জাহান্নামের আগুন

জাহান্নামের আগুন

জাহান্নামের আগুন

কাফিরকে দূর থেকে আসতে দেখে জাহান্নাম রাগে ও ক্রোধে এমন আওয়াজ করবে যে তা শুনে কাফির অজ্ঞান হয়ে যাবে। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন জাহান্নামীকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন জাহান্নাম আওয়াজ করতে থাকবে, আর এমন এক কম্পনের সৃষ্টি করবে যে, এর ফলে সমস্ত হাশরবাসী ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে যাবে।

জাহান্নাম রাগে কম্পন করতে থাকবে

ওবাইদ বিন ওমাইর (রা) বলেন: যে যখন জাহান্নাম রাগে কম্পন করতে থাকবে হট্টগোল ও চিল্লা চিল্লি শুরু করবে, তখন সমস্ত নৈকট্য প্রাপ্ত ফেরেশতা এবং উঁচু পর্যায়ের নবীগণও কেঁপে উঠবে। এমন কি খালিলুল্লাহ ইবরাহিম (আ) ও নতজানু হয়ে পড়ে যাবেন আর বলতে থাকবে যে, হে আল্লাহ! আজ আমি তোমার নিকট শুধু আমার নিরাপত্তা চাই, আর কিছু চাই না।

একদা আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) রাবী (রা)-কে সাথে নিয়ে যাচ্ছিলেন, চলতে চলতে রাস্তায় একটি চুলা দেখতে পেলেন, যেখানে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ দেখা যাচ্ছিল, তা দেখে আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) অনিচ্ছা সত্ত্বেই সূরা ফুরকানের ওপরে উল্লেখিত আয়াতটি পাঠ করলেন,

রাবি (রা) বেহুশ হয়ে পড়ে গেলেন

আর তা শুনা মাত্রই রাবি (রা) বেহুশ হয়ে পড়ে গেলেন, খাটে উঠিয়ে তাকে ঘরে আনা হলো, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) তার পাশে বসে থাকলেন, কিন্তু তার হুশ ফিরাতে পারলেন না।” (ইবনে কাসীর)

যখন কাফিরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তখন জাহান্নাম কঠিন শাস্তি দেয়ার জন্য ভয়ানক আওয়াজ করতে থাকবে

জাহান্নাম কাফিরকে শাস্তি দেবে

জাহান্নাম কাফিরকে শাস্তি দেয়ার জন্য উন্মাদ হয়ে থাকবে অর্থ: “নিশ্চয়ই জাহান্নাম প্রতিক্ষায় থাকবে, সীমালংঘন কারীদের আশ্রয়স্থল রূপে, তারা তথায় শতাব্দীর পর শতাব্দী অবস্থান করবে।” (সূরা নাবা ২১-২৩)

জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্জ্বলিত করার জন্য আল্লাহ এমন ফেরেশতা নির্ধারণ করে রেখেছেন যারা অত্যন্ত রুক্ষ্ম, নির্দয় ও কঠোর স্বভাব সম্পন্ন, যাদের সংখ্যা হবে ১৯ জন

যার ইন্ধন হবে মানুষ পাথর

অর্থ: “হে মু'মিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনদেরকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাবের অধিকারী ফেরেশতাগণ, আল্লাহ যা আদেশ করেন তারা তা অমান্য করে না, আর যা করতে আদেশ করা হয় তাই করে।” (সূরা তাহরীম ৬)

জাহান্নামের আজাব

জাহান্নামের আজাব দেখা মাত্রই কাফেরের চেহারা কাল হয়ে যাবে: জাহান্নামীদের চামড়া যখন জ্বলে যাবে, তখন সাথে সাথে অন্য চামড়া লাগিয়ে দেয়া হবে, যেন আযাবের ধারাবাহিকতায় কোনো বিরতি না ঘটে

