আদম আঃ এর ভাষা কি ছিল

 আদম আঃ এর ভাষা কি ছিল

আদম আঃ এর ভাষা কি ছিল

আদম আঃ এর ভাষা ছিল আরবী। তিনি আরবী ভাষায় কথা বলতেন বলে জানা যায়। নিচে তাঁর জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো আজকের এই পোস্টে।

“অতঃপর আল্লাহ তা'আলা আদমকে সব জিনিসের নাম শিক্ষা দিলেন।” (আল কোরআন)

“হে ফিরিশতাগণ! যদি তোমরা তোমাদের দাবীতে সত্যবাদী হও তবে তোমরা এই সকল জিনিসের নাম বল।”(আল কোরআন)

আদম ও ফিরিশতাগণের মধ্যে জ্ঞানের দিক থেকে আদম শ্রেষ্ঠ। আদমকে নাম শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ফিরিশতাদেরকে নাম শিক্ষা দেয়া হয়নি৷ এখানে নাম শিক্ষা দেয়ার ফলে আদম জ্ঞানের দিক থেকে ফিরিশতাদের চেয়ে উৎকৃষ্ট হলো। সুতরাং নাম শিক্ষা দেয়ার মাঝে বিশেষ গুরুত্ব নিহীত রয়েছে। এ বিশেষ গুরুত্বের মর্মার্থ কি?

দুইজন লোককে একই সঙ্গে যদি প্রশ্ন করা হয়, তার নাম কি? একজন নিজ জ্ঞান থেকে বলল তার নাম আঃ জব্বার। অন্য জন কিছুই বলতে পারল না। এক্ষেত্রে যে উত্তর দিতে পারল সে জ্ঞানী হিসেবে পরিচিত হবে এবং দুজনের মধ্যে সে হবে শ্রেষ্ঠ।

আদম আঃ এর সন্তান কত জন

ইবনে ইসহাকের মতে বা কেউ কেউ বলেন চল্লিশটি সন্তান প্রসব করেন মা হাওয়া। তবে কেউ কেউ বলেন হাওয়া (আঃ) প্রতি ১ জোড়া করে মোট ২৪০ জন সন্তানের জন্ম দেন।

সৃষ্টি জগতের কোন জিনিসের নিজস্ব কোন ইলম বা জ্ঞান নেই

সৃষ্টি জগতের কোন জিনিসের নিজস্ব কোন ইলম বা জ্ঞান নেই। এজন্য স্রষ্টার পক্ষ থেকে আগেই জ্ঞান দিয়ে দেয়া হয়। ফলে যাকে যে বিষয়ের জ্ঞান বা ইলম শিক্ষা দেয়া হয়। সে অন্যের চেয়ে এ বিষয়ে উৎকৃষ্ট হয়। এখানে ফিরিশতাদেরকে খাটো করা ও আদমকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ আদমকে নাম শিক্ষা দেননি। বরং এখানে যার যে দায়িত্ব তা বুঝিয়ে দেয়াই আল্লাহর মূল উদ্দেশ্য। জগতের সকল কাজ একই প্রজাতির মাধ্যমে আঞ্জাম দেয়া সম্ভব নয়। যার যার পরিসরে প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে এটাই স্রষ্টার বিধান ৷

ইলম সম্পর্কে আয়াত

“আর তিনি আদমকে সমস্ত জিনিসের নাম শিখালেন, পরে সে সব জিনিস ফিরিশতাদের সামনে রেখে বললেন, আমাকে তাদের নাম বলে দাওতো, যদি তোমাদের কথা সত্য হয়। তারা বললো, সব মহিমা তোমার। তুমি আমাদের যা শিখিয়েছ তার বাইরেতো আমাদের কিছুই জানা নেই, নিশ্চয় তুমি মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞাত! তিনি বললেন, ‘ওহে আদম। 

এদেরকে এই সকল নাম বলে দাওতো! যখন সে তাদের নাম বললো, আল্লাহ বললেন, কেমন, আমি কি তোমাদেরকে বলি নাই যে, আসমান যমিনের যা কিছু গোপন আছে; সমস্তই আমি জানি এবং আমি তাও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর এবং যা তোমরা গোপন রাখ।” আল-কোরআন ২: ৩১-৩৩

হযরত আদম আঃ কে নাম শিক্ষা দেয়ার বিষয়টি বোধগম্য করা

আদমকে নাম শিক্ষা দেয়ার বিষয়টি বোধগম্য করার জন্য নিম্নে একটি উদাহরণ দেয়া হলো। মনে করি দু'টি কম্পিউটারের মধ্যে একটিতে পূর্বেই কোন প্রোগ্রামের তথ্য বা জ্ঞান দিয়ে দেয়া হলো এবং সেটিতে সুইচ দেয়ার সাথে সাথে উত্তর দেয়ার স্বাধীনতাও দিয়ে রাখা আছে। কিন্তু দ্বিতীয়টিতে এ ব্যাপারে কোন তথ্য বা জ্ঞান দিয়ে দেয়া হলো না। 

