মৃত্যু নিয়ে উক্তি

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

মৃত্যু নিয়ে উক্তি প্রসঙ্গে আজকে আমরা আল কুরআন ও আল হাদীস থেকে অনেক মৃত্যু নিয়ে ইসলামী উক্তি জানতে পারবো ইনশাআল্লাহ। নিচে পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

মৃত্যু নিয়ে উক্তি পিক

আল কুরআনের কিছু আয়াত ও কিছু হাদীস থেকে জানা যায় যে, নবীগণ শহীদগণ আলেমগণ ফেরেশতাগণ এবং পবিত্র কুরআন কিছু অপরাধী মানুষের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। ফেরেশতাদের সুপারিশ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বলা হয়:

*** এখন দয়াময় মেহেরবান আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বাকি নেই। তখন তিনি এক মুষ্টি আগুন নিয়ে তার মধ্য হতে এমন কিছু লোককে বের করে নিয়ে আসবেন যারা কখনও সৎকর্ম করেনি।

*** হাকেম আবু ইয়ানী ওসমান (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন: কেয়ামত দিবসে তিন প্রকারের মানুষ সুপারিশ করবেন। (তারা হলেন) নবীগণ, আলেমগণ ও শহীদরা।

মৃত্যু নিয়ে উক্তি ইসলামিক

*** অপর এক বর্ণনায় আছে, একজন শহীদ তার পরিবারের সত্তর জন লোকের জন্য সুপারিশ করবেন।'"

*** সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে পবিত্র কুরআনও সেদিন সুপারিশ করবেন আহলে কুরআনদের জন্য। আবু উমামা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সা. কে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন পাঠ করবে কেননা তা কেয়ামত দিবসে কুরআন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবেন।'

আবু বারযা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সা. কে বলতে শুনেছি আমার উম্মতের মধ্যে কিছু কিছু লোক রাবিয়া ও মুদর গোত্রের চেয়ে বেশী লোকের জন্য সুপারিশ করবেন।”

মৃত্যু নিয়ে উক্তি ইসলামিক

*** অপর এক হাদীসে আছে আমার উম্মতের কোন এক লোক অনেক লোকের জন্য সুপারিশ করে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর এক লোক একা কবিলার লোকদের জন্য সুপারিশ করবেন, তার সুপারিশের কারণেই তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর এক লোক একদল লোকের জন্য সুপারিশ করবে।

মোদ্দাকথা কিয়ামত দিবসে আল্লাহর কাছে হাশরবাসীদের সুপারিশ করবেন আল্লাহর নবীগণ শহীদগণ আলেম ওলামা মুমিনরা ও ফেরেশতারা। তবে সুপারিশের জন্য কিছু শর্ত আছে।

সুপারিশের শর্ত

উপরে আমরা সুপারিশ সম্পর্কে যে আলোচনা করেছি যে কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা ও দুঃখ কষ্ট লাঘবের জন্য অনেকেই আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার সুযোগ লাভ করবেন। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো হল:

*** সুপারিশ আল্লাহর কাছে যে কেউ করতে পারবে না। সুপারিশকারীকে অবশ্যই আল্লাহ তা'আলার অনুমতি প্রাপ্ত হতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: “কে আছে এমন, যে আল্লাহর কাছে তার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে?"

*** অর্থাৎ আল্লাহর কাছে তার অনুমতি বিহীন কেউ কোন সুপারিশ করতে পারবে না। কাজেই কোন মুমিন ব্যতীত কোন কাফের মুশরিক আল্লাহর কাছে কোন ধরণের সুপারিশ করার সুযোগ পাবে না।

কাজেই আল্লাহর অনুমতি বিহীন কেউ কারো জন্য সুপারিশ করতে পারবে না । যার জন্য সুপারিশ করা হবে তাকে অবশ্যই মুমিন হতে হবে। কোন অমুমিন কাফের মুশরিকের জন্য কেউ কখনও সুপারিশ করতে পারবে না। সুপারিশ করার অনুমতিও পাবে না।

মৃত্যু নিয়ে উক্তি পিক ইসলামিক

*** আল্লাহ তা'আলা বলেন: “আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কুফরী করে তারা জাহান্নামবাসী হবে তাতে চিরস্থায়ী হবে। তারাই হলো নিকৃষ্টতম জীব।'

