জাহান্নাম হইতে বিদায়

জাহান্নাম হইতে বিদায়

জাহান্নাম হইতে বিদায়

বাংলাদেশের বিখ্যাত উপন্যাসিক শওকত ওসমানের লেখা উপন্যাস হলো জাহান্নাম হইতে বিদায়। এ উপন্যাসে তিনি লিখেছেন পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী কিভাবে বাংলার মানুষের উপর নির্যাতন করেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা তিনি লিখেছেন এ বইতে। তাই আমাদের এ বইটি পড়া উচিত।

তবে আজকের পোস্টে আমরা জানবো আসল জাহান্নামে মহান আল্লাহপাক আমাদের জন্য কি শাস্তি রেখেছেন এবং জাহান্নামের খাবারই বা কি তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। তাই পোস্টটি ভালোভাবে পড়বেন।

জাহান্নামের সর্বনিম্ন শাস্তি

(আল্লাহ তাঁর দয়া ও অনুগ্রহে তা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। তার হতেই সর্বময় কল্যাণ)

অর্থ: “ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: জাহান্নামে সবচেয়ে হালকা আযাব দেয়া হবে আবু তালেবকে, সে এক জোড়া জুতা পরে থাকবে, আর এর ফলে তার মস্তিষ্ক বিগলিত হয়ে পড়তে থাকবে।” (মুসলিম ১/২১২)

হালকা আযাব দেয়ার জন্য কোনো কোনো মুজরিমদের পায়ের নিচে আগুনের আঙ্গরা রাখা হবে:

জাহান্নামীদের অবস্থা

জাহান্নামের আযাবের কারণে জাহান্নামী চিৎকার করে ভয়ানক আওয়াজ করতে থাকবে আর সেখানে এত হট্টগোল হবে যে, এর ফলে কোনো আওয়াজই স্পষ্ট করে কানে শোনা যাবে না:

জাহান্নামে জাহান্নামীদের না মৃত্যু হবে

জাহান্নামে জাহান্নামীদের না মৃত্যু হবে আর না তাদের আযাব হালকা হবে:

অর্থ: “আর যারা কাফির তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, তাদেরকে মৃত্যুর আদেশও দেয়া হবে না যে, তারা মরে যাবে এবং তাদের থেকে তার শাস্তি ও লাঘব করা হবে না।” (সূরা ফাতির)

জাহান্নামীদের শরীরের চামড়া জ্বলে যাবে

জাহান্নামীদের শরীরের চামড়া যখনই জ্বলে যাবে, তখনই তার স্থলে আবার নতুন চামড়া লাগিয়ে দেয়া হবে, যাতে তারা একাধারে অযাবে লিপ্ত থাকে:

অর্থঃ নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে প্রবেশ করাব আগুনে। যখনই তাদের চামড়াগুলো পুড়ে যাবে তখনই আমি তাদেরকে পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আস্বাদন করে আযাব। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা ৫৬)

জাহান্নামীদের চেহারা

জাহান্নামীদের চেহারার চামড়া দগ্ধ হয়ে থাকবে আর তাদের দাঁতসমূহ বাহিরে বের হয়ে থাকবে:

জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি

জাহান্নামে কাফিরের একটি দাঁত উহুদ পাহাড়ের সমান হবে:

জাহান্নামে কাফিরের চামড়া তিনদিন চলার রাস্তার সমান মোটা হবে:

অর্থ: “আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: জাহান্নামে কাফিরের দাঁত বা বিষাক্ত দাঁত উহুদ পাহাড়ের সমান হবে। আর তার চামড়া তিনদিন চলার রাস্তার সমান মোটা হবে।” (মুসলিম ৪/২৮৫১)

কাফিরের চোয়ালের দাঁত উহুদ পাহাড় সম

কোনো কোনো কাফিরের চোয়ালের দাঁত উহুদ পাহাড় সম হবে এবং তার শরীরের অন্যান্য অংশও ঐ আকারেই হবে:

জাহান্নামে কাফিরের উভয় কাঁধের মাঝের দূরত্ব হবে কোনো দ্রুতগামী অশ্বারোহির তিনদিনের চলার পথ সম:

কোনো কোনো কাফিরের কান ও কাঁধের মাঝে ৭০ বছরের রাস্তর দূরত্ব হবে আর তাদের শরীরে রক্ত ও কফের ঝর্ণা প্রবাহিত হবে:

জাহান্নামে কাফিরের চামড়া ৪২ হাত

জাহান্নামে কাফিরের চামড়া ৪২হাত (৬৩ফিট) মোটা হবে। আর দাঁত হবে উহুদ পাহাড় সম, তার বসার জন্য মক্কা ও মদীনার মাঝের দূরত্বের সমান স্থান লাগবে (৪১০ কি. মি.)