এবার উভয়ের কাছে যখন কোন তথ্যের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে তখন প্রথমটি উত্তর দিতে পারলেও দ্বিতীয়টি কোন উত্তর (তথ্য) দিতে পারবে না, এটাই সত্য। তাই ফিরিশতাগণকে যখন জিনিসের নাম জিজ্ঞেস করা হলো তখন তারা কিছুই বলতে পারল না। কিন্তু আদমকে পূর্ব থেকে জ্ঞান দিয়ে দেয়ায় তার পক্ষে নাম বলা সহজ হলো। আল্লাহ অসীম জ্ঞানের মালিক। তার মধ্যে অতিকিঞ্চিত জ্ঞান মানুষকে দান করেছেন।

আল্লাহ বলেন, “তোমরা জ্ঞানের অতি সামান্য অংশই লাভ করেছ।” (আল কুরআন

আল্লাহ তা'আলা যাকে যতটুকু জ্ঞান দান করেছেন, এ ব্যাপারে সে ততটুকু সত্যের সন্ধান পেয়েছে। আদমকে দেয়া জ্ঞানের মাধ্যমে সে সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সন্মানিত হলো। আদমের প্রজাতি তাদের জ্ঞান দ্বারা স্রষ্টার অস্তিত্ব তালাশ করে। তাঁর (আল্লাহর) অসীম কুদরতকে জানতে চায়। কারণ জানার মধ্যেই আদম জাতের কল্যাণ নিহীত। অর্থাৎ জানতে পারলেই সে তার প্রভুকে বড় করে মানবে, তাঁর আনুগত্য করবে। সৃষ্টির কল্যাণে নিয়োজিত হবে। তাই প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ইলম শিক্ষা করা ফরজ।

ইলম সম্পর্কে বাণী বা জ্ঞান শিক্ষা ছাড়া মানুষ অন্ধ থাকে

ইলম বা জ্ঞান শিক্ষা ছাড়া মানুষ অন্ধ থাকে। সে স্রষ্টাকে চিনতে পারে না। এবং নিজের সম্পর্কে থাকে অজ্ঞ। তারা সৃষ্টির রহস্য বোঝে না। দুনিয়ায় আসার উদ্দেশ্য কি তাও তারা জানে না। পরিণামে তাদের জীবন হয় ব্যর্থ। কিন্তু যারা দুনিয়ায় এসে খোদায়ী ইলম চর্চা করে, তারাই আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান মেনে চলে, তাঁর আনুগত্য করে। 

কিন্তু যারা শুধু দুনিয়াবী ইলম শিক্ষা করে, দুনিয়ার পথে কামিয়াব হওয়ার জন্য দুনিয়ার সম্পদের পথে ছুটতে থাকে, তারা অতীতের প্রদত্ত জ্ঞান ভুলে যায়। ভুলে যায় আখেরাতের কথা। তারা তখন আল্লাহর বিধান মানে না, তাঁর আনুগত্য করে না। তাই দুনিয়ার জীবনে এসেও খোদায়ী জ্ঞানের (শিক্ষার) চর্চা করতে হয়। 

এতে স্রষ্টার নাম শিক্ষা দেয়ার অতীত বৈশিষ্ট্য তার স্মৃতিতে ফিরে আসে। আদমকে জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার মর্মার্থ হলো আদমের মেমোরীতে পূর্ব থেকে স্রষ্টার বিধান সম্পর্কে জ্ঞান দিয়ে দেয়া এবং তার ইচ্ছা শক্তির স্বাধীনতা অর্পন। আদম প্রজাতির ইচ্ছা শক্তির স্বাধীনতা আছে বলেই তারা ভাল মন্দ উভয় কাজই করতে পারে।

আদম হাওয়া প্রজাতি আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান খাটিয়ে কল্যাণ সাধন করে

অপরদিকে আদম প্রজাতি আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান খাটিয়ে নিজের কল্যাণ সাধনও করতে পারে। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ যাকে জ্ঞান দান করেছেন, তাকে অশেষ কল্যাণ দান করেছেন।” (আল কুরআন)

আদমকে নাম শিক্ষা দেয়ার পর আদম জাতের রূহসমূহকে লক্ষ্য করে আল্লাহ জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি কি তোমাদের প্রভু নই? সাথে সাথে সকল রূহ জবাব দিয়েছিল- হাঁ, ‘হে প্রভু, আপনিই আমাদের রব।'

আদম জাতের রূহসমূহ এ স্বীকৃতি দেয়া থেকে বুঝা গেল যে, তাদের মেমোরীতে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান অতীতে মওজুদ ছিল। কিন্তু পরে দুনিয়ায় এসে যাতে ভুলে না যায় সেজন্যও তাদেরকে সতর্ক করা হয়।

“হে রূহগণ! অবশেষে কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পার যে, আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানিনা যে, কেহ আমাদেরকে আমাদের খালেক এবং মালেক সম্বন্ধে বলেছে যে, তাঁকে কখনও ভুলে যেয়ো না। অথবা তা বলতে থাক যে, আমাদের পিতা-পিতামহগণ শেরেক করেছে। আমরা তো তাদের পর তাদের সন্তান-সন্ততি।” (আল কোরআন)

