পুলসিরাত পার হওয়ার দোয়া

পুলসিরাত পার হওয়ার দোয়া

পুলসিরাত পার হওয়ার দোয়া

পুলসিরাত পার হওয়ার দোয়া আসলে ওইভাবে কিছু নাই। মানুষের ইবাদত যদি সঠিক হয় তাহলে তারা জান্নাতবাসী হয় এবং তার জন্য পুলসিরাত পার হওয়া খুবই সহজ হয়ে থাকে।

পুলসিরাত কাকে বলে

হিসেব নিকাশ, আমলের ওজন দান ও সৌভাগ্যবান ও সৌভাগ্যহীনদের মধ্যে পার্থক্য হয়ে যাওয়ার পর সমস্ত মানুষকে পুলসিরাত অতিক্রম করে যেতে হবে। পুলসিরাত হল জাহান্নামের উপর নির্মিত একটা অতিসুক্ষ্ম সেতু। যা তরবারীর ধারের চেয়ে বেশী ধারালো হবে এবং অত্যন্ত পিচ্ছিল হবে। সমস্ত মানুষকে তা অতিক্রম করে যাবার আদেশ দেয়া হবে।

পুলসিরাত তরবারীর চেয়ে ধারালো বলে মনে হবে

কারো কারো মতে তা কিছু কিছু মানুষের কাছে তরবারীর চেয়ে ধারালো বলে মনে হবে ফলে সে তার উপর দিয়ে অতিক্রম করে যাবার সময় ব্যর্থ হবে ফলে জাহান্নামে পড়ে যাবে। আবার তা কারো কারো জন্য প্রশস্ত হয়ে যাবে তখন সে বিনা দ্বিধায় ও বিনা ভয়ে অতিক্রম করে চলে গিয়ে আল্লাহ কর্তৃক তার জন্য রাখা নেয়ামত ভোগ করবে।' এসব বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,,

“তোমাদের প্রত্যেককে তা অতিক্রম করতে হবে। এটা তোমার প্রতিপালকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। পরে আমি মুত্তাকীদের উদ্ধার করবো এবং জালিমদেরকে নতজানু অবস্থায় রেখে দিব।”

পুলসিরাত হল তরবারীর ধারের মত ধারালো সেতু

এ আয়াতের তাফসীরে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন: এ আয়াতের অর্থ হল তাদের পুলসিরাতের উপর দিয়ে অবশ্যই যেতে হবে।” পুলসিরাত হল তরবারীর ধারের মত ধারালো এক সেতু। এ সেতুর উপর দিয়ে প্রথম পথ যাত্রীরা বিদ্যুৎগতিতে অতিক্রম করবে।

দ্বিতীয় যাত্রীদল বাতাসের গতিতে অতিক্রম করবে। আর তৃতীয় দল দ্রুতগামী অশ্বারোহীর মত গতিতে যাবে। অতঃপর যাত্রীদের দল যেতে থাকবে তখন ফেরেস্তারা বলতে থাকবে সালাম। এ সব বক্তব্যের পক্ষে বুখারী মুসলিমে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে।

আল্লাহ্ তা'আলা আরও বলেন: “আমি ইচ্ছা করলে তাদের চোখগুলোকে লোপ করে দিতে পারতাম। তখন তারা পুলসিরাত অতিক্রম করতে চাইলে কী করে দেখতে পেত?”

জাহান্নামের উপর পুলসিরাত নির্মাণ করবেন

আবু হুরাইরা হতে বর্ণিত যে, কিছু লোক রাসূলুল্লাহ্ সা. জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি কেয়ামত দিবসে আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? তখন তিনি বললেন: তোমরা চৌদ্দ তারিখের রাতে চাঁদ দেখতে সমস্যাবোধ কর, যখন তার সামনে কোন মেঘ থাকে না? অবশেষে রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন আল্লাহ্ তা'আলা জাহান্নামের উপর পুলসিরাত নির্মাণ করবেন।

