জাহান্নামীদের পোশাকের রং

জাহান্নামীদের পোশাকের রং

জাহান্নামীদের পোশাকের রং

জাহান্নামীদের পোশাকের রং হবে কালো বা নিজের দেহের চামড়ায় হবে জাহান্নামীদের পোশাক। তাই তাদের পোশাকের রং হবে দেহের রং। যা হবে অতি ভয়ংকর এবং আগুনে পুড়ে ছারখার হবে জাহান্নামীদের দেহ।

কোনো অপরাধী সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, তাদের চেহারায় আগুনের শিখা প্রজ্জ্বলিত করা চেহারাকে আগুন দিয়ে গরম করার কথা উল্লেখ হয়েছে

আল্লাহ বলেন: “ দিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃঙ্খলিত অবস্থায়। তাদের জামা হবে আলকাতরার, আর অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমণ্ডল।” (সূরা ইবরাহিম ৪৯, ৫০)

আল্লাহ মানব শরীরকে যে বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন তা সম্পর্কে তিনি বলেন:

আরবির বাংলা অর্থ: “আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি উত্তম আকৃতিতে।” (সূরা ত্বীন: )

মানুষের সমস্ত শরীরের মধ্যে চেহারাকে আল্লাহ সুন্দর, ইজ্জত, মাহাত্মের নিদর্শন করেছেন। তৃপ্তিদায়ক চোখ, সুন্দর নাক, মানানসই কান, নরম ঠোঁট, গণ্ডদেশ যৌবনকালে কাল চুল মানুষের সৌন্দর্য আকৃতিকে আরো উজ্জ্বল করে। আবার বৃদ্ধ বয়সে চাঁদির ন্যায় সাদা চুল মানুষের সম্মান মহত্মের নিদর্শন।

চেহারার সম্মান মহত্বের মর্যাদায় রাসূল (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন যে, “স্ত্রীকে যদি মারতে হয় তাহলে তার চেহারায় মারবে না।” (ইবনে মাজাহ)

চিকিৎসা শাস্ত্রে চেহারা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় অধিক সমবেদনশীল। চোখ, কান, নাক, দাঁত, গণ্ডদেশ ইত্যাদির রগসমূহ মস্তিষ্কের সাথে সম্পৃক্ত। চেহারা মস্তিষ্কের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে রক্তের চলাচল শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি দ্রুত।

তাই সামান্য রাগের কারণে চেহারার রগ দ্রুত লাল হয়ে যায়। চেহারার এক অংশে কোনো সমস্যা হলে সমস্ত চেহারাই সমস্যায় জর্জরিত হয়ে যায়। যদি শুধু দাঁতে ব্যাথা হয় তবে চোখ, কান মাথায় ব্যাথা অনুভব হয়। আর ব্যাথা এত বেশি হয় যে, সময়ে মানুষের সময় যেন অতিক্রান্ত হয় না।

জাহান্নামের অত্যধিক গরম আগুনের

সে যত দ্রুত সম্ভব তা থেকে রক্ষা পেতে চায়। শরীরের সমবেদনশীল অংশে যখন জাহান্নামেরজাহান্নামের অত্যধিক গরম আগুনের শিখা প্রজ্জ্বলিত করা হবে, তখন কাফিরদের কত কঠিন ব্যথা সহ্য করতে হবে, তার অনুমান জাহান্নামীদের আফসোস থেকে অনুভব করা যায় যে, তারা বলবে:

হায়! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম

আরবির বাংলা অর্থ: “হায়! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম” (সূরা নাবা: ৪০)

অপরাধিদেরকে যখন মারপিট করা হয়, তখন তারা সাধারণত হাত দিয়ে চেহারাকে বাঁচাতে চেষ্টা করে। কিন্তু অনুমান করা হোক যে, যখন একদিকে অপরাধিদের হাত-পা ভারি জিঞ্জির দিয়ে বাঁধা থাকবে, অন্য দিকে জাহান্নামের ভয়ানক ফেরেশতা বিনা বাধায় তার চেহারায় আগুনের বৃষ্টি বর্ষণ করতে থাকবে

