মেরাজ শব্দের অর্থ কি

পবিত্র শবে মেরাজ- shab e meraj 2023

মেরাজ শব্দের অর্থ কি

মেরাজ অর্থ উর্ধলোকে পরিভ্রমণ। এ বছর বাংলাদেশে আগামী ৭ই ফেব্র্রুয়ারী ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র শবে মেরাজ ইনশাআল্লাহ্।

মেরাজ শব্দের অর্থ কি, মেরাজ অর্থ উর্ধলোকে পরিভ্রমণআল্লাহ্ তা'আলা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে এক রাতে মক্কাহ নগরীর মসজিদুল হারাম থেকে আল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাসে নিয়ে যান; তাঁর এ সফরকে বলা হয় ইসরা। এরপর সেখান থেকে তাঁকে উর্ধলোকে পরিভ্রমণ করানো হয়; এ সফরকে বলা হয় মেরাজ।

প্রচলিত কথায় সাধারণতঃ তাঁর এ উভয় সফরকে একই সফরের দু'টি স্তর হিসেবে গণ্য করা হয় ও মেরাজ বলা হয়। আরবী ভাষায় একে বলা হয় আল-ইসরা' ওয়াল মেরাজ; মেরাজ হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ অসাধারণ ও ব্যতিক্রমী সফরের দ্বারা আল্লাহ্ তাঁকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন। 

এ সফরে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহ্ তা'আলার মহিমা ও কুদরত স্বচক্ষে দেখতে পান। এর ফলে তাঁর মনোবলও অনেক বেড়ে যায়- যার খুবই প্রয়োজন ছিল। ফলে আল্লাহর পথে লোকদেরকে ডাকার ক্ষেত্রে কোন দুঃখই আর তাঁর জন্যে বাধা হয়ে থাকতে পারেনি। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) স্বয়ং তাঁর এ সফরের ও উর্ধলোক পরিভ্রমণের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।

আল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস

তিনি বলেন যে, ঐ রাতে জিবরাঈল (আঃ) এসে তাঁকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন, তারপর একটি সাদা পশুতে চড়িয়ে বায়তুল আল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাসে নিয়ে যান। এ পশুটি ছিল বিরাট পাখাওয়ালা ঘোড়ার মত; এটির নাম ছিল বুরাক।"

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)কে বায়তুল মুকাদ্দাসে নেয়ার পর হযরত আদম, হযরত ইবরাহীম, হযরত মূসা, হযরত হারূন ও হযরত ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) সহ সকল নবী- রাসূলের (আঃ) সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। তাঁর ইমামতীতে তাঁরা নামাজ আদায় করেন। এরপর তাঁকে আসমানের বিভিন্ন স্তরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়।

মেরাজর সফরে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল আল্লাহ্ তা'আলার কুদরত ও মহিমা পর্যবেক্ষণ। তাঁর এ অভিজ্ঞতা ছিল এমনই ব্যতিক্রমধর্মী যা মানুষের ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তিনি আরো অনেক কিছু দেখতে পান। 

তাঁর এ সফরের প্রতিটি বিষয় বুঝতে পারা আমাদের মত সাধারণ মানুষের ধারণক্ষমতার বাইরে। কিন্তু সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্যে এসব জিনিসের গুরুত্ব বুঝতে পারা মোটেই কঠিন ব্যাপার ছিল না। বস্তুতঃ সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসেবে তাঁর ওপর যে বিরাট দায়িত্ব ন্যাস্ত হয়েছিল তা যথাযথভাবে পালনের সুবিধার্থে তাঁর জন্যে এ অভিজ্ঞতার প্রয়োজন ছিল।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার দলিল

নামাজ ফরজ হওয়ার ইতিহাস বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মেরাজ-এর সময় মুসলমানদের জন্যে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করা হয়।

মেরাজ সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই যে, তাঁর এ পুরো অলৌকিক সফরটাই খুব অল্প সময়ে রাতের একটি অংশের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। এটা অত্যন্ত বিস্ময়ের ব্যাপার। কিন্তু বিস্ময়ের হলেও তা ছিল পুরোপুরি সত্য ও বাস্তব।

পরদিন সকাল বেলা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) যখন তাঁর মেরাজ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন তখন মক্কার কাফিররা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। তারা তাঁকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে থাকে এবং বলে যে, অবশ্যই তাঁর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মুসলমানরা তাঁর কথা বিশ্বাস করে। কিন্তু নতুন ইসলাম গ্রহণকারী কতক লোক এ ব্যাপারে কিছুটা সন্দেহ পোষণ করে এবং কাফিররা বরাবরের মতই সত্যকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ঐ রাতে আল আকসা মসজিদ ফিলিস্তিন যা বায়তুল মুকাদ্দাসে নামে পরিচিত সেখানে যা দেখেছেন তার বর্ণনা দেন। তিনি এর আগে কখনোই বায়তুল মুকাদ্দাসে যাননি। আগে বায়তুল মুকাদ্দাসে গিয়েছে এমন লোকেরা তাঁর বর্ণনার সত্যতা স্বীকার করে। 

তাছাড়া তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসে যাবার পথে একটি কাফেলাকে দেখতে পান এবং কোথায় তাদেরকে দেখেছেন তার বর্ণনা দেন। পরে কাফেলাটি ফিরে আসার পর তাঁর কথার সত্যতা স্বীকার করে।

এখানে বিশেষভাবে স্মরণ করা যেতে পারে যে, মক্কাবাসীরা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে আল-আমীন ও আছ্-ছাদিক খেতাব দিয়েছিল। কিন্তু সেই লোকেরাই তাঁর সাথে এহেন অদ্ভুত আচরণ করে। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নবুওয়াত লাভ করার পর থেকে সব কিছুই আল্লাহ্ তা'আলার হুকুম অনুযায়ী করেন। 

বস্তুতঃ সত্যকে বুঝা ও গ্রহণ করা খুব সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে তা অত সহজ নয়। মানুষের জীবনের হেদায়াত (পথনির্দেশ) কেবল আল্লাহর নিকট থেকেই আসে। তিনি যাকে চান হেদায়াত করেন এবং যাকে চান হেদায়াত দান করেন না বা গোমরাহ করে দেন।

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) যখন মেরাজের ঘটনাবলী বর্ণনা করেন তখন হযরত আবু বকর (রাঃ)-কোনরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই তাঁর পুরো বর্ণনাই বিশ্বাস করেন। এ কারণে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে 'আছ-ছিদ্দিক' (সত্যকে প্রত্যয়নকারী) বলে অভিহিত করেন।

বায়আতে আকাবা নবুওয়াতের কোন বছর হয়

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মক্কায় ইসলাম প্রচারের শেষের দিকে ৬২১ খৃস্টাব্দে ইয়াছরীব থেকে- বর্তমানে যার নাম মদীনা- একদল লোক হাজ্জের সময় মক্কায় এসে তাঁর সাথে সাক্ষাত করেন। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁদেরকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেন। তারা ইসলাম গ্রহন করেন। আকাবা নামক জায়গায় হয় বলে একে আকাবার শপথ নামে পরিচিত। এভাবেই তার মেরাজের ঘটনা সম্পর্কে জানা যায় সংক্ষিপ্ত আকারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url