আলোচ্য আয়াতে সুপারিশের কথা না থাকলেও বুঝা যায় যে, যেহেতু তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামী হবে বলে এখানে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তাই এখান থেকে বুঝা, যায় যে, তারা কোন সুপারিশ লাভ করবেনা। কোন সুপারিশ তাদের কোন কাজেও আসবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন: “সুপারিশকারীদের কোন সুপারিশ তাদের কোন কাজে আসবে না।”

মানুষের মৃত্যু নিয়ে উক্তি

*** ইতিপূর্বে আমরা আলোচনা করেছি যে, রাসূলুল্লাহ্ সা. তার চাচা আবু তালিবের জন্য সুপারিশ করবেন, আমরা একটা হাদীসও এ মর্মে উল্লেখ করেছি যে রাসূলুল্লাহ্ সা. এর সুপারিশের কারণে তার শাস্তি জাহান্নামে কমিয়ে দেয়া হবে। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি, কাফিরই ছিলেন, এটা কি করে সম্ভব?

এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায় যে, আবু তালিব ইসলাম গ্রহণ না করা সত্ত্বেও তার জন্য মহানবী (সা.) এর সুপারিশ করণের ব্যপারটি মহানবী (সা.) এর জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে দেয়া একটা বিশেষত্ব। কাজেই তা একটা ব্যতিক্রম ধর্মী ব্যপার। আর আমরা যা বলেছি তা কাফেরদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

মৃত্যুর স্ট্যাটাস

*** কিছু কিছু মনিষীর মতে রাসূলুল্লাহ্ সা. -এর চাচা আবু তালিবের জন্য সুপারিশ করা হবে তাকে জাহান্নাম হতে বের করার জন্য নয়, তা হবে জাহান্নামে শাস্তি হালকা করে দেয়ার জন্য কিংবা কমিয়ে দেয়ার জন্য। কাজেই উভয় বক্তব্যে কোন বিরোধ নেই। কেননা কাফেরদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করার জন্যই কেউ সুপারিশ করতে পারবে না। আর কেউ করলে এর দ্বারা তাদের ন্যূনতম উপকারও হবে না।

এ প্রসঙ্গে ইমাম বাইহাকীর অভিমত হল, কাফেরদের জন্য সুপারিশ করা যাবে না একথাটা আমরা নির্ভরযোগ্য দলিলের ভিত্তিতে বলছি। এবং সে দলিলগুলো প্রমাণ করে সাধারণ কাফেরদের জন্য কেউ সুপারিশ করতে পারবে না।

অন্য দিকে অপর কোন কাফেরদের জন্য যদি বিশেষ কেউ সুপারিশ করতে পারবেন এবং করবেন এমন কথা নির্ভরযোগ্য দলিল দ্বারা প্রমাণ হয় তাহলে তা আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে। আর এতদুভয় কথার মধ্যে কোন বিরোধ পরিলক্ষিত মনে করা যাবে না। কোন নিষিদ্ধ হল সাধারণ, আর অনুমতি হল ব্যতিক্রম।

কেবল সেই লোকই আল্লাহর অনুমতি দেয়া লোকের জন্য সুপারিশ করতে পারবেন। কাজেই এ থেকে প্রমাণিত হল যে, সুপারিশের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাই আল্লাহ তা'আলা বলেন: “বল, সমস্ত সুপারিশ তো কেবল আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট।” (সূরা যুমার, ৪৪)

সুতরাং সুপারিশ চাইতে হলে তা একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে। কাজেই যারাই কিয়ামত দিবসে মহানবী (সা.)-এর সুপারিশ পেতে চায় তাদেরকে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে হবে।

এখলাছ বা নিষ্ঠার সাথে ইবাদত করতে হবে

*** এখলাছ বা নিষ্ঠার সাথে ইবাদত করতে হবে। কাজেই আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইবাদতে শরীক করা যাবে না। ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দিশ্যে করতে হবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন: যে ব্যক্তি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে বলবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে ব্যক্তিই আমার সুপারিশ লাভের জন্য বেশী উপযোগী।” (বুখারী, ৬০৮৫)

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর জন্য অসিলা বেশী করে কামনা করতে হবে