জাহান্নামের আযাবে অসহ্য হয়ে জাহান্নামী মৃত্যু কামনা করবে কিন্তু তার মৃত্যু হবে না

অর্থ: যখন এক শিকলে কয়েকজনকে বাঁধা অবস্থায় জাহান্নামের কোনো সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, তখন সেখানে তারা মৃত্যুকে ডাকবে। বলা হবে, আজ তোমরা এক মৃত্যুকে ডেকো না অনেক মৃত্যুকে ডাক। (সূরা ফুরকান ১৩-১৪)

আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন

জাহান্নামের আগুন যখনই হালকা হতে শুরু করবে তখনই ফেরেশতাগণ তাকে প্রজ্জ্বলিত করবে: অর্থ: আর আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন সে-হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং যাকে তিনি পথহারা করেন তুমি কখনো তাদের জন্য আল্লাহকে ছাড়া কোনো অভিভাবক পাবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল)

জাহান্নামের আজাব জীবনকে

জাহান্নামীদের ওপর তাদের আজাব এক পলকের জন্যও হালকা হবে না: জাহান্নামের আজাব জীবনকে সংকীর্ণময় করে দিবে: জীবনভর পৃথিবীর বড় বড় নিআমতসমূহ ভোগকারী ব্যক্তি, যখন জাহান্নামের আজাবসমূহকে এক পলক দেখবে তখন সে পৃথিবীর সমস্ত নিআমতের কথা ভুলে যাবে

জাহান্নামী হওয়ার ফায়সালা হয়ে গেছে

অর্থ: “আনাস বিন মালেক (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: কিয়ামতের দিন এমন এক ব্যক্তিকে আনা হবে, যার জাহান্নামী হওয়ার ফায়সালা হয়ে গেছে, যে পৃথিবীতে অত্যধিক আরাম আয়েসে জীবন যাপন করেছে, তাকে এক পলকের জন্য জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, হে ইবনে আদম! পৃথিবীতে কি তুমি কোনো নিআমত ভোগ করেছিলে?

জান্নাতে এক পলকের জন্য পাঠানো হবে

পৃথিবীতে কি কখনো তুমি নিআমত ভরপুর পরিবেশে ছিলে? সে বলবে: হে আমার প্রভূ! তোমার কসম! কখনো নয়। এর পর এমন এক ব্যক্তিকে আনা হবে যে জান্নাতী হবে, কিন্তু পৃথিবীতে খুব কষ্ট করে জীবন যাপন করেছিলো, তাকে জান্নাতে এক পলকের জন্য পাঠানো হবে,

এর পর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে হে ইবনে আদম! কখনো কি তুমি দুনিয়াতে কোনো কষ্ট ভোগ করেছ? বা চিন্তিত ছিলে? সে বলবে হে আমার প্রভু! তোমার কসম! কখনো নয়। আমি কখনো চিন্তা যুক্ত ছিলাম আর না কখনো কোনো দুঃখ কষ্ট ভোগ করেছি।” (মুসলিম ৪/২৮০৭)

জাহান্নামে কখনো মৃত্যু হবে না

জাহান্নামের আগুনের গরমের প্রচণ্ডতা (হে আল্লাহ! আমরা তোমার দয়া ও অনুগ্রহে জাহান্নামের কঠিন গরম থেকে আশ্রয় চাই, তুমি অত্যন্ত দয়ালু ও দাতা)

জাহান্নামের আগুনের প্রথম স্ফুলিংগই জাহান্নামীদের শরীর মাংশকে হাড্ডি থেকে আলাদা করে দিবে:

অর্থ: “কখনো নয় নিশ্চয় এটা লেলিহান অগ্নি যা চামড়া তুলে দিবে।” (সূরা মাআরিজ: ১৫-১৬)

জাহান্নামের আগুন মানুষকে না জীবিত থাকতে দিবে আর না মরতে দিবে অর্থ: “আপনি কি জানেন অগ্নি কি? এটা অক্ষতও রাখবে না এবং ছাড়বেও না, মানুষকে দগ্ধ করবে।” (সূরা মুদ্দাসসির)