কাউকে না জানিয়ে, না সতর্ক করে শাস্তি দেয়া স্রষ্টার বিধান নয়। তাই রূহ সমূহকে জ্ঞান দেয়ার পরও দুনিয়াতে নবী, রাসূল পাঠিয়ে মানুষকে সত্যের পথে, কামিয়াবির পথে ডেকেছেন। এরপরও যারা ভুল পথে চলবে তাদের কোন ওজর আপত্তি হাশরের দিন আল্লাহ শুনবেন না। 

তাই আমাদেরকে স্রষ্টার নাম শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে, খোদায়ী জ্ঞান বা ইলম চর্চা করতে হবে। “পড় এবং তোমার প্রভু অতি দানশীল; যিনি কলম দিয়ে লিখতে শিখিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন যা মানুষ জানত না।”(৯৬:৩৫)

আত্মা ও দেহ গঠনের কোষকলা

মূলতঃ মানুষের আত্মা ও দেহ গঠনের কোষকলাগুলো তথ্যের ভাণ্ডার। একটি মানুষের একটি কোষের মধ্যে যে তথ্য রয়েছে তা দিয়ে সহস্রাধিক ভলিয়মের পুস্তক সৃষ্টি করা সম্ভব। এভাবে মানব দেহের একটি কোষ এক একটি তথ্যের লাইব্রেরী। 

কম্পিউটারের মেমোরীতে তথ্য দিয়ে রাখলে সেটি যেমন তথ্যের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করে তেমনি মানব আত্মার আদি পুরুষ ও রূহসমূহকে যে তথ্য দেয়া হয়েছিল, সে অনুযায়ীই তারা কাজ করবে— এটাই কথা ছিল। এবং পরবর্তী পর্যায়ে বংশগতির ধারায় সে তথ্য নতুন প্রজন্মের কাছে চলে আসে- এটাই নিয়ম। 

কিন্তু কম্পিউটার থেকে ভাইরাসের আক্রমণে যেমন তথ্য হারিয়ে যেতে পারে তেমনি আদম প্রজাতির মেমোরী থেকে শয়তানের আক্রমণে পূর্বে প্রদত্ত জ্ঞান হারিয়ে যেতে পারে। এরপরও পূর্বতন প্রজন্মের গঠন; স্বভাব-চরিত্র নতুন প্রজন্মের কাছে কিছু হলেও বিদ্যমান থাকে। তাই আদমের মোমেরীতে পূর্ব থেকে জ্ঞান দেয়া ছিলো বলে সে সহজেই প্রদত্ত জিনিসের নাম বলে দিয়েছিল।

জিন ও শয়তানের অস্তিত্ব

স্রষ্টার সৃষ্টি রহস্যের অন্ত নেই। আঠার হাজার মাখলুকের মধ্যে জিন ও শয়তান একই গোত্রের দু'টি ভিন্ন নাম। মূলত: জিন গোত্র থেকেই শয়তানের উদ্ভব হয়েছে। শয়তান হলো জিনদের মধ্যে স্রষ্টার অভিশপ্ত এক নাম। সে অহংকারের বশবর্তী হয়ে আল্লাহর আনুগত্যের বিরোধীতা করে আদমকে সেজদা করেনি। তাই শয়তান অভিশপ্তদের দলে অন্তর্ভুক্ত।

আমি তোমাকে সেজদা করতে হুকুম করলাম

“আমি তোমাকে সেজদা করতে হুকুম করলাম? তুমি সেজদা করলে না কেন? ইবলিস বলল, আমি আদম হতে শ্রেষ্ঠ, আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছ।” (আল কোরআন)

আল্লাহ পাক ইবলিসকে বললেন- “এখান থেকে ঘৃণিত এবং বিতাড়িত হয়ে যা। যারা তোর অনুগত হবে তাদের সকলের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব।” (সূরা হিজর)

ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আমরা শয়তান সম্পর্কে অবহিত আছি। শয়তানকে বিশ্বাস করা ঈমানের শর্ত। কিন্তু বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে এখনও শয়তানের অস্তিত্ব আবিস্কার করা সম্ভব হয়নি। কিংবা জিন ও শয়তান বলতে কোন অদৃশ্য সত্তা আছে, একথা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কোথাও স্বীকার করা হয়নি। 

বিজ্ঞান শয়তানের অস্তিত্ব আবিস্কার করতে না পারলেও আমরা শয়তানের অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারব না। কারণ শয়তানের অস্তিত্ব অস্বীকার করা মানে ঈমানের বিপরীত বিশ্বাসে চলে যাওয়া।

আমরা চার মাত্রিক জগতে বাস করি

আমরা চার মাত্রিক জগতে বাস করি বলে (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা ও সময়ের ডাইমেনশন) অন্য কোন মাত্রিক জগতের জিনিসের অস্তিত্ব হয়ত দেখতে পারি না। জগৎ কি চার মাত্রার মধ্যেই সীমাবদ্ধ? এর জবাবে বলা যায় বৈজ্ঞানিকগণ এখন আরও অনেক ডাইমেনশনের (মাত্রা) জগতের কথা চিন্তা করছেন। তার মধ্যে নিগেটিভ ডাইমেনশনের জগৎ একটি রহস্যময় জগৎ।

