আখিরাত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কি কি

আখিরাত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কি কি

আখিরাত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কি কি

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, “তিনি বলেছেন, 'দুনিয়ার প্রতি আমার আগ্রহের কি আছে? আমার আর 

দুনিয়ার উপমা তো এরকম- মনে করো গরমের দিন কোন এক মুসাফির দুপুর বেলা কোন এক গাছের ছায়ায় কিছুক্ষণের জন্যে বিশ্রাম নেয়। তারপর সেই গাছ ও তার ছায়াকে পরিত্যাগ করে আপন গন্তব্যস্থলের দিকে চলে যায়। (মুসনাদে আহমদ)

  • ব্যাখ্যাঃ এর তাৎপর্য হচ্ছে, আখেরাত হলো মোমিনের আপন বাসস্থান। আর এ দুনিয়া হলো তার উপার্জনের স্থান। তাই দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট থাকা উচিত নয়। দুনিয়া তো মোমিনের শস্যক্ষেত, যেখানে সে পরিশ্রম করে ফসল ফলাবে আর সেই পরিশ্রমের ফল ভোগ করবে আখেরাতে, যেটা তার আরাম আয়েশের আসল জায়গা।

দুনিয়া হচ্ছে মুসাফিরখানা

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার শরীরের কিছু অংশে (কাঁধে) হাত দিয়ে বললেন, 'হে আবদুল্লাহ! তুমি দুনিয়াতে এমনভাব থাকবে, যেন এখানে তুমি এক অপরিচিত মুসাফির। একজন পথিকের মতই এ দুনিয়াতে তুমি অবস্থান করবে এবং নিজেকে সব সময় মৃতদের মধ্যে গণ্য করবে।” (মুসনাদে আহমদ)

  • ব্যাখ্যা: এর অর্থ হলো, মুসাফিরের সম্বল থাকে সীমিত, যা সে বহন করতে পারে। আর মুসাফির মানেই আপন ঠিকানা থেকে দূরে অবস্থানকারী, যার মন পড়ে থাকে ঘরের দিকে। এ কথার তাৎপর্য হলো, তুমি দুনিয়ায় অবস্থান করলেও তোমার অন্তর পড়ে থাকবে আখেরাতের চিন্তায়। মুসাফির যেমন পথকে তার ঠিকানা বানায় না, তেমনি মোমিনও দুনিয়াকে আপন ঘর ভাববে না। তার আপন ভূমি হলো আখেরাত। 
  • এ দুনিয়ায় সে এক মুসাফির মাত্র। মানুষ যখন এভাবে চিন্তা করবে এবং জীবন-যাপন করবে তখন তার পক্ষে কোন অন্যায় করা সম্ভব হবে না। ফলে স্বার্থের হানাহানি মুক্ত এক শাস্তির সমাজ কায়েম হবে পৃথিবীতে।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, 'হে আয়েশা, যদি তুমি আমার সঙ্গে জান্নাতে থাকতে চাও তাহলে এটুকু দুনিয়াই তোমার জন্যে যথেষ্ট হওয়া উচিত, যতটুকু জিনিসপত্র এক মুসাফিরের কাছে থাকে। সাবধান! দুনিয়া পিপাসু সম্পদশালীদের কাছে বসবে না। আর কাপড় যদি পুরাতন হয়ে যায় তাহলে তা ফেলে দিও না, বরং তালি, লাগিয়ে পরো।” (তারগীব ও তারহীব, তিরমিযী)

অনুগত বন্ধু

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'বন্ধু তিন ধরনের।

এক ধরনের বন্ধু তোমাকে বলে, 'তুমি কবরে যাওয়া পর্যন্ত আমি তোমার সঙ্গে থাকবো। (আর যখন মানুষ কবরে পৌঁছে যায় তখন এ বন্ধু তাকে ছেড়ে দেয়। এ হলো মানুষ বন্ধু)।

দ্বিতীয় ধরনের বন্ধু তোমাকে বলে, 'তুমি গরীব লোককে যা দান করেছো সেটুকু তোমার অংশ। আর যা কিছু তুমি দান করোনি, বরং নিজের কাছে রেখেছো তা তোমার নয়। (বরং তোমার উত্তরাধিকারীদের)। এ বন্ধুর নাম হচ্ছে 'সম্পদ'।

আর তৃতীয় ধরনের বন্ধু তোমাকে বলে, 'তুমি যেখানে প্রবেশ করবে সেখানে অর্থাৎ কবরে এবং কবর থেকেও বেরিয়ে তুমি যেখানে যাবে সেখানেও আমি তোমার সঙ্গে থাকবো। এ বন্ধুর নাম হচ্ছে 'আমল'।

মানুষ অবাক হয়ে আমলকে বলবে, 'আল্লাহর শপথ, আমি এই তিন ধরনের বন্ধুদের মধ্যে তোমাকে হীন ও অতি সাধারণ মনে করতাম। (আর আমি তো ভুল করেছি, আমার আত্মীয়-স্বজনদের জন্যই সব কিছু করেছি কিন্তু কিছুই কাজে এলো না। কেবলমাত্র আমলই সঙ্গে থাকলো)। (তারগীব, মুসতাদরাক)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমরা সম্পত্তি তৈরী করো না, তাহলে তোমাদের মধ্যে দুনিয়ার লোভ জন্ম গ্রহণ করবে।” (মুসনাদে আহমদ)

