সালামের সঠিক উচ্চারণ

সালামের সঠিক উচ্চারণ

সালামের সঠিক উচ্চারণ

সালামের সঠিক উচ্চারণ হচ্ছে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমুতাল্লাহী ওয়া বরাকাতুহু” জবাবে বলবে ওয়া’লাই কুম আসসালাম ওয়া রহমুতাল্লাহী ওয়া বরাকাতুহু”

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমাদের পূর্বের উম্মতগণের রোগসমূহ অর্থাৎ শত্রুতা ও পরশ্রীকাতরতা তোমাদের মধ্যেও জন্ম নেবে। শত্রুতা তো হলো সমূলে বিনষ্টকারী জিনিস। তা কেবল চুলকে মুড়িয়ে দেয় না, বরং দ্বীনকেও সমূলে মিটিয়ে দেয়।

যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা মুমিন না হও ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের মধ্যে পারস্পারিক ভালবাসা না জন্মাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা মু'মিন হতে পারবে না। এই পারস্পারিক ভালবাসা কিভাবে জন্মাবে তা কি আমি বলে দেবো? এ জন্য তোমরা 'আস্সালামু আলাইকুম' ব্যাপকভাবে প্রচলন করো।' (তারগীব ও তারহীব)

  • ব্যাখ্যা: সালামের অর্থ হলো রহমত ও শান্তি। যখন এ শান্তি ও ভালবাসার বাক্য আপনি কাউকে বলেন, তখন তার অর্থ হয়, ভাই, তোমার ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। আল্লাহ তোমাকে সমস্ত বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করুন। জবাবে সেও আপনার মঙ্গল ও রহমতের জন্য দোয়া করে। 
  • বলুন, এ অবস্থায় মুসলিম সমাজে কেমন করে পারস্পারিক শত্রুতা দেখা দিতে পারে? আবার এ বাক্যের দ্বারা আপনি একথা ঘোষণা করেন, আমার দিক দিয়ে তোমার জীবন ও সম্মান নিরাপদ, আমার দিক থেকে খুন-জখমের, সম্পদ কেড়ে নেবার এবং বেইজ্জতি করার কোন আশঙ্কা করো না। আর সেও একই কথা ঘোষণা করে। তাই বলুন, মুসলিম সমাজে কিভাবে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা স্থান পেতে পারে? তবে প্রয়োজন হচ্ছে, সালামের অর্থ ও তাৎপর্য বুঝে তা প্রচলন করার।

আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার উপায়

হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, “তিনি বলেছেন, “তিন ধরনের লোক আল্লাহর বড় প্রিয়।

  • প্রথম হলো সেই মুজাহিদ, দলের অন্যান্য সদস্য পালিয়ে গেলেও যে দৃঢ়ভাবে ময়দানে দাঁড়িয়ে থাকে এবং মহান ও প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করতে থাকে। তারপর হয় সে শহীদ হয় অথবা আল্লাহর সাহায্যে বিজয় লাভ করে। আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, ‘আমার এ বান্দার দিকে চেয়ে দেখো, আমার জন্যে কেমনভাবে সে যুদ্ধক্ষেত্রে দৃড়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে!
  • দ্বিতীয় ব্যক্তি হলো সে, যে রাতে নরম ও আরামদায়ক বিছানায় প্রিয়তমা স্ত্রীর সঙ্গে শুয়ে থাকে। কিন্তু তাহাজ্জুদের সময় হতেই শয্যা ছেড়ে উঠে পড়ে এবং আল্লাহর সমীপে দাঁড়িয়ে যায়। তখন আল্লাহ বলেন, 'দেখো, এ ব্যক্তি নিজের আরাম ও মিষ্টি ঘুম ত্যাগ করে আমাকে স্মরণ করেছে, অথচ সে ইচ্ছা করলে শুয়ে থাকতে পারতো।’
  • তৃতীয় হলো সেই সফররত ব্যক্তি, যার সঙ্গে আরো অনেক লোক আছে, যারা কিছুক্ষণ জেগে থাকার পর ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু সে শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদের নামাযের জন্যে দাঁড়িয়ে যায়। সে কষ্টের মধ্যেও তাহাজ্জুদ পড়ে এবং আরামের মধ্যেও পড়ে।'

বন্ধু নির্বাচনের হাদিস

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, 'মুমিন ছাড়া অন্যকে সংগী বানাবে না, মোত্তাকী ছাড়া অন্য কাউকে খানা খাওয়াবে না (মন্দ ব্যক্তিকে খাওয়ার নিমন্ত্রণ দেবে না।' (তারগীব ও তারহীব)

  • ব্যাখ্যাঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, কোন এক ব্যক্তি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, 'সঙ্গী সাথী কেমন হবে? কেমন লোকের সঙ্গে উঠ-বস করবো?'

