ইসলামের মৌলিক বিষয় কয়টি

ইসলামের মৌলিক বিষয় কয়টি

ইসলামের মৌলিক বিষয় কয়টি

ইসলামের মৌলিক বিষয় মূলত ০৫টি যথাঃ ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত। এই পাচটি ইসলামের মৌলিক বিষয় মেনে যদি আমরা পৃথিবীতে চলতে পারি তাহলে অবশ্যই আমরা জান্নাতুল ফেরদাউস লাভ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থা

রাজনীতি ইসলামের একটি দিক। ইসলাম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করা সম্ভব নয়। ইসলামে ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করা অর্থহীন।

আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা (Islam is a complete code of life)। আর রাজনীতি আমাদের সামষ্টিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। 

ইসলাম যেভাবে আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, কিভাবে নামাজ আদায় করতে হবে, রোযা পালন করতে হবে, যাকাত দিতে হবে ও হজ আদায় করতে হবে, ঠিক সেভাবেই আমাদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনা, সরকার গঠন, প্রতিনিধি নির্বাচন, চুক্তি সম্পাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্য করার নীতি শিক্ষা দেয়।

এই পোস্টে ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব নয়। তাই আমরা এখানে কেবল ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূলনীতিসমূহ ও প্রধান দিকগুলো উল্লেখ করব। আগ্রহী পাঠক-পাঠিকাগণ এ বইয়ের শেষের দিকে সন্নিবেশিত পুস্তকতালিকায় উল্লিখিত এ সংক্রান্ত বইপুস্তক পড়তে পারেন।

ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিম্নলিখিত মূলনীতিসমূহের ওপর ভিত্তিশীল:

আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বা সব ক্ষমতার মূল অধিকারী কে

সার্বভৌমত্ব মানে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের উৎস। ইসলামে ক্ষমতা ও আইন-কানুনের উৎস হচ্ছেন আল্লাহ্ তা'আলা। (সূরাহ আলে ইমরান- ১৫৪) মানুষ আল্লাহ্ সৃষ্টি ও বান্দাহ্ এবং আল্লাহ্ তা'আলাই জানেন যে, তাঁর বান্দাহর জন্য কি ভাল, আর কি মন্দ। তাঁর কথাই শেষ কথা। মানুষের তাঁর দেয়া আইন-কানুন পরিত্যাগ বা তাতে পরিবর্তন করা কিছুতেই উচিত নয়। উদাহরণ স্বরূপ, আল্লাহ্ তা'আলা কুর'আন মজীদে এরশাদ করেন:

“পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও; এ হচ্ছে তাদের উভয়ের কৃতকর্মের প্রতিদান যা আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আর আল্লাহ্ মহাপরাক্রান্ত মহাজ্ঞানী।” (সূরা আল-মায়িদাহ –৩৮) ইসলামের বিধান অনুযায়ী মুসলিম হবার দাবীদার কোন শাসক বা সরকারই এ আইন পরিবর্তন করতে পারে না (সূরা আল- মায়িদাহ -৪৪)।

আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে কুর'আন মজীদে বহু আইন-কানুন রয়েছে। মানবতার বৃহত্তর কল্যাণের খাতিরে ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তব্য হচ্ছে এসব আইন-কানুনকে বাস্তবায়িত করা।

মানুষের খিলাফত (প্রতিনিধিত্ব)

মানুষ পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্ তা'আলার খলীফাহ (প্রতিনিধি)। (সূরা আল-বাকারাহ-৩০) আল্লাহ্ তা'আলা সার্বভৌম ও মানুষ তাঁর প্রতিনিধি। তাই আল্লাহ্ তা'আলা যা কিছু আদেশ করেছেন মানুষের তা-ই করা উচিত। মানুষ আল্লাহ্ তা'আলার আনুগত্য করবে কি করবে না এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যে তাকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকার কারণেই তাকে শেষবিচারের দিনে আল্লাহ্ তা'আলার নিকট জবাবদিহি করতে হবে।

