হজ্জ না করার শাস্তি

হজ্জ না করার শাস্তি- Punishment for not performing Hajj

হজ্জ না করার শাস্তি- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমাদের উপর হজ্জ ফরয হয়ে থাকলে তা তাড়াতাড়ি আদায় করে ফেলো। কারণ কেউ তো জানে না কখন কোন বাধা-বিপত্তি এসে যাবে, (তরগীব)।

হজ্জ না করার শাস্তি 

হজ্জ না করার শাস্তি হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, 'যদি কোন ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে অসচ্ছল অবস্থায় না থাকে, রোগাক্রান্ত না হয়ে থাকে বা অত্যাচারী শাসকের তরফ থেকে কোন বাধার সম্মুখীন না হয়, তারপরও যদি সে হজ্জ না করে তবে সে ইহুদী বা খৃস্টানের মতো মরুক, তাতে কিছু যায় আসে না, (তরগীব)।

আল্লাহর দৃষ্টিতে হারাম-শরিফ যিয়ারতকারী

হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'হজ্জ ও ওমরাহকারী আল্লাহর সম্মানিত অতিথি। আল্লাহ তাদেরকে নিজের দরবারে আসতে হুকুম দিয়েছেন এবং তারা আল্লাহর সান্নিধ্যে উপস্থিত হয়েছে। তারা আল্লাহর কাছে যে প্রার্থনা করেছে আল্লাহ তা কবুল করেছেন।' (তারগীব ও তারহীব)

 

  • ব্যাখ্যাঃ এ বিষয়ে অনেক হাদীস বর্তমান আছে। কিছু হাদীসে আছে যে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করেছে এবং আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করে নিয়েছেন। অন্য হাদীসে আছে, হজ্জ সম্পন্নকারী অন্য যে সব লোকের জন্য মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহ তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। 
  • এখানে এ কথা স্মরণ রাখতে হবে, যে সব গুনাহ বান্দার অধিকার সম্পর্কিত তা ততোক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করা হবে না, যতক্ষণ না হকদার তা ক্ষমা করে দেয়।

হজ্জ ওমরাহ হলো মহিলাদের জিহাদ

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, “বৃদ্ধ, দূর্বল ও মহিলাদের হজ্জের সওয়াব জিহাদের সওয়াবের সমান।” (নাসায়ী)

প্রকৃত হাজী কে?

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, 'প্রকৃত হাজী কে?' তিনি বললেন, 'যার চুল বিক্ষিপ্ত এবং পরিধেয় বস্ত্র ধূলোবালিতে পূর্ণ।' লোকটি জিজ্ঞেস করলেন, হজ্জের মধ্যে কোন কাজ সওয়াবের দিক দিয়ে বড়? তিনি বললেন, “উচ্চ স্বরে লাব্বায়েক পড়া এবং কোরবাণী করা।' লোকটি আবার জানতে চাইলেন, ‘সাবিল'-এর অর্থ কি?' তিনি বললেন, ‘এর অর্থ হলো বাহন ও পথ খরচ।' (ইবনে মাজাহ 


  • ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস থেকে জানা গেল, আল্লাহ কেমন ধরনের হাজীকে পছন্দ করেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণনা অনুযায়ী হজ্জ হলো এক প্রেমময় ইবাদত। যারা প্রেমিকের ঘর জিয়ারত করতে যায় ক্ষুধা-তৃষ্ণার প্রতি তাদের মনোযোগ দেয়া উচিত নয়। যেটুকু সময় পাওয়া যায় তা আপন প্রেমিকের স্মরণ, দোয়া এবং ইস্তেগফার ও কান্নাকাটিতে ব্যয় করা দরকার।

লোকটি শেষ যে প্রশ্নটি করেছিল তা 'কোরআনের হজ্জ সম্পর্কিত আয়াত- 'মানিসতা-তা'আ ইলায়হি সাবিলা'তে যে সাবিল শব্দ আছে তার অর্থ প্রসঙ্গে। জবাবে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহর ঘর পর্যন্ত যাওয়ার মতো বাহন এবং পথ খরচ তার থাকা দরকার।’ 

আরাফাতের ময়দানের অবস্থানকারীদের ওপর আল্লাহর রহমত

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যখন হাজীরা আরাফাতে অপেক্ষা করে দোয়া ও কান্নাকাটি করতে থাকে তখন আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে আসেন এবং ফেরেশতাদেরকে বলেন, 'আমার বান্দাদের দেখো, ওদের চুল এলেমেলো হয়ে আছে, পরিধেয় বস্ত্র ধূলোবালিতে মলিন। দেখো, ওরা এই অবস্থাতেই আমার কাছে চলে এসেছে।' (মিশকাত) 


  • ব্যাখ্যাঃ এই হাদীস থেকে জানা যায়, লোকেরা যখন আরাফাতে উপস্থিত হয়ে কান্নাকাটি করে তখন আল্লাহর তরফ থেকে তাদের জন্যে বিশেষ রহমত বর্ষিত হয়।
কোরবানি সম্পর্কে হাদিস পরিশুদ্ধ নিয়ত