*** আল্লাহর কাছে রাসূলুল্লাহ্ সা. এর জন্য অসিলা বেশী করে কামনা করতে হবে এবং বেশী বেশী মহানবী (সা.)-এর জন্য দোয়া করতে হবে। কারণ মহানবী (সা.) বলেন: কারণ অসিলা হল জান্নাতের একটা বিশেষ স্তর। আল্লাহ কেবল একজন বান্দাহ তার উপযোগী বিবেচিত হবে।

আশা করি আমিই তার উপযোগী হবো। যে আল্লাহর কাছে আমার জন্য অসিলা চাইবে তার জন্য (আমার) সুপারিশ বৈধ হবে।” (মুসলিম, ৫৭৭, তিরমিযি, ৩৫৪৭, নাসায়ী, ৬৭১, আবু দাউদ, ৪৩৯)

মানুষের চিরস্থায়ী বাসস্থান জান্নাত অথবা জাহান্নাম

দুনিয়া আমলের জগত আর আখিরাত প্রতিদানের জগত। বারযাখী জিন্দেগিতে ও কিয়ামতের মাঠে বিচ্ছিন্ন হবে না। যেমন দুইজন ফেরেশতা মৃতকে তার কবরে প্রশ্ন করবে, সমস্ত মখলুককে সিজদার জন্য আহ্বান করা হবে কিয়ামতের দিনে, পাগলদের এবং দুই জন নবী-রসূল প্রেরণের মাঝে যারা মারা গেছে তাদের পরীক্ষা।

আল্লাহ তা'য়ালা তাদের মাঝে ফয়সালা করবেন

*** অতপর বান্দার আমল ও ঈমান অনুপাতে আল্লাহ তা'য়ালা তাদের মাঝে ফয়সালা করবেন। একদল হবে জান্নাতী আর অপর দল হবে জাহান্নামী। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন: “এমনিভাবে আমি অপনার প্রতি আরবি ভাষায় কুরআন নাজিল করেছি, যাতে আপনি মক্কা ও তার আশ-পাশের লোকদের সতর্ক করেন এবং সতর্ক করেন সমাবেশের দিন সম্পর্কে, যাকে কোন সন্দেহ নেই। একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

*** অপর এক আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন: “রাজত্ব সেদিন আল্লাহরই; তিনিই তাদের বিচার করবেন। অতএব, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে তারা নিয়ামতপূর্ণ কাননে থাকবে। আর যারা কুফরি করে এবং আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে তাদের জন্যে লাঞ্ছনাকর শাস্তি রয়েছে।” (হাজ; ৫৬-৫৭)

*** কিয়ামতের দিন মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়বে। সেদিন যারা সৎকাজের অংশীদারী হবে তারা জান্নাতে যাবে। আর যারা অসৎকাজের ভাগীদার তারা জাহান্নামে যাবে।

জান্নাতের নেয়ামত

*** কুরআন কারীমে আল্লাহ মানুষের হিদায়াতের জন্য বেশ কিছু অতীত জাতির পরিণতির কথা বর্ণনা করেছেন। কোথাও নবীগণের মোজেযার কথা বর্ণনা করেছেন, কোথাও মানুষের সৃষ্টি ও তার মৃত্যুর কথা বর্ণনা করেছেন, কোথাও পৃথিবী ও তার মধ্যস্থিত বিদ্যমান বিষয়সমূহের কথা বর্ণনা করেছেন, কোথাও সাধারণ উদাহরণের মাধ্যমে বুঝিয়েছেন,

সৎ আমলের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য জান্নাত

*** কোথাও সৎ আমলের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য জান্নাত ও তার নিআমত সমূহের উল্লেখ করা হয়েছে, আবার কোথাও খারাপ আমলের কু-পরিণতি থেকে ভিতি প্রদর্শনের জন্য, জাহান্নামের আগুন ও তার বিভিন্ন প্রকার আযাবের বর্ণনা করা হয়েছে। স্বীয় মানসিকতা ও অভ্যাস অনুযায়ী, প্রত্যেক মানুষ কুরআনের এ পবিত্র আয়াতসমূহ থেকে দিকনির্দেশনা নিয়ে থাকে।

*** জান্নাতের নিআমতসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর আর এমন কোনো মুসলমান থাকতে পারে যে, তা হাসিলের জন্য উদগ্রীব হবে না? বাস্তবতা তো এই যে ব্যক্তি জান্নাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে তার জন্য জান্নাতের বিনিময়ে দুনিয়ার বড় বড় পরীক্ষা বড় বড় ত্যাগ স্বীকারও কিছু নয়।