মূলত তাকে শারীরিক শাস্তির সাথে সাথে মারাত্মক অপমান লাঞ্ছনাও করা হবে। আর লাঞ্ছনা দায়ক শাস্তি এক বা দু'ঘণ্টা বা এক বা দু'সপ্তাহ, এক বা দু'মাসের জন্য বা এক বা দু'বছরের জন্য নয়, বরং তা সার্বক্ষণিক ভাবে চলতে থাকবে।

আল্লাহর বাণী: “হায়! যদি কাফিররা সময়ের কথা জানতো যখন তারা তাদের সম্মুখ পশ্চাৎ হতে অগ্নি প্রতিরোধ করতে পারবে না, আর তাদের কোনো সাহায্যও করা হবে না।” (সূরা আম্বিয়া ৩৯)

কোনো বদনসীব লাঞ্ছনাময় শাস্তির যোগ্য হবে? ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলেছেন:

যেদিন তাদের মুখমণ্ডল অগ্নিতে উলট-পালট করা হবে, সেদিন তারা বলবে হায়! আমরা যদি আল্লাহকে মানতাম এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) কে মানতাম। তারা আরো বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতা বড় লোকদের আনুগত্য করেছিলাম।

আর তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন। আর তাদেরকে মহা অভিসম্পাত দিন।” (সূরা আহযাব ৬৬৬৮)

যেহেতু পাপিষ্টদের অন্যায় হবে যে, তারা আল্লাহ তাঁর রাসূলের (সাঃ) বিপক্ষে তাদের সরদার, গুরুদের অনুসরণ করেছে, কাফিরদের কুফরী আর মুশরিকদের শিরকের কারণে অবস্থা হবে যে, তারা তাদের আল্লাহ তাঁর রাসূলের (সাঃ) অনুসরণ করেনি বরং তাদের আলেম, দরবেশ, লিডার, বাদশাদের অনুসরণ করেছে। যার বেদনাদায়ক শাস্তি তাদেরকে কিয়ামতের দিন ভোগ করতে হবে।

আমাদের নিকট কাফির মুশরিকদের তুলনায় সমস্ত মুসলমানদের আচরণ বেশি বেদনাদায়ক যারা আল্লাহ তাঁর রাসূলের (সাঃ) কালিমা পাঠ করেছে, কিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, জান্নাত জাহান্নামকেও স্বীকার করে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও কোনো না কোনো ভুল বুঝের কারণে রাসূলের (সাঃ) অনুসরণ থেকে দূরে সরে গিয়েছে।

মনে রাখুন, রাসূল (সাঃ) -এর মিশন যেমন কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে, তেমনিভাবে তার অনুসরণও কিয়ামত পর্যন্ত করে যেতে হবে।

আরবির বাংলা অর্থ: “আমি মানুষের নিকট তোমাকে সুসংবাদ দাতা ভয় প্রদর্শনকারী রূপে প্রেরণ করেছি।” (সূরা সাবা ২৮)

অন্যত্র এরশাদ হয়েছে:

আরবির বাংলা অর্থ: “হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) (রূপে প্রেরিত হয়েছি)" (সূরা আরাফ ১৫৮)

এমনিভাবে আরো এরশাদ হয়েছে:

আরবির বাংলা অর্থ: “কত মহান তিনি যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফুরকানফুরকান (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। যাতে তিনি বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারেন।” (সূরা ফুরকান: )

অতএব যারা রাসূল (সাঃ) -এর মিশনকে তাঁর জীবিত থাকা পর্যন্তই সীমিত বলে বিশ্বাস করে নিঃসন্দেহে তারা তাঁর অনুসরণের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হচ্ছে। আবার যারা রাসূল (সাঃ) -কে শুধু আল্লাহর বার্তাবাহক রূপে মেনে নিয়ে তাঁর নির্দেশিত পথ (হাদীসের) অকাট্যতাকে অস্বীকার করছে তারাও তাঁর অনুসরণের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হচ্ছে।

