নবুয়ত শব্দের অর্থ কি

 হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী- নবুয়ত লাভ  Prophet Muhammad SAW - Prophethood

নবুয়ত শব্দের অর্থ কি

নবুয়ত শব্দের অর্থ হচ্ছে সংবাদ প্রদান করা। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন একজন মিষ্টভাষী, ভদ্র ও বিনয়ী মানুষ। তিনি চিন্তা ও ধ্যান করতে ভালবাসতেন। তিনি তাঁর সমবয়সী অন্য লোকদের মত ছিলেন না। দুনিয়ার জীবনের চাকচিক্যের প্রতি তাঁর কোন আগ্রহ ছিল না। আর এটা ছিল এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা গোটা মানবজাতির ভবিষ্যত পথপ্রদর্শক ও শিক্ষকের জন্যে পুরোপুরি মানানসই ছিল।

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রায়ই নূর পাহাড়ে (আল্-জাবাল্-আন্-নূর)-এর হিরা নামক গুহায় গিয়ে একাকী থাকতেন এবং চিন্তা ও ধ্যান করতেন। বিশেষ করে রামাদান মাসে তিনি সেখানে থাকতেন এবং সৃষ্টিজগতের রহস্যাবলী সম্পর্কে চিন্তা করে কাটাতেন। তিনি তাঁর অন্তরে সত্যের জন্যে খুবই আগ্রহ অনুভব করতেন এবং আন্তরিকতার সাথে সত্যের সন্ধান করতেন।

তিনি কেন এরূপ করতেন? কারণ তাঁর অনুসন্ধানী মনে মানুষ, তার সৃষ্টি ও তার চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্বন্ধে যেসব প্রশ্নের উদয় হত তিনি তার জবাব পাচ্ছিলেন না। তেমনি তাঁর চারদিককার সমাজে যে ঝগড়া-ফাছাদ, বিরোধ-বিসম্বাদ ও অনৈক্য বিরাজ করছিল তা থেকে তিনি মনঃকষ্টে ভুগতেন।

তিনি তৎকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার কারণে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন। তৎকালে দু'টি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম ছিল ইয়াহুদী ও খৃস্ট ধর্ম। কিন্তু উভয় ধর্মের ধর্মনেতা ও পণ্ডিতগণ ধর্ম দু'টিকে এতই বিকৃত করে ফেলেছিলেন যে, বিচারবুদ্ধি ও জ্ঞানের কাছে এ দু'টি ধর্মের কোনই আবেদন ছিল না। তাঁর সমাজে তিনি দেখতে পান অর্থহীন রক্তপাত, গোত্রীয় বিরোধ, শক্তিমানদের দ্বারা দুর্বল-অসহায়দের ওপর জুলুম-নির্যাতন, মূর্তিপূজা ও নারীদের অমর্যাদা। তিনি এসবের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না।

মক্কার লোকেরা নিজেদের হাতে তৈরী মূর্তির পূজা করত। মূর্তিপূজা যে একটি বাজে ও ঘৃণ্য কাজ হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সব সময়ই সে সম্বন্ধে চিন্তা করতেন। তিনি দেখেন যে, মূর্তি নড়াচড়া করতে পারে না, কথা বলতে পারে না বা অন্য কোন কাজ করতে পারে না। 

তাহলে কি করে ওগুলোর পক্ষে মানুষের আবেদনে সাড়া দেয়া সম্ভব হতে পারে? হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর চিন্তাশীল মনে এসব কিছুই অর্থহীন বলে মনে হতে থাকে। তিনি তাঁর অন্তরে জাগ্রত এসব দৃঢ়মূল অনুভূতিসমূহের জবাব খুঁজে পাবার জন্যেই হিরা গুহায় গিয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে কাটাতেন। বস্তুতঃ তাঁর লক্ষ্য ছিল অন্তরে শান্তি, সান্ত্বনা ও সঠিক পথনির্দেশ লাভ। 

এছাড়া অন্য কিছু কি হতে পারে? নিঃসন্দেহে না। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর হৃদয় মক্কার লোকদের জন্যে গভীর দরদ ও সহানুভূতিতে পরিপূর্ণ এবং তাদের কল্যাণের জন্য উদ্বেগাকুল ছিল। এ নগরীতে যখন বিশৃঙ্খলা, অন্যায়-অবিচার, মিথ্যাচার ও শোষণ শিকড় গেড়ে বসে ছিল তখন তাঁর নির্মল অন্তঃকরণ কিভাবে চুপ করে থাকতে পারে?