*** বেলাল, খাব্বাব বিন আরাত, আবু যার গিফারী (রা) ইয়াসের, সুমাইয়্যা, হুবাইব বিন যায়েদ, খুবাইব বিন আদী, সালমান ফারেসী, আবু জান্দাল (রা) ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ইমাম মালেক (রহ) মত অসংখ্য সালফে সালেহীন এর ঘটনা আমাদের ইতিহাসে উজ্জল হয়ে আছে।

জান্নাতের আকাঙ্খা যেখানে মানুষকে বড় বড় পরীক্ষা

*** জান্নাতের আকাঙ্খা যেখানে মানুষকে বড় বড় পরীক্ষা ও ত্যাগ স্বীকার করাকে তুচ্ছ করে দেয় তা সৎ আমলের উৎসাহ আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

কিছু উদাহরণ নিম্নে পেশ করা হলো

****** সায়িদ বিন মুসায়্যিব সম্পর্কে এক খাদেম বর্ণনা করেছে যে, চল্লিশ বছরের মাঝে এমন কখনো হয় নি যে, নামাযের আযান হয়ে গেছে অথচ তিনি মসজিদে উপস্থিত ছিলেন না।

জান্নাতের নেয়ামত

****** আবু তালহা তার বাগানে নামায পড়তে ছিলেন হটাৎ করে বাগানের সবুজ বৃক্ষ ও ফুল এবং ফলের প্রতি দৃষ্টি পড়লো, আর নামাযের রাকআতে তার ভুল হয়ে গেল, সাথে সাথে তিনি রাসূলুল্লাহ সা. -এর নিকট গিয়ে ঘটনা বর্ণনা করলেন এবং বললেন হে আল্লাহ রাসূল! যে জিনিষ আমার নামাযে ভুল করিয়েছে আমি তা আল্লাহর রাস্তায় সাদকা করে দিব। আপনি তা যেভাবে খুশী সে ভাবে ব্যবহার করুন।

****** ওয়াকী বিন জাররাহ (রা) বলেন: আ'মাস (র) ৭০ বছরের মধ্যে কখনো কোনো নামাযে তাকবীরে উলা ছুটে নি।

****** মাইমুন বিন মেহরান (র) একদা মসজিদে এসে দেখলেন জামাআত শেষ হয়ে গেছে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসল যে, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আর বলতে লাগলেন জামাআতের সাথে নামায আদায় করা আমার নিকট ইরাকের রাষ্ট্রনায়ক হওয়া থেকেও উত্তম।

****** আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রা) নামাযে (নফল) দাড়িয়ে এক রাকআতে বাক্বারা, আলে ইমরান, নিসা, মায়েদাহ শেষ করেছেন।

মাগরিবের পর সেজদা করেছেন এশার আযান হয়ে গেছে তিনি সেজদায়ই ছিলেন

****** আবদুল্লাহ বিন ওহাব বর্ণনা করেন যে আমি সুফিয়ান সাওরীকে হারামে মাগরিবের নামাযের পর সেজদা করতে দেখেছি আর ইশার আযান হয়ে গেছে তখনো তিনি সেজদায়ই ছিলেন।

ইতিহাসের পৃষ্ঠায় এ ধরনের ঘটনা অগণিত। যা পাঠান্তে সাধারণত মানুষ আশ্চার্যান্বিত হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে, যে ব্যক্তি জান্নাতের নিআমত সম্পর্কে অবগত আছে তার জন্য সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং সর্বপ্রকার সওয়াবের কাজ করা অত্যন্ত সহজ।

কিতাবুল জান্নাত” লিখার পিছনেও মূল উদ্দেশ্য মূলত এই যে, মানুষের মধ্যে যেন জান্নাত লাভের জযবা পয়দা হয় এবং জান্নাত লাভের আশায় কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা নেক আমল বেশি বেশি করে করার উৎসাহ সৃষ্টি হয়। পুস্তক পাঠান্তে এক বা দু'জন মুসলমান যদি তার আমলকে পরিবর্তন করতে পারে তাহলে ইনশাআল্লাহ পুস্তক রচনার উদ্দেশ্য পূরণ হবে।