আর যারা আক্বীদা পোষণ করে যে কুরআন মাজীদই হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট এর সাথে রাসূল (সাঃ) -এর হাদীসের কোনো প্রয়োজন নেই তারাও তাঁর অনুসরণের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হচ্ছে।” (সূরা নাহল ৪৪ নং আয়াত দ্রষ্টব্য)

এমনিভাবে যারা আক্বীদা পোষণ করে যে, কুরআন মাজীদ নির্ভরযোগ্য সূত্রে সংরক্ষিত আছে কিন্তু হাদীস নির্ভরযোগ্য সূত্রে সংরক্ষিত নেই। তাই তার ওপর আমল করা জরুরী নয়। তারাও তাঁর অনুসরণের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হচ্ছে।” (সূরা হিজর ৯নং আয়াত দ্র.)

যে সমস্ত উলামাগণ স্বীয় ফিকহী মাসআলার গোড়ামীর কারণে, স্বীয় ইমামগণের কথাকে রাসূল (সাঃ) -এর হাদীসের চেয়ে বেশী প্রাধান্য দেয় তারাও তাঁর অনুসরণের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হচ্ছে।

এমনিভাবে যারা স্বীয় বুযর্গদের মোরাকাবা কাশফকে রাসূল (সাঃ) সালাম-এর হাদীসের চেয়ে বেশী প্রাধান্য দেয় তারাও তাঁর অনুসরণের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হচ্ছে। এমনিভাবে যারা স্বীয় আকাবিরগণের মোশাহাদা স্বপ্নকে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাতের চেয়ে বেশী প্রাধান্য দেয় তারাও তাঁর অনুসরণের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হচ্ছে।” (সূরা হুজুরাত )

আমরা অত্যন্ত আদব ইহতিরামের সাথে, মুসলমানদের সমস্ত গবেষণালয়ের নিকট, অত্যন্ত নিষ্ঠতা হামদরদী নিয়ে আবেদন করছি যে, রাসূল (সাঃ) -এর অনুসরণের বিষয়টি অত্যন্ত সূক্ষ্ম। এমন যেন না হয় যে, ইমামগণের আক্বীদা, বুযুর্গদের মোহাব্বত, আর নিজস্ব দর্শনের গোড়ামী আমাদেরকে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তিতে নিষ্পেষিত না করে। কেন না আল্লাহ তাঁর রাসূলের (সাঃ) প্রতি ঈমান আনার পর ধরনের বেদনাদায়ক পরিণতি ক্ষতির কারণ হবে।

আরবির বাংলা অর্থ: “জেনে রেখ এটা সুস্পষ্ট ক্ষতি।” (সূরা যুমার ১৫)

জাহান্নামীদের চেহারাকে উলট-পালট করে

জাহান্নামে জাহান্নামীদের চেহারাকে উলট-পালট করে বিদগ্ধ করা হবে:

আরবির বাংলা অর্থ: “যেদিন তাদের মুখমণ্ডল অগ্নিতে উলট-পালট করা হবে, সেদিন তারা বলবে হায়! আমরা যদি আল্লাহকে মানতাম বা রাসূল (সাঃ) -কে মানতাম! তারা আরো বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতা বড় লোকদের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন, আর তাদেরকে দিন মহা অভিসম্পাত।” (সূরা আহযাব ৬৬-৬৮)

ফেরেশতা কাফিরদেরকে আগুনে দগ্ধ করবে, আর বলবে যে, তোমরা আজাব আস্বাদন কর, যা তোমরা দুনিয়াতে কামনা করতে:

আরবির বাংলা অর্থ: “অভিশপ্ত হোক মিথাচারীরা যারা অজ্ঞ উদাসীন, তারা জিজ্ঞেস করে কর্মফল দিবস কবে হবে? বল সেদিন যেদিন তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে অগ্নিতে, (এবং বলা হবে) তোমরা তোমাদের শাস্তি আস্বাদন কর, তোমরা শাস্তিই ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিল।” (সূরা যারিয়াত ১০-১৪)