জাহান্নামীর একটি বাহু ‘বাইজা' পাহাড় সম হবে আর রান হবে ওরকান পাহাড়ের সমান:

কোনো কোনো কাফিরের শরীরকে এত বড় করে দেয়া হবে যে, বিশাল প্রশস্ত জাহান্নামের এক কোণ সে দখল করে থাকবে

জাহান্নামে পিপিলিকার শরীর

অহংকারী ব্যক্তিদেরকে জাহান্নামে পিপিলিকার শরীরের ন্যায় তুচ্ছ শরীর দেয়া হবে

অর্থ: “আমর বিন শুআইব (রা) তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে, তিনি নবী সাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন: কিয়ামতের দিন অহংকার কারীদেরকে পিপিলিকার ন্যায় মানব আকৃতি দিয়ে উঠানো হবে। সর্বদিক দিয়ে তার ওপর লাঞ্ছনার ছাপ থাকবে,

জাহান্নামে এক বন্দিখানার দিকে তাকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যার নাম হবে 'বুলিস' উত্তপ্ত আগুন তাকে ঘিরে থাকবে, আর তাকে জাহান্নামীদের শরীর থেকে নির্গত কাশি ও রক্ত পান করতে দেয়া হবে। যাকে 'তিনাতুল খাবাল' বলা হবে।” (তিরমিযী ৪/২৪৩২)"

জাহান্নামী জ্বলে কয়লার ন্যায় হবে

জাহান্নামের আগুনে জাহান্নামী জ্বলে জ্বলে কয়লার ন্যায় হয়ে যাবে:

অর্থ: “আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করার পর, আল্লাহ বলবেন: যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমান আছে তাকে জাহান্নাম থেকে বের কর। তখন জাহান্নাম থেকে তাদেরকে বের করা হবে, আর তারা জ্বলে জ্বলে কয়লার মত হয়ে যাবে,

তখন তাদেরকে আবার হায়াত (বর্ণনাকারী মালেক এ দু'টি শব্দের কোনো একটির ব্যাপারে সন্দেহ করেছেন) নামক নদীতে নিক্ষেপ করা হবে, এর ফলে তারা যেন নতুনভাবে জন্ম নিল, যেমন কোনো নদীর তীরে নতুন চারা জন্মায়। এর পর নবী সাঃ বললেন: তোমরা কি দেখ নি যে, নদীর তীরে চারা গাছ কিভাবে হলুদ বর্ণের পেচানো অবস্থায় জন্ম নেয়।” (বুখারী ১/২২)

জাহান্নামে এত অশ্রু ঝড়াবে যে

জাহান্নামী জাহান্নামে এত অশ্রু ঝড়াবে যে, তাতে নৌকা চালানো যাবে:

জাহান্নামের খাবার

পানাহারের বিষয়ে মানুষ কত উন্নত মনোভাব রাখে তা প্রত্যেকে তার নিজের আলোকে চিন্তা করতে পারে। যে খাবার গলে পঁচে দুর্গন্ধ গেছে, বা তার রুচীসম্মত হয়নি তাতো সে স্পর্শ করাও ভাল মনে করে না। কোনো কোনো মানুষ খাবারে লবণ মরিচের সামান্য কম বেশিকেও সহ্য করে না।

স্বাদ ব্যতীত, খাবার দাবার মানুষের স্বাস্থ্যের সাথেও গভীর সম্পর্ক রাখে, তাই উন্নত বিশ্বে খাদ্য দ্রব্যের প্রতি অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়। বাহারী স্বাদের জন্য মানুষ কত সুন্দর সুন্দর পানাহার সামগ্রী তৈরী করে, কোনো অতিরঞ্জন ব্যতীতই বলা যায় যে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পেশ করা অসম্ভব।

