জান্নাতের পাখির নাম
আল কুরআনে জান্নাতি
পাখিদের নাম বেশি পাওয়া যায় না। তবে দুটি পাখির নাম পাওয়া যায় যথা, ১ম টি কাক ২য় টি হুদহুদ
পাখির নাম পাওয়া যায়। আবাবিল শব্দের অর্থ হয় পাখিদের ঝাক। নিচে বেহেশতীদের অফুরন্ত নিয়ামতসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
অভাবী ও
গরীবরা
আগে
বেহেশতে
যাবে
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, “তিনি বলেছেন, 'তোমরা কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে একত্রিত হবে। তখন আল্লাহতায়ালা বলবেন, ‘এ উম্মতের অভাবী ও মিসকীনরা কোথায়?' এ কথা শুনে গরীব ও মিসকীনরা আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে।
তিনি তাদের
জিজ্ঞেস করবেন, 'তোমরা দুনিয়াতে কি কাজ করেছো?”
তারা বলবে, “হে আমাদের প্রভু,
আপনি আমাদেরকে আর্থিক অসচ্ছলতার পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছিলেন; আমরা সবর করেছিলাম।
আর অন্যদের আপনি ধন-দৌলত
ও ক্ষমতা দান করেছিলেন
(আমরা
তা থেকে বঞ্চিত হলেও
আপনার দ্বীনের উপর আমরা দৃঢ়ভাবে
অবিচল ছিলাম।)' আল্লাহতায়ালা বলবেন, 'হ্যাঁ, তোমরা ঠিকই বলেছো।' এসব
লোক অন্যান্য লোক অপেক্ষা আগে
জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং যারা
ক্ষমতা ও ধন-দৌলত
লাভ করেছিল হিসাব দেয়ার জন্য তারা আল্লাহর
আদালতে দাঁড়িয়ে থাকবে। তাদের হিসাব দীর্ঘ হবে ও শক্ত
হবে (কারণ তারা ক্ষমতা
ও ধন-দৌলত পেয়ে
কৃতজ্ঞতার পথ অবলম্বন করেনি)।
লোকেরা
জিজ্ঞেস করলো, 'ঐ দিন মোমিনদের
অবস্থা কি হবে?' তিনি
বললেন, 'তারা আলোর সামনে
বসে থাকবে। তাদের উপর মেঘের ঘন
ছায়া হবে এবং হিসাবের
দিন (যা দুনিয়ার পঞ্চাশ
হাজার বছরের সমান হবে) মোমিনদের
জন্যে খুব ছোট হবে।
তাদের মনে হবে, হিসাবের
দিনটি দিনের মাত্র এক প্রহরের সমান।”
(তারগীব ও তারহীব, তাবরানী)
- ব্যাখ্যাঃ রাহে আমলের ৩৪ নং হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে, সে দিন মোমিনের জন্যে যতটুকু সময় ফরয নামায পড়তে লাগে তত ছোট হয়ে যাবে এবং আর কিয়ামতের দিন তার জন্যে আরামের দিন হয়ে যাবে।
জান্নাতের বালাখানায়
থাকবে
মিষ্টভাষী,
দয়াবান
ও
তাহাজ্জুতগোজার
ব্যক্তিরা
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'জান্নাতের মধ্যে এমন বালাখানা আছে
যার ভেতরের অংশ বাইরে থেকে
এবং বাইরের অংশ ভেতর থেকে
দেখা যায়।
আবু
মালিক আশয়ারী রাদিয়াল্লাহু জিজ্ঞেস করেন, 'হে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম, এসব বালাখানা কাদের
ভাগ্যে পড়বে?' জবাবে হুজুর বললেন, 'যারা সুন্দর কথা
বলে এবং গরীবকে খানা
খাওয়ায় তাদের ভাগ্যে। আর যারা মানুষ
যখন ঘুমুতে থাকে তখন ঘুম
ছেড়ে উঠে তাহাজ্জুদের নামাযে
দাঁড়ায় তাদের ভাগ্যে।” (তারগীব ও তারহীব, তাবরানী)
۲۹۸-
হযরত
মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমরা যদি চাও তাহলে
কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা মোমিনদের
সর্ব প্রথম কি জিজ্ঞেস করবেন
ও তারা কি জবাব
দেবে তা
'মহান
ও পরাক্রমশালী আল্লাহ মোমিনদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, 'তোমরা কি আমার সঙ্গে
সাক্ষাতের আশা পোষণ করতে?'