কোনো কোনো কাফিরের চেহারায় অগ্নি শিখা আচ্ছন্ন করে থাকবে:

আরবির বাংলা অর্থ:“সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃঙ্খলিত অবস্থায়, তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমণ্ডল।” (সূরা ইবরাহিম : ৪৯- 50)

মাসআলা-২৯৫ : কাফিররা তাদের কোমল সুন্দর চেহারা আগুন থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করবে, কিন্তু তাতে তারা সফল হবে না:

আরবির বাংলা অর্থ: হায়! কাফিররা যদি সে সময়ের কথা জানত, যখন তারা তাদের সামনে পেছন থেকে আগুন ফিরাতে পারবে না। আর তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না; (সূরা আম্বিয়া ৩৯ )

জাহান্নামের নিকৃষ্টতম আজাব কাফিরের

জাহান্নামের নিকৃষ্টতম আজাব কাফিরের চেহারায় পতিত হবে:

আরবির বাংলা অর্থ: যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন তার মুখমণ্ডল দ্বারা কঠিন আজাব ঠেকাতে চাইবে (সে কি তার মত যে শাস্তি থেকে নিরাপদ?) আর যালিমদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা যা অর্জন করতে, তার স্বাদ আস্বাদন কর। (সূরা যুমার ২৪ )

নোট: অপরাধীরা শাস্তির সময় স্বীয় হাত দ্বারা চেহারাকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করে, কিন্তু জাহান্নামীরা জাহান্নামে যেহেতু তাদের হাত গলার সাথে বাঁধা অবস্থায় থাকবে অতএব তারা হাত নাড়াতে পারবে না, বরং ফেরেশতাদের কঠিন শাস্তি চেহারাকে দগ্ধ করবে।

বিষাক্ত গরম হাওয়া এবং বিষাক্ত কাল ধোঁয়ার মাধ্যমে শাস্তি

কোনো কোনো অপরাধীকে বিষাক্ত গরম হাওয়া কাল ধোঁয়ার মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবে:

আরবির বাংলা অর্থ: আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! তারা থাকবে তীব্র গরম হাওয়া এবং প্রচণ্ড উত্তপ্ত পানিতে, আর প্রচণ্ড কালো ধোঁয়ার ছায়ায়, যা শীতলও নয়, সুখকরও নয়। (সূরা ওয়াক্বিয়াহ ৪১-৪৪)

নোট: জাহান্নামী জাহান্নামের শাস্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে এক ছায়াবান বৃক্ষের দিকে ছুটে আসবে, কিন্তু যখন ওখানে পৌঁছবে, তখন বুঝতে পারবে যে এটা কোনো ছায়াবান বৃক্ষ নয় বরং জাহান্নামের ঘনকাল ধোঁয়া।

জাহান্নামে বিদগ্ধ কারী কঠিন গরম হাওয়া

কাফিরদেরকে জাহান্নামে বিদগ্ধ কারী কঠিন গরম হাওয়া দিয়ে শাস্তি দেয়া হবে

আরবির বাংলা অর্থ: “এবং বলবে পূর্বে আমরা পরিবার-পরিজনদের মাঝে শংকিত অবস্থায় ছিলাম, এরপর আমাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে অগ্নি শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন” (সূরা তুর ২৬-২৭)

প্রচন্ড ঠান্ডার মাধ্যমে শাস্তি

আগুন যেভাবে মানুষের শরীরকে জ্বালিয়ে দেয়, তেমনিভাবে মারাত্মক ঠাণ্ডাও মানুষের শরীরকে ঢিলা করে দেয়। তাই জাহান্নামের অত্যধিক ঠান্ডার আজাব থাকবে। জাহান্নামের স্তরটির নাম হবে 'যামহারীর' যামহারীরে কত কঠিন ঠাণ্ডা হবে তার জ্ঞান তো একমাত্র সর্বজ্ঞ সম্যক অবহিত মহান আল্লাহই ভাল জানেন।