‘মানুষ আল্লাহর খলীফা'- রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একথার অর্থ হচ্ছে এই যে, মানুষকে পৃথিবীর বুকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানো হয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর পক্ষ থেকে পৃথিবীর বুকে তাঁর ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্যে মানুষকে আমানত হিসাবে ক্ষমতা দিয়েছেন। অতএব, আল্লাহর ইচ্ছা বাস্তবায়ন করা তার জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। একজন প্রতিনিধির কাছ থেকে এটাই কাম্য যে, সে তার নিয়োগকর্তা মালিকের পছন্দ অনুযায়ী আচরণ করবে। (সূরাহ ইউনুস-১৪)

পরামর্শ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ (শূরা)

ইসলাম আমাদেরকে পরামর্শের মাধ্যমে (শূরা) সরকার পরিচালনা, আইন প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে শিক্ষা দেয়। শূরা’ মানে “আলোচনা, পরামর্শ ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ”। (সূরা আলে ‘ইমরান-১৫৯) এটা ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ইসলামে স্বৈরতন্ত্রের কোন স্থান নেই।

পরামর্শ (শূরা) অবশ্যই কুর'আন-হাদীস ভিত্তিক হতে হবে। পরামর্শ কিছুতেই কুর'আন -হাদীছের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারবে না।

সরকারের জবাবদিহিতা

ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শাসক ও সরকার প্রথমতঃ আল্লাহর নিকট, অতঃপর জনগণের নিকট দায়ী। শাসককে অবশ্যই কুর'আন-সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী জনগণের কল্যাণের জন্যে কাজ করতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে শাসক হচ্ছে জনগণের সেবক।

ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিকরা তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয়ে শাসক ও সরকারকে প্রশ্ন করার অধিকার রাখে। অন্যদিকে শাসক যতক্ষণ কুর'আন-সুন্নাহর অনুসরণ করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর আনুগত্য করা জনগণের জন্যে অবশ্য কর্তব্য।

শাসক ও শাসিত উভয়ই আল্লাহর খলীফা। শেষ বিচারের দিন তাদের উভয়কেই আল্লাহ্ সামনে হাযির হয়ে নিজ নিজ কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে। তবে শাসিতের চেয়ে শাসকের দায়িত্ব অনেক বেশী

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ প্রশাসন থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রয়োজন হলে রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার বা যেকোন সরকারী কর্মচারীকে আদালতে হাযির হবার জন্যে নির্দেশ দেয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদের সাথে সাধারণ নাগরিকদের থেকে ভিন্ন আচরণ করা হবে না। 

কুর'আন মজীদে ন্যায়বিচার সম্বন্ধে বহু নির্দেশ রয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সকল নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা (সূরা আন্- নিসা'-৫৮ ও ১৩৫)। শাসক ও সরকারের বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকার নেই।

আইনের চোখে সমতা

ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সকল নাগরিকের জন্যে আইনের চোখে সমতার নিশ্চয়তা বিধান করে। ইসলামী ব্যবস্থায় ভাষা, বর্ণ, শ্রেণী, গোত্র, ধর্ম ও নারী-পুরুষ ভেদে কোনরূপ বৈষম্য করা হয় না। আল্লাহ্ তা'আলা কেবল তাকওয়ার ভিত্তিতে মানুষের মর্যাদা নির্ণয় করেন। ইসলামের দৃষ্টিতে, যিনি সব চেয়ে বেশী তাকওয়ার অধিকারী তিনিই সর্বাধিক মর্যাদাবান ব্যক্তি। (সূরা হুজুরাত-১৩)

অবশেষেঃ

একটি আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে নামাজ ও যাকাত ব্যবস্থা কায়েম করা, ন্যায় ও সত্যের প্রতিষ্ঠা এবং মন্দকাজ প্রতিহত করা। (সূরা আল-হজ-৪৪) মুসলিম- অমুসলিম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের কল্যাণ নিশ্চিত করা ইসলামী রাষ্ট্রের দয়িত্ব। রাষ্ট্রকে অবশ্যই মানুষের মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণের (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার) নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। 

ইসলামী রাষ্ট্রের সকল নাগরিকই ধর্মবিশ্বাস, চিন্তা, বিবেক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করবে। প্রতিটি নাগরিকই নিজ নিজ মেধা-" প্রতিভা ও যোগ্যতার বিকাশ, ধনসম্পদ উপার্জন ও তার মালিকানা সংরক্ষণের ব্যাপারে কুর'আন-সুন্নায় বর্ণিত সীমারেখার মধ্যে স্বাধীনতার অধিকারী হবে। 