কোরবানি সম্পর্কে হাদিস হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, “তিনি বলেছেন, 'হে মানুষ! কোরবানী করো। আখিরাতে সওয়াব পাওয়ার আশায় পশুর রক্ত প্রবাহিত করো। কোরবানীর পশুর রক্ত বাহ্যতঃ মাটিতে পড়লেও প্রকৃতপক্ষে তা আল্লাহর ভান্ডারে গিয়ে জমা হয়ে যায়।” (তারগীব তাবরানী) 


  • ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসে 'হিরয' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। হিরয এমন সিন্দুককে বলা হয়, যার মধ্যে মানুষ আপন সম্পদ সংরক্ষণ করে। কোরবানীর দিন কোরবানী করা সব থেকে বড় সওয়াবের কাজ। আমাদের দৃষ্টিতে কোরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে মিশে বেকার হয়ে গেলেও রাসূলের বিবরণ অনুযায়ী তা আল্লাহর ভান্ডারে কোরবানীকারীর পুঁজি হিসাবে জমা থাকে। 

সামর্থ্য থাকার পরও যে হজ করে না সে এক দুর্ভাগা

হযরতআবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পরাক্রমশালী ও মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে বান্দাকে আমি শারীরিক সুস্থতা এবং রুজির প্রাচুর্য দিয়েছি অথচ পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও সে আমার কাছে এলো না, সে এক দুর্ভাগা।” (তারগীব, ইবনে হিব্বান) 


  • ব্যাখ্যাঃ ভাল স্বাস্থ্য ও রুজির প্রাচুর্য আল্লাহর মস্তবড় নেয়ামত। এ দুই নেয়ামত যিনি লাভ করেন তার উচিত আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি করা এবং কথায় ও কাজে আল্লাহর শোকর আদায় করা। কিন্তু এই নেয়ামত লাভ করার পর সে একদিন নয়, এক সপ্তাহ নয়, এক মাস নয়, 
  • এক বছরও নয়, যদি পাঁচ বছর পর্যন্ত আল্লাহর কাছে অর্থাৎ আল্লাহর ঘরে হজ্জ করার জন্য উপস্থিত না হয় তবে এর থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয় আর কিছু হতে পারে না। তার জানা উচিত, যিনি তাকে সুস্থতা দিয়েছেন তিনি তা ছিনিয়েও নিতে পারেন। 
  • যিনি তাকে এই প্রাচুর্য দান করেছেন তিনি মুহূর্তের মধ্যে তাকে পরমুখাপেক্ষী করে দিতে পারেন। তাই এ স্বাস্থ্য ও সম্পদকে গণীমত মনে করা দরকার। এর শোকর আদায় করার জন্যই যত দ্রুত সম্ভব হজ্জের ফরয আদায় করে ফেলা দরকার। কারণ ভবিষ্যতে এই নেয়ামত তার কাছে থাকবে কি না কেউ বলতে পারে না।
চারটি বড় ফরজ

হযরত যিয়াদ বিন নু'আয়েম হাযরামী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'ইসলামের মধ্যে চারটি ইবাদত আল্লাহ ফরয করেছেন। 

যে ব্যক্তি এর তিনটি ইবাদত পালন করবে এবং চতুর্থটি বাদ দেবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ঐ চতুর্থ ইবাদতটি পালন না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার তিনটি ইবাদত কোন কাজে আসবে না। এ চারটি ফরয ইবাদত হলো: নামায, যাকাত, রমযানের রোযা এবং হজ্জ।”


  • ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস এবং অনুরূপ অন্যান্য হাদীস দ্বীনের মধ্যে এ চারটি ইবাদতের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। বিশেষ করে বর্তমান মুসলমানদের জন্যে এ হাদীসটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। আজ মুসলমানদের মধ্যে এক বিরাট অংশ নামায পড়ে না। আবার যারা নামায পড়ে তাদের মধ্যে বহু লোক যাকাত দেয় না, 
  • অনেকে কেবলমাত্র রোযা রাখে কিন্তু নামাযের ধারে কাছেও যায় না এবং যাকাতও দেয় না। কিছু লোক নামায, রোযা ও যাকাত দেয় কিন্তু হজ্জ সম্পর্কে আদৌ চিন্তা করে না। এ ধরনের লোককে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এর চারটি আরকানই পূর্ণ করতে হবে। যদি তিনটি কাজ করো এবং চতুর্থটি বাদ দাও তাহলে আখিরাতে মুশকিলে পড়বে।
  • আল্লাহতায়ালা জিজ্ঞেস করবেন, 'আমি তোমাদের জন্য চারটি বুনিয়াদি ফরয নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলাম, তিন বা দুই বা এক নয়, তুমি কোন অধিকার ও ক্ষমতায় তা বিভক্ত করেছো? কালেমা পড়ে, মুসলমান হয়ে, নবীর উম্মত হিসাবে বন্দেগীর প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও এরকম বিদ্রোহ কেন করেছো? ভেবে দেখুন, মানুষ তখন এ প্রশ্নের কি জবাব দেবে? সেদিন কি ভীষণ পরিণামের সম্মুখীনই না হতে হবে।
পোস্ট ট্যাগ

হজ্জ না করার শাস্তি
হজ না করার শাস্তি
হজ্ব না করার শাস্তি
হজ্জ না করার পরিণতি

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url