কিন্তু ঠাণ্ডা যেহেতু শাস্তি দেয়ার জন্য হবে, অতএব তা তো অবশ্যই ঠাণ্ডা থেকে কয়েক গুণ বেশি হবে। দুনিয়ার যে কোনো ঠাণ্ডার মৌসুম ডিসেম্বর জানুয়ারী মাসে হয়ে থাকে। যা থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য গরম পোশাক, কম্বল, লেপ, হিটার, অঙ্গার ধানিকা

গরম গরম খানাপিনা, আরো কত কি, এর পরও মানুষের অস্বাভাবিক অসাবধানতার ফলে সাথে সাথেই মানুষ কোনো না কোনো সমস্যায় পড়ে যায়।

জাহান্নামের শ্বাস ত্যাগের কারণে

উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যতীত মানুষকে যদি পোশাকহীন পৃথিবীর ঠাণ্ডায় থাকতে হয়, তাহলে তাও প্রকার কঠিন আজাব হবে। অথচ রাসূল (সাঃ) বলেন: “পৃথিবীর ঠাণ্ডা জাহান্নামের শ্বাস ত্যাগের কারণে হয়ে থাকে।” (বুখারী)

জাহান্নামের অভ্যান্তরীণ শ্বাস থেকে সৃষ্ট

থেকে অনুমান করা যেতে পারে যে, শুধু জাহান্নামের অভ্যান্তরীণ শ্বাস থেকে সৃষ্ট ঠাণ্ডা যদি মানুষের জন্য অসহ্য হয়, তাহলে জাহান্নামের অভ্যান্তরিন ঠাণ্ডার স্তর 'যামহারীরে' মানুষের কি অবস্থা হবে?

আল্লাহ মানুষকে অত্যন্ত নরম মোলয়েম করে তৈরী করেছেন। এত নরম মোলায়েম যে শুধু ৩৭ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের মাঝে সে সুস্থ্য থাকতে পারে। এর চেয়ে কম বা বেশি উভয় তাপ মাত্রাই অসুস্থতার লক্ষণ। যদি শরীরের তাপমাত্রা ৩৫-এর কম হয়ে ২৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে তার মৃত্যু হয়ে যাবে।

আর যদি তাপ মাত্রা প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে শরীরের কোনো অংশে .৭৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড (বা ২০ ডিগ্রী ফারেন হাইট) পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে শরীরের অংশটি ঠাণ্ডার কারণে ঢিলা হয়ে বা পঁচে সাথে সাথে পৃথক হয়ে যায়, যাকে চিকিৎসা শাস্ত্রে “Frost Bite” বলে।

অনুমান করা যাক যে, যামহারীরে যদি এতটুকু ঠাণ্ডা থাকে যে, শরীরের অভ্যান্তরীণ তাপমাত্রা . ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড (বা ২০ ডিগ্রি ফারেন হাইট) পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে আযাবের অবস্থা হবে যে, জীবিত মানুষের শরীরের ঠাণ্ডার প্রচণ্ডতায় বালুর মত দানা দানা হয়ে, অণুতে পরিণত হবে।

জাহান্নামের আগুনের ন্যায় যামহারীরের

অতপর তাকে নতুন করে শরীর দেয়া হবে। যতক্ষণ সে যামহারীরে থাকবে ততক্ষণ সে আযাবে নিমজ্জিত থাকবে। ভাগ শুধু সাইন্স অভিজ্ঞতার আলোকে দেখানো হলো। যখন একথা স্পষ্ট যে, জাহান্নামের আগুনের ন্যায় যামহারীরের ঠাণ্ডাও পৃথিবীর ঠাণ্ডার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি কঠিন হবে।

যামহারী

যামহারীরের বাস্তব ঠাণ্ডার শাস্তি যথাযথ অবস্থা কি হবে, তা হয়ত আমরা দুনিয়াতে কল্পনাও করতে পারব না। কিন্তু বিষয়ে মোটেও সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে, জাহান্নামের আগুন হোক আর যামহারীরের ঠাণ্ডা, উভয় অবস্থায়ই কাফির জীবিত থাকার চেয়ে মৃত্যুকে প্রাধান্য দিবে। আর বার বার মৃত্যু কামনা করবে।