জাহান্নামের আগুন অট্টালিকা সমান

অর্থ: “চল তোমরা তিন কুণ্ডলী বিশিষ্ট ছায়ার দিকে, যে ছায়া সুনিবিড় নয় এবং অগ্নির উত্তাপ থেকে রক্ষা করে না। এটা অট্টালিকা সদৃশ বৃহৎ স্ফুলিংগ নিক্ষেপ করবে যেন সে পীত বর্ণ উষ্ট্র শ্রেণী।” (সূরা মুরসালাত ৩০-৩৩)

জাহান্নামের আগুন ধারাবাহিক ভাবে উত্তপ্ত হবে যা কখনো ঠাণ্ডা হবে না অর্থ: “তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে।” (সূরা গাশিয়া ৪) জাহান্নামের আগুন যখনই ঠাণ্ডা হতে যাবে, তখনই তার পাহারাদার তা উত্তপ্ত করে দিবে।

জাহান্নামের জ্বালানী হবে পাথর মানুষ

অর্থ: “সে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য।” (সূরা বাকারা ২৪) জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের চেয়ে ৬৯ গুণ বেশি গরম আর তার প্রতি অংশে গরমের এত প্রচণ্ডতা রয়েছে যেমন দুনিয়ার আগুনে রয়েছেঃ

জাহান্নামের আজাব

অর্থ: “আবু হুরাইরা (রা) নবী সাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: তোমাদের এ আগুন যা বনি আদম জ্বালায়, তা জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগ এক ভাগ। তারা (সাহাবাগণ) বলল: আল্লাহর কসম! যদি (দুনিয়ার আগুনের মত হত) তাহলেই তো যথেষ্ট ছিল, হে আল্লাহর রাসূল সাঃ তিনি বললেন: কিন্তু তা হবে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে ৬৯ গুণ বেশি গরম। আর তার প্রত্যেকটি অংশ দুনিয়ার আগুনের ন্যায় গরম হবে।” (মুসলিম ৪/২৮৪৩)

জাহান্নামের পাহারাদার

জাহান্নামের পাহারাদার একাধারে জাহান্নামের আগুন প্রজ্জলিত করে চলছে অর্থ: “সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাঃ বলেছেন: আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমার নিকট দু'জন লোক এসেছে এবং তারা বলল: যে ব্যক্তি আগুন প্রজ্জ্বলিত করছে সে জাহান্নামের পাহারাদার মালেক আর আমি জিবরাঈল, আর সে হলো মীকাঈল।” (বুখারী ৪/৩২৩৬)

স্ত্রী সহবাসের চাহিদা থাকত না

যদি লোকেরা জাহান্নামের আগুন দেখত তাহলে হাসা ভুলে যেত, স্ত্রী সহবাসের চাহিদা থাকত না। শহরের আরামদায়ক জীবন পরিত্যাগ করে জঙ্গলে চলে গিয়ে সর্বদা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকত

আকাশ আবোল তাবল বকছে

অর্থ: “আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: আমি ঐ সমস্ত বিষয়সমূহ দেখছি যা তোমরা দেখতেছ না। আর ঐ সমস্ত বিষয় শুনছি যা তোমরা শুনতেছ না। নিশ্চয় আকাশ আবোল তাবল বকছে, আর তার উচিতও তা করা, কেননা তার মাঝে কোথাও এক বিঘা পরিমাণ স্থান নেই যেখানে কোনো কোনো ফেরেশতা আল্লাহর জন্য সিজদা করে নাই।