এমন জগতের উপাদান আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও আমরা সেগুলো দেখিনা। তৎমধ্যে বলা যায় প্রতি বস্তুর কথা। এর উপাদান আমাদের অস্তিত্ব থেকে বিকীর্ণ হলেও সেগুলোকে আমরা দিখিনা। কারণ দেখিনা বলেই কোন জিনিসের অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না। বর্তমানে আমরা শয়তানকে না দেখলেও তারা আমাদেরকে দেখে। তারা হলো আগুনের তৈরী।

“জিনকে আমি জলন্ত অগ্নি শিখা হতে পূর্বেই সৃষ্টি করেছি।” (আল কোরআন

“নিশ্চয়ই (শয়তান) এবং তার বংশাবলী এমনভাবে তোমাদেরকে দেখতে পায় যেভাবে তোমরা দেখতে পাওনা।”(আল কোরআন)

বিশ্ব ব্যবস্থার প্রাকৃতিক নিয়মের বন্ধনে আমরা বন্দি

বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার প্রাকৃতিক নিয়মের বন্ধনে আমরা বন্দি বলে জিন ও ফিরিশতার অস্তিত্ব আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। কিন্তু দুনিয়াতে যে জিন জাতি আছে এবং জিন থেকেই যে শয়তানের উদ্ভব হয়েছে তার স্বাক্ষী হলো আল কোরআন। 

কোরআনের শ্বাশত বাণীই জিন ও শয়তানের অস্তিত্ব প্রমাণের বড় দলিল। কারণ চৌদ্দশত বছরের মধ্যে কোরআনের বাণীর বিকল্প কোন তথ্য এখনও কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি।

“আমি জিন ও ইনসানকে (মানুষকে) আমার ইবাদাত ব্যতীত অন্য কিছুর জন্য সৃষ্টি করিনি।”(আল কোরআন)

“সে জিনদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সুতরাং সে আল্লাহর হুকুমের না-ফরমানী করেছিল।" (আল কোরআন)

আমরা চার মাত্রিক জগতে বাস করি

আগেই বলেছি আমরা চার মাত্রিক জগতে বাস করি বলে তার চেয়ে বেশী কিংবা কম মাত্রার জগতের কোন জিনিসের অস্তিত্ব দেখি না। অর্থাৎ বর্তমান প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে অন্যান্য ডাইমেনশনের বস্তু বা সত্তার অস্তিত্ব আমাদের দৃষ্টির আড়ালে রয়েছে। 

এমনও হতে পারে জিন ও শয়তান আমাদের চেয়ে অন্য কোন মাত্রিক জগতে বাস করে। বর্তমান জগতের প্রাকৃতিক বিধানের আলোকে শয়তান ও জিন আমাদেরকে দেখতে পায়। কিন্তু আমরা তাদেরকে দেখতে পাইনা। যখন এ জগতের বর্তমান প্রাকৃতিক নিয়ম অচল হয়ে যাবে তখন আমরা অন্য ডাইমেনশনের জগতে চলে যাব, ফলে আমরা শয়তান ও জিনকে চাক্ষুষ দেখতে পাব।

বৈজ্ঞানিকগণ নিগেটিভ ডাইমেনশনের যে জগতের কথা ভাবছেন, সে জগতের বৈশিষ্ট্য হবে বর্তমান জগতের চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতির। যেমন বর্তমানে প্রোটন কণার চার পাশে ইলেকট্রন ঘোরে। কিন্তু নিগিটিভ ডাইমেনশনের জগতে ইলেকট্রন (আদন) বস্তুর কেন্দ্রে থাকবে আর প্রোটন তার চারপাশ দিয়ে ঘুরবে। 

এটি নিগিটিভ ডাইমেনশন জগতের ধারণা। সে জগতের প্রাকৃতিক রীতিনীতি হবে বর্তমান জগতের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন আমাদের প্রশ্ন জিন ও শয়তান কি? এদেরকে দেখা না গেলেও কি তাদের অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করার মতো নয়?

বৈজ্ঞানিকগণ জগৎ সৃষ্টির মূল উপাদান হিসেবে চারটি মৌলিক কণা

বৈজ্ঞানিকগণ জগৎ সৃষ্টির মূল উপাদান হিসেবে চারটি মৌলিক কণা ও চারটি মৌলিক বলকে ধরে নিচ্ছেন। এসব কণাগুলো পরস্পরের কাছাকাছি আসলেই বলগুলির উৎপত্তি ঘটে।

এ চারটি কণা হলো-

১. প্রোটন (p)

২. ইলেকট্রন (e)

৩. নিউট্রন (n)

৪. নিউট্রিনো (r)

এ চারটি মৌলিক বল হলো-

১। মাধ্যাকর্ষণ বল

২। ইলেকট্রোমেগনেটিক বল

৩। দুর্বল নিউক্লিয়ার ফোর্স (কণাগুলো ১০ মধ্যে অবস্থান করলে এই বলের উৎপত্তি হয়)

৪। সবল নিউক্লিয়ার ফোর্স (১০*বল উৎপন্ন হয়)

- ১৩ সে: মি: এর কম দূরত্বের সে: মি: এর চেয়ে নিকটে আসলে এ কিন্তু এ চারটি বল ও কণা ছাড়াও বর্তমানে আরও একটি বল ও কণার অস্তিত্বের কথা স্বীকার করা হচ্ছে। সে কণাটি হলো “গ্যাভিটন”। আর বলটি হলো বিকর্ষণ বল। 

