মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত হাদিস

মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত হাদিস

মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত হাদিস

হযরত আবি উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিতএক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, 'সন্তানের উপর মাতা পিতার অধিকার কি?'

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, 'তারা তোমাদের জান্নাত, আবার তারাই তোমাদের দোযখ।' (ইবনে মাজা)

  • ব্যাখ্যাঃ হাদীসটির মানে হচ্ছে, যদি তোমরা মাতা-পিতার হক আদায় করো, তাঁদের সেবা করো তবে তোমরা জান্নাতের হকদার হবে। আর যদি তোমরা তাঁদের প্রাপ্য অধিকার না দাও, তাঁদের সেবাযত্ন না করো তবে জাহান্নামই হবে তোমাদের ঠিকানা। কোরআন হাদীস থেকে জানা যায়, পিতা অপেক্ষা মায়ের দরজা বড়। 
  • মা-বাপের সাথে ভাল ব্যবহার করার নির্দেশ দানের সাথে সাথে কোরআনে গর্ভাবস্থায় মায়ের কষ্ট, তারপর দুগ্ধ-দান লালন-পালনে মায়ের যে কঠোর পরিশ্রম দুঃখ মসীবত সহ্য করতে হয় সে সবের উল্লেখ করা হয়েছে। নিচের হাদীসটিতেও মায়ের বিরাট হকের কথা বলা হয়েছে।

এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি আমার মাকে ইয়ামেন থেকে পিঠে বহন করে এনে হজ্জ করিয়েছি, তাঁকে আপন পিঠে করে নিয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছি, সাফা মারওয়া পাহাড়ে সায়ী করেছি, তাঁকে আরাফাতে নিয়ে গিয়েছি,

আবার সেই অবস্থায় তাঁকে নিয়ে মুযদালেফায় এসেছি, মিনাতে কংকর নিক্ষেপ করেছি। তিনি যারপরনাই বৃদ্ধা, চলার শক্তি একেবারেই নেই। তাঁকে পিঠে নিয়েই আমি সমস্ত অনুষ্ঠান পালন করেছি। তাঁর হক কি আমি আদায় করতে পেরেছি?'

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, 'না, তাঁর হক আদায় হয়নি!' লোকটি জিজ্ঞেস করলেন, 'কেন?'

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'কারণ তোমার মা শৈশবে সমস্ত দুঃখ-কষ্ট তোমার জন্য সহ্য করেছেন এই আশা নিয়ে, তুমি বেঁচে থাকবে। আর তুমি তোমার মায়ের জন্য যা করেছো তা এই আশংকা নিয়েই করেছো যে, তিনি মারা যাবেন!'

মাতা পিতার হক

হযরত মুয়াবিয়া বিন জাহিমা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমার আব্বা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে বললেন, 'হে আল্লাহর রাসূল! আমি জিহাদে যেতে চাই। আপনার পরামর্শ নেয়ার জন্য এসেছি। (আপনি কি হুকুম করছেন?)' 

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমার মা আছেন?' তিনি উত্তর দিলেন, 'হ্যাঁ, তিনি বেঁচে আছেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'তাহলে তুমি গিয়ে তাঁর খেদমত করতে থাকো। তোমার জান্নাত তাঁর পায়ের কাছে। (মুসনাদে আহমদ)


  • ব্যাখ্যাঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন, তাঁর মা বেঁচে আছেন এবং এ ও জানতেন, তাঁর মা খুবই বৃদ্ধা অক্ষম হয়ে পড়েছেন। সুতরাং অবস্থায় তিনি পুত্রের খেদমতের বড় মুখাপেক্ষী। কিন্তু পুত্রের বড় ইচ্ছা জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। এমতাবস্থায় হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন, তোমার জিহাদের ময়দান তোমার ঘরেই বর্তমান। যাও, তোমাদের মায়ের অকৃত্রিম খেদমতে নিজেকে নিযুক্ত করো।

হাদীসের এই অর্থ গ্রহণ করা ভুল হবে যে, যার মা-বাপ বেঁচে আছে তার পক্ষে দ্বীনের খিদমতে বের হওয়া চলবে না। বেশীর ভাগ সাহাবায়ে কিরামদের মাতা-পিতা - জীবিত ছিলেন। কিন্তু জিহাদ দ্বীনের কাজে তাঁরা সর্বদাই বের হতেন।

মৃত বাবার জন্য দোয়া আল্লাহর কাছে প্রার্থনা

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যদি কারো মা-বাপ মারা যায় এবং তাঁদের জীবিত অবস্থায় সে তাঁদের না-ফরমান থেকে থাকে (তারপর মা-বাপের মৃত্যুর পর এই না-ফরমানী সম্পর্কে তার চেতনা হয়

তবে সে যেন তাঁদের জন্য দোয়া করতে থাকে, তাঁদের জন্য ক্ষমা-ভিক্ষা করে প্রার্থনা করতে থাকে। তাহলে আল্লাহতায়ালা সেই ব্যক্তিকে মা-বাপের হুকুম মান্যকারীরূপে গণ্য করে মা-বাপের অবাধ্যতার শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেবেন। (বায়হাকী)

মৃত মা বাবার জন্য ১৭ টি কুরান সুন্নাহ সম্মত আমল

হযরত আবু আসীদ মালেক বিন রবিয়া সায়িদী বলেন, “আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসেছিলাম, এমন সময় সালমা গোত্রের এক ব্যক্তি এলেন। তিনি হুজুরকে জিজ্ঞেস করলেন, 'হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মা-বাপ মারা গেছেন। আমার ওপর তাঁদের কোন হক বাকী আছে কি, যা আমার পক্ষে আদায় করা উচিত?'