পানির মারাত্মক পিপাসা

পৃথিবীতে এত বাহারী স্বাদের পাগল মানুষ যখন পরকালে স্বীয় কৃতকর্মের পরীক্ষার জন্য সম্মুখীণ হবে, তখন সর্বপ্রথম তার যে চাহিদা দেখা দিবে তা হলো পানির মারাত্মক পিপাসা। নবীগণের সরদার মুহাম্মদ সাঃ স্বীয় হাউজে (জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে হাশরের মাঠে) আসন গ্রহণ করবেন, যেখানে তিনি নিজ হাতে পানি সরবরাহ করে ঈমানদারদের পিপাসা মিটাবেন।

জাহান্নামীদের পানীয় কি হবে

কাফির মুশরিকরাও তাদের পিপাসা মিটানোর জন্য হাউজের নিকট আসবে, কিন্তু আল্লাহর রাসূল সাঃ নিজ হাতে তাদেরকে দূরে সরিয়ে দিবেন। (ইবনে মাজা)

বিদআতীরাও পানির জন্য আসবে

বিদআতীরাও পানি পান করার জন্য আসার চেষ্টা করবে কিন্তু তাদেরকেও দূরে সরিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী)

কাফির, মুশরিক ও বিদআতীরা হাশরের মাঠে এ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পিপাসাত অবস্থায় অতিক্রম করবে এবং শেষ পর্যন্ত এ অবস্থায়ই জাহান্নামে যাবে। (সূরা মারইয়াম ৮৬)

জাক্কুম ফল

জাহান্নামে যাওয়ার পর যখন তারা খাবার চাইবে, তখন তাদেরকে জাক্কুম বৃক্ষ ও কাটা বিশিষ্ট ঘাস দেয়া হবে।

জাহান্নামীরা অরুচী সত্ত্বেও এক লোকমা করে মুখে দিবে তাতে তাদের ক্ষুধা তো মিটবেই না বরং শাস্তির মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে। উল্লেখ্য জাক্কুম বৃক্ষ ও কাটা বিশিষ্ট ঘাস জাহান্নামেই উৎপন্ন হবে। এর অর্থ হলো এই যে, এ উভয় খাবার এতটা গরম তো অবশ্যই হবে যতটা গরম হবে জাহান্নামের আগুন।

জাহান্নামীদের পানীয় কি হবে

বরং বলা যেতে পারে যে এ খাবার আগুনের কয়লার ন্যায় হবে, যা জাহান্নামীরা তাদের ক্ষুধা মিঠানোর জন্য গলধঃকরণ করবে। মূলত জাহান্নামের খাবার তার বেদনাদায়ক আযাবেরই এক প্রকার কঠিন আযাব হবে। আল্লাহ মাফ করুন। খাওয়ার পর জাহান্নামী পানি চাইবে, তখন পাহারাদার তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির স্থান থেকে তার ঝর্ণার নিকট নিয়ে আসবে, যেখানে কঠিন গরম পানি দিয়ে তাদেরকে সাদর সম্ভাষণ জানানো হবে।

জাহান্নামের উতপ্ত আগুনে বাষ্প না হয়ে

ঐ পানি জাহান্নামের উতপ্ত আগুনে বাষ্প না হয়ে পানি হয়ে থাকবে। সম্ভবত কোনো শক্ত পাথর হবে যা জাহান্নামের আগুনে বিগলিত হয়ে পানিতে পরিণত হয়েছে, আর তাই জাহান্নামীদের পানীয় হবে। (আল্লাহই এ ব্যাপারে ভাল জানেন।)

জাহান্নামী পান করতে গেলে ১ম ঢোকেই

জাহান্নামী তা পান করতে গেলে প্রথম ঢোকেই তাদের মুখের সমস্ত গোশত গলে নীচে নেমে যাবে। (মোস্তাদরাক হাকেম)

আর পানির যে অংশ পেটে যাবে তার মাধ্যমে তার সমস্ত নাড়ী-ভুঁড়ি কেটে পিঠ দিয়ে গড়িয়ে পায়ে এসে পড়বে। (তিরমিযী)