তিনি বললেন, 'এমন লোকের সঙ্গে উঠবে-বসবে যাদের দেখে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়, যাদের সঙ্গে আলোচনায় তোমার দ্বীনের জ্ঞান বৃদ্ধি পায় এবং যাদের আমল তোমাকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।'

জিনা, পরনিন্দা গীবতের শাস্তি

রাশিদ বিন সাঈদ আল মিকরাই বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'মিরাজের রাতে আমি এমন কিছু লোকের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলাম, আগুনের কাঁচি দিয়ে যাদের চামড়া কাটা হচ্ছিল। আমি জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞেস করলাম, 'এসব লোক কারা?’

তিনি বললেন, 'এসব লোক হলো তারা, যারা মহিলাদের আকৃষ্ট করার ও তাদের সঙ্গে ব্যভিচার কারার জন্যে সাজ-সজ্জা করতো।'

তারপর এমন এক কুয়ার পাশ দিয়ে আমি এগিয়ে গেলাম, যার মধ্য থেকে ভীষণ দূৰ্গন্ধ বের হচ্ছিল ও চিৎকারের আওয়াজ আসছিল। আমি জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞেস করলাম, 'এরা কারা?'

তিনি বললেন, ‘এরা হলো সে সব মহিলা যারা ব্যভিচারের জন্যে সাজ-সজ্জা করতো ও সে সব কাজ করতো যা তাদের জন্যে বৈধ ছিল না।'

তারপর আমি এমন কিছু পুরুষ ও মহিলাকে অতিক্রম করলাম, যাদের উল্টো করে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, 'হে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম, এরা কারা'

তিনি বললেন, 'এরা হলো তারা, যারা দুনিয়াতে অন্যের উপস্থিতিতে তাদের দোষ বের করতো এবং তাদের অবর্তমানে তাদের দোষ বর্ণনা করতো। আল্লাহতায়ালা আপন কিতাবে একথা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন: 'সেই সব লোকের জন্য ধ্বংসও বরবাদী, যারা অন্যের উপস্থিতিতে ও অবর্তমানে তাদের দোষ বর্ণনা করে।” (তারগীব ও তারহীব, বায়হাকী)

শয়তানের তিনটি কাজ

হযরত আবু মূসা আশ'আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, “তিনি বলেছেন, 'যখন সকাল হয় তখন ইবলিশ নিজের অধীনস্ত শয়তানদেরকে পৃথিবীতে ফ্যাসাদ ও খারাবী সৃষ্টি করার জন্যে পাঠিয়ে দেয়। সে তাদের বলে, 'যে আজ কোন মুসলমানকে দিয়ে সব থেকে বড় গুনাহ করাতে পারবে, আমি তাকে মুকুট পরাবো।'

সন্ধ্যায় এক শয়তান ইবলীশের কাছে উপস্থিত হয়ে বলে, 'আমি এক মুসলমানের পিছনে লেগেছিলাম। আমার প্ররোচনায় সে নিজের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়।' ইবলীশ বলে, ‘ও তো আবার বিয়ে করে নেবে (তুমি কোন বড় কাজ করতে পারোনি)।

তারপর আর এক শয়তান এসে বলে, 'আমি এক মুসলমানকে পিতা-মাতার অবাধ্য করে দিয়েছি।' তখন ইবলীশ বলে, 'পরে ও পিতা-মাতার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে পারে (অর্থাৎ এটাও কোন বড় কাজ নয়)।'

তৃতীয় শয়তান এসে নিজের রিপোর্ট দিয়ে বলে, 'আমি সারাক্ষণ এক মুসলমানের পিছনে লেগেছিলাম । আমার প্ররোচনায় সে এক শিরকের কাজ করেছে।' তখন ইবলীশ জবাব দেয়, হ্যাঁ, তুমি একটা কাজের কাজ করেছো (ইবলীশ তাকে ধন্যবাদ দেয় কিন্তু মুকুট পরায় না)।

তারপর আর এক শয়তান এসে বলে, 'আমি সারাক্ষণ এক মুসলমানের পিছনে লেগেছিলাম । আমি তাকে উত্তেজিত করতে থাকি এবং সে আমার ক্রমাগত চেষ্টার ফলে এক নিষ্পাপ মুসলমানকে হত্যা করে বসে।' তখন ইবলীশ বলে, 'হ্যাঁ, তুমিই একমাত্র বড় কাজ করেছো।' তারপর সে তাকে মুকুট পরিয়ে দেয়।” (তারগীব ও তারহীব, ইবনে হিব্বান)

রাসূলের প্রিয় অপ্রিয় ব্যক্তি কে?