হুজুর উত্তর দিলেন, 'হ্যাঁ, মাতা-পিতার মৃত্যুর পর পুত্রের ওপর তাঁদের হক থাকে- পুত্র যেন তাঁদের জন্য দোয়া ক্ষমা ভিক্ষা করতে থাকে, তাদের অসীয়তগুলো যেন পালন করে, তাঁদের সম্পর্কিত আত্মীয়দের সঙ্গে যেন সদ্ব্যবহার করে মা-বাপের বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি যেন সন্মান দেখায় তাঁদের খাতির-যত্ন করে। (তারগীব তারহীব, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ইবনে হিব্বান)

পিতা মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক ব্যক্তি এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি এক বড় গুনাহ করে ফেলেছি। এর থেকে তাওবা করার কি কোন উপায় আছে?' হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস 

করলেন, 'তোমার মা-বাপ কি বেঁছে আছেন?' তিনি বললেন, 'না।' হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমার কি কোন খালা বেঁচে আছেন?' লোকটি উত্তরে বললেন, 'হ্যাঁ।' হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, 'যাও, গিয়ে তাঁর খেদমত করো।


  • ব্যাখ্যাঃ তওবার সাধারণ উপায় হচ্ছে-নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহতায়ালার কাছে কাঁদা ক্ষমা ভিক্ষা করা। কিন্তু হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ জ্ঞান দ্বারা একথা জেনেছেন যে, যদি মা বা খালার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা যায়, তাঁদের খেদমত করা হয় তবে পাপ ধুয়ে-মুছে যেতে পারে। একথা পয়গম্বর ছাড়া অন্যের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।

শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা

হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দ্বীনের ইলম শিক্ষা করো, দ্বীনি ইলমের জন্য প্রশান্তি ও মর্যাদাবোধ করো এবং যার কাছ থেকে তোমরা দ্বীনি ইলম শিক্ষা করেছো তাঁর প্রতি বিনয়, ভক্তি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করো।” (তারগীব তারহীব, তাবরানী)

  • ব্যাখ্যাঃ আলেমদের সত্য-নিষ্ঠ অভিমত হচ্ছে, আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বাদ দিয়ে মানুষের কাছে সব চেয়ে বড় মর্যাদার অধিকারী হচ্ছেন মা-বাপ। মা-বাপ হচ্ছেন দৈহিক মুরুব্বী, শিক্ষক হচ্ছেন মানসিক মুরুব্বী। মা-বাপের কল্যাণে সে দুনিয়ার মুখ দেখে আর শিক্ষকের কল্যাণে তার মনবিক সত্ত্বার বিকাশ ঘটে। মা-বাপ যেন প্রাসাদের নির্মাতা এবং শিক্ষক সেই নির্মিত প্রাসাদের শিল্প সৌকর্য অলঙ্কারের স্রষ্টা।

স্বামীর অধিকার

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, “এক মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, 'হে আল্লাহর রাসূল, মেয়েরা আমাকে তাদের প্রতিনিধি করে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। (দেখুন) পুরুষের ওপর জিহাদ ফরয করা হয়েছে। যদি তারা জিহাদে আহত হয় তার জন্য তারা পুরস্কার পাবে, 

যদি শহীদ হয় তবে আল্লাহর সান্নিধ্যে তারা জীবিত অবস্থায় থাকবে এবং তাঁর নেয়ামত সমূহ ভোগ করতে থাকবে। কিন্তু আমরা মেয়েরা তাদের ঘর ও সন্তানদের দেখাশোনা করি। এর জন্য কি আমাদের পুরস্কার দেয়া হবে?' রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 

'যেসব মেয়েদের সঙ্গে তোমার সাক্ষাত ঘটে তাদের জানিয়ে দিও, স্বামীর আনুগত্য করা ও স্বামীর হক আদায় করা জিহাদের সমান মর্যাদা রাখে। কিন্তু তোমাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক মেয়েলোক তা করে। তাররানীও এই একই হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন।

তাতে বলা হয়েছে, 'মহিলাদের প্রতিনিধি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, 'মেয়েরা আমাকে তাদের পক্ষ থেকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। আর প্রতিটি স্ত্রীলোক আপনার কাছে আমার এ আসার কথা তার জানা থাক বা না থাক, আমার এ আসাকে তারা পছন্দ করে। 

(দেখুন) আল্লাহতায়ালা মেয়েদের ও পুরুষদের উভয়েরই প্রভু ও মাবুদ এবং আপনি স্ত্রীলোক ও পুরুষলোক উভয়েরই পয়গম্বর রূপে প্রেরিত হয়েছেন। পুরুষদের ওপর জিহাদ ফরয করা হয়েছে (মেয়েদের প্রতি নয়), যদি তারা শত্রুদের মারে তার জন্য পুরস্কার পায় (আর গণীমতও লাভ করে), 

যদি শহীদ হয়ে যায় তবে আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্যে উচ্চতর জীবন লাভ করে এবং নেয়ামত সমূহ ভোগ করতে থাকে। তাহলে আমরা কি কাজ করবো যা পুরুষের জিহাদের তুল্য হবে।'

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, 'স্ত্রীলোকের পক্ষে স্বামীর আনুগত্য করা ও স্বামীর হক আদায় করা পুরুষের জিহাদের সমান। কিন্তু তোমাদের মধ্যে কম মেয়েলোকই এরূপ করে।' (তারগীব ও তারহীব)

রব্বানা তাকাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম

পোস্ট ট্যাগঃ

মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত হাদিস
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত হাদিস রেফারেন্স
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত কোন হাদিস
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত হাদিস
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত ব্যাখ্যা কর
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত হাদীস
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত আয়াত
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত উক্তিটি কার

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url