আরবির বাংলা অর্থ: “তারা চিৎকার করে বলবে: হে মালিক (জাহান্নামের রক্ষক) তোমার প্রতিপালক আমাদেরকে নিঃশেষ করে দিন।

উত্তরে বলা হবে: “তোমরা তো এভাবেই থাকবে।" (সূরা যুখরূফ ৭৭)

আল্লাহ সমস্ত মুসলমানদেরকে স্বীয় দয়া অনুগ্রহে যামহারীরের আজাবআজাব থেকে রক্ষা করুন। নিঃসন্দেহে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল এবং স্বীয় বান্দাদের প্রতি রহম অনুগ্রহ পরায়ন।

যামহারীরজাহান্নামের একটি স্তর

 “যামহারীরজাহান্নামের একটি স্তর যেখানে জাহান্নামীদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে :

আরবির বাংলা অর্থ: সুতরাং সেই দিবসের অকল্যাণ থেকে আল্লাহ তাদের রক্ষা করলেন এবং তাদের প্রদান করলেন উজ্জ্বলতা উৎফুল্লতা। আর তারা যে ধৈর্যধারণ করেছিল তার পরিণামে তিনি তাদেরকে জান্নাত রেশমী বস্ত্রের পুরস্কার প্রদান করবেন। তারা সেখানে সুউচ্চ আসনে হেলান দিয়ে আসীন থাকবে। তারা সেখানে না দেখবে অতিশয় গরম, আর না অত্যাধিক শীত। (সূরা দাহর ১১-১৩)

জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও

আরবির বাংলা অর্থ: “আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: গরমের সময় যখন কঠিন গরম পড়ে, তখন আল্লাহ স্বীয় কান চোখ আকাশ জমিন বাসীদের প্রতি নিক্ষেপ করেন, যখন কোনো বান্দা বলে যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আজ কত গরম পড়েছে?

হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও। তখন আল্লাহ জাহান্নামকে সম্বোধন করে বলেন: আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এক বান্দা, আমার নিকট তোমার আজাব থেকে আশ্রয় চেয়েছে। আমি তোমাকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি তাকে মুক্তি দিলাম।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

আবার যখন কঠিন ঠাণ্ডা পড়ে তখন আল্লাহ স্বীয় কান চোখ আকাশ জমিনবাসীদের প্রতি নিক্ষেপ করেন, যখন কোনো বান্দা বলে যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আজ কত ঠাণ্ডা পড়েছে? হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জাহান্নামের স্তর যামহারির থেকে মুক্তি দাও।

জাহান্নামের স্তর যামহারীর কি

তখন আল্লাহ জাহান্নামকে সম্বোধন করে বলেন: আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এক বান্দা, আমার নিকট তোমার স্তর যামহারীর থেকে আশ্রয় চেয়েছে। আমি তোমাকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি তাকে মুক্তি দিলাম। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন যে, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! জাহান্নামের স্তর যামহারীর কি?

তিনি বললেন: যখন আল্লাহ কাফিরকে এতে নিক্ষেপ করবে, তখন তার ঠান্ডার প্রচণ্ডতায়ই কাফির তাকে চিনে ফেলবে। যে এটা যামহারীরের আজাব। ঠাণ্ডা গরম উভয়ই জাহান্নামের আজাব।” (বায়হাকী)

জাহান্নামে লাঞ্ছনাময় আজাব

কাফিরদেরকে জাহান্নামে লাঞ্ছিত করা হবে

আরবির বাংলা অর্থ: আর যেদিন কাফিরদেরকে জাহান্নামের সামনে পেশ করা হবে (তাদেরকে বলা হবে) 'তোমরা তোমাদের দুনিয়ার জীবনে তোমাদের সুখ সামগ্রীগুলো নিঃশেষ করেছ এবং সেগুলো ভোগ করেছ। তোমরা যেহেতু অন্যায়ভাবে জমিনে অহঙ্কার করতে এবং তোমরা যেহেতু নাফরমানী করতে, সেহেতু তার প্রতিফলস্বরূপ আজ তোমাদেরকে অপমানজনক আজাব প্রদান করা হবে। (সূরা আহক্বাফ ২০)