জাহান্নামের পানাহারে জাহান্নামীরা অতিষ্ঠ হবে

মূলত তা পান করাও বেদনাদায়ক শাস্তিরই আরেক প্রকার শাস্তি হবে। এ আদর আপ্যায়নের পর দারোয়ান তাকে আবার জাহান্নামের শাস্তির স্থানে নিয়ে যাবে। জাহান্নামের পানাহারে জাহান্নামীরা অতিষ্ঠ হয়ে জান্নাতীদের নিকট আবেদন করবে যে, কিছু পানি বা অন্য কোনোকিছু আমাদেরকেও পান করার জন্য দাও। জান্নাতীরা বলবে জান্নাতের পানাহার আল্লাহ কাফিরদের জন্য হারাম করেছেন। (সূরা আরাফ ৫০)

জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুন

জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুন বেদনাদায়ক হওয়া সত্ত্বেও বিষাক্ত, দুর্গন্ধময় ও কাটা বিশিষ্ট হবে। সাথে সাথে গরম পানি, দুর্গন্ধময় রক্ত, বমি ইত্যাদি পানীয় রূপে কঠিন আযাব হিসেবে দুষ্ট প্রকৃতির লোকদেরকে দেয়া হবে। সর্বজ্ঞ ও সর্ববিষয়ে অবগত তো একমাত্র আল্লাহ কিন্তু কুরআন ও হাদীস গবেষণার মাধ্যমে যতটুকু বুঝা যায় তাহলো এই যে, কাফিরদের জীবনের মূল দু'টি বিষয়ের ওপর, আর তা হলো পেট ও রিপুর গোলামী।

জাহান্নামীদের পানীয় কি হবে

এ উভয় বিষয় এমন পানাহারের দাবী করে যাতে তার চাহিদার আগুন আরো উত্তপ্ত হয়, চাই তা হালালভাবে হোক আর হারামভাবে, জায়েয পদ্ধতিতে হোক আর নাজায়েয পদ্ধতিতে, পাক হোক আর নাপাক, যুলুমের মাধ্যমে অর্জিত হোক না খিয়ানতের মাধ্যমে, লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত হোক না চুরি ডাকাতির মাধ্যমে তার কোনো যাচাই বাছাই নেই।

তাই কুরআন মাজীদে কোনো কোনো স্থানে কাফিরদেরকে জাহান্নামে শাস্তির সাথে সাথে যথেষ্ট পানাহার করতে এবং আনন্দ করার ভর্ৎসনাও দেয়া হয়েছে।

সূরা হিজরে এরশাদ হয়েছে: অর্থ: “তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা খেতে থাকুক, ভোগ করতে থাকুক এবং আশা তাদেরকে মোহাচ্ছন্ন রাখুক, পরিণামে তারা বুঝবে।” (সূরা হিজর ৩)

অন্যত্র এরশাদ হয়েছে: অর্থ: “আর যারা কুফরী করে তারা ভোগ-বিলাসে লিপ্ত থাকে, জন্তু জানোয়ারের ন্যায় উদর-পূর্তি করে, তাদের নিবাস জাহান্নাম।” (সূরা মুহাম্মদ ১২)

রিপু কয়টি ও কি কি

অতএব পেট ও রিপুর গোলাম পৃথিবীতে ভাল ভাল পানাহারে তৃপ্তিলাভ করে যখন স্বীয় স্রষ্টার নিকট উপস্থিত হবে, তখন কুফরীর পরিবর্তে জাহান্নামের আগুন আর সুস্বাদু খাবারের পরিবর্তে উত্তপ্ত, কাটা বিশিষ্ট, ঘাস গরম পানি অসহ্য দূর্গন্ধময় রক্ত ও বমির মাধ্যমে সাদর সম্ভাষণ জানানো হবে। (আল্লাহ এ ব্যাপারে ভাল জানেন)

চিরস্থায়ী জাহান্নাম আছেই সাথে

উল্লেখ্য যে, কাফিরদের জন্য তো চিরস্থায়ী জাহান্নাম আছেই সাথে সাথে অন্যান্য আযাবও থাকবে। এমনিভাবে যে মুসলমান হালাল হারামের মাঝে পার্থক্য করেনি সেও জাহান্নাম ও ঐ সমস্ত পানাহারের শাস্তি ভোগ করবে, যা কিতাব ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।