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমাদের মধ্যে সে সব থেকে বেশী প্রিয় যে সর্বোত্তম নৈতিক চরিত্রের অধিকারী আর নরম ব্যবহারকারী। যে মানুষকে ভালবাসে এবং মানুষ ও তাকে ভালবাসে। 

আর তোমাদের মধ্যে যে চোগলখোর, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারী এবং নিষ্পাপ লোকের দূর্নামকারী, আমার কাছে সে সব থেকে বেশী ঘৃণিত।” (তারগীব ও তারহীব)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চারটি নসীহত

হযরত সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, 'হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে কিছু উপদেশ দিন।'

তিনি বললেন,

১. তুমি পরের সম্পদের প্রতি লোভ করো না আবার পরমুখাপেক্ষীও হয়ো না

২. সম্পদের লোভ থেকে দূরে থেকো। কারণ, লোভই মানুষের পরমুখাপেক্ষি হওয়ার সব থেকে বড় কারণ।

৩. এমনভাবে নামায পড়ো যেন তুমি দুনিয়া থেকে চলে যাচ্ছো।

৪. এমন কাজ করোনা যার জন্যে ক্ষমা চাইতে হয়। (তারগীব ওতারহীব, হাকিম বায়হাকী)

চারটি নেয়ামত

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'চারটি জিনিস যে পায় দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত মঙ্গল ও কল্যাণ তার পাওয়া হয়ে গেছে। সে চারটি জিনিস হলো:

১. আল্লাহর নিয়ামতের জন্যে শুকর আদায়কারী হৃদয়।

২. আল্লাহর জিকরকারী জান।

৩. বিপদ-আপদ সহ্যকারী শরীর।

৪. স্বামীর সম্পদ রক্ষাকারী পবিত্রতার সঙ্গে জীবন-যাপনকারী স্ত্রী। (তারগীব তারহীব, তাবরানী)

নিষ্ঠুর শাসক, মন্দ প্রতিবেশী আর অবিশ্বস্ত স্ত্রী- তিনজনই আপদ স্বরূপ

হযরত ফাদালা বিন ওবায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তিন ধরনের মানুষ হল আপদস্বরূপ:

১. সেই শাসক নেতা যাকে তোমরা খুবই মান্য করো কিন্তু সে তার মূল্য দেয় না। এবং কেউ যদি কোন ভুল করে বসে তবে তাকে ক্ষমা করে না (তাকে শাস্তি না দিয়ে ছাড়ে না)

২. মন্দ প্রতিবেশী। যার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করলেও সে তার উল্লেখ পর্যন্ত করে না, কোথাও তার চর্চা করে না; আর যদি সে কোন খারাব জিনিস দেখে তবে সে সর্বত্র তা ছড়িয়ে বেড়াতে থাকে।

৩. সেই স্ত্রী, যে তুমি ঘরে থাকলে তোমাকে কষ্ট দেয়। আর তুমি বাইরে থাকলে তোমার হকের খেয়ানত করে। (তারগীব তারহীব, তাবরানী)

পোস্ট ট্যাগঃ

সালামের সঠিক উচ্চারণ
সালামের সঠিক উচ্চারণ আরবি
সালামের সঠিক উচ্চারণ ও জবাব
সালামের সঠিক উচ্চারণ ইংরেজিতে
সালামের সঠিক উচ্চারণ বাংলা
সালামের জবাবের সঠিক উচ্চারণ
সালামের দেওয়ার সঠিক উচ্চারণ
সালাম এর সঠিক উচ্চারণ
সালামের উত্তরের সঠিক উচ্চারণ
সালাম উচ্চারণ
সালাম এর সঠিক বানান
সালামের সঠিক উত্তর কি
সালামের শুদ্ধ উচ্চারণ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url