পুলসিরাতের রাস্তা

তখন দোয়া হবে আল্লাহ রক্ষাকর, আল্লাহ রক্ষা কর। সেখানে সোদানের কাটার মত বড় পেরাক থাকবে। তবে তা যে কত বড় তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। অতঃপর লোকদেরকে তাদের আমল অনুযায়ী নিয়ে যাওয়া হবে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ তার আমলের জন্য ধ্বংস হবে, আর কেউ কেউ পড়ে যাবে অতঃপর আবার মুক্তি পাবে।

পুলসিরাত পূর্ণ নিরাপত্তা স্বাচ্ছন্ধে অতিক্রম করার পর

পুলসিরাত পূর্ণ নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্ধে অতিক্রম করার পর মুমিনদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে এক সেতুর সামনে দাঁড় করানো হবে। বুখারী শরীফের এক হাদীসে আছে, মুমিনদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করার পর জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে এক সেতুর সামনে দাঁড় করানো হবে।

তখন তাদের পরস্পরের মধ্যে যদি দুনিয়ার জীবনে জোর জুলুমের কিছু থেকে থাকে তার প্রতিশোধ নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। যখন তারা সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন ও পরিষ্কার হয়ে যাবে তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে। যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, তারা প্রত্যেকেই দুনিয়ার জীবনে তাদের বাড়ী ঘর যেভাবে চিনে জান্নাতে তারা তাদের জান্নাতী ঘর তার চেয়ে বেশী চিনবে।

জান্নাতীদেরকে পুলসিরাত অতিক্রম করার পর থামিয়ে দেয়া হবে

হাসান থেকে মুরছাল সনদে বর্ণিত আছে যে, আমি শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, জান্নাতবাসীদেরকে পুলসিরাত অতিক্রম করার পর থামিয়ে দেয়া হবে। তখন তারা তাদের দুনিয়ার জীবনের পরস্পরের মধ্যে জুলুমের প্রতিশোধ নিবে । তারপর জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন তাদের কারো অন্তরে অন্য কারো প্রতি কোন রকমের ঘৃণা ও হিংসা থাকবে না।”

শাফায়াত কাকে বলে

শাফায়াত বা সুপারিশ বলতে বুঝানো হয়, কোন ক্ষমতাশালী বা ক্ষমতার অধিকারীর কাছে নিজের প্রয়োজন পুরণ কিংবা নিজের পাপ বা অপরাধ মোচনের জন্য অপর কাউকে মধ্যস্ততাকারী হিসেবে গ্রহণ করা। মানুষকে হাশরের ময়দানে বিচার ফায়সালার জন্য তখন তাদের কষ্ট ও ভোগান্তি চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছাবে।

হাশরের ময়দানে উপস্থিতি ইয়া নাফসি করতে থাকবে

ভয় সন্ত্রস্ততার কারণে এবং অবস্থার কঠোরতা ও দীখায়তের ফলে। সে ভয়ংকর দিনের দুঃখ কষ্ট এতই ভয়াবহ হবে যে গোটা হাশরের ময়দানে উপস্থিতি ইয়া নাফসি ইয়া নফসী করতে থাকবে। এমতাবস্থায় তারা সুপারিশের জন্য প্রথমে আমাদের আদী পিতা আদম আঃ এর কাছে যাবেন তার কাছে কামনা করবেন তিনি যেন আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করেন।

মাকামে মাহমুদ

তখন আদম আ. তার অপরাগতা প্রকাশ করবেন। অতঃপর অপরাপর নবীদের কাছে যাবেন তাদের কাছে সুপারিশের জন্য আবেদন করবেন তারাও একে একে সকলেই তাদের অপারগতার কথা বলবেন। সর্বশেষ তারা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে আসবেন এবং তাঁর কাছে তাদের জন্য আল্লাহ তা'আলার দরবারে সুপারিশ করার আবেদন জানাবেন।

মাকামে ইব্রাহিম

তখন মহানবী (সা.) সমস্ত হাশর বাসীর জন্য তাদেরকে যেন কিছুটা আরাম দেয়া হয় এবং দীর্ঘক্ষণ অবস্থান ও ভয়াবহ অবস্থা হতে মুক্তি দেয়া হয় আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন। পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা'আলা মহানবী (সা.)-কে যে “মাকামে মাহমুদ” বা প্রসংশিত স্থান দান করবেন বলে ওয়াদা করেছেন তা হলো এই সুপারিশ।

আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন

রাসূলুল্লাহ্ সাঃ সমস্ত হাশর বাসী দুঃখ কষ্ট লাঘবের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: সমস্ত মানুষ কেয়ামত দিবসে নতজানু অবস্থায় চলতে থাকবে। প্রত্যেক উম্মত তাদের নবীর অনুসরণ করবে তারা বলবে হে অমুক! আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন।

তারা প্রত্যেকেই অপারগতা প্রকাশ করবেন। অবশেষে তারা মহানবী (সা.) এর কাছে আসবেন। এবং তিনি তাদের জন্য সুপারিশ করবেন। এটাই হল সে দিন যে দিন আল্লাহ তাকে মাকামে মাহমুদ বা প্রসংশিত স্থান দান করবেন।

কিয়ামতের দিন সূর্য অত্যন্ত কাছে আসবে

অপর এক বর্ণনায় আছে কিয়ামতের দিন সূর্য অত্যন্ত কাছে আসবে ফলে ঘাম কান বরাবর পৌঁছবে। যখন এরূপ অবস্থা তখন তারা আদম (আঃ) এর সাহায্য চাইবে। তিনি বলবেন আমি এ উপযোগী নই। অতঃপর মুসা আ. এর কাছে আসবে তিনিও বলবেন আমি এর উপযুক্ত নই।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাঃ এর কাছে আসবে। তখন তিনি সুপারিশ করবেন। তখন তিনি এগিয়ে যাবেন অবশেষে জান্নাতের দরজার কড়া ধরবেন। সে দিন আল্লাহ তাকে মাকামে মাহমুদে অবস্থান করাবেন। তখন সর্বোচ্চ সকলেই তার প্রসংশা করবেন।' নিম্নোক্ত হাদীসে কেয়ামত দিবসের অবস্থার বিবরণ এবং সুপারিশের রূপ রেখা বর্ণিত হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর জন্য গোস্ত নিয়ে আসা হল

“আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর জন্য গোস্ত নিয়ে আসা হল। গোস্ত থেকে তাঁকে তাঁর পছন্দনীয় রানের গোস্ত দেয়া হল। তখন তিনি সেখান থেকে কিছু খেলেন, তারপর বললেন, আমি কেয়ামত দিবসে মানুষের নেতা রূপে আবির্ভূত হব। তোমরা তা কি কারণে জান কি?

সে দিন আল্লাহ পূর্বকাল ও পরকালের সকলকে এক ভূমিতে একত্রিত করবেন। এমতাবস্থায় আহ্বায়ক তাদেরকে তার বক্তব্য শুনাতে পারবে এবং চোখ তাদেরকে দেখবেন। আর সূর্য তাদের নিকটবর্তী হবে তখন লোকেরা দুঃখ কষ্টে এমন পর্যায়ে পৌঁছবে যা তারা সহ্য করতে পারবে না।

তোমার প্রভুর কাজে সুপারিশ করতে পার

তখন কিছু লোক অপর কিছু লোককে বলবে তোমরা কেমন দুরাবস্থায় তা কি দেখতে পাচ্ছ না? তোমরা দেখছো না কেমন দুর্গতি তোমাদের? তোমরা কি ভাবছ না কে তোমাদের জন্য তোমার প্রভুর কাজে সুপারিশ করতে পার?

মানব জাতির আদি পিতা

তখন কিছু লোক অপর কিছু লোককে বলবে তোমাদের পিতা আদম আ. পারবে। তখন তারা আদম আ.-এর কাছে আসবে এবং তাকে বলবে। হে আদম আপনি হলেন মানব জাতির আদি পিতা, আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। এবং আপনার মধ্যে নিজে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন।

আর ফেরেশতাদের আপনাকে সিজদা করার নির্দেশ দিয়েছেন তখন তারা আপনাকে সিজদা করেছে। কজেই আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন। আমরা কেমন বিপদে আছি তা কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না?

আমাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে

আমাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে তা কি দেখতে পাচ্ছেন না। তখন আদম বলবেন আমার রব আজকে এমনভাবে রাগান্বিত হয়েছেন যে, আর কখনো এমন রাগান্বিত হননি। এরপর আর কখনো এমনভাবে রাগান্বিত হবেন না।

তিনি আমাকে কাছে কাছে যেতে নিষেধ করে ছিলেন, কিন্তু আমি তার নিষেধ অমান্য করেছি। নাফসি, নাফসি, (হায়, হায় আমার কি হবে, হায় হায় আমার কিছু হবে, হায় হায় আমার কি হবে?) তোমরা অন্যের কাছে যাও। তোমরা নূহের কাছে যাও। তখন তারা নূহের কাছে যাবেন। অতঃপর তাকে বলবেন, হে নূহ আ.! আপনি হলেন পৃথিবীবাসীর প্রতি প্রথম রাসূল।

আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর কাছে সুপারিশ করুন

আল্লাহ আপনাকে কৃতজ্ঞ বান্দা নাম রেখেছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর কাছে সুপারিশ করুন। আমরা কোন অবস্থায় আছি তা কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না? আমাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে তা কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না?

ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি

তখন নূহ বলবেন, আমার রব আজকে এমন রাগান্বিত হয়েছেন যে, আর কখনও এরূপ রাগান্বিত হননি। এর পরও কখনও রূপ রাগান্বিত হবেননা। আমার একটা দোয়া করার সুযোগ ছিল আমি সে দোয়াটি আমার কাউমের বিরুদ্ধে করে ফেলেছি। হায় হায় আমার কি হবে, হায় হায় আমার কি হবে, হায় হায় আমার কি হবে, তোমরা অন্যের কাছে যাও।

তোমরা ইব্রাহীমের কাছে যাও

তোমরা ইব্রাহীমের কাছে যাও। তখন তারা ইব্রাহিমের কাছে যাবেন। তারপর তাকে বলবেন হে ইব্রাহিম ! আপনি হলেন এ পৃথিবীতে আল্লাহর নবী ও খলীল। আপনি আমাদের দুরাবস্থা কি দেখতে পাচ্ছেন না? আমাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে তা কি দেখতে পাচ্ছেন না?

তখন তিনি বলবেন, আমার রব আজকে এমন রাগান্বিত এরূপ আর কখনও হননি। এরপরও কখনও হবেননা। অতঃপর তিনি তার মিথ্যাগুলোর কথা উল্লেখ করবেন। হায় হায় আমার কি হবে। হায় হায় আমার কি হবে। হায় হায় আমার কি হবে। তোমরা মুসা আ. এর কাছে যাও।

আপনি আল্লাহর রাসূল

তখন তারা মুসার কাছে যাবে। গিয়ে তাকে বলবে হে মুসা! আপনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ আপনাকে রিসালাত দান করেছেন এবং মানুষের উপর আপনাকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে স্বয়ং আপনার সাথে কথা বলেছেন। আপনি আমাদের আপনার প্রভুর কাছে সুপারিশ করুন।

আমরা কোন বিপদে আছি তা কি দেখতে পাচ্ছেন না। আপনি কে দেখছেন না আমাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে? তখন মুসা তাদেরকে বলবেন আমার রব আজকে এমন ভাবে রাগান্বিত যে ইতিপূর্বে কখন ও রূপ রাগান্বিত হননি। এরপরও কখনও এরূপ রাগাবেন না।

আমি এমন একটি লোককে হত্যা করেছি

আমি এমন একটি লোককে হত্যা করেছি যা যে হত্যা করা আদেশ ছিল না আমার প্রতি। হায় আমার কি হবে, আমার কি হবে আমার কি হবে। তোমরা অন্যের কাছে যাও। তোমরা ঈসা আ. এর কাছে যাও। তখন তারা ঈসা আ. এর কাছে যাবে।