তাহলে ধরে নেয়া যায় জগৎ সৃষ্টির মূল উপাদানের মধ্যে মৌলিক কণা হলো ৫টি এবং মৌলিক বলও ৫টি।

মৌলিক কণাগুলোর অস্তিত্বে রয়েছে ফোটন

এ পর্যায়ে এসে দেখা যায় মৌলিক কণাগুলোর অস্তিত্বে রয়েছে ফোটন কণা (আলোক কণা) আবার এ ফোটন কণা হলো কোয়ার্কের পরবর্তী ধাপ। আর কোয়ার্ক হলো তরঙ্গের আধার। ধারণা করা হয় যে ছয় ধরনের কোয়ার্ক নিয়েই মৌলিক কণাগুলো গঠিত হয়েছে। 

এ সব কোয়ার্কে উৎপত্তি হয় তথ্য কণা (Information bit) থেকে।

মূলতঃ বস্তুর প্রত্যক্ষ রূপ হলো তথ্য কণার জমাটবদ্ধ অবস্থা। আবার এ তথ্যকণা গুলোর মাঝে রয়েছে ধ্বনাত্মক তথ্যকণা (+), ঋণাত্মক তথ্যকণা-নিরপেক্ষ তথ্যকণা (কমাণ্ড তথ্যকণা) এবং বর্জ্য তথ্যকণা। এর পর জগত-মহাজগতে পদার্থের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে আর কোন সূক্ষ্ম সত্তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। 

তাই বলা যায় জিন ও শয়তানের অস্তিত্বের সাথে “বর্জ্য”তথ্য কণার সম্পর্কের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না।

মহাবিশ্বের প্রত্যেক জিনিসের কিছু না কিছু বর্জ্য আছে

এ মহাবিশ্বের প্রত্যেক জিনিসের কিছু না কিছু বর্জ্য আছে। আমরা যা খাই সেগুলো হজম হলেও এর কিছু বর্জ্য থাকে। এগুলো আমরা প্রস্রাব, পায়খানার মাধ্যমে নিষ্কাশন করি। আবার দেহকোষ থেকেও কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছু শক্তি বিকিরণ হয়। 

নিষ্কাশিত বর্জ্য ও বিকীর্ণ শক্তির মধ্যে জঘন্যতম খারাপ প্রকৃতির বস্তু (উপাদান) থাকে। যেমন আমাদের দেহ থেকে কৃষ্ণকায়া বিকীর্ণ শক্তিও বের হয়।

এর বর্ণ কালো ধোঁয়ার ন্যায়, আলকাতরা বর্ণের মতো থাকে। আবার আমাদের পয়ঃনিষ্কাশিত বর্জ্য দূষিত ও দুর্গন্ধময় হয়। যখন একটা জিনিস পুড়িয়ে বা হজম করে নিষ্কাশন করা হয়, তখন এর মধ্যে বর্জ্য থাকবেই। গাড়ীর তৈল পুড়ে শক্তি উৎপাদনের পাশাপাশি তার থেকে কালো ধোঁয়াও বের হয়। 

শয়তান হলো জগৎ মহাজগতের বর্জ্য পর্যায়ের কোন সত্তা। এখানে এসেও প্রশ্নের উদয় হলো এদের উৎপত্তি হয়েছে কি করে?

প্রকৃতিতে দেখা যায় একটা সত্তা

প্রকৃতিতে দেখা যায় একটা সত্তা বা উপাদান থেকে যখন অন্য কোন সত্তা বা উপাদানের উৎপত্তি হয় তখন এর থেকে কিছু শক্তি বিকিরণ বা অপচয় কিংবা বিচ্যুতি ঘটে। যেমন নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়ায় যখন নিউট্রন দিয়ে প্রোটনকে আঘাত করা হয় 

তখন চেইন বিক্রিয়ায় প্রোটনগুলো ক্রমান্বয়ে ভাঙ্গতে থাকে এবং এক সময় তাদের থেকে পারমানবিক শক্তিও বের হয়ে আসে। এ শক্তি জগৎ ও মানুষের মাধ্যমে অপব্যবহারে চরম ধ্বংস বয়ে আনে অথবা সুষ্ঠ ব্যবহারে সাফল্য বয়ে আনে।

শয়তানের উৎপত্তি

শয়তান আত্মিক পর্যায়ে আদম জাতের মহাশত্রু। শয়তানের উৎপত্তি একটা বিশেষ মুহূর্তের ঘটনা। অর্থাৎ যখন আত্মিক পর্যায়ে একমাত্র মানব আদম (নর) থেকে তার সঙ্গীনী বিবি হাওয়াকে (নারীরা ঋণাত্মক সত্তা) পয়দা করা হয় তখন আল্লাহর নির্দেশ তরঙ্গ (কমাণ্ড আদেশ) আদমের অস্তিত্বে আঘাত করলে তার থেকে আদমের সহধর্মীনি (নারী) সৃষ্টি হয়।

অতঃপর তার পাশাপাশি বর্জ্য সত্তার (শয়তানের) উৎপত্তি ঘটে। এ বর্জ্য সত্তাই আত্মিক পর্যায়ে শয়তানের ভূমিকা পালন করে। 

