পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সূরা

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও ওযুর বিধান- Provision of five daily namaz and ablution

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সূরা

আল্লাহ্ তা'আলা কুর'আন মজীদে এরশাদ করেছেন, নিঃসন্দেহে মু'মিনদের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় বিধিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।” (সূরা আন-নিসা- ১০৩)

মুসলিমদের জন্যে যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তালিকা আছে তা আদায় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেগুলো:

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ

ফজর- (fajr time, fajr namaz time) -(ছুবহে ছাদেক বা ঊষার সূচনাকাল থেকে সুর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত)

যোহর (zuhr time) -(মধ্য-দুপুরের পর থেকে বিকাল হওয়ার আগ পর্যন্ত)

আছর (asr time) -(বিকাল থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত)
মাগরিব (maghrib time)-(সূর্যাস্তের পর থেকে দিনের আলো পুরোপুরি বিলীন না হওয়া পর্যন্ত)
এশা (isha namaz time) -(রাত হওয়ার পর থেকে মধ্যরাত বা ঊষার পূর্ব পর্যন্ত)

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সূরা

পর্যায়ে এসে আমাদের জানা প্রয়োজন যে, কিভাবে নামাজ আদায় করতে হয়। তবে তার আগে তোমাদের ভালভাবে জেনে নেয়া দরকার আমাদের নামাজ আদায়ের প্রয়োজন কি? আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ তা'আলাকে স্মরণ করা এবং তাঁর ঘনিষ্ঠতা রহমত লাভের জন্যে নামাজ আদায় করি।

নামাজ আদায়ের জন্যে তোমাদেরকে অবশ্যই পরিস্কার-পরিছন্ন পবিত্র হয়ে নিতে হবে। আল্লাহ্ তা'আলা কুর'আন মজীদে এরশাদ করেন তার বাংলা অর্থ হচ্ছেঃ

নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাওবাকারীদেরকে (পাপকাজ পরিত্যাগ করে অনুতাপ সহকারে তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন কারীদেরকে) এবং পবিত্রতা অবলম্বন কারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরাহ আল্-বাকারাহ্- ২২২)

শরীর পোশাক-পরিচ্ছদের পবিত্রতাকে 'তাহারাহ্ বলা হয় এবং পরিস্কার - পরিচ্ছন্নতাকে বলা হয় 'নাযাফাহ্' দু'টি বিষয় এক নয়, তবে দু'টি বিষয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। তুমি হয়ত বাহ্যিকভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হতে পার, কিন্তু সে অবস্থায় পবিত্র না- হতে পার।

নামাজ আদায়ের সময় পরিধানে যে কাপড়-চোপড় থাকবে তাতে যেন পায়খানা-প্রস্রাব না লেগে থাকে; কোনভাবে লেগে থাকলে তা পুরোপুরি পরিস্কার করে নিয়ে তারপর অন্ততঃ কাপড়ের ঐ অংশটুকু ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে যাতে নাপাক বস্তুর রং বা গন্ধ না থাকে।

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়

আমরা আমাদের শরীরকে কিভাবে পবিত্র করবো? পবিত্রতার জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে সারা শরীর ধুয়ে ফেলতে হয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধুতে হয়। (তবে উভয় ক্ষেত্রেই শরীরে কোন নাপাক বস্তু লেগে থাকলে তা আগে সাফ করে নিতে হবে) শরীর পুরোপুরি ধোয়ার নাম গোসল এবং আংশিক ধোয়ার নাম ওযু'

মনে রাখবে মুসলমানদের জন্যে অন্য লোকদের সামনে নগ্ন হয়ে গোসল করার অনুমতি নেই- তা পুকুরে, নদীতে বা শাওয়ারের নীচেই হোক বা তোলা পানি দ্বারাই হোক।

ওযু

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এরশাদ করেছেন: “নিঃসন্দেহে হাশরের দিনে আমার অনুসারীদেরকে ওযু' চিহ্নের ভিত্তিতে (জ্যোর্তিময় শরীফ লোকগণ) বলে সম্বোধন করা হবে। অতএব যে- পারে সে যেন তার জ্যোতির আওতা বৃদ্ধি করে (অর্থাৎ নিয়মিত ওযু' করে)” (আল-বুখারী)

