ঈমানের শাখা কয়টি

ঈমানের শাখা কয়টি- How many branches of iman?

ঈমানের শাখা কয়টি- আজকের এই পোস্ট আমরা বিস্তারিত জানতে পারবো যে ঈমানের শাখা কয়টি ও কি কি ইত্যাদি।

আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা
Believing in Allah

আল্লাহর প্রতি ঈমান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-

অর্থ: “আর মুমিনরা প্রত্যেকেই আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে।”

আরও বলা হয়েছে-

(সূরা আল-বাকারা: ২৫৮)

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করো।

(সূরা আন নিসা: ১৩৬)

আবু হুরায়রা বলিল্লাহ থেকে বর্ণিত। নবী করীম শাহ বলেছেন,

অর্থ: যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এ সাক্ষ্য না দেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো যোগ্য ইলাহ নেই', ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে আদিষ্ট হয়েছি। কাজেই যে ব্যক্তি স্বীকার করে নেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো যোগ্য ইলাহ নেই' সে আমার থেকে তার জীবন ও সম্পদকে নিরাপদ করে নিল। তবে শরীআহসম্মত কোনো কারণ ঘটলে ভিন্ন কথা। 

আর তার (কৃতকর্মের) হিসাব-নিকাশ আল্লাহর কাছেই রয়েছে।” (সহীহ আল বুখারী-১৩৯৯ ও সহীহ মুসলিম-২০)

ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা
Belief in angels

ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান : দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য ফেরেশতা রয়েছেন । তিনি তাদেরকে নূর (জ্যোতি) হতে সৃষ্টি করেছেন । সৃষ্টিগতভাবে তারা আল্লাহর অনুগত । তারা কখনও আল্লাহর আদেশের অবাধ্য হন না, বরং যা আদিষ্ট হয় তা তাৎক্ষণিক পালন করেন। 

তারা দিবা রাত্রি আল্লাহর তাসবীহ (পবিত্রতা) বর্ণনায় রত, কখনও ক্লান্ত হন না । তাদের সংখ্যা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কেউ জানে না । আল্লাহ তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার (কর্মের) দায়িত্ব দিয়ে অপর্ণ করেছেন ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

অর্থ: সকলেই বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি।

(সূরা আল বাকারা-আয়াত: ২৮৫)

প্রসিদ্ধ হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেন-

ঈমান হল: আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর ফেরেশতাদের, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও পুনরুত্থান দিবসের প্রতি এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনা। (বুখারী-৫০, মুসলিম-১০)

আসমানী কিতাবসমূহের উপর ঈমান আনা

ঈমানের (iman) দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শাখা হচ্ছে- ফেরেশতা, আল্লাহ প্রদত্ত কিতাবসমূহ এবং নবী রাসূলগণের উপর ঈমান আনা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

অর্থ: এবং সকল মুমিন- আল্লাহ, ফেরেশতা, কিতাবসমূহ এবং নবীদের উপর ঈমান আনে। (সূরা আল বাকারা: আয়াত-২৮৫)

উমর ইবনে খাত্তাব শুনিয়া শাহ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস- যা হাদীসে জিবরাঈল নামে পরিচিত- যেখানে জিবরাঈল আলাইহিওসাল্লাম-এর এক প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে

অর্থ: ঈমান হচ্ছে- আল্লাহ, ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ ও রাসূলগণের উপর ঈমান আনয়ন। (বুখারী-৪৭৭৭)

কিতাবসমূহের উপর ঈমান আনার সাথে সাথে আল-কুরআনের উপর ঈমান আনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে-

অর্থ: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনো এবং সেই কিতাবের (কুরআনের) প্রতিও যা তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন। সেই সাথে আগে যেসব কিতাব নাযিল হয়েছিল সেগুলোর প্রতিও। (সূরা: আন-নিসা, আয়াত-১৩৬)

রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনা

ইহা ঈমানের রুকনসমূহের একটি রুকন, যার প্রতি ঈমান আনা ছাড়া কোন ব্যক্তির ঈমান পরিপূর্ণ হবে না।

রাসূলগণের প্রতি ঈমান হলো: মনে প্রাণে এ দৃঢ় বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ পৃথিবীতে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছেন। যাদেরকে তিনি তাঁর রিসালাত প্রচারের জন্য নির্বাচন করেছিলেন। তারা তার রিসালাত পৌছানোর ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। কোন ত্রুটিও কোন প্রকার অবহেলা করেন নি। যারা তাঁদের অনুসরণ করবে, তারা হিদায়াত (সঠিক পথ) পাবে। 