জাহান্নামী জাহান্নামে গাধার ন্যায় উঁচু উঁচু আওয়াজ দিবে:

আরবির বাংলা অর্থ: “সেথায় থাকবে তাদের আর্তনাদ এবং সেথায় তারা কিছুই জানতে পারবে না।” (সূরা আম্বিয়া ১০০)

কোনো কোনো কাফিরকে লাঞ্ছিত করার জন্য তাদের নাকে দাগ দেয়া হবে:

আরবির বাংলা অর্থ: “আমি তাদের নাসিকা দাগিয়ে দিব।” (সূরা কালাম: ১৬)

জাহান্নামীদের চেহারা হবে কাল

আরবির বাংলা অর্থ: আর যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কিয়ামতের দিন তুমি তাদের চেহারাগুলো কালো দেখতে পাবে। অহঙ্কারীদের বাসস্থান জাহান্নামের মধ্যে নয় কি? (সূরা যুমার ৬০)

কোনো কোনো কাফিরের চেহারা ধুলিময় হয়ে থাকবে

আরবির বাংলা অর্থ: “এবং অনেক মুখমণ্ডল হবে সেদিন ধূলি-ধূসর। সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে কালিমা, তারাই কাফির পাপাচারী (সূরা আবাসা ৪০-৪২ )

কাফিরের মস্তকের সম্মুখ ভাগের কেশ গুচ্ছ ধরে

কোনো কোনো কাফিরের মস্তকের সম্মুখ ভাগের কেশ গুচ্ছ ধরে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে:

আরবির বাংলা অর্থ: “সাবধান! সে যদি নিবৃত্ত না হয়, তবে আমি তাকে অবশ্যই হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাব, মস্তকের সম্মুখ ভাগের কেশ গুচ্ছ ধরে। মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের কেশ গুচ্ছ।” (সূরা আলাক ১৫-১৬)

কোনো কোনো কাফিরকে জাহান্নামে উপুর করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে:

জাহান্নামে গভীর অন্ধকারের মাধ্যমে আজাব

কাফিরদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে তার দরজা এত মজবুতভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে যে, জাহান্নামী শতাব্দী ধরে গভীর অন্ধকারে জাহান্নামের আজাব ভোগ করতে থাকবে, কোথাও থেকে কোনো আলোর সামান্য কিরণও তার চোখে পড়বে না:

আরবির বাংলা অর্থ: “এবং যারা আমার নির্দেশ অমান্য করেছে, তারা হতভাগ্য। তাদের ওপরই রয়েছে অবরুদ্ধ অগ্নি।” (সূরা বালাদ ১৯-২০)

আরবির বাংলা অর্থ: “হুতামা কি তাকি তুমি জান? এটা আল্লাহর প্রজ্জলিত অগ্নি, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে, নিশ্চয়ই তা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে, দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে।” (সূরা হুমাযাহ -)

পোস্ট ট্যাগঃ

জাহান্নামীদের পোশাকের রং
জাহান্নামীদের পোশাক
জাহান্নামের রাস্তা
জাহান্নামি জাহান্নামি
জাহান্নামি জাহান্নামি জাহান্নামি
জাহান্নাম কেমন
জান্নাতি পোশাক
জাহান্নামের পোশাক
জাহান্নামীদের পোশাক কি হবে
জাহান্নামীদের পোষাক কি হবে
জাহান্নামিদের পোশাক
জান্নাতিদের পোশাক কি রঙ্গের হবে
জান্নাতিদের পোশাক কি রঙের হবে
জান্নাতি পোশাক এর রং কি
জাহান্নামিদের পোশাকপোশাক কি হবে

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url