নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া

নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া- Namaz rules and supplications

নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া

নামাজ আদায়ের জন্যে প্রথমেই আপনাকে এজন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করুনতে হবে, অন্য কথায়, সালাতের পূর্বশর্তসমূহ পূর্ণ করুনতে হবে। তা হচ্ছে, আপনার ‘উযু’ থাকতে হবে বা করে নিতে হবে এবং আপনাকে এব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে, 

আপনার শরীরের কোথাও কোন নাপাকী লেগে নেই, আপনার পরিধানের কাপড়ু-চোপড়ু পাক ও আপনি যেখানে নামাজ আদায় করবেন সে জায়গাটি পাক। এরপর আপনাকে নীচের নিয়মে নামাজ আদায় করুনতে হবে:

১। প্রথমে কা'বার দিকে মুখ করে দাঁড়ান। আরবী ভাষায় একে ‘কিয়াম' বলা হয় এবং যে দিকে মুখ করে দাঁড়ানো হয় সে দিককে বলা হয় 'কিবলাহ্'। বাংলাদেশ থেকে কিবলাহ্ প্রায় সোজা পশ্চিম দিকে। অন্যান্য দেশে কিবলা দিক হবে আলাদা। নামাজ শুরু করার আগে অবশ্যই আপনাকে কিবলা দিক সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে হবে।

২। এরপর আপনাকে নিয়্যত করতে হবে, অর্থাৎ আপনি যে নামাজ শুরু করছেন এ ব্যাপারে মনস্থির করতে হবে। আপনি চাইলে শুধু মনে মনে নিয়্যত করতে পারেন, চাইলে নীচু স্বরে শব্দ ও বাক্যযোগেও নিয়্যত করতে পারেন। নিয়্যতে কোন্ ওয়াক্তের কোন্ ধরনের ও কত রাকা'আত নামাজ তা উল্লেখ করতে হবে। যেমন : ফজরের ফরয নামাজ আদায়ের নিয়্যত উল্লেখ করা হলো:

“আমি আল্লাহর জন্যে কিবলাহ্-মুখী হয়ে ফজরের* দুই রাকা'আত* ফরয* নামাজ আদায়ের নিয়্যত করুনছি।”

মহিলাদের নামাজের নিয়ম

৩। আপনার দুই হাত কান পর্যন্ত উঁচু করুন। (মহিলাদের ও বালিকাদের কাঁধ পর্যন্ত উঁচু করুনতে হবে।) এরপর (আল্লাহু আকবার- আল্লাহ্ সর্ব শ্রেষ্ঠ) বলতে হবে। একে তাীরাতুল ইহরাম বলা হয়। এর মানে হচ্ছে, এ তাকবীর বলার সাথে সাথে দুনিয়ার কাজকর্ম আপনার জন্য হারাম হয়ে গেল।

অন্যান্য সালাতের ক্ষেত্রে যেটি প্রযোজ্য সেটি উল্লেখ করুনতে হবে।

৪। আপনার নাভীর ঠিক নীচে আপনার বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখুনতে হবে। (মহিলা ও বালিকাদেরকে বুকের ওপরে বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখুনতে হবে।) এরপর

ছানা পড়া

সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা'আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুক।

“হে আল্লাহ্! আপনারই পবিত্রতা ও আপনারই প্রশংসা। আপনার নাম বরকতময়, আপনার মহিমা সুমহান, আর আপনি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই।”

চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ম

এরপর পড়বেন:

আ'উযু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বানির রাজীম।

“আমি অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় নিচ্ছি।”

এরপর পড়বেনঃ

বিছমিল্লাহির রহমানির রাহীম

“সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু ও মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু করুনছি।”