নামাজ আদায় শুরু করার আগে প্রথমে আমাদের নিজেদেরকে জন্যে তৈরী করে নিতে হবে। আর নিজেদেরকে তৈরী করে নেয়ার মধ্যে একটি কাজ হচ্ছে, নিজেদের পবিত্রতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে হবে। ওযু' করার মাধ্যমে আমরা পবিত্রতা হাসিল করে থাকি।

ওযুর ফরজ কয়টি

নামাজ আদায়ের জন্যে ওযু' বাধ্যতামূলক ফরজ। আল্লাহ্ তা'আলা কুর'আন মজীদে এরশাদ করেন:

হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন সালাতের জন্যে দাঁড়াবে তখন তোমাদের মুখমণ্ডল হাত দু'টি কনুই পর্যন্ত ধোও এবং মাথা মাসেহ্ কর (ভিজা হাত মাথায় ওপরে টানবে) পা দু'টি গোড়ালি পর্যন্ত ধোও।” (সূরাহ আল্‌-মায়িদাহ্-: )

আয়াতে ওযু' করার ফরজ অংশগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ওযুর সুন্নত কয়টি

এছাড়া হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ওযু'তে আরো কতোগুলো অতিরিক্ত কাজ করতেন যেগুলোকে সুন্নাহ্ বলা হয়। ওযুর সুন্নত কয়টি সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলোঃ

ওযু' কাজগুলো পর্যায়ক্রমে এরূপ:

ওযুর নিয়ম

() প্রথমেই ওযু' নিয়্যত করো অর্থাৎ তুমি যে ওযু' করবে ব্যাপারে মনস্থির করবে। এরপর তামীয়াহ্ (বিসমিল্লাহ্) বলে ওযু' শুরু করবে:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (পরম দয়াময় মেহরবান আল্লাহর নামে শুরু করছি)

() এরপর প্রথমে কব্জি পর্যন্ত দুই হাত তিনবার ধুয়ে নাও। লক্ষ্য রাখবে যাতে আঙ্গুলের ফাঁকে ঠিকমতো পানি পৌঁছায়।

ডান হাত দিয়ে আঁজলা ভরে মুখে পানি দাও এবং তিনবার কুলি কর।

(গ) নাকের ছিদ্র দিয়ে তিনবার পানি টেনে নাও নাকের ছিদ্র পরিষ্কার করো। এরপর নাকের ডগা ধুয়ে ফেলো।

 () ডান কান থেকে বাম কান পর্যন্ত এবং কপালের চুল ওঠার জায়গা থেকে গলার কাছ পর্যন্ত তিনবার ধোও।

() কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত প্রথমে ডান হাত পরে বাম হাত তিনবার ধোও।

() উভয় হাতের ভিজা তালু কপালের উপরে চুল ওঠার জায়গা থেকে মাথার ওপর দিয়ে ঘাড় পর্যন্ত টেনে নাও।

() ভিজা আঙ্গুলগুলো দিয়ে উভয় কানের সামনের দিক ছিদ্র মুছে নাও এবং ভিজা বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কানের পিছন দিক মুছে নাও।

() ভিজা হাতের পিঠ ঘাড়ের ওপর দিয়ে টেনে নাও

() প্রথমে ডান পা পরে বাম পা গোড়ালি পর্যন্ত ধুয়ে নাও; খেয়াল রাখবে যাতে পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ঠিকমত পানি প্রবেশ করে। তুমি যদি মোজা পরার আগে পুরোপুরি ওযু' করে থাকো তাহলে পুনরায় প্রতিবার ওযুকরার সময় মোজা খুলে নিতে হবে না। 

বরং সে ক্ষেত্রে মুছে নিলেই চলবে। জন্যে চামড়ার মোজাই সবচেয়ে ভাল। তবে যে কোন টেকসই মোজার ওপর মাসেহ্ চলবে যদি তা ছেঁড়া না হয়। ধরনের মাসেহ্ চব্বিশ ঘন্টার জন্যে (সফরে থাকলে তিন দিন) কার্যকর। আমরা ওযুর নিয়ম গুলো জানলাম।

ওযুর শেষে কোন দোয়া পাঠ করলে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়

এবার ওযু' সকল কাজ শেষ হবার পর পড়বো; (আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান 'আবদুহু ওয়া রাসূলুহ্)

ওযু ভঙ্গের কারণ

নিম্নলিখিত অবস্থার পরে নতুন করে ওযু' করতে হবে:

  • ) প্রাকৃতিক কর্ম (অর্থাৎ পