বিতর নামাজ কত রাকাত ও সহিহ নিয়ম কোনটি
বিতর (বেজোড়) সালাত তিন রাকা'আত্। এর প্রথম দুই রাকা'আত্ মাগরিবের প্রথম দুই রাকাআতের মতো। এরপর তাশাহ্হুদ শেষ হবার সাথে সাথে আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাক্আতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে। সুরাহ্ আল্-ফাতিহা ও অন্য একটি সূরাহ বা কয়েকটি আয়াত পড়বেন।
এরপর রুকূতে যাবার
আগে আল্লাহু আকবার বলে দুই হাত কান পর্যন্ত তুলে নামিয়ে আনবে ও নিয়ম মত বাম হাতের
ওপর ডান হাত রাখবে। তারপর নীচের দোয়াটি পড়বেন। এটিকে দোয়া আল্-কুনুত বলা হয়।
দোয়া কুনুত ছবি
সূরা
দোয়া কুনুত-আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা ওয়া নাস্তাগফিরুকা ওয়া নু'মিনু বিকা ওয়া
নাতাওয়াক্কালু 'আলাইকা ওয়া নুছনী 'আলাইকাল খাইরা ওয়া নাশকুরুকা ওয়ালা নাকফুরুকা
ওয়া নাখলাউ ওয়া নাতরুকু মাই-ইয়াফুজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না'বুদু ওয়া লাকা
নুছাল্লী ওয়া নাশজুদু ওয়া ইলাইকা নাস'আ ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখশা
‘আযাবাকা ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুলহিক্ব। (আল কুরআন
থেকে সহিহ শুদ্ধ করে
দেখে নিন)
দোয়া কুনুত
এর
অর্থ
দোয়া কুনুত এর অর্থ-“হে আল্লাহ্! অবশ্যই আমরা তোমার নিকট সাহায্য চাই, তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান পোষণ করি, তোমারই ওপর নির্ভর করি, তোমারই প্রতি শুকরিয়া জানাই, আর তোমার প্রতি অকৃজ্ঞতা করি না এবং পাপাচারীদের থেকে দূরে থাকি ও তাদেরকে পরিত্যাগ করি। হে আল্লাহ্!
আমরা তোমারই ইবাদাত করি ও তোমারই জন্যে সালাত
আদায় করি ও তোমাকেই সিজ্দাহ্ করি, তোমারই দিকে ধাবিত হই, আমরা তোমারই রহমতের আশা করি
এবং তোমারই ‘আযাবকে ভয় করি। নিঃসন্দেহে তোমার ‘আযাব কাফিরদেরকেই গ্রাস করবেন।”
(বাইহাকী)
এ
দোয়ার পর “আল্লাহু আকবার” বলে রুকূতে যাবে এবং মাগরিব সালাতের
মত সালাত শেষ করবেন।
হানাফী
মাযহাবের অনুসারীরা উপরের দোয়াটি পড়ে থাকে। অনেকে এর পরিবর্তে অপর একটি দোয়া পড়ে
থাকে। তা হচ্ছে:
বিতর নামাজে দোয়া কুনুত না পারলে
আল্লাহুম্মাদিনী
ফীমান্ হাদাইত, ওয়া 'আফিনী ফীমান্ 'আফাইত, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান্ তাওয়াল্লাইত,
ওয়া বারিলী ফীমা আ'তাইত, ওয়া কিনী শার্রা মা কাদাইত। ফা ইন্নাকা তাক্বদী ওয়া লা
ইউক্দা 'আলাইক। ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মান্ ওয়ালাইত। তাবারাকতা রাব্বানা ও তাআলাইত।
(আল কুরআন থেকে সহিহ শুদ্ধ
করে দেখে নিন)
“হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবার পথে চালিত কর যাদেরকে তুমি হেদায়াত করেছ। আমাকে তাদের মধ্যে শামিল করে ক্ষমা কর যাদেরকে তুমি ক্ষমা করেছো, তাদের সাথে আমার অভিভাবকত্ব গ্রহণ কর তুমি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছো, আমাকে যা কিছু দান করেছ তাতে বরকত দান কর।
তুমি যে ক্ষতির ফায়সালা করে
রেখেছো তা থেকে আমাকে রক্ষা কর, কারণ কেবল তুমিই ফায়সালাকারী, তোমার ওপর কেউ ফায়সালা
করতে পারে না। নিঃসন্দেহে তুমি যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ সে অপদস্থ হয় না। হে আমাদের
রব! তুমি পরম বরকতময় ও সমুন্নত মহান।’ (আবুদাউদ, তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ্)
সাহু সিজদা দিতে ভুলে গেলে
যেহেতু
আমরা মানুষ, তাই আমরা ভুলত্রুটির উর্ধে নই। আমরা যদি সালাতের করণীয় কাজগুলোর মধ্যে
কোন কাজ আঞ্জাম দিতে ভুলে যাই তাহলে দু'টি অতিরিক্ত সিজদাহ করে আমাদেরকে তার ক্ষতিপূরণ
করতে হয়। একে সাজ্দাতুস্ সাহু (প্রচলিত কথায় সোহু সেজদাহ) বলা হয়।
এই সিজদাহ সালাতের অন্যান্য সিজদাহর অনুরূপ। সালাতের শেষ রাক্'আতে বসে থাকা অবস্থায় এ সিজদাহ করতে হয়। তাশাহ্হুদ পড়ার পরে (দরূদ না পড়ে) ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে “আস্সালামু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলে মুখ সামনের দিকে করে দু'টি সিজদাহ করবেন। উভয় সিজদায়ই নিয়ম মাফিক “সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা” পড়বেন।
এরপর বসা অবস্থায় তাশাহ্হুদ, দরূদ ও দোয়া পড়বেন। সবশেষে প্রথমে ডানে ও পরে বামদিকে মুখ ফিরিয়ে “আস্সালামু 'আলাইকুম্ ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলবেন। কোন কোন মতের অনুসারী মুসলমানরা কিছুটা ভিন্ন নিয়মে সাজদাতুস্ সাহু করে থাকে।
তারা সালাতের শেষ রাক্আতে বসা অবস্থায় প্রথমে তাশাহ্হুদ ও দরূদ পড়ে। এরপর ডান দিকে
মুখ ফিরিয়ে “আস্সালামু 'আলাইকুম্ ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলে এবং মুখ সামনের দিকে ফিরিয়ে দু'টি
অতিরিক্ত সিজ্দাহ্ করে যাতে “সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা”
পড়ে। এরপর প্রথমে ডানে ও পরে বামদিকে মুখ ফিরিয়ে “আস্সালামু ‘আলাইকুম্ ওয়া রহমাতুল্লাহ”
বলে।
সালাতের
মধ্যকার কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে ভুলে গেলে বা বড় ধরনের ভুল কাজ করলে সাদাতুস্ সাহ্ও
করতে হয়। যেমন: সুরাহ্ আল্-ফাতিহার পর কুরআনের অন্য সূরাহ বা কতক আয়াত পড়তে ভুলে
গেলে, বা চার রাক্ আহ্ সালাতে দ্বিতীয় রাক্ আতে তাশাহুদ পড়তে ভুলে গেলে বা চার রাক্‘আত্
সালাতের দ্বিতীয় রাক্ 'আত্ শেষে সালাম বললে।
নামাজ ভঙ্গের কারণ
কিন্তু
মনে রাখবেন, নীচে উল্লেখকৃত ভুলগুলোর যে কোন একটি হলেই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে।
নামাজের ওয়াজিব কয়টিঃ
নিচের
ওয়াজিব বা ফরজগুলো বাদ পড়লে নামাজ নতুন করে পড়তে হয় বা নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
- ১। নিয়্যত করতে ভুলে গেলে।
- ২। তাবিরাতুল ইহরাম বলতে ভুলে গেলে।
- ৩। সুরা ফাতিহা পড়তে ভুলে গেলে।
- ৪। রুকূ' বা সিজ্দাহ্ না করলে বা করতে ভুলে গেলে।
- ৫। কিবলাহ্-মুখী না হলে।
- ৬। ওযু না থাকলে।
- ৭ । সালাতের মধ্যে কথা বললে।
- ৮ । সালাতের মধ্যে থাকাকালে কিছু খেলে বা পান করলে।
- ৯। তাশাহ্হুদের জন্যে না বসলে।
এসব ক্ষেত্রে সাজদাতে সাহু দ্বারা ভুলের ক্ষতিপূরণ হবে না। বরং নতুন করে সালাত আদায় করতে হবে৷