আর যারা তাঁদের অনুসরণ করবে না তারা পথভ্রষ্ট হবে। তারা স্বীয় উম্মাতকে কল্যাণের উপদেশ দিয়েছেন। যা সহ প্রেরিত হয়েছেন তার কোন অংশ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও গোপন না করে স্বজাতির উপর হুজ্জাত (পক্ষ-বিপক্ষের দলীল) কায়েম করেছেন। আমরা যাদের নাম জেনেছি আর যাদের নাম জানতে পারি নাই সকলের প্রতি ঈমান আনব।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

অর্থ: তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তদীয় বংশধরের প্রতি এবং মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীদেরকে তাঁদের পালনকর্তার পক্ষ হতে যা দান করা হয়েছে, তৎসমূদয়ের উপর। আমরা তাঁদের মধ্যে পার্থক্য করি না  আর আমরা তাঁরই আনুগত্যকারী  (সূরা বাকারা- আয়াত  ১৩৬)

তাকদীরের প্রতি ঈমান আনা

ভালো হোক কিংবা মন্দ হোক, সবকিছুই যে আল্লাহর পক্ষ থেকে পূর্ব নির্ধারিত এ কথার উপর ঈমান রাখা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন। তাকদীর কত প্রকার

অর্থ: ‘বলুন, সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে।' (সূরা: আন নিসা আয়াত-৭৮) সহীহ আল-বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়ালা কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, “নবী করীম সাঃ বলেছেন, একবার আদম (আঃ) ও মূসা (আঃ)-এর মধ্যে বিতর্ক হয়েছিল। মূসা (আঃ) বললেন, হে আদম! আপনি আমাদের পিতা। আমাদেরকে বঞ্চিত করেছেন এবং জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছেন। 

আদম আলাইহি বললেন, আপনি তো মূসা! আল্লাহ তাআলা আপনার সাথে কথা বলে আপনাকে সম্মানিত করেছেন। লিখিত কিতাব (তাওরাত) দিয়েছেন। আপনি কি এমন বিষয়ে আমাকে তিরস্কার করেছেন যা আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করার চল্লিশ বছর আগে নির্ধারণ করে রেখেছিলেন? 

আদম (আঃ), মূসা (আঃ) -এর উপর বিতর্কে বিজয়ী হলেন। (হাদীসটি সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে তাকদীর অধ্যায়ে 'আদম ও মূসা-এর বিতর্ক শিরোনামে উল্লেখ আছে)

আল্লাহর রাসূল (আঃ) বলেন-

ঈমান হল: আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর ফেরেশতাদের, তাঁর কিতাব, তার সাক্ষাত, তাঁর রাসূলগণ, পুনরুত্থান এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনা।

আখিরাতের প্রতি ঈমান আনা

আখিরাত বা পরকালের ব্যাপারে বিশ্বাস রাখাও ঈমানের অংশ, এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-

অর্থ: তোমরা তাদের সাথে জিহাদ কর, যারা আল্লাহ ও পরকালকে বিশ্বাস করে না। (সূরা: আত তাওবা: আয়াত-২৯)

হুলাইমী বলেন, অবশ্যই একদিন এই দুনিয়া শেষ হয়ে যাবে। একদিন একদিন করে মূলত পৃথিবী সেই দিনটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যা হঠাৎ করে এসে হাজির হবে। 

সেই দিনটিকে পাশ কাটানোর কোনো উপায়ই নেই। সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম সাঃ বলেছেন, 'যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তার শপথ! কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে। দোকানদার ও খরিদ্দার কাপড় দর দাম করে মূল্য পরিশোধের আগেই তা সংঘটিত হয়ে যাবে।

পুনরুত্থানের প্রতি ঈমান আনা

মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করা হবে এ বিশ্বাস রাখা। আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেন-

অর্থ: অবিশ্বাসীরা ভেবে নিয়েছে তাদেরকে কখনও জীবিত উঠানো হবে না। বলে দিন, হ্যাঁ, অবশ্যই আমার প্রতিপালকের শপথ তোমাদেরকে অবশ্যই পুনরায় জীবন দান করে পুনরুত্থিত করা হবে। (সূরা আত তাগাবুন: আয়াত-৮)

অন্যত্রে বলা হয়েছে-

অর্থ: ‘বলুন, আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। অত:পর কিয়ামতের দিন পুনরায় তোমাদেরকে একত্রিত করবেন। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা বুঝে না।

(সূরা আল জাসিয়া-আয়াত: ২৬) উমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত এক সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে-

অর্থ: আল্লাহ, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ, নবী-রাসূলগণ, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান এবং তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি তোমার আস্থার নাম হচ্ছে ঈমান 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url