৫। সূরাহ আল্-ফাতিহা (কুর'আন মজীদের প্রথম সূরাহ) পড়ুনঃ

সুরা ফাতিহা

আলহ্বামদুলিল্লাহি রব্বিল্ আ’লামীন। আর-রাহমানির রাহীম। মালিকি ইয়াউমিদ্দীন ইয়্যাকা না'বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন, ইহ্ দিনাছ ছিরাতাল মুস্তাকীম। ছিরাতল্লাযীনা আন্‘আমতা ‘আলাইহিম,গ্বইরিল মাগ্দুবি আ’লাইহিম ওয়ালাদ্ দল্লীন। (আল কুরআন থেকে সহিহ শুদ্ধ করে দেখে নিন)

সূরা ফাতিহা ব্যাখ্যা

“সকল প্রশংসা বিশ্বজাহানের রব আল্লাহর যিনি পরম দয়াময় ও মেহেরবান এবং শেষবিচার দিনের মালিক। আমরা শুধু আপনারই ইবাদাত করি এবং শুধু আপনারই নিকট সাহায্য চাই। আমাদেরকে সরল পথে চালাও- তাদের পথে যাদেরকে আপনি নে’আমত দিয়েছেন, তাদের পথে নয় যারা আপনার গযবের শিকার হয়েছে এবং তাদের পথেও নয় যারা গোমরাহ হয়েছে।”

এরপর নীচু স্বরে বলবে (আমীন)।

মনে রাখবেন যে কোন নামাজেই সূরাহ ফাতিহাহ পড়া বাধ্যতামূলক।

নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া

৬। এরপর কুর'আন মজীদের যে কোন সূরাহ (বা বড় সূরাহর অংশ, কমপক্ষে তিন আয়াত) পড়ুন। যেমন;

বিছমিল্লাহির রহমানির রাহীম

সূরা ইখলাস এর বাংলা অর্থ

কুল হুয়াল্লাহু আহাদ্ব। আল্লাহুছ্‌ ছামাদ্ব। লাম্‌ ইয়ালিদ্ ওয়া লাম্‌ ইয়ুলাদ্ব। ওয়া লাম্‌ ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান্ আহাদ্ব।

“বলঃ তিনিই আল্লাহ্! তিনি এক। আল্লাহ্ চিরন্তন অবিনশ্বর। তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং তিনি জন্ম নেন নি। আর তাঁর মত কেউই নেই।” (সূরাহ আল-ইখলাছ surah ikhlas -১১২)

৭। -“আল্লাহু আকবার" বলে মাথা ও শরীরের উপরের অংশ নীচু করুন। আপনার হাতের দুই তালু দুই হাঁটুর ওপর রাখুন৷ এবার তিন বার পড়ুন; সুবহানা রাব্বিয়াল ‘আযীম (সব পবিত্রতা আমার রবের যিনি সুমহান)। এ অবস্থাটিকে রুকূ' বলা হয় ৷

৮। সামি 'আল্লাহু লিমান হামিদাহ্ (যারা আল্লাহর প্রশংসা করে তিনি তা শোনেন) বলতে বলতে দাড়িয়ে পড়ুন। দাঁড়িয়েই বলুন;- রাব্বানা লাকাল হাম্দ্‌ (হে আমাদের রব! আপনারই সকল প্রশংসা)। এভাবে কিয়ামের অবস্থায় ফিরে আসাকে ই'তিদাল্ বলা হয়।

৯। “আল্লাহু আকবার' বলে সিজদায় চলে যান। সিজদার সময় কপাল, নাক, উভয় হাতের তালু, উভয় হাঁটু ও উভয় পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি মেঝে বা জায়নামায স্পর্শ করুন। এ অবস্থায় তিনবার পড়ুনঃ

সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা (সব পবিত্রতা আমার রবের যিনি সর্বোচ্চ)। এ অবস্থাকে সিজদাহ্ বা সাজ্দাহ্ বলা হয়। সতর্ক থাকবে, সিজদার সময় যেন বাহু মেঝে স্পর্শ না করে।

১০। “আল্লাহু আকবার” বলে মেঝে থেকে মাথা ও হাত তুলে হাঁটু ভাঁজ করে সোজা হয়ে বসুন এবং উভয়