জান্নাত সম্পর্কে কুরআনের ভাষ্য

আল্লাহ তা'আলা কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে জান্নাত সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করতে গিয়ে পানি, দুধ, মদের ঝর্ণার কথা বর্ণনা করেছেন, এমনিভাবে বিভিন্ন ফল-মূল, বাগান, ঘন ছায়া, ঠাণ্ডা, পাখীর গোশত, মূল্যবান আসন, হুরেইন, বালাখানার কথা বর্ণনা করেছেন।

****** পার্থিব দিক থেকে এ সমস্ত বিষয়সমূহ, জীবন যাপনের উপাদান বলে মনে করা হয়, তাই কোনো কোনো নাস্তিক ও বে-দ্বীন সাহিত্যিক, কবি, ইত্যাদি জান্নাতকে অত্যন্ত সাধারণ কিছু হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে, যেন জান্নাত এমন এক আবাস স্থল যে, যেখানে প্রবেশ করা মাত্রই পৃথিবীর একমাত্র আল্লাহ ভীরু ও সংযমের সাথে জীবন যাপন কারী মুত্তাকী ব্যক্তি তার তাকওয়ার পোশাক খুলে ফেলে দিয়ে আনন্দময় অনুষ্ঠানে নিমগ্ন থাকবে।

হুরদের ভিড়ে জান্নাতবাসীদের অন্তর শান্ত থাকবে

****** বিবাহ ও বাদ্য যন্ত্রের প্রতিধ্বনি বুলন্দ হবে। আর হুরদের ভিড়ে জান্নাতবাসীদের অন্তর শান্ত থাকবে। নৃত্যশালা তার আশেকদের ভীড়ে ভরপুর থাকবে। আর সুরাবাহীদের পদধ্বনিতে তা থাকবে আবাদময় মূলত জান্নাত কি এ ধরনেরই এক আবাস স্থল? 

জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে 

আসুন জান্নাত নির্মাণকারী এবং জান্নাত সম্পর্কে ওয়াকিফহালের কাছ থেকে তা জানা যাক যে, জান্নাত কেমন? আল্লাহ কুরআন মাজীদে এরশাদ করেন যে, “জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তাদেরকে অভ্যার্থনা জ্ঞাপনকারী ফেরেশতা “আসসালামু আলাইকুম” বলে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবে। “আপনারা অত্যন্ত ভাল থাকুন” বলে তাদেরকে স্বাগতম জানাবে। যা শ্রবণে জান্নাতীরা “আলহামদু লিল্লাহ” বলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। (সূরা যুমার :৭৩-৭৩) 

জান্নাত বাসীগণ প্রতি নিঃশ্বাসে আল্লাহর তাসবীহ 

****** “জান্নাত বাসীগণ প্রতি নিঃশ্বাসে আল্লাহর তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) এবং প্রশংসা (আলহামদু লিল্লাহ) বলবে। যখন একে অপরের সাথে সাক্ষাত করবে তখন আসসালামু আলাইকুম বলবে। পরস্পরের কথাবার্তা শেষে (আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন বলবে)” (সূরা ইউনুস: ২৫)

জান্নাতের হুরেরা নিঃসন্দেহে জান্নাতীদের জন্য তৃপ্তীদায়ক

****** জান্নাতের হুরেরা নিঃসন্দেহে জান্নাতীদের জন্য তৃপ্তীদায়ক বিষয় হবে কিন্তু তারা লম্পট স্বভাব, বে-পরদা, বে-হায়া হবে না। না অন্য পুরুষের চোখে চোখ রাখবে, বরং যথেষ্ট লজ্জাবোধের অধিকারীনী, চরিত্রবান, পর্দাশীল হবে। যাদেরকে ইতিপূর্বে কোনো পুরুষ দেখেও নাই আর স্পর্শও করে নাই। শুধু স্বীয় স্বামী ভক্ত হবে। (সূরা রহমান: ২২-২৩, ৩৫-৩৭, সূরা বাকারা: ২৫)

কুরআন মাজীদের উল্লেখিত নির্দেশসমূহের আলোকে একথা বুঝতে কষ্টকর নয় যে নিঃসন্দেহে জান্নাত জীবন যাপনের আবাসস্থল, কিন্তু ঐ জীবন যাপনের কল্পনা তাকওয়া, সৎ আমল, পবিত্রতার মাপকাঠির সাথে সম্পৃক্ত যার দাবী আল্লাহ তাঁর বান্দাদের নিকট দুনিয়াতে করেছেন।