ইয়াতিমের সম্পদ ভোগকারীর ব্যাপারে তো কুরআনে স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে যে, অর্থ: “যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতিমদের ধন-সম্পদ গ্রাস করে নিশ্চয়ই তারা স্বীয় উদরে অগ্নি ব্যতীত কিছুই ভক্ষণ করে না এবং সত্বরই তারা অগ্নি শিখায় উপনীত হবে।” (সূরা নিসা ১০)

জাহান্নামের আযাব

নারীর লজ্জাস্থান থেকে নির্গত দুর্গন্ধময়

মুসনাদ আহমদে অন্য এক বর্ণনায় এসেছে ব্যভিচারকারী নর ও নারীর লজ্জাস্থান থেকে নির্গত দুর্গন্ধময় নিকৃষ্ট পদার্থও মদ পানকারীদের পানীয় হবে। (আল্লাহই এ ব্যাপারে ভাল জানেন)

অতএব হে ইয়াতিম ও বিধবাদের সম্পদ গ্রাসকারীরা। অন্যের সম্পদে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপকারীরা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনকারীরা, জুয়া, সুদ ঘুষের উপার্জনে নির্মিত অট্টালিকায় বসবাসকারীরা, হে মদ ও যুবক যুবতী নিয়ে মত্ত ব্যক্তিবর্গ!

একবার নয় হাজার বার চিন্তা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো যে, জাহান্নামে সৃষ্ট জাক্কুম বৃক্ষ, কাটা বিশিষ্ট ঘাস ভক্ষণ করবে? আগুনে পোড়ানো মানুষের শরীর থেকে নির্গত ঘাম ও বমি মিশ্রিত খাবার খাবে? দুর্গন্ধময় নিকৃষ্ট এবং কালো পানির উত্তপ্ত পান পাত্র পান করে জীবন রক্ষা করবে?

জাহান্নামীদের সাত ধরনের খাদ্য

অর্থ: “অতঃপর আছে কি কোনো উপদেশ গ্রহণকারী।” জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিম্নোক্ত চার প্রকার খাবার পরিবেশন করা হবে:

১. জাক্কুম ফল
২. দ্বারি
৩. গিসলিন
৪. জা গুসসা

১. জাক্কুম ফল

দুর্গন্ধময় তিক্ত, কাটা যুক্ত এক ধরণের খাবার, তা জাহান্নামীদের খাবার হবে। যা জাহান্নামের তলদেশ থেকে উৎপন্ন হয়, যার মুকুলসমূহ বিষাক্ত সাপের মাথার ন্যায় হবে:

জাক্কুম ফল খাওয়ানোর পর জাহান্নামীদেরকে উত্তপ্ত পানি পান করতে দেয়া হবে জাহান্নামের মেহমান খানায় জাহান্নামীদের মেহমানদারীর পর তাদেরকে তাদের স্ব স্ব স্থানে পৌঁছিয়ে দেয়া হবে:

অর্থ: আপ্যায়নের জন্য এগুলো উত্তম না জাক্কুম ফল বা বৃক্ষ? নিশ্চয় আমি তাকে যালিমদের জন্য করে দিয়েছি পরীক্ষা। নিশ্চয় এ গাছটি জাহান্নামের তলদেশ থেকে বের হয়। এর ফল যেন শয়তানের মাথা; নিশ্চয় তারা তা থেকে খাবে এবং তা দিয়ে পেট ভর্তি করবে। তদুপরি তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। তারপর তাদের প্রত্যাবর্তন হবে জাহান্নামের আগুনে। (সূরা সাফ্ফাত ৬২-৬৮)

জাক্কুম ফলের বিষাক্ততা

জাক্কুম ফল বিষাক্ততা পেটে এমনভাবে ব্যাথা দিবে যেন গরম পানি পেটে ফুটতেছে

অর্থ: “নিশ্চয় জাক্কুম ফল বৃক্ষ হবে, পাপীদের খাদ্য, গলিত তাম্রের মত, ওটা তার উদরে ফুটতে থাকবে ফুটন্ত পানির মত।” (সূরা দুখান ৪৩-৪৬)