মোমিনগণ
বলবেন, 'হ্যাঁ, হে আমাদের প্রভু,
আমরা আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য লালায়িত ছিলাম।'
আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, 'কেন?' তারা বলবে, 'আমাদের
আশা ছিল, আপনি আমাদের
ভুল-ত্রুটি ও গুনাখাতা ক্ষমা
করে দেবেন।'
তখন
আল্লাহ বলবেন, 'তোমাদের গুনাখাতা ক্ষমা করে দেয়াকে আমি
আমার উপর জরুরী করে
নিয়েছি।' (সুতরাং তিনি তাদের সমস্ত
গুনাহ থেকে পবিত্র করে
জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল
আস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন,
“তিনি বলেছেন, 'তোমরা কি জানো, আল্লাহর
সৃষ্টির মধ্যে কোন ব্যক্তি প্রথমে
জান্নাতে প্রবেশ করবে?' সবাই বলল, ‘আল্লাহ
ও তাঁর রাসূলই তা
সব থেকে ভাল জানেন।'
তিনি
বললেন, ‘সবার আগে জান্নাতে
প্রবেশ করবে গরীব মুহাজিররা,
যারা ইসলামের সীমান্ত রক্ষা ও বিপদের মোকাবেলায়
সবার আগে ছিল। তারা
মনের সাধ অপূর্ণ রেখে
মরে গেছে, নিজের মনের সাধটুকুও তারা
পূরণ করতে পারেনি।'
মহান
ও পরাক্রমশালী আল্লাহ কিছু ফেরেশতাকে বলবেন,
‘তোমরা ওদের কাছে যাও
এবং তাদেরকে মোবারাক বাদ দাও।' ফেরেশতাগণ বলবেন, 'হে আমাদের প্রভু!
আমরা আকাশবাসী ও আপনার উৎকৃষ্টতম
সৃষ্টি। সত্যি কি আপনি আমাদেরকে
ওদের কাছে গিয়ে সালাম
করতে আদেশ দিচ্ছেন?'
আল্লাহতায়ালা
বলবেন, 'এরা হলো আমার
সেই সব বান্দা, যারা
কেবল আমারই ইবাদত করতো, আমার সঙ্গে কাউকে
শরীক করতো না, ইসলামের
সীমান্ত রক্ষা করতো এবং সব
রকমের বিপদের সম্মুখীন হওয়ার ক্ষেত্রে তারা সকলের আগে
উপস্থিত থাকতো। ওরা এমন অবস্থায়
মারা যায়, দুনিয়ায় নিজেদের এ ত্যাগ ও
কুরবানীর পুরস্কার ওরা পেতে পারেনি।'
তারপর
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'ফেরেশতাগণ এ কথা শুনে
জান্নাতের প্রত্যেক দরজা দিয়ে তাদের
কাছে যাবেন এবং বলবেন, দ্বীনের
উপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকার জন্যে তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত
হোক। এ হলো আখেরাতের
সর্বোত্তম পুরস্কার, যা তোমরা পেলে।”
(তারগীব ও তারহীব, আহমদ
ও জান্নাতীদের অবস্থা কেমন হবে
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, “তিনি বলেছেন, 'যখন জান্নাতী লোক জান্নাতে পৌঁছে যাবে এক ঘোষণাকারী (ফেরেশতা) ঘোষণা করবেন,
'হে জান্নাতবাসীগণ! এখন
আর তোমরা কখনো অসুস্থ হয়ে
পড়বে না, সুস্থ ও
স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকবে। কখনো
তোমাদের মৃত্যু হবে না, সর্বদা
জীবিত অবস্থায় থাকবে। কখনো তোমরা বৃদ্ধ
হবে না, সর্বদা যুবক
হয়ে থাকবে। কখনো অসচ্ছল ও
অভাবে পড়বে না, সর্বদা সচ্ছল
অবস্থায় থাকবে।'
মহান
ও পরাক্রমশালী আল্লাহ আপন কিতাবে বলেছেন,
'আর জান্নাতবাসীকে বলা হবে, যে
জান্নাতের প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দান করা হয়েছিল,
তা হলো এই, তোমাদের
আমলের ফলে তোমাদেরকে এর
উত্তরাধিকারী করে দেয়া হয়েছে।”
(তারগীব ও তারহীব, মুসলিম
ও তিরমিযী)
জান্নাতের জীবন
কেমন
হবে
হযরত
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
“তিনি বলেছেন, 'যারা জান্নাতে যাবে
তারা সর্বদা সচ্ছল অবস্থায় থাকবে। অভাব ও অনাহারে
কষ্ট পাবে না। তাদের
পোষাক পুরাতন হবে না এবং
তাদের যৌবন শেষ হবে
না। জান্নাতে এমন সব নিয়ামত
আছে যা কোন চোখ
দেখেনি, কোন কান শোনেনি
এবং কোন মানুষের ধারণায়ও
তা কখনো আসেনি।” (তারগীব)
কিয়ামতের দিন
যাদের
মুখ
সূর্যের
মত
আলোকোজ্জ্বল
হবে
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল
আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“একদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসেছিলাম, এমন
সময়ে সূর্য উদয় হয়। তিনি
বলেন, “কিয়ামতের দিন কিছু লোক
এমন হবে যাদের মুখ
সূর্যের মত আলোকোজ্জ্বল হবে।
হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু
আনহু জিজ্ঞেস করেন, 'আমরা কি সেই
সব লোক হবো?'
