নাপাক অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া

মোবাইল ফোনে আলকুরআন পাঠের নিয়ম Reciting Al-Quran on mobile phones

নাপাক অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া

তথ্য অগ্রগতির বৃদ্ধি সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন এনেছে একজন ব্যক্তির জীবনে। জনজীবনকে নিয়ন্ত্রণ করেছে বর্তমান যুগ। 

জীবনকে সহজলভ্য করে তুলেছে। এই তথ্যপ্রযুক্তির আলোকে ইদানীং অনেকটাই বেড়েছে জীবনের কার্যক্রমে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। সাধারণ মানুষের জীবন একইভাবে এই অগ্রগতির সাথে তুলনামূলকভাবে খুবই সহজ হয়ে উঠেছে। 

একইভাবে, বিভিন্ন নতুন নতুন নিয়ম তৈরি হয়েছে। আমরা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চিন্তাশীল লাইফে তথ্য উন্নয়ন ব্যবহার করে থাকি তন্মধ্যে একটি স্মার্টফোনের বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আলকুরআন থেকে উপকৃত হওয়া বা কুরআন পাঠ। নীচে আমরা কিভাবে মোবাইলের মাধ্যমে আলকুরআন অধ্যয়ন করবো তা নিয়ে আলোচনা করব।

আলকুরআন অ্যাপ্লিকেশন

গুগল প্লে-স্টোরে বর্তমানে আলকুরআন কারীমের পর্যাপ্ত সংখ্যক অ্যাপের ব্যবহার দেখা যায়। আমরা বেশিরভাগই এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করি। 

তবুও, একজন মুসলিম হিসাবে, এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করার আগে সতর্কতা হওয়া উচিত। যেহেতু এই ধরনের বিপুল পরিমাণ অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, অনেক ধরনের ত্রুটিও মিশানো থাকে। যার সঠিক ব্যবহার না জানলে মানুষ গুনাহগার হতে পারে এবং বিপথগামী হতে পারে। 

ফলস্বরূপ, কোনো অ্যাপ্লিকেশনকে বাধাহীনভাবে ব্যবহার করা সুনির্দিষ্ট হবে না; বরং এই বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে এই অ্যাপলিকেশন গুলোর ব্যবহার জানা উচিত যারা এই বিষয়ে পারদর্শী। 

এই বিভ্রান্তিগুলি এড়াতে একজন দূরদর্শী বিশেষজ্ঞ বা হাফেজের সাথে এই বিষয়ে পরামর্শ করা উচিত। আমি যে অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করছি তা সঠিকভাবে হচ্ছে কি না? মুসলিম শরীফ হাদীসে বলা হয়েছে, 

এই দ্বীনী জ্ঞানগুলো ইসলামের একটি অংশ, তা তোমরা দ্বীন হিসেবে কোথা থেকে শিখছো সে বিষয়ে সতর্ক থাকো (মুসলিম, হাদিস; ২৬)। তাই সতর্ক থাকুন কিভাবে  আলকুরআন পাঠ থেকে আপনার অবসর সময় পার করছেন তাকি সঠিকভাবে হচ্ছে।

মোবাইল ফোন থেকে দেখে দেখে আলকুরআন পাঠ

ফোন বা কম্পিউটার থেকে দেখে দেখে আলকুরআন পঠন করা ইসলামে বৈধ বলে বিবেচিত। এভাবে পাঠ করতে অযু করা জরুরি নয়। অজু ছাড়াও কুরআন পড়া যাবে। তবে অজু করে পাঠ করা মুস্তাহাব বলে বিবেচিত। যেহেতু আলকুরআন পাঠ উতকৃষ্ট এক ধরনের জিকির। 

নবীজী (সাঃ) বলেছেন, অজু ছাড়া কুরআন পাঠ করাকে বা যিকির করাকে পছন্দ করতেন না; আবু দাউদ-হাদিস-১৭। কিন্তু অযু ছাড়া শুধু ফোনের মনিটরের কোরআন স্পর্শ করার ক্ষেত্রে হাদিসবেত্তাদের মতে ভিন্নতা পাওয়া যায়। অনেক আলেম বলেছেন যে, কুরআনের মনিটরের লেখা পারমানেন্ট না। এটি আয়নার মতো প্রতিচ্ছবি। 