হাতের তালু হাঁটুর ওপর রাখুন। কয়েক সেকেন্ড বিরতির পর পুনরায় “আল্লাহু আকবার” আবার" বলুন সিজ্দাহ্ করুন ও তিনবার “সুব্‌হানা রাব্বিয়াল্ আ'লা” পড়ুন। এর পর “আল্লাহু আকবার” বলে সিজ্দাহ্ থেকে ওঠুন।

দুই সিজদার মাঝখানের বিরতির সময় ইচ্ছা করলে নীচের দোয়াটি পড়তে পারেন:

রাব্বিগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াহ্দিনী ওয়া 'আফিনী ওয়ারয়ুকনী।

“হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করো, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে হেদায়াত করুন, আমাকে মাফ করুন, আমাকে রিযিক দান করুন।”

দ্বিতীয় সিজ্‌দাহ্ থেকে ওঠার সাথে সাথে এক রাকা'আত্‌ শেষ হলো। এরপর একই নিয়মে দ্বিতীয় রাক্ আহ্ আদায় করুন। তবে এ ক্ষেত্রে ছানা' (সুবহানাকা) তা'আওউস্ ('আউযু বিল্লাহ্) ও তাীয়াহ্ (বিমিল্লাহ) পড়তে হবে না। দ্বিতীয় রাক্'আতের দ্বিতীয় সিজদা পরে সোজা হয়ে বসুন এবং নীরবে নীচের তাশাহ্হুদ পড়ুনঃ

নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া- Namaz rules and supplications

তাশাহুদ আরবি

আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াছালাওয়াতু ওয়াত্তাইয়্যিবাত্। আস্সালামু 'আলাইকা আইয়ুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্। আস্সালামু 'আলাইনা ওয়া 'আলা ‘ইবাদিল্লাহিছ্ ছালেহীন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদানন্ 'আব্দুহু ওয়া রাসূলুহ্। (আরবী উচ্চারণ সঠিক ভাবে দেখে নিতে হবে)

তাশাহুদ এর বাংলা অর্থ

“সকল উত্তম সম্বোধন, নামাজ ও যাকিছু উত্তম তা আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার ওপর সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত। আমাদের ওপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর সালাম। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দাহ্ ও তাঁর রাসূল।” (বুখারী ও মুসলিম)

নামাজ তিন রাকা'আত হলে (যেমন: মাগরিবের ক্ষেত্রে) বা চার রাকা'আত হলে (যেমন : যোহর, আছর ও ‘ইশা’য়) দ্বিতীয় রাক্‘আতে তাশাহুদ পড়ার পর পরবর্তী রাক'আতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে। কিন্তু দুই রাক্'আতের সালাতের ক্ষেত্রে তাশাহ্হুদের পরে না উঠে বসে থাকবে এবং হযরত নবী করীম (সাঃ) এর ওপর নামাজ বা দরূদ পড়বেন:

দোয়া দরুদ শরীফ

আল্লাহুম্মা ছাল্লে 'আলা মুহাম্মাদিন ওয়া 'আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা 'আলা ইব্রাহীমা ওয়া 'আলা আলি ইব্রাহীম। ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া 'আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা 'আলা ইবরাহীমা ওয়া 'আলা আলি ইবরাহীম্। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। (আরবী উচ্চারণ সঠিক ভাবে দেখে নিতে হবে)

দুরুদে ইব্রাহীম বাংলা উচ্চারণ

“হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের ওপর রহমত ও বরকত দান করুন ঠিক যেভাবে ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের ওপর রহমত ও বরকত দান করেছিলে। নিঃসন্দেহে আপনি চিরপ্রশংসিত ও চিরমহীয়ান। হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের ওপর বরকত নাযিল করুন ঠিক যেভাবে বরকত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের ওপর। নিঃসন্দেহে আপনি চিরপ্রশংসিত ও চিরমহীয়ান।” (মুসলিম) এরপর নীচের দু'আ দু'টি পড়ুন:

