আমরা সবাই পাপী

 পাপের আগুন প্রায়শ্চিত্ত করার নিয়ম নামায- The fire of sin is a ritual prayer for atonement

আমরা সবাই পাপী

হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

'প্রত্যেক নামাযের সময় আল্লাহর এক ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকে, 'হে আদমের সন্তান! যে আগুন তুমি জ্বালিয়েছো তা নিভিয়ে দেবার জন্যে উঠে দাঁড়াও'।” (তারগীব, তাবরানী)


  • ব্যাখ্যাঃ দুই নামাযের মধ্যে বহু ছোট বড় ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে যা পরকালে আগুনের রূপ ধারণ করবে। সে জন্যে ফেরেশতা এ ঘোষণা করে, যে আগুন তুমি জ্বালিয়েছো তা নিভিয়ে দেবার জন্যে মসজিদে এসো, নামায পড়ো। আল্লাহর কাছে তওবা ও ইসতেগফার করো। তওবা ও ইসতেগফারের পানিতে এ আগুন নিভে যাবে বা প্রায়শ্চিত্ত করার নিয়ম হবে।

মেসওয়াকের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

মেসওয়াকের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস; হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মিসওয়াক করার ফলে মুখ পরিষ্কার হয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়। অন্য এক বর্ণনায় আছে, 'দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি হয়'।” (তারগীব ও তারহীব)

মুসলমানীর কতিপয় নিদর্শন


হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, “জিবরাঈল আলাইহিস সালাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, 'ইসলাম কি?' তিনি জবাবে বললেন, “ইসলাম হলো এই যে, তুমি সাক্ষ্য দেবে আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। 

নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে, হজ্জ ও ওমরাহ করবে। যখন গোসল করার প্রয়োজন দেখা দেয় তখন গোসল করবে, যথাযথভাবে অযু করবে এবং রমযান মাসে রোযা রাখবে।' প্রশ্নকারী জানতে চাইলেন, ‘এসব করলে কি আমি মুসলমান বলে গন্য হবো?' তিনি বললেন, 'হ্যাঁ।' (তারগীব ও তারহীব)

আজানের ফজিলত


হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'কোন লোকালয়ে নামাযের জন্যে আযান দেয়া হলে সেদিন ওই লোকালয়কে আল্লাহ বিপদ ও আযাব থেকে রক্ষা করেন'।”

৫ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত

ওব্বা বিন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ৫ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'সেই মেষ পালকের ওপর তোমার রব সন্তুষ্ট হয়ে যান, যে কোন উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে আযান দেয় এবং নামায পড়ে।

আল্লাহপাক ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, 'আমার এই বান্দাকে দেখো! জনবসতি থেকে দূরে অবস্থান করেও সে আযান দেয়, নামায পড়ে এবং আমাকে ভয় করে। আমি আমার এ বান্দার ভুল-ভ্রান্তি মাফ করে দিয়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। 

আবদুল্লাহ ইব্‌নে কুরত রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম হিসাব গ্রহণ করা হবে নামাযের। বান্দা যদি নামাযের হিসাব সন্তোষজনকভাবে দিতে পারে তবে সে অন্যান্য আমলেও কামিয়াব হয়ে যাবে। আর সে যদি নামাযের হিসাব সন্তোষজনভাবে দিতে না পারে তবে তার অন্যান্য আমলও খারাপ হয়ে যাবে।” (তারগীব, তাবরানী)

নামায হলো তাওহীদের ভিত্তি এবং দ্বীনের বুনিয়াদ। বুনিয়াদ শক্ত হলে ঘর মজবুত হবে, আর বুনিয়াদ দুর্বল হলে ঘর কমজোর হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই নামাযের আমল দিয়েই প্রাথমিকভাবে একজনের ভাল-মন্দ বিচার করা যায়। যোহর নামাজের ফজিলত অনেক বেশি।

মসজিদ নির্মাণের ও আবাদ করার ফজিলত


হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, 'আল্লাহর ঘরের আবাদকারী এবং তার সেবাকারী আল্লাহর বন্ধু ও প্রিয়জন।” (তাবরানী)