তাছাড়া মনিটরের উপর একটি আবরণও থাকে। সেক্ষেত্রে অযু ছাড়া সেটা টাচ করা যাবে। আবার আরেকটি দলের মতে, পবিত্র হওয়া ছাড়া ফোনের মনিটরের কুরআন টাচ করা যাবে না। বইয়ের পাতায় যেমন টাচ করা যায় না ঠিক তেমনি। তাদের মতে ফোনের ফাকা জায়গায় স্পর্শ করা যাবে। কেননা নবীজি (সাঃ) বলেছেন যে, পবিত্রতা ছাড়া যেনো কেউ আল কুরআন টাচ না করে; ইমাম মালিক, হাদিস-নং- ৪৫৫। 

আর স্ক্রিনটাচ মোবাইলে প্লাস্টিক বা কাচের আবরণ যেহেতু মূল স্ক্রিনের সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে যুক্ত এবং তাতে হাতের টাচও কার্যকর, তাই এ ক্ষেত্রে অজু ছাড়া গ্লাসের ওপর স্পর্শ করা হচ্ছে, লেখার ওপর নয় এ ধরনের কথা বলা শরীয়ত সম্মত নয়। যেহেতু আলকুরআন (Al-Quran) সর্বশ্রেষ্ঠ ও অধিক মর্যাদাবান গ্রন্থ। সেহেতু তা পবিত্র অবস্থায় ব্যবহার করা উচিত।

এমপিথ্রি হিসাবে আলকুরআন শ্রবণ

ফোনের মাধ্যমে আলকুরআনের অডিও শ্রবণ করা যায়েজ। কোনো বাধা নেই। কিন্তু কুরআনের অডিও শ্রবণের সময় তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। কারণ তা চলাকালীন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকা কুরআনকে অসম্মান করা বা গোনাহের কাজ। কারন তেলওয়াত শোনা একটি আমলের কাজ। 

মহান আল্লাহপাক এরশাদ করেন যে, ‘আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তা কান লাগিয়ে শুনো এবং নিশ্চুপ থাকো, যাতে তোমাদের ওপর রহমত বর্ষিত হয়। ’ (সুরা : আরাফ: ২০৪)

ফোন সাথে নিয়ে পায়খানায় যাওয়ার নিয়ম?

আলকুরআন এ্যাপ ইনস্টল থাকা মোবাইল নিয়ে টয়লেটে যাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, ফোনে যদি কুরআন এ্যাপ চালু না থাকে তাহলে তা নিয়ে পায়খানায় যাওয়া যাবে। তবে যদি মোবাইলের মনিটরে কুরআন চালু থাকে তা নিয়ে যাওয়া যাবে না। ফতওয়া নং- ১৪৪১০৯২০১১৯৩

ফোনে ভিন্ন কাজের সময় কি করব

যখন মোবাইলে আলকুরআন তিলওয়াত চালু করা থাকে তখন অন্য কাজে মনোযোগ না দিয়ে তা শ্রবণ করা কুরআনকে সম্মান করা এবং তার হক আদায় হয় ও বড় সওয়াবের কাজ হয়ে থাকে।

কিন্তু তিলওয়াতও চালু থাকলো আপনিও অন্য কাজে মনোযোগ দিলেন তাহলে এটা শিস্টাচার বিরোধী কাজ ও গুনাহের ঘটনা। ইবনে ওমর (রাঃ) যখন কোরআন তিলাওয়াত করতেন তখন কোরআন তিলাওয়াত হতে অবসর না হয়ে কোনো কথা বলতেন না। (বুখারি, হাদিস নং-৪৫২৬)

পরিশেষেঃ

আমরা যা ইবাদত বন্দেগী ইসলামও জীবনে, জিকির আযগার, নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত আদায় করে থাকি তা একমাত্র মহান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি ও মহানবী সাঃ এর দেখানো পথে আদায় করতে হবে। ইনশাআল্লাহ্

অনলাইন থেকে সংগৃহীত

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url