ঈসা আঃ এর কাছে যাও

তাকে বলবে, হে ঈসা আপনি হলেন আল্লাহর রাসূল এবং তার থেকেই রূহ। তিনি বলবেন হা তাই সত্য। আর আপনি দোলনায় থাকাবস্থায় মানুষের সাথে কথা বলেছেন। সুতরাং আপনার প্রভুর কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আমরা কি কি বিপদে আপনি কি দেখছেন না? আমাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে তা কি দেখতে পাচ্ছেন না।

তোমরা মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে যাও

তখন তিনি তাদের বলবেন আমার রব আজকে এমন ভাবে রাগান্বিত হয়েছেন যে, ইতিপূর্বে কখনও এভাবে রাগান্বিত হননি। এরপরও কখনও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। তবে তিনি তার কোন অপরাধের কথা উল্লেখ করবেন না। তোমরা অন্যের কাছে যাও। তোমরা মুহাম্মদ (সা.) এর কাছে যাও।

তখন তারা তাঁর কাছে যাবে এবং বলবে, হে মুহাম্মদ আপনি হলেন আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। অতএব আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে আছি?

আল্লাহ আমার উদ্দেশ্যে রহমতের দরজা খুলে দিবেন

আমাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে? তখন আমি দাঁড়াব, অতঃপর আরশের নিচে আসব। অতঃপর আমার রবের উদ্দেশ্যে সিজদায় পড়ে থাকব। অতঃপর আল্লাহ আমার উদ্দেশ্যে তার (রহমতের দরজা) খুলে দিবেন এবং আমাকে তার প্রশংসা ও উত্তম সুখ্যাতির এমন সব বিষয় জানিয়ে দিবেন যা তিনি আমার পূর্বে আর কারো জন্য খুলে দেননি।

হে মুহাম্মদ! তোমার মাথা উত্তোলন কর

তখন বলা হবে হে মুহাম্মদ! তোমার মাথা উত্তোলন কর চাও যা চাইবে তা দেয়া হবে। তুমি সুপারিশ করতে পার। তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলব: হে আমার রব! আমার উম্মতকে রক্ষা করুন আমার উম্মতকে রক্ষা করুন। হে রব আমার উম্মতকে রক্ষা করুন আমার উম্মতকে রক্ষা করুন।

হে রব আমার উম্মতকে রক্ষা করুন

হে রব আমার উম্মতকে রক্ষা করুন। তখন বলা হবে তোমার উম্মতের মধ্য হতে যাদের হিসাব নেয়া হবে না তাদেরকে জান্নাতের ডান দরজা দিয়ে প্রবেশ করাও। তারা অন্যান্য দরজা দিয়ে অপরাপর মানুষের সাথেও প্রবেশ করতে পারবে।

অতঃপর বলেন: যার হাতে আমার প্রাণ তার নামে শপথ জান্নাতের দুটি দরজার মধ্যে যে দূরত্ব তা মক্কা ও হিজাজের দূরত্বের সমপরিমাণ। কিংবা মক্কা ও বসরার মধ্যে দূরত্বের সমপরিমাণ। "

মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে আসবে

অপর এক হাদীসে আছে অতঃপর সকলে মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে আসবে। তখন তিনি গিয়ে আরশের নিচে আল কাছাছ নামক একটা স্থানে সিজদায় পড়বেন। তখন আল্লাহ বলবেন তোমার কি হয়েছে? অথচ আল্লাহ এ ব্যপারে সবাধিক জানেন।

আমাকে শাফায়াত বা সুপারিশ করার ওয়াদা

তখন রাসূলুল্লাহ্ সা. বললেন আমি বলব হে আমার রব! আপনি আমাকে শাফায়াত বা সুপারিশ করার ওয়াদা দিয়েছিলেন। অতঃপর আপনার বান্দাদের ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। আপনি তাদের মধ্যে ফায়সালা করুন। তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেন: আমি তোমার সুপারিশ কবুল করলাম।

আমি তোমাদের মধ্যে এসে তোমাদের ফায়সালা করব। তিনি বলেন তখন আমি ফিরে আসব এসে মানুষের সাথে দাড়িয়ে যাব।”