ইবাদত সম্পর্কিত বিষয়াদি


  • ব্যাখ্যাঃ যারা নিয়মিত নামায পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর ঘর মসজিদ আবাদ করে এবং মসজিদ নির্মাণ করে ও মসজিদের সেবা করে তারা আল্লাহর প্রিয়ভাজন হয়ে যায়। জামায়াতে নামাজ পড়া মুসলমানিত্বের প্রমাণ বহন করে।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'কোন ব্যক্তিকে মসজিদে নিয়মিত জামায়াতের সাথে নামায আদায় করতে দেখলে তাকে মুসলমান বলে সাক্ষ্য প্রদান করবে।” আর মসজিদে দান করার ফজিলত কি তা বলে শেষ করা যাবে না।

নামাজপড়ার জন্য দূরত্ব অতিক্রমের ফজিলত


হযরত উবাই বিন কা'আব রাদিয়াল্লাহু আনহু জামাতে নামাজ পড়ার বর্ণনা করেছেন, “একজন আনসারের ঘর নবীজীর মসজিদ থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ছিল, কিন্তু তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদে এসে সর্বদা নামায আদায় করতেন। কোন ওয়াক্তের নামাযই তিনি বাদ দিতেন না। এক লোক এ অবস্থা দেখে তাঁকে বললেন, 'গরমের সময় ও রাতে মসজিদে আসার জন্য আপনি একটি খচ্চর কিনছেন না কেন?'

তিনি উত্তরে বললেন, 'আমি মসজিদের কাছে বাড়ি করা এ জন্যই পছন্দ করিনি, যেন আমি পায়ে হেঁটে মসজিদে যেতে পারি। আমি চাই, মসজিদে যাওয়া আসার প্রতিটি পদক্ষেপ যেন আমার আমলনামায় লেখা হয়ে যায়।' রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে বললেন, 'ওর প্রত্যেক পদক্ষেপের সওয়াব আল্লাহ ওকে দেবেন।” (তারগীব, মুসলিম)

ফজর ও এশার নামাজের সময় নামাযে শরীক হওয়া


হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “আমরা কোন ব্যক্তিকে ফজর ও এশার নামাযের জামায়াতে না পেলে তার সম্বন্ধে খারাপ ধারণা করতাম।” (তারগীব)


  • ব্যাখ্যাঃ এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাঁরা মুনাফিক হবার সন্দেহ করতেন। মুনাফিকরা সাধারণত ফজর ও এশার নামাযে আসতো না। সে সময় বৈদ্যুতিক আলো ছিল না, ফলে লুকিয়ে থাকার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। তাই যেসব মুনাফিকের অন্তর ঈমান শূন্য ছিল তারা মসজিদে আসতো না। তাদের সম্পর্কে কোরআন মজীদে বলা হয়েছে, ‘ওয়ালা ইয়াতুনাস সালাতা ইল্লা ওয়াহু কুসালা’ অর্থাৎ তারা অনিচ্ছার সাথে নামাযের জন্যে আসতো।

এশার নামাজ কয় রাকাত


এশার নামাজ কয় রাকাত তা হলো সর্বমোট নয় রাকাত। চার রাকাত ফরজ, দুই রাকাত সুন্নাত এবং তিন রাকাত বেতরের নামাজ।

ইমামের বৈশিষ্ট্য বা নামাজ পড়ানোর যোগ্যতা ও দায়িত্ব

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি মানুষের ইমামতি করে তার আল্লাহকে ভয় করা উচিত। তার জানা উচিত, এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যদি যে ঠিকভাবে ইমামতি করে তবে মুক্তাদির সমান ফল সে পাবে কিন্তু মুকতাদির ফল তাতে কমবে না। আর সে যদি ভুল করে সব পাপ তার ঘাড়েই পড়বে, মুকতাদিদের ওপর তার প্রভাব পড়বে না।” (তারগীব, তাবরানী)