যা তারা তাদের সর্বাক সাধনার পরও যথাপোযুক্ত ভাবে হাসিল করতে পারে নি। আর আল্লাহর এ বান্দারা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহের মাধ্যমে তাদেরকে তাকওয়া, সৎ আমল, পবিত্রতার ঐ মাপকাঠি পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিবেন, যার দাবী তিনি তাদের নিকট দুনিয়াতে করেছিলেন। জান্নাতের এ অবস্থার কথা স্মরণে রাখুন আর চিন্তা করুন যে, কোনো এমন মুসলমান আছে, যে জান্নাতে

****** প্রবেশ করার পর হুর, বালাখানা, খানা-পিনা ইত্যাদির পূর্বে তার ওপর বেশী অনুগ্রহ পরায়ন, পৃথিবীবাসীর নিকট পথপ্রদর্শক রূপে আগত, গুনাহগারদের জন্য সুপারিশকারী, রাহমাতুললীল আলামীন, ইমামুল আম্বিয়া, মুত্তাকীনদের সরদারের চেহারা মোবারক একবার দেখার জন্য উদগ্রীব থাকবে না?

****** শত কোটি নয়, অসংখ্য পবিত্র আত্মা যার মধ্যে থাকবে নবীগণ, সৎ লোক, শহীদগণ, নেক্কার, উলামা, মুফতীও নবী মানাহার-এর যিয়ারতের অপেক্ষায় থাকবে।

****** কোনো এমন জান্নাতী হবে, যে তার অন্তর ইসলামের বৃক্ষকে সতেজ রাখতে স্বীয় শরীরের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে এমন জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবী, বদর ও উহুদের শহীদগণ, রাসূলের হাতে বৃক্ষের নীচে বাইয়াত গ্রহণ কারীগণ সহ অন্যান্য সাহাবাগণকে এক নযর দেখার জন্য আগ্রহী হবে না।

কিয়ামত পর্যন্ত দ্বীনের স্বার্থে জান, মাল

****** তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী, তাদের পরে কিয়ামত পর্যন্ত দ্বীনের স্বার্থে জান, মাল, ইজ্জত, আবরু, ঘর-বাড়ী, কুরবান কারী কত অসংখ্য সোনার মানুষ ছিল, যাদের সাথে সাক্ষাৎ বা যাদের মজলিশে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরেই থাকবে।

****** সর্বোপরি এ সমস্ত নিআমতের চেয়ে বড় নিআমত হবে আল্লাহর সাক্ষাৎ, যার জন্য সমস্ত মু'মিন অপেক্ষমান থাকবে। নিঃসন্দেহে হুর, বালাখানা, খানা-পিনা, জান্নাতের নিআমত সমূহের মধ্যে এক প্রকার নিআমত বটে, কিন্তু তাহবে জান্নাতের জীবনের একটি অংশ মাত্র, এটাই পরিপূর্ণ জান্নাতী জীবন নয়।

জান্নাতের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে জান্নাত বাসীদের জন্য হুর

****** জান্নাতের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে জান্নাত বাসীদের জন্য হুর, বালাখানা ব্যতীত তাদের মনপুত আরো অনেক ব্যবস্থাপনা থাকবে। যার মাধ্যমে প্রত্যেকে তার ইচ্ছামত নিজেকে ব্যস্ত রাখবে। দ্বীন ও মিল্লাত থেকে বিমুখ, কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ “পণ্ডিতবর্গ” কি করে জানবে যে জান্নাতে আল্লাহ জান্নাতবাসীদের জন্য তাদের নয়নাভিরাম মনের আত্মতৃপ্তীদায়ক হুর ও বালাখানা ব্যতীত আরো কত কি নিআমতের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।

পোস্ট ট্যাগঃ

মৃত্যু নিয়ে উক্তি
অকাল মৃত্যু নিয়ে উক্তি
বাবার মৃত্যু নিয়ে উক্তি
বন্ধুর মৃত্যু নিয়ে উক্তি
শিক্ষকের মৃত্যু নিয়ে উক্তি
মায়ের মৃত্যু নিয়ে উক্তি
মানুষের মৃত্যু নিয়ে উক্তি

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url