সূর্য নিকটবর্তী হবে

এ সুপারিশ হলো বড় সুপারিশ যে সুপারিশের সুযোগ লাভ করবেন একমাত্র মুহাম্মদ (সা.) আর এ সুপারিশটা হবে গোটা হাশর বাসীর কষ্ট ও দুর্দশা লাভের জন্য। তাদেরকে দীর্ঘ অবস্থান হতে মুক্তি দানের জন্য । একথা অপর এক হাদীসে এসেছে এভাবেই। সূর্য নিকটবর্তী হবে। ফলে ঘাম কানে অর্ধেক পর্যন্ত হবে।

মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছে সাহায্য চাইবেন

যখন তারা এরূপ অবস্থায় থাকবে তখন তারা আদম আ. অতঃপর মুসা অতঃপর মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে সাহায্য চাইবেন। যাতে মানুষের মধ্যে ফায়সালা করেন। তখন তিনি গিয়ে দরজার কড়াই ধরে থাকবেন। সে দিন আল্লাহ তা'আলা তাকে মাকামে মাহমুদ অবস্থান করাবেন। সমস্ত হাশরবাসী তার প্রশংসা করবে।

এ হলো সমস্ত হাশরবাসীর জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সুপারিশ। এ ছাড়াও আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ্ সা.কে অনেক বিষয়ে ও অনেক মানুষের জন্য বিশেষ তার উম্মতের সুপারিশ করার সুযোগ দিবেন। আমরা নিম্নে রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর সুপারিশ সম্পর্কে এখানে আলোচনা করবো:

১। একদল মানুষকে বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবার জন্য মহানবীর সুপারিশ

উপরোক্ত দীর্ঘ হাদীসটির এক স্থানে আছে তখন আমি হে আমার রব আমার উম্মতকে রক্ষা করুন আমার উম্মতকে রক্ষা করুন। তখন আমাকে বলা হবে আপনার উম্মত থেকে যাদের কোন হিসাব নেয়া হবে না, যাদের কোন শাস্তি দেয়া হবে না এ রকমের লোকদেরকে জান্নাতের ডানদিকে দরজা দিয়ে প্রবেশ করাও।”

২। অপরাধের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়েছে এমন কিছু মানুষকে জাহান্নাম থেকে বের করার জন্য মহানবীর সুপারিশ এ প্রসঙ্গে বুখারীতে আনাছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন: তখন আমি আমার মাথা তোলব তোলে আমার রবের এমন প্রশংসা করব যা আমাকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে অতঃপর সুপারিশ করব।

তখন আমার জন্য একটা সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। তখন আমি তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব। অতঃপর ফিরে এসে আবার অনুরূপ তৃতীয়বার, চতুর্থবার সিজদায় পড়ব। পরিশেষে জাহান্নামে কেবল ঐসমস্ত লোকেরাই থাকবে যারা চিরস্থায়ী হবে বলে আল কুরআন জানিয়েছে।”

৩। কিছু মানুষের হিসাব নেয়া শাস্তি যোগ্য বলে প্রমাণিত হবে, ঐসব লোকদেরকে শাস্তি না দেয়ার জন্য মহানবী (সা.) এর সুপারিশ এ প্রসঙ্গে আনাছ ইবনে মালেক থেকে মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) -কে বলতে শুনেছেন, রাসূল সা. বলেছেন: আমিই সর্ব প্রথম মানুষ হব যার মাথার উপর হতে মাটি বিদীর্ন করা হবে কেয়ামত দিবসে এতে অহংকারের কিছু নেই। আর আমাকে প্রশংসার পতাকা দেয়া হবে এতেও অহংকারের কিছু নেই।

কেয়ামত দিবসে মানুষের নেতা হব

আমি কেয়ামত দিবসে মানুষের নেতা হব তাতেও অহংকারের কিছুই নেই, আমি হব সে ব্যক্তি যাকে জান্নাতে প্রথম প্রবেশ করানো হবে তাতেও অহংকারের কিছু নেই। আমি জান্নাতের দরজায় আসব তার কড়াই ধরে থাকব। তখন বলা হবে এ কে?