  • ব্যাখ্যাঃ এটা খুব পরিষ্কার কথা যে, যখন মানুষ সম্পত্তি তৈরী করার কথা চিন্তা করবে তখন ধীরে ধীরে তার মন আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার দিকে আকৃষ্ট হতে শুরু করবে। আর এ জিনিস হলো আল্লাহর দ্বীনের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। এমনটি হলে তো নতুন উম্মত সৃষ্টি করার কোন প্রয়োজন ছিল না। কারণ দুনিয়া পরস্ত লোকের তো কোন কমতি ছিল না। আখেরাতকে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করাই এই নতুন উম্মতের কাজ। 
  • আখেরাতের প্রস্তুতির জন্যে এ দুনিয়ার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু জিনিসই নিজের কাছে রাখা উচিত। এ জন্যই হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ায় সম্পত্তি সৃষ্টি থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। কারণ যে জিনিসের জন্যে মানুষ সময়, শক্তি, সামর্থ্য খরচ করে স্বভাবতই তার প্রতি তার ভালবাসা জন্মায় এবং মন তাতেই মগ্ন হয়।

দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ থাকার সঠিক ধারণা

হযরত আবুযর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'দুনিয়ার প্রতি স্পৃহাহীনতা ও নির্মোহ হওয়ার অর্থ হালাল বস্তুকে নিজের জন্যে হারাম করে নেয়া নয়। 

এমনকি ধন-সম্পদ নষ্ট করে দেয়াও নয়। বরং এর তাৎপর্য হলো, তোমার নিজের ধন-সম্পদ অপেক্ষা আল্লাহর পুরস্কার ও দানের উপর অধিক আস্থা রাখো। যখন তোমার উপর বিপদ-আপদ আসবে তখন সেই বিপদ-আপদ থেকে যে প্রতিদান ও সওয়াব পাওয়া যাবে তার দিকে দৃষ্টি রাখো এবং তোমরা বিপদ-আপদকে সওয়াবের মাধ্যম বলে মনে করো।” (তিরমিযী)

মোমিন আল্লাহর দীদার কামনা করে

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করাকে পছন্দ করে আল্লাহও তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করাকে অপছন্দ করে আল্লাহও তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে অপছন্দ করেন।'

আমি জিজ্ঞেস করি, 'আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করাকে অপছন্দ করার অর্থ কি? এর অর্থ কি মৃত্যুকে অপছন্দ করা? যদি তাই হয় তাহলে আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই তা অপছন্দ করে।'

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'আমার কথার অর্থ তা নয়। বরং এর অর্থ হলো, যখন মোমিনকে আল্লাহর নেয়ামত, সন্তুষ্টি এবং জান্নাতের কথা শুনানো হয় তখন সে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করতে চায়। 

এ ধরনের লোকের সঙ্গে আল্লাহও সাক্ষাত করতে চান। আর যখন কাফেরকে আল্লাহর শান্তি ও অসন্তুষ্টির সংবাদ শোনানো হয় তখন সে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করাকে অপছন্দ করে। তখন আল্লাহও তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে অপছন্দ করেন।” (সহিহ মুসলিম)

নফসের খায়েস জান্নাতের পথের অন্তরায়

হযরত কুলাইব ইবনে হাযন রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একথা বলতে শুনেছি, 'তোমরা তোমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টাসহ জান্নাতের আকাঙ্খা করতে থাকো আর জাহান্নাম থেকে বাঁচার চিন্তা করো। কারণ জান্নাত হলো এমন জিনিস যার আকাঙ্খাকারী শুয়ে থাকতে পারে না। আর জাহান্নাম হলো এমন জিনিস যা থেকে পলায়নকারী শুয়ে থাকতে পারে না (অর্থাৎ উদাসীন হতে পারে না)। আখেরাতকে দুঃখ ও অশান্তি দ্বারা ঘেরাও করে দেয়া হয়েছে। দুনিয়া মজা ও লোভ লালসার আকর্ষণ দ্বারা পরিবৃত। তাই দুনিয়ার লোভ ও আকর্ষণ যেন তোমাদেরকে গাফেল না করে দেয়।” (তারগীব ও তারহীব, তিবরানী)

  • ব্যাখ্যা: আখেরাতে সাফল্যের জন্যে প্রয়োজন হলো, মানুষ যেন ভোগের দিকে ঝাপিয়ে না পড়ে। আখেরাতে সাফল্য লাভের জন্যে এমন অনেক কাজ করতে হবে যা নফসের পক্ষে দুঃখ ও কষ্টের। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এসব দুঃখ-কষ্ট অতিক্রম না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে পৌঁছাতে পারবে না।

পোস্ট ট্যাগঃ

আখিরাত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কি কি
আখিরাতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কি কি
আখিরাতে বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ কেন
আখিরাত জীবনের স্তর কয়টি
আখিরাতের জীবন চিত্র
গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কথা
আখিরাতে বিশ্বাস করা অপরিহার্য কেন ব্যাখ্যা কর
আখিরাত কাকে বলে উত্তর
আখিরাত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কী কী

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url