তোমরা কম হাসতে; বেশি করে কাঁদতে

আল্লাহর কসম! যদি তোমরা তা জানতে যা আমি জানি, তাহলে তোমরা কম হাসতে আর বেশি করে কাঁদতে। বিছানায় স্ত্রীর সাথে আরামদায়ক রাত্রিযাপন ত্যাগ করতে, আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার জন্য জঙ্গল ও মরুভূমিতে চলে যেতে।” (ইবনে মাজাহ ২/৪১৯০)

নোট: মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে যে, সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! আপনি কি দেখেছেন? তিনি বললেন: আমি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছি।” (এ বিষয়ে আল্লাহই ভাল জানেন)

জাহান্নামের আগুনের হাওয়া

জাহান্নামের আগুনের হাওয়া সহ্য করাও মানুষের সাধ্যাতীত অর্থ: “জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলূল্লাহ সাঃ বলেছেন: (সূর্য গ্রহণের নামাযের সময়) আমার সামনে জাহান্নাম নিয়ে আসা হলো, আর তা ঐ সময় আনা হয়েছিল, যখন তোমরা নামাযের সময় আমাকে স্বীয় স্থান পরিবর্তন করে পিছনে আসতে দেখেছিলে। আর তখন আমি এ ভয়ে পিছনে এসে ছিলাম যেন আমার শরীরে জাহান্নামের আগুনের হাওয়া না লাগে।” (মুসলিম ২/৯০৪)

জাহান্নামের আজাব

গরমের সময় প্রচণ্ড গরম জাহান্নামের আগুনের বাষ্পের কারণেই হয়ে থাকে: অর্থ: “আবু হুরাইরা (রা) নবী সাঃ থেকে বর্ণনা করছেন, তিনি বলেন: যখন কঠিন গরম হয়, তখন নামাযের মাধ্যমে তা ঠাণ্ডা কর। কেননা গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের গরম বাষ্প থেকে হয়। জাহান্নাম আল্লাহর নিকট অভিযোগ করল যে, হে আমার রব! গরমের প্রচণ্ডতায় আমার এক অংশ অপর অংশকে খাচ্ছে।

আল্লাহ তাকে বছরে দু' বার শ্বাস ত্যাগের

এরপর আল্লাহ তাকে বছরে দু' বার শ্বাস ত্যাগের অনুমতি দিলেন। একটি ঠাণ্ডার সময়, আর অপরটি গরমের সময়। তোমরা গরমের সময় যে কঠিন গরম অনুভব কর, তা এ শ্বাস ত্যাগের কারণে, আর শীতের সময় যে কঠিন শীত অনুভব কর তাও ঐ শ্বাস ত্যাগেরই কারণে।” (বুখারী ১/৫৩৫-৫৩৬)

জাহান্নামের বাষ্পের দ্বারা গায়ে জ্বর হয়

জাহান্নামের বাষ্পের কারণে জ্বর হয়ে থাকে অর্থ: “আয়েশা (রা) নবী সাঃ থেকে বর্ণনা করছেন, তিনি বলেন: জ্বর জাহান্নামের বাষ্পের কারণে হয়ে থাকে, অতএব তাকে পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর।” (বুখারী ৪/৩২৬৩) জাহান্নামের আগুনের কল্পনা, যে ব্যক্তি মাথায় রাখে এমন ব্যক্তি আরামের ঘুম ঘুমাতে পারে না।

পোস্ট ট্যাগঃ

জাহান্নামের আগুন
পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচান
পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচান pdf
জাহান্নামের আগুনের রং কি
জাহান্নামের আগুন মাবুদ সইতে পারবো না
জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার দোয়া
জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি
জাহান্নামের আগুনের ছবি
জাহান্নামের আগুনে
জাহান্নামের আগুন গজল
কোন ব্যক্তির দ্বারা জাহান্নামের আগুন নেভানো সম্ভব
জাহান্নামের আগুন মাবুদ সইতে পারবো না গজল
জাহান্নামের আগুন কেমন হবে
জাহান্নামের আগুন কেমন
জাহান্নামের আগুনের

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url