মক্কার লোকেরা বহু মূর্তির পূজা করত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল হুবাল, আল্‌-লাত্ ও আল্-উয্যা। এগুলোসহ সকল মূর্তিই ছিল প্রাণহীন পাথরমাত্র। কেউ যদি এসব মূর্তিকে ভেঙ্গে ফেলত তখন নিজেদের রক্ষা করার মত ক্ষমতাও এগুলোর ছিল না। 

কিন্তু তা সত্ত্বেও মক্কার লোকেরা এগুলোর পূজা করত, এগুলোর কাছে সাহায্য চাইত, এগুলোর নামে শপথ গ্রহণ করত এবং এগুলোর জন্য লড়াই করত। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উৎসুক মন সত্যের সন্ধান করত, তাঁর সমাজে প্রচলিত সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে মুক্তির পথ খুঁজত এবং বিরাজমান সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন কামনা করত।

ওহি বলতে কি বুঝায়

ঠিক এমনি এক অবস্থায় তিনি যখন রামাদান মাসে হিরা গুহায় ধ্যানমগ্ন ছিলেন তখন সমগ্র বিশ্বলোকের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা আল্লাহ্ তা'আলা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)কে তাঁর রহমতের দ্বারা ভূষিত করলেন- কুর'আন মজীদের প্রথম ওহী নাযিল করলেন।

নবুয়ত শব্দের অর্থ কি

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বয়স তখন চল্লিশ বছর ঠিক ‍সেই সময় তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হন। পবিত্র রামাদান মাসের এক রাতের কথা। তিনি তখন হিরা গুহায় ধ্যানমগ্ন ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ একজন ফেরেশতা তাঁর সামনে আবির্ভূত হলেন।

সুরা আলাক

“পড়ুন!”-ফেরেশতা-বললেন। “আমি-পড়তে-জানি-না।” হযরত-মুহাম্মাদ-(সাঃ)-জবাব-দিলেন।–তাঁর-এ –জবাবের-পর-ফেরেশতা-তাঁকে-বুকে-জড়িয়ে-ধরেন-এবং-বুকের-সাথে-এমন-শক্তভাবে-চেপে-ধরেন-যে- 

হযরত-মুহাম্মাদ-(সাঃ)-এর-মনে-হচ্ছিল-যে,-তিনি-শ্বাস-বন্ধ-হয়ে-মারা-যাবেন।–এরপর-ফেরেশতা-তাঁকে-ছেড়ে-দিলেন-এবং-পুনরায়-বললেন:-“পড়ুন!”-হযরত-মুহাম্মাদ-(সাঃ)-আগের-জবাবই-দিলেন। ফেরেশতা-তাঁকে-আবারো-বুকে-জড়িয়ে-ধরলেন-এবং-আগের-চেয়েও-জোরে-চাপ-দিলেন,-তারপর-ছেড়ে-দিলেন। ফেরেশতা-তাঁকে

ইকরা বিসমিকাল্লাজী খালাক

তৃতীয়-বারের-মত-বললেন:-“পড়ুন!”-হযরত-মুহাম্মাদ-(সাঃ)-এবারও-একই-জবাব-দিলেন:-“আমি-পড়তে-জানি-না।"-ফেরেশতা-তাঁকে-তৃতীয়-বারের-জন্য-বুকে-জড়িয়ে-ধরে-আরো-জোরে-চাপ-দিলেন। হযরত-মুহাম্মাদ-(সাঃ)-এর-শ্বাস-বন্ধ-হয়ে-যাবার-ভয়-আরো-বেড়ে-গেল। তিনি-জিজ্ঞেস-করলেন: “আমি-কি-পড়ব?” তখন-ফেরেশতা-তাঁকে-ছেড়ে-দিয়ে বললেন:

পড়

“পড়-তোমার-রবের-নামে-যিনি-সৃষ্টি-করেছেন,-সৃষ্টি-করেছেন-মানুষকে-পরস্পর-জড়িত-বস্তু-(প্রাথমিক ভ্রুণ)-থেকে। পড়,-তোমার-রব-বড়ই-মহানুভব,-যিনি-কলমের-দ্বারা-শিক্ষা-দিয়েছেন-মানুষকে,-শিক্ষা দিয়েছেন-যা-সে-জানতো-না।”- (সূরাহ আল্-'আলাক- ১-৫)

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এ আয়াতগুলো পড়ে গেলেন এবং তাঁর মনে হল যেন এর শব্দগুলো তাঁর হৃদয়ে লেখা হয়ে গেছে।

এ আয়াত ক'টিই হচ্ছে কুর'আন মজীদের সর্বপ্রথম নাযিল হওয়া আয়াতসমষ্টি কেমন বিস্ময়ের ব্যাপার! আল্লাহ্-তা'আলা-তাঁর-রাসূল-হিসেবে-এমন-এক-ব্যক্তিকে-বেছে-নিলেন-যিনি-উম্মী-যিনি-লিখতে-পড়তে জানেন-না-(সূরাহ আল্-আ'রাফ- ১৫৭- ১৫৮)। সে যুগে গোটা আরব উপদ্বীপে খুব কম সংখ্যক লোকই লিখতে-পড়তে জানত। 