যে কোন নাগরিক সরকারের যে কোন নীতিকে ঠিক বা ভুল মনে করলে তার সমর্থন বা বিরোধিতা করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে তাকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে:

ক) ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য কুর'আন-সুন্নাহর আইন-কানুন বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য কর্তব্য। যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিধি-বিধান অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে না কুর'আন মজীদ তাদেরকে কঠোরভাবে নিন্দা করেছে। (সূরা আল- মায়িদাহ -৪২-৫০)

খ) একটি আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্রকে অবশ্যই সম্পদের সুষম ও ইনসাফসম্মত বন্টন নিশ্চিত করতে হবে। ইসলাম সমবন্টনকে সমর্থন করে না। কারণ তা প্রাকৃতিক বিধান এবং মানুষের মৌলিক প্রকৃতি ও সহজাত প্রবণতার বিরোধী বা বিপরীত। বর্তমানে বিশ্বে কোন পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্র নেই। 

বিশ্বে অনেক মুসলিম রাষ্ট্র রয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্র তা-ই যা মদীনায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের আদর্শে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে মুসলিম রাষ্ট্র হচ্ছে এমন দেশ যেখানকার সংখ্যাগুরু জনগণ মুসলমান এবং সেই সাথে কিছু কিছু ইসলামী বৈশিষ্ট্যও সে রাষ্ট্রের রয়েছে।

সে যা-ই হোক, কুর'আন-সুন্নাহর আইন-কানুন বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বের অনেক দেশেই সংঘবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। যেসব সংগঠন ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে আসছে তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: 

মধ্যপ্রাচ্যে আল-ইখওয়ানুল মুসলিমুন; পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ায় নাহদাতুল উলামা ও দেওয়ান দাওয়াহ ইসলামিয়াহ (ডিডিআইআই); আলজিরিয়ায় ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট (এফআইএস); সূদানে ন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্ট (বর্তমানে বেআইনী ঘোষিত); মালয়েশিয়ায় পার্টি আল-ইসলাম সে-মালায়সিয়া (পিএএস), তিউনিসিয়ায় হিযবুন নাহ্দাহ ও তুরস্কে মিল্লী সালামাত পার্টি। 

পরে মিল্লী সালামাত পার্টির নাম পরিবর্তন করে হিসবে রিফাহ রাখা হয়, কিন্তু দলটিকে বেআইনী ঘোষণা করা হয়। অতঃপর এ দলের লোকেরা হিযবে ফাযীলাত নামে নতুন দল গঠন করেন। কিন্তু ২০০১ সালের জুন মাসে হিযবে ফাযীলাতকেও বেআইনী ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে তুরস্কে Justice and development party ক্ষমতাসীন। এ দল মিল্লী সালামাত পার্টির উত্তরসূরী।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আরো বহু ইসলামী সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে।

মিসর, পাকিস্তান, সুদান, ইরান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, আলজিরিয়া ও অন্যান্য দেশে ইসলামী পুনর্জাগরণের যে চেষ্টা চলছে তাতে সারা বিশ্বের মুসলিম জনগণের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণ ও যুব সমাজের মধ্যে বিরাট আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে। 

তাদের এ আশাবাদ কেবল তখনই বাস্তব রূপ লাভ করতে পারে যদি মুসলমানদের কথা ও কাজের মধ্যে মিল হয়। কেবল তখনই সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে সাফল্য প্রদান করবেন। আশা করা যায় যে, এসব প্রচেষ্টার ফলে কোথাও না কোথাও একটি প্রকৃত ইসলামী রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটবে যা গোটা বিশ্বকে ন্যায়বিচার, ও সুখ-শান্তির দিকে পথপ্রদর্শন করবে।

পোস্ট ট্যাগঃ

ইসলামের মৌলিক বিষয় কয়টি
ইসলামের মৌলিক বিষয় কয়টি কি কি
ইসলামের মৌলিক বিষয় কয়টি ও কি কি ব্যাখ্যা কর
ইসলামের মৌলিক বিষয় কয়টি ও কি কি
ইসলামের মৌলিক বিষয় কয়টি ও কী কী
ঈমানের মৌলিক বিষয় কয়টি
ইসলামের মৌলিক বিষয়

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url