মূলতঃ শয়তানের উৎপত্তি আদমের উৎস থেকে। জিন জাতিরও উৎপত্তি আদমের অস্তিত্ব থেকে। স্রষ্টার বিধানে জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য। আল্লাহর ইবাদাতের অর্থ হলো, যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সে ঐ কাজে নিঃশর্তভাবে আল্লাহর আনুগত্য করা।

এক্ষেত্রে কারও অস্তিত্বের যদি বিনাশও ঘটে তবু আল্লাহর আনুগত্য করে যেতে হবে। এটাই আনুগত্য বা ইবাদাতের শর্ত। কিন্তু শয়তান সে শর্ত মানেনি। তাই সে অভিশপ্ত হয়েছে।

হাদীসে কুদসীতে রয়েছে আদম থেকে বর্জ্য সত্তার (কৃষ্ণকায়া) উৎপত্তির কথা-নিম্নে হাদীসটি উল্লেখ করা হলো।

আল্লাহ তা'আলা আদম (আ) কে পয়দা করলেন

“আল্লাহ তা'আলা আদম (আ) কে পয়দা করলেন, তাঁকে পয়দা করে তাঁর ডান কাঁধে করাঘাত করলেন, তারপর তাঁর সন্তানদেরকে বের করলেন, এরা এরূপ শুভ্র যেন মুক্তার ন্যায় উজ্জল দুগ্ধ । তারপর তিনি তাঁর বাম কাঁধে করাঘাত করলেন এবং কৃষ্ণকায়া সন্তান বাহির করলেন; যেন তারা কাল কয়লা। 

তারপর তিন তাঁর ডান হাতের সন্তানদের সম্বন্ধে বললেন, এরা জান্নাতবাসী হবে আর তাতে কোন পরওয়া নেই। আর তাঁর বাম হাতের তালুস্থিত সন্তান সম্বন্ধে বললেন, “এরা জাহান্নামের যাবে, আর এই ব্যাপারে কোন পরওয়া নেই।”আহমদ ও ইবনু আসাকির ইহা আবদু দারদা (রা) হতে বর্ণনা করেছেন।

শয়তানের (কৃষ্ণকায়া সত্তার) উৎপত্তি ঘটে

পৃথিবীতে আমাদের কর্মের বিকীর্ণ শক্তির মধ্যে কৃষ্ণকায়া বিকীর্ণ শক্তি যেমন আমাদের অস্তিত্ব থেকে বের হয় তেমনি আত্মিক পর্যায়ে আদমের অস্তিত্ব থেকে তাঁর সহধর্মীনি পয়দা হওয়ার মুহূর্তে শয়তানের (কৃষ্ণকায়া সত্তা বা বর্জ্য সত্তার) উৎপত্তি ঘটে। আমরা আত্মিক পর্যায়ে আদম (+), হাওয়া (-), ফেরেশতা ও শয়তানের কথা ধর্মীয় বিধান থেকে জানতে পারি।

অপর দিকে বস্তুকণার মধ্যে রয়েছে প্রোটন (+), ইলেকট্রন (-), নিউট্রন, ও নিউট্রোনো। শয়তানের সত্তা যেমন আত্মিক পর্যায়ে রয়েছে তেমনি বস্তুর পরতে পরতে তার অস্তিত্বের অংশ রয়েছে। রাসূল (সা.)বলেন- “মালাউন শয়তান মানুষের দেহে রক্তের ন্যায় প্রবাহিত হয়; আমি ভয় করছি তোমাদের মনে শয়তান কোন কথা ঢেলে না যায়।”(আল হাদীস)

“প্রত্যেক মানুষের জন্যই একজন শয়তান নির্ধারিত, সে একটি খারাপ জিন।” (আল হাদীস)

শয়তান আদম জাতের একটা বড় অংশকে জাহান্নামে নিবে

শয়তান আদম জাতের একটা বড় অংশকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। শয়তান সৃষ্টির প্রয়োজন ছিল এ জন্যে যে, শয়তান না থাকলে সৃষ্টির সম্প্রসারণ সম্ভব হতো না। এ প্রসঙ্গে একটা উদাহারণ দেয়া হল।

আমরা যদি একটা বৈদ্যুতিক বাল্বের দিকে লক্ষ্য করি তখন সেটিতে দেখতে পাই Positive phase, Negative phase ও Neutral phase-এর সাথেও একটি কুণ্ডলীকৃত তার লাগানো আছে। এ কুণ্ডলীকৃত তারটি দিয়ে বিদ্যুত প্রবাহ চলতে থাকলে এক উজ্জল সত্তা বিকিরণ হয়। 

কিন্তু এই বাঁকা তারটি যদি একটি বা দু'টি phase এর সাথে লেগে থাকে তবু কোন উজ্জল সত্তা (আলোক তরঙ্গ) বের হয় না। অথচ তিনটি -এর সাথে লেগে থাকলে বিদ্যুত প্রবাহ চলতে থাকলে সেটির গা জ্বলে জ্বলে আলোক শক্তি বের হয়। এ আলোক শক্তি জড় পদার্থের মৌল আদানের গর্ভে বাস করে।