অথচ সেই সমাজে জন্মগ্রহণকারী উম্মী নবীর (সাঃ) মাধ্যমে যে মহাগ্রন্থ কুর'আন মানুষের নিকট পেশ করা হল তা মানগত দিক থেকে সে যুগের সকল ভাষার উন্নত মানের সকল সাহিত্যকে অতিক্রম করে যায় এবং আজ পর্যন্ত এর সমমান সম্পন্ন গ্রন্থ কোন ভাষায় রচিত হয়নি। 

বস্তুতঃ কুর'আন মজীদের বা তার কোন সূরাহর সমতুল্য রচনা পেশ করা কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয় (সূরাহ বানী ইসরাঈল- ৮৮)। তাই হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মুখে এমন অতুলনীয় মানসম্পন্ন ও জ্ঞানগর্ভ কথা শুনে আরবরা যে বিস্মিত হয়েছিল তার কারণ সহজেই বুঝা যেতে পারে।

ওহী

প্রথম বারের মত ফেরেশতার আগমন ও ওহী নাযিলের এ ঘটনায় হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) খুবই বিস্মিত ও হতভম্ব হয়ে যান। তিনি এদিক সেদিক তাকাতে থাকলেন কিন্তু কিছুই দেখতে পেলেন না। তিনি অত্যন্ত ভয় পেয়ে গেলেন এবং চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলেন, যেন নড়াচড়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেললেন। 

এরপর তিনি যখন আকাশের দিকে তাকালেন তখন বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলেন। তিনি ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ)কে একজন বিরাট আকারের মানুষের আকৃতিতে আসমানে উড়তে দেখলেন। জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে ডেকে বললেন: “হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রাসূল, আর আমি জিবরাঈল।"

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) যেদিকে তাকান সেদিকেই কিছুটা দূরে জিবরাঈল (আঃ) কে উড়তে দেখেন। জিবরাঈল (আঃ) তাঁর চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি দাঁড়িয়ে থাকলেন।

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) অত্যন্ত আতঙ্কিত অবস্থায় খুব তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে এলেন এবং হযরত খাদীজার পাশে বসে পড়লেন। তিনি হযরত খাদীজার নিকট সব ঘটনা খুলে বললেন।

মহীয়সী মহিলা খাদীজাহ তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী- যিনি তাঁকে ভালবাসেন এবং তাঁর সেবাযত্ন করেন। স্বামীর উত্তম চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের সাথে খাদীজাহ পুরোপুরি পরিচিত ছিলেন এবং তিনি তাঁর স্বামীর ওপর পুরো বিশ্বাস রাখতেন। তাই তিনি তাঁকে এই বলে সান্ত্বনা দিলেন: 

“হে আমার চাচার ছেলে! আনন্দিত হোন এবং খুশীমনে থাকুন। যার হাতে খাদীজার প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি, নিঃসন্দেহে আপনি এ জাতির নবী হবেন বলে আমি আশা করছি। আপনি কখনো কারো কোন ক্ষতি করেননি। আপনি লোকদের প্রতি দয়ালু এবং আপনি গরীবদেরকে সাহায্য করেন। অতএব, কিছুতেই আল্লাহ্ আপনাকে পরিত্যাগ করবেন না।”

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দেয়ার জন্যে হযরত খাদীজাহকে অনুরোধ করলেন। হযরত খাদীজাহ তাঁকে ঢেকে দিলে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন।

এরপর হযরত খাদীজাহ তাঁর চাচাত ভাই ওয়ারাকাহ বিন নওফাল বিন আসাদ বিন আবদুল ‘উয্যা-র নিকট গেলেন। ওয়ারাকাহ ছিলেন বৃদ্ধ ও অন্ধ। তিনি খৃস্টধর্মের অনুসারী ছিলেন। তিনি তাওরাহ ও ইন্‌জীল সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। 

ওয়ারাকাহ হযরত খাদীজার নিকট থেকে সব কিছু শুনলেন, তারপর বললেন : “পবিত্র! পবিত্র! যেই শক্তির হাতে ওয়ারাকাহর প্রাণ নিবদ্ধ তাঁর শপথ! হে খাদীজাহ! তুমি যা বললে তা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে এ হচ্ছে সেই সত্তা (জিবরাঈল ফেরেশতা) যে সব গোপন রহস্যের সংরক্ষণ-কারী- আল্লাহ্ যাকে মূসার কাছে পাঠিয়েছিলেন। 

তুমি তাঁকে (হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে) ধৈর্য ধারণ করতে ও দৃঢ়তার পরিচয় দিতে বল।” হযরত খাদীজাহ ঘরে ফিরে এলেন ও ওয়ারাকাহ তাঁর নিকট যে সুসংবাদ দিয়েছেন তা তাঁর স্বামীকে জানালেন এবং তাঁকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করলেন ও সাহস যোগালেন।