আমার জন্য জান্নাতের দরজা খোলা হবে

তখন আমি বলব আমি মুহাম্মদ। তখন আমার জন্য জান্নাতের দরজা খোলা হবে। তখন আমি জান্নাতে প্রবেশ করব। তখন দেখব পরাক্রমশালী আল্লাহ আমার সামনে তখন আমি তার উদ্দেশ্যে সিজদায় পড়ে যাব। তখন তিনি আমাকে বলবেন মুহাম্মদ তোমার মাথা তোল। কথা বল, তোমার কথা শুনা হবে।

তখন আমার মাথা তুলব। তার পর বলব: আমার উম্মতকে রক্ষা করুন। আমার উম্মতকে রক্ষা করুন। তখন আল্লাহ বলবেন তোমার উম্মতের কাছে যাও। যার অন্তরে জাররা পরিমাণ ঈমান পাবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও।

তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব

তখন আমি ঐরূপ যাদের পাব তাদের দিকে যাব যাদের অন্তরে ঐরূপ ঈমান পাব তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। (আল্লাহ তা'আলা দ্বিতীয় বার বলবেন তোমার উম্মতের কাছে যাও যার অন্তরে জারের দানার অর্ধেক পরিমাণ ঈমানও পাবে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাও।

তখন আমি যাব, যাদের অন্তরে অনুরূপ ঈমান পাব তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। (তৃতীয়বার আল্লাহ তা'আলা বলবেন) তোমার উম্মতের কাছে যাও যার অন্তরে শর্ষে পরিমাণ ঈমান পাবে আর জান্নাতে প্রবেশ করাও তখন আমি যাব গিয়ে যাদের অন্তরে অনুরূপ ইমান পাব তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব।"

মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মহানবী (সাঃ) এর সুপারিশ

৪। মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মহানবী (সা.) এর সুপারিশ মহানবী (সা.) কিছু মানুষের জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করবেন। মুসলিম শরীফে আনাছ ইবনে মালেক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন: আমিই প্রথম মানুষ যিনি জান্নাতে সুপারিশ করবে। এবং আমিই হবো নবীদের মধ্যে সর্বাধিক অনুসারী সম্পন্ন নবী।” মুহাদ্দিসদের মতে জান্নাতে প্রবেশের পর এ সুপারিশ হবে জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য।

উম্মতের মধ্যে কবিরা গুনাহর অধিকারীকে মুক্ত করা

৫। উম্মতের মধ্যে কবিরা গুনাহর অধিকারীকে মুক্ত করার জন্য মহা নবীর সুপারিশ এ প্রসঙ্গে আনাছ ইবনে মালেক মহানবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেন: আমার উম্মতের মধ্যে যারা কবীরা গুনাহর মুরতাকিব বা কবিরা গুনাহতে লিপ্ত ঐরকম লোকদের জন্য আমার সুপারিশ থাকবে।

শাস্তির পরিমাণ কমাবার জন্য মহানবীর সুপারিশ

৬। শাস্তির পরিমাণ কমাবার জন্য মহানবীর সুপারিশ: কিছু কিছু লোক শাস্তি পাওয়ার যোগ্য প্রমাণিত হবার পর শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। ঐ ধরণের কিছু লোকের শাস্তি হালকা করার জন্য বা শাস্তির পরিমাণ কমাবার জন্য মহানবী (সা.) আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন। যেমন- তিনি তাঁর চাচা আবু তালিবের শাস্তি কমাবার জন্য সুপারিশ করবেন।

এ প্রসঙ্গে বুখারীতে আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ্ সা.এর সামনে তার চাচা আবু তালিবের কথা উঠলে তখন মহানবী (সাঃ) কে তার সম্বন্ধে বলতে শুনেছি, ফলে তাকে জাহান্নামের আগনীর স্থানে তাকে রাখা হবে, যা তার পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত পৌছবে। এ থেকেই তার মাথার মগজের মূল পর্যন্ত টগবগ করতে থাকবে।

পোস্ট ট্যাগঃ

পুলসিরাত পার হওয়ার দোয়া
পুলসিরাত পার হওয়ার দোয়া বাংলা
পুলসিরাত পার হওয়ার আমল

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url