জড় পদার্থের সৃষ্টি

তাই আলোক শক্তি সৃষ্টি না হলে জড় পদার্থের সৃষ্টি সম্ভব ছিল না। আবার কুণ্ডলীকৃত তারটি না থাকলে আলোক শক্তি সৃষ্টি হওয়ারও পথ ছিল না। কিংবা ধনাত্মক (+), ঋণাত্মক (−) ও নিরপেক্ষ মাধ্যমগুলো সফল ও উৎপাদনশীল মিলও সম্ভব হতো না। 

এক্ষেত্রে বাঁকা কুণ্ডলীকৃত মাধ্যমটির গা জ্বলে জ্বলে তার অস্তিত্ব বিনাশের দিকে চলে গেলেও সৃষ্টির সম্প্রসারণের জন্য তার গুরুত্ব কম নয়। তবে বাঁকা কুণ্ডলীকৃত তারের কিছু না কিছু সূক্ষ্ম অংশ ও তার গুণ আলোক শক্তির গায়ে লেগে থাকে। এ ধরনের সত্তা মানব প্রজাতির তথা জগৎ সৃষ্টির প্রতিটি অণু-পরমাণূর গহব্বরে লুকিয়ে আছে।

মানব জাতিকে যতই পরিষ্কার করা হয় না কেন শয়তানী স্বভাব কিছু লেগেই থাকে

তাই মানব জাতিকে যতই ধুঁয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয় না কেন তার মাঝে শয়তানী স্বভাব কিছু না কিছু লেগেই থাকে। এজন্য আদমের আত্মিক ও দৈহিক সত্তার পরতে পরতে শয়তানের অস্তিত্ব ও গুণাগুণ বিদ্যমান রয়েছে। 

শয়তান ও শয়তানী সত্তার সূক্ষ্ম উপাদান, সৃষ্টির কৌশলে আদমী সত্তার গণ্ডির মধ্যে লুকিয়ে আছে। আল্লাহ বলেন- “শয়তান বলল, আমাকে কেয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দাও। আল্লাহ বললেন যে তোমার জন্য অবকাশ।

ইবলিশ বলল, তুমি যখন আমার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছ তখন তোমার বান্দাকে সিরাতুল মুসতাকীম হতে বিচ্যুত করার জন্য ওঁৎ পেতে থাকবো, তারপর সামনে হতে, পেছন হতে ডান হতে বাম হতে আক্রমন করব। সুতরাং তুমি দেখবে তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়েছে।” (আল কোরআন)

আল্লাহ পাক তখন ইবলিসকে বললেন-“ এখান হতে ঘৃণিত এবং বিতাড়িত হয়ে যা। যারা তোর অনুগত হবে তাদের সকলের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব।”(সূরা হিজর)

দুনিয়াতে জিন ও শয়তান

দুনিয়াতে জিন ও শয়তান নেই এ কথার কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। বরং জিন ও শয়তান যে আছে তার হাজারো রকমের প্রমাণ দেয়া যাবে। মানুষের দেহ ও আত্মার পরতে পরতে শয়তানী সত্তা মিশে আছে বলেই মানুষ শত হেদায়েতের বাণী শুনার পরও শয়তানী কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

পাশাপাশি মানুষের কর্মের বিকীর্ণ শক্তিতেও রয়েছে বর্জ্য (কৃষ্ণকায়া চরিত্রের কণার গুণাগুণ)। বিকীর্ণ শক্তি নষ্ট হয়ে কৃষ্ণকায়া বর্ণ ধারণ করবে। ফলে জাহান্নামে তাদের দেহের রং হবে আলকাতরার মতো। একটা বস্তুকে যখন অন্য একটা বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয় তখন বস্তুটি থেকে একটি অগ্নি স্ফুলিঙ্গের মতো জিনিস বের হয়। 

আমরা যখন লোহা কিংবা পাথরকে অন্য কোন শক্ত জিনিস দিয়ে অথবা ঐ জাতীয় জিনিস দিয়ে আঘাত করি তখন এরূপ জিনিস বের হতে দেখি। জিন ও শয়তান জ্বলন্ত অগ্নি শিখা দিয়ে তৈরী, এ কথা আল কোরআনে বলা হয়েছে।

“জিনকে আমি জ্বলন্ত অগ্নির শিখা হতে পূর্বেই সৃষ্টি করেছি।” (আল কোরআন

আদম থেকে হাওয়াকে পয়দা

আদম থেকে হাওয়াকে পয়দা করার সময় তাঁর সত্তাতে আঘাত করা হলে, আদম থেকে হাওয়া পয়দা হওয়ার পাশাপাশি জ্বলন্ত অগ্নি স্ফূলিঙ্গের ন্যায় যে সত্তাটি বের হয়, তার সাথে জিন পয়দা হওয়ার মিল আছে।

অপরদিকে শয়তান হলো খারাপ জিন। এটি নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়ার মতোই একটি প্রক্রিয়া। নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়ার সময় সেখান থেকে পারমানবিক শক্তি বের হয়। 

এ শক্তি মানুষের উপকার ও অপকার উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায়। শয়তান বা সৃষ্টির বর্জ্য সত্তা তেমনি সৃষ্টির সম্প্রসারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আবার মানব জাতির জন্য অভিশাপ স্বরূপ।