জাহান্নামীদের খাবার এত বিষাক্ত হবে

জাহান্নামীদের খাবার এত বিষাক্ত হবে যে, যদি তার এক ফোটা পৃথিবীতে ছড়ানো হয়, তাহলে এ কারণে সমগ্র পৃথিবী বসবাস অনুপযোগী হয়ে যাবে

অর্থ: “আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: যদি যাক্কুমের এক ফোটা দুনিয়াতে নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে সমগ্র দুনিয়ার প্রাণীদের জীবন-যাপনের মাধ্যম বিনষ্ট হয়ে যাবে, তাহলে ঐ ব্যক্তির কি অবস্থা হবে যার প্রধান খাবার হবে জাক্কুম ফল? (আহমদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)

২. দ্বারি

অতি তিক্ত স্বাদযুক্ত জাহান্নামের এক প্রকার গাছের নাম দ্বারি। জাক্কুম ফল ব্যতীত কাটা বিশিষ্ট বৃক্ষ ও জাহান্নামীদের খাবার হবে, যা বর্ণনাতীত বিষাক্ত ও দুর্গন্ধময় হবে দ্বারি জাহান্নামীদের ক্ষুধাকে বিন্দু পরিমাণেও কমাবে না; বরং তাদের ক্ষুধা আরো বৃদ্ধি করবে:

জাহান্নামের আযাব

অর্থ: “তাদেরকে উত্তপ্ত প্রস্রবণ থেকে (পানি) পান করানো হবে, তাদের জন্য বিষাক্ত কন্টক ব্যতীত খাদ্য নেই। যা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধাও নিবৃত্ত করবে না।” (সূরা গাসিয়া ৫-৭)

৩. গিসলিন

জাক্কুম ফল ও দ্বারি' ব্যতীত জাহান্নামীদের শরীর থেকে নির্গত দুর্গন্ধময় পদার্থও জাহান্নামীদেরকে খাবার হিসেবে দেয়া হবে যা গিসলিন নামে অভিহিত হয়।

অর্থ: “অতএব এদিন সেখানে তাদের কোনো সুহৃদ থাকবে না এবং কোনো খাদ্য থাকবে না, ক্ষত নিঃসৃত স্রাব ব্যতীত, যা অপরাধীরা ব্যতীত কেউ খাবে না।” (সূরা হাক্কা ৩৫-৩৭)

৪. জাগুসসা

জাক্কুম ফল, দ্বারি' ও গিসলিন ব্যতীত জাহান্নামীদেরকে এমন বিষাক্ত কাটা বিশিষ্ট ও দূর্গন্ধময় খাবার দেয়া হবে, যা তাদের কণ্ঠনালীতে আটকাতে আটকাতে নিচে পড়বে তার নাম জাগুসসা।

অর্থ: “আমার নিকট আছে শৃঙ্খল প্রজ্জ্বলিত অগ্নি, আর আছে এমন খাদ্য যা গলায় আটকে যায় এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা মুযযাম্মিল ১২-১৩)

আজকে এই পর্যন্তই ধারাবাহিকভাবে জাহান্নামের আজাবের বর্ণনার পোস্ট এই সাইটে পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন।

পোস্ট ট্যাগঃ

জাহান্নাম হতে বিদায়
জাহান্নাম হতে বিদায় কার লেখা
জাহান্নাম হইতে বিদায় pdf
জাহান্নাম হইতে বিদায় কত সালে প্রকাশিত হয়
জাহান্নাম হইতে বিদায় কবে প্রকাশিত হয়
জাহান্নাম হইতে বিদায় চরিত্র
জাহান্নাম হইতে বিদায় উপন্যাসটি কয়টি অধ্যায় সমাপ্ত
জাহান্নাম হইতে বিদায় কি ধরনের উপন্যাস
জাহান্নাম হইতে বিদায় গ্রন্থ সমালোচনা
জাহান্নাম হইতে বিদায় pdf download
জাহান্নাম হইতে বিদায় উপন্যাস
জাহান্নাম হইতে বিদায় কয়টি অধ্যায়
জাহান্নাম হইতে বিদায়
জাহান্নাম হতে মুক্তির দোয়া

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url