ঘরে নফল নামাজ পড়ার হাদিস

হযরত হারম ইবনে মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং হযরত উম্মাতা আবদুল্লাহ ইবনে সায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, নফল নামায ঘরে পড়া উত্তম, না কি মসজিদে পড়া।' তিনি বললেন, 'তুমি কি দেখো না আমার ঘর মসজিদের কত কাছে? আমার কাছে নফল নামায মসজিদ অপেক্ষা ঘরে পড়া উত্তম। অবশ্য ফরয নামায জামাতে পড়তে হবে।


  • ব্যাখ্যাঃ নবীজী নফল নামায মসজিদ অপেক্ষা ঘরেই বেশি পড়তেন। ঘরে নফল নামায পড়লে ঘর আবাদ হয়। সন্তান ও পরিবারের লোকদের মধ্যে নামায পড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। ফরজ নামায যেহেতু জামায়াতের সাথে আদায় করতে হয় তাই ধরে নামাযের পরিবেশ তৈরীর জন্য বেশি বেশি নফল নামায পড়া উচিত। 
  • তাছাড়া নফল নামাজের উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহর নৈকট্যলাভ। মসজিদে নফল নামাযের মাধ্যমে লোক দেখানোর একটা প্রবণতা বা রিয়া তৈরি হওয়ার অবকাশ থাকে। এই সম্ভাবনা দূর করার জন্যও নফল নামায ঘরেই পড়া উচিত এ হাদীস সেদিকেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ

হযরত আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'সব থেকে জঘন্য চোর হল সেই ব্যক্তি যে নামাযে চুরি করে।' সবাই জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! নামাযে চুরি করার অর্থ কি?' তিনি বললেন, 'নামাযে চুরি করার অর্থ হলো সে রুকু ও সিজদা ঠিকভাবে করে না।” (তারগীব, তাবরানী ও ইব্‌নে খোষায়মাহ)

ইসলামের বন্ধন শুরু হয় নামায দিয়ে, ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে

হযরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, '(এমন এক সময় আসবে যখন) ইসলামের বাঁধন ও শৃঙ্খলাগুলো এক এক করে ছিন্ন হয়ে যেতে শুরু করবে। যখন কোন বাঁধন ছিন্ন হয়ে যাবে তখন মানুষ সেই শৃঙ্খলা পূনরায় স্থাপন করার পরিবর্তে যেটুকু ঐক্য বন্ধন বাকী থাকবে তাকেই যথেষ্ট বলে মনে করবে। সর্ব প্রথম যে বাঁধন ছিন্ন হবে তা হলো ন্যায়ের শাসন (খেলাফতে রাশেদা ও হুকুমতে ইলাহিয়া)। আর সর্বশেষে যে বাঁধন ছিন্ন হবে তা হলো নামাজ।”


  • ব্যাখ্যাঃ এর অর্থ হলো, দ্বীনের বুনিয়াদ এক এক করে ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সর্ব প্রথম ইসলামের রাজনৈতিক ক্ষমতা বিলুপ্ত হবে। তারপর অধঃপতনের গতি তীব্র হতে থাকবে এবং এই শৃঙ্খলার শেষ বন্ধনটিও ছিড়ে যাবে। লোকেরা নামায পড়া ছেড়ে দেবে। উম্মতের অধিকাংশ বেনামাযী হয়ে যাবে। আর এটা হবে অধঃপতনের শেষ পর্যায়। 
  • (অর্থাৎ একজন মুসলমান তার মুসলমানিত্বের যাত্রা শুরু করবে নামায দিয়ে এবং একে একে ইসলামের বাঁধনে নিজেকে জড়িয়ে নেয়ার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করতে থাকবে। সমাজে ইসলামী বিধি-বিধান চালু করার জন্য সে সচেষ্ট হবে এবং তার এই চেষ্টা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করবে যেদিন ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হবে এবং রাষ্ট্র কর্তৃক সমাজে ইসলামী আইন চালু হবে।

পোস্ট ট্যাগ

আমরা সবাই পাপী
আমরা সবাই পাপী আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি।
আমরা সবাই পাপী আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি
আমরা সবাই পাপী নিজের পাপের
আমরা সবাই পাপী আপন পাপের
আমরা সবাই পাপী আপন পাপের বাটখারা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url