শয়তানকে পুরোপুরি বুঝতে হলে আমাদেরকে স্রষ্টার বিশ্ব শাসন ব্যবস্থার সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে, তা না হলে শয়তান সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়।

আল্লাহ বলেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ আদমকে নিজ অনুরূপে সৃষ্টি করেছেন।” (আল কোরআন)

এ আয়াতের মর্মার্থ এই নয় যে, আল্লাহকে দেখতে আদমের অনুরূপ। বরং এর মর্মার্থ হলো আল্লাহর বিশ্ব শাসন ব্যবস্থা আদমের দেহ রাজ্য শাসন ব্যবস্থার অনুরূপ। আদম যেমন মস্তিষ্ক দ্বারা তার দেহকে নিয়ন্ত্রণ করে তেমনি স্রষ্টা আরশের মাধ্যমে সমস্ত বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করেন। 

আদমের মস্তিষ্কের যেমন দু'ধরনের স্নায়ু ব্যবস্থা আছে (Motor, Sensory )। তেমনি স্রষ্টার বিশ্ব শাসন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রনকেন্দ্র আরশের দু'ধরনের কার্যব্যবস্থা রয়েছে। এক শ্রেণীর স্নায়ু (Sensory nerve ) দেহের নিম্নাংশের খবর মস্তিষ্কে পৌঁছায় আবার Motor nerve মস্তিষ্কের সংকেত নিম্নাংশে নিয়ে যায়। তদ্রূপ স্রষ্টার বিশ্ব শাসন ব্যবস্থার কার্যক্রম এভাবে সম্পন্ন হয়।

শয়তান সৃষ্টি জগতের একটি বৈরী সত্তা

এক্ষেত্রে শয়তান সৃষ্টি জগতের এমনি একটি বৈরী সত্তা যা আরশের নির্দেশ নিম্নজগতে পৌছতে বাঁধা সৃষ্টি করে। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রজ্জলিত উল্কাপিণ্ড শয়তানের দিকে মিসাইলের মতো ছুড়ে মারা হয়। এতে শয়তান তার মিশন সফল করতে পারে না। “নিকটবর্তী আকাশকে রক্ষা করেছি প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান হতে।” (৩৭: ৭)

মানবদেহে যখন কোন অপারেশন করা হয় তখন শুধু ব্যথার অনুভূতি দূর করার জন্য Sensory ও Motor nerv-এর কার্যব্যবস্থা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়। এক্ষেত্রে ঐ ভেষজ পদার্থ স্নায়ূর কার্যক্ষমতাতে বাঁধা সৃষ্টি করে, ফলে মস্তিষ্কে কোন ব্যথা অনুভব হয় না।

এ ব্যবস্থাটি সাময়িক সময়ের জন্য চালু রাখা হয়। কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদী হলে ঐ মানুষটির জন্য জীবন চালানো সম্ভব নয়। অর্থাৎ সে পথে ঘাটে মারাত্মক আঘাত পেলেও ব্যথা পাবে না।

জাইলোকেইন ইনজেকশন ব্যবহার

ফলে আঘাতে আঘাতে ক্ষত হয়ে সে মারা যাবে। এক্ষেত্রে জাইলোকেইন ইনজেকশন ব্যবহার করে কোন নির্দিষ্ট স্থানের ব্যথার অনুভূতি সাময়িক সময়ের জন্য কমিয়ে রাখা হয়। মানুষ সারাদিন কাজ করার পর তাদের দেহেও এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ তৈরী হয়, যা মানুষকে ঘুম পাড়াতে সাহায্য করে।

অপর দিকে মানুষের দেহে অনেক সময় এমন ব্যাধি দেখা দেয়, যার জন্য তার Sensory ও Motor nerve-এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এ রকম একটি রোগের নাম হলো কুষ্ট। এটি জীবাণুর মাধ্যমেই হয়। স্রষ্টার নির্মিত প্রাকৃতিক বিধানের মধ্যে অদৃশ্য যেসব সত্তা আছে তন্মধ্যে “শয়তান”জীবাণু বা বর্জ্য জাতীয় অদৃশ্য সত্তা।

সে চায় আ'রশের "ব্যবস্থাপনাকে বন্ধ করে দিতে। ফলে শয়তান যখন তার মিশন সফল করতে উদ্যত হয় তখন তার দিকে প্রজ্জলিত অগ্নি পিণ্ডের মিশাইল ছুড়ে মারা হয়। আমরা যদি নিজের অস্তিত্ব ও নিজ দেহের কার্যব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত হতে পারি, তাহলে স্রষ্টার সৃষ্টির প্রতিটি সত্তার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারব। তাই একজন বুযুর্গ বলেছেন—যিনি নিজেকে চিনেছেন তিনি আল্লাহকে চিনেছেন।”

সংগৃহীতঃ আদমের আদি উৎস
লেখকঃ আল মেহেদী

পোস্ট ট্যাগঃ

আদম আঃ এর ভাষা কি ছিল
আদম আঃ কোন ভাষায় কথা বলতেন
আদম ও হাওয়ার কাহিনী
আদম আঃ এর পায়ের ছাপ
আদম কে
আদম আঃ কত হাত লম্বা ছিলেন
আদম আঃ কত লম্বা ছিল
আদম আঃ এর রওজা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url