দোয়া মাসুরা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

আল্লাহুম্মা ইন্নী যলামতু নাফসী যুলমান কাছিরাঁও ওয়া-লা ইয়াগফিরুয্ যুনুবা ইল্লা আতা। ফাগফিরলী মাগফিরাতাম্ মিন ইন্‌দিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আন্তাল গাফুরুর রাহীম।

“হে আল্লাহ্! নিঃসন্দেহে আমি আমার নিজের ওপর অনেক অন্যায় করেছি এবং আপনি ছাড়া কেউই গুনাহ্ মাফ করতে পারে না। অতএব, আপনার নিজের পক্ষ থেকে আমাকে পুরোপুরি মাফ করে দাও এবং আমার প্রতি দয়া করুন। নিঃসন্দেহে আপনি ক্ষমাশীল দয়াবান।” (বুখারী ও মুসলিম)

শ্রেষ্ঠ মোনাজাত
বাংলা মোনাজাত (Dua Bangla)

রাব্বীজ্‌'আলনী মুকীমাছ্ ছালাতি ওয়া মিন্ যুররিয়াতী। রাব্বানা ওয়া তাকাব্বাল্ দু'আ ৷ রাব্বানাগ্ ফিরলী ওয়া লিওয়ালিদাইয়া ওয়া লিলমু'মিনীনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল্‌ হিছাব (আরবী উচ্চারণ সঠিক ভাবে দেখে নিতে হবে)।

“হে আমার রব! আমাকে ও আমার বংশধরদেরকে ছালাত কায়েমকারী বানাও। হে আমাদের রব! আমাদের দু'আ কবুল কর। হে আমাদের রব! শেষবিচারের দিনে আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মু'মিনদেরকে ক্ষমা কর।” (সূরাহ ইব্রাহীম-৪০-৪১)।

এবার আপনার মুখ ডান দিকে ফিরিয়ে বল:

আস্সালামু 'আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্।

দুই রাকা'আত্ ছালাত আদায়ের এটাই নিয়ম।

যুহর, আছর ও ‘ইশা'র চার রাকা'আহ্ ফরয ছালাত, মাগরিবের তিন রাকা'আত্‌ ফরয ছালাত ও বিতরের তিন রাকা'আত্ ছালাতের ক্ষেত্রে অবশিষ্ট এক বা দুই রাকা'আত্‌ ছালাত একই নিয়মে আদায় করবেন। তবে ফরয ছালাতের শেষ দুই রাকা'আত্‌ বা মাগরিবের শেষ রাক্‘আতের ক্ষেত্রে সুরাহ্ আল্-ফাতিহার পরে অন্য সূরাহ পড়তে হবে না। 

কিন্তু বিতর্ ও চার রাকা'আত সুন্নাত ছালাতের বেলায় প্রথম দুই রাকা'আতের পরের দুই বা এক রাক্‘আতেও সুরাহ্ আল্-ফাতিহার পরে অন্য সূরাহ পড়তে হবে ।

ফজর্, মাগরিব ও ‘ইশা'র ফরয ছালাতের প্রথম দুই রাকা'আতে অন্যদের শোনার মত শব্দ করে কুরআন পড়তে হয়। কিন্তু যুহর ও 'আছরের ছালাতে নীরবে পড়তে হয়। সব রকম ছালাতেই তাসবীহ্ (সুবহানা রাব্বীয়াল 'আযীম ও সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা) তাশাহ্হুদ ও দরূদ নীরবে পড়তে হয়।

ফজর, মাগরিব ও ‘ইশা'র ছালাত জামা'আতে আদায় করার সময় শুধু ইমাম সাহেব শব্দ করে কুর'আন পড়বেন। জুমু'আহর ছালাতের বেলায়ও তাই।

“আপনাদের ওপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।” তারপর বাম মুখ ফিরিয়ে উপরের কথাটি পুনরায় বলবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url