তিনি
বললেন, 'না। তোমরাও অনেক
কিছু পাবে, কিন্তু আমি যাদের কথা
বলছি তারা হবে এমন
লোক যারা আল্লাহর পথে
হিজরত করেছিল এবং পৃথিবীর বিভিন্ন
অংশ থেকে চলে এসেছিল
এবং তারা ছিল গরীব।”
(তারগীব ও তারহীব, আহমদ
ও তাবরানী)
আল্লাহ কাদের
ভালবাসেন
ইবনে
আবাসা থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একথা বলতে শুনেছি,
'আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আমি সেসব ব্যক্তিকে
ভালবাসি যারা আমার জন্যে
পরস্পর পরস্পরকে ভালবেসেছিল। কেবল আমারই জন্য
যারা একে অন্যের সঙ্গে
সাক্ষাৎ করতো। কেবল আমারই জন্য
একে অন্যের জন্য খরচ করতো,
এবং কেবল আমারই জন্য
পরস্পর পরস্পরের বন্ধু হয়ে গিয়েছিল।” (তারগীব
ও তারহীব, মুসনাদে আহমাদ)
- ব্যাখ্যাঃ এর অর্থ হলো, এরা বন্ধুত্ব ও ভালবাসা কেবল আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দ্বীনের বুনিয়াদের উপর গড়েছিল, অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। এ হাদীসের উত্তম ব্যাখ্যার জন্যে 'রাহে আমলের' ২১৮ নং হাদীস অবশ্যই পড়ুন ।
আল্লাহ যাদের
ওপর
সন্তুষ্ট
থাকবেন
হযরত
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'মহান ও পরাক্রমশালী
আল্লাহ জান্নাতবাসীদের বলবেন, 'হে জান্নাতবাসীগণ!' তারা
বলবে, 'হে আমাদের প্রভু,
আমরা হাজির আছি। সব রকম
মঙ্গল ও কল্যাণ আপনার
হাতে, কি আদেশ বলুন?'
আল্লাহতায়ালা
তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, 'তোমরা কি তোমাদের আমলের
পুরস্কার পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছো?' তারা জবাব দেবে,
'হে আমাদের প্রভু, আপনি আমাদের এমন
সব নিয়ামত দিয়েছেন যা অন্য কাউকে
দেননি, তখন আমরা সন্তুষ্ট
হবো না কেন?'
তখন
আল্লাহতায়ালা তাদের জিজ্ঞেস করবেন, 'আমি কি এর
থেকে তোমাদের অধিক উত্তম ও
উন্নত জিনিস দান করবো না?'
তারা বলবে, 'এর থেকে অধিক
উত্তম আর কি হতে
পারে?' তখন আল্লাহ বলবেন,
'আমি চিরকাল তোমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকবো,
তোমাদের উপর আর অসন্তুষ্ট
হবো না।' (তারগীব ও তারহীব, বোখারী,
মুসলিম ও তিরমিযী)
- ব্যাখ্যাঃ অন্যান্য কিছু হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, জান্নাতবাসীরা এ ঘোষণা শুনে এতো খুশী হয়ে যাবে যে, তারা জান্নাতের নিয়ামতের কথা ভুলে যাবে। কেননা এ সুসংবাদ হবে তাদের কাছে সব থেকে বড় নিয়ামত।
পোস্ট ট্যাগঃ