হতে পারবে।

সালাতুল জুমার নামাজ (jumar namaz) আদায় করার জন্য শুক্রবার মধ্য দুপুরের পর থেকে মুছাল্লীরা মসজিদে জমায়েত হতে থাকে। মসজিদে আসার পর তারা চার রাকাআহ্ বা বেশী সুন্নাত নামাজ আদায় করে। এরপর ইমাম সাহেব খুৎবাহ্ (ভাষণ) দেন। 

খুতবার পরে তাঁর ইমামতিতে সকলে দুই রাকা'আত্‌ ফরয নামাজ আদায় করে। ফরয নামাজের পর মুছাল্লীরা একা একা ছয় রাকা'আত্ বা তার বেশী সুন্নাত ও নফল নামাজ আদায় করে।

মুসলমানরা একটি সংঘবদ্ধ আদর্শিক জনগোষ্ঠী (উম্মাহ্)। সালাতুল জুমু'আহ্ হচ্ছে একটি সমষ্টিগত নামাজ। এক একটি এলাকার মুসলমানরা প্রতি সপ্তাহে একবার অর্থাৎ প্রতি শুক্রবার, নিকটবর্তী মসজিদে জমায়েত হয়ে এ নামাজ আদায় করে। শুক্রবার মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ‘ঈদের মত।

হযরত রসূলে আকরাম (সাঃ)-এর সময় মসজিদ ছিল মুসলমানদের সকল ইসলামী কর্মতৎপরতার কেন্দ্র। কিন্তু বর্তমানে মসজিদগুলোর সে অবস্থা নেই।

জুমার নামাজ (jumar namaz) 

জুমার নামাজ (jumar namaz) একটি এলাকা বা মহল্লার মুসলমানদের জন্য একত্রিত হওয়ার উপলক্ষ্যস্বরূপ। সালাতুল জুমা তাদেরকে পরস্পরের সাথে দেখা- সাক্ষাত, আলোচনা ও তাদের সামষ্টিক সমস্যাবলী সমাধানের সুযোগ করে দেয়। এর ফলে তাদের মধ্যে ঐক্য, সহযোগিতা ও সমঝোতা গড়ে ওঠে।

একটি ইসলামী রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপ্রধান বা তাঁর প্রতিনিধি বা স্থানীয় নেতা রাজধানীর বা সংশ্লিষ্ট জনপদের প্রধান মসজিদে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাতে ও সালাতুল জুমু'আয় ইমামতী করবেন এটাই নিয়ম। 

কারণ মদীনায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তা-ই করেছিলেন। বর্তমানেও ইসলামী রাষ্ট্রে এ নিয়মই হওয়া উচিত এমন একটি মুসলিম দেশে বসবাস করা কতই না আনন্দের যেখানে রাষ্ট্রপ্রধান বা তাঁর প্রতিনিধি বা স্থানীয় নেতা রাজধানীর বা সংশ্লিষ্ট শহর-জনপদের কেন্দ্রীয় মসজিদে জুমার নামাজের জামাতে ইমামতী করেন। আল্লাহ্ তা'আলা সকল মুসলিম দেশে পুনরায় এ অবস্থা সৃষ্টিতে সাহায্য করুন। আমীন।

পোস্ট ট্যাগঃ

জানাজার নামাজের নিয়ম
জানাজার নামাজের নিয়ম হানাফি
জানাজার নামাজের নিয়ম pdf
জানাজার নামাজের নিয়ম ও দোয়া
মহিলাদের জানাজার নামাজের নিয়ম
জানাজার নামাজের নিয়ম দলিলসহ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url