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নিকট প্রথম বার ওহী নাযিল হবার পর কয়েক দিন, মতান্তরে কয়েক মাস ওহী নাযিল বন্ধ থাকল। এতে তিনি খুবই মনমরা হয়ে গেলেন। এরপর তিনি হঠাৎ করে একদিন আবার জিবরাঈল (আঃ)কে দেখতে পেলেন। জিবরাঈল (আঃ) একটি ভাসমান আসনে বসে আকাশে উড়ছিলেন। 

এতে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হতচকিত হলেন ও ছুটে ঘরে চলে গেলেন। তিনি তাঁকে ঢেকে দেয়ার জন্যে হযরত খাদীজাহকে অনুরোধ জানালেন। হযরত খাদীজাহ তাঁকে একটি চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন; হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ঘুমিয়ে পড়লেন।

কয়েক মিনিট পরই হযরত খাদীজাহ দেখলেন যে, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কেঁপে কেঁপে উঠছেন, বড় করে শ্বাস নিচ্ছেন ও ঘামছেন। এসময় জিবরাঈল (আঃ) তাঁর নিকট দ্বিতীয় ওহী নিয়ে এলেন। এতে বলা হয়;

“হে চাদরাবৃত ব্যক্তি! ওঠ ও সতর্ক কর। তোমার রবের মাহাত্ম্য ঘোষণা কর। আর তোমার পোশাককে পবিত্র কর এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাক। আর অধিক প্রতিদানের আশায় দান করো না এবং আপন রবের ওয়াস্তে ছবর কর।” (সূরাহ আল-মুদ্দাছির- ১-৭)

ওহীর গুরুত্ব

হযরত খাদীজাহ হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর এ অবস্থা দেখে তাঁকে আরো কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতে বললেন। কিন্তু হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এবার তাঁর ওহী লাভ সম্বন্ধে পুনরায় নিশ্চয়তা লাভ করেছেন। তাই তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বললেন: “হে খাদীজাহ! আমার তন্দ্রা ও বিশ্রামের যুগ অতীত হয়ে গেছে। 

জিবরাঈল আমাকে লোকদের সতর্ক করতে এবং তাদেরকে আল্লাহ্ ও তাঁর ইবাদাতের দিকে আহ্বান করতে বলেছেন। কিন্তু আমি কা'দেরকে দাওয়াত করব? কে আমার কথা শুনবে?”

হযরত খাদীজাহ তাঁকে উৎসাহ দিলেন এবং তাঁর সাফল্য সম্পর্কে দৃঢ় আশা প্রকাশ করলেন। আর তিনিই হলেন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ওপর ঈমান আনয়নকারী প্রথম ব্যক্তি। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ও লক্ষ্য করার বিষয় যে, গোটা মানবজাতির মধ্যে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি হচ্ছেন হযরত খাদীজাহ (রাঃ)।

এটা কতই না চমৎকার ব্যাপার যে, হযরত খাদীজাহ (রাঃ) তাঁর স্বামীর আল্লাহর রাসূল হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়ে তাঁর প্রতি ঈমান আনলেন! বস্তুতঃ একজন লোক কেন সে সম্পর্কে তাঁর স্ত্রীর চেয়ে আর কে বেশী ভালভাবে সাক্ষ্য দিতে পারেন? হযরত খাদীজাহ (রাঃ) অন্য যে কারো চেয়ে ভালভাবে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)কে জানতেন। 

ফলে তাঁর পক্ষেই তাঁর স্বামীর সততা ও নির্ভরযোগ্যতার সাক্ষ্য দেয়া সবার চেয়ে বেশী সম্ভব ছিল কোন লোকের পক্ষেই স্ত্রীর নিকট থেকে নিজের দোষ-ত্রুটি-দুর্বলতা লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কারণ স্ত্রীই তাকে সবচেয়ে কাছে থেকে ও সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে জানে। এযুগের প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম পুরুষদের জন্য হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর এ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা অপরিহার্য।

আল্লাহ্ তা'আলার অনুগ্রহে আমরা যদি তা করতে পারি তাহলে এ পৃথিবী মানুষের বসবাসের জন্যে অধিকতর উপযোগী ও উত্তম জায়গায় পরিণত হবে।

(-) এই চিহ্ন দেওয়া হয়েছে কপি রাইট ইস্যুর কারণে।

পোস্ট ট্যাগঃ

নবুয়ত
নবুয়ত শব্দের অর্থ কি
নবুয়ত কাকে বলে
দালায়েলুন নবুয়ত কিতাব pdf
নবুয়ত ও বেলায়েত কি
খতমে নবুয়ত কাকে বলে
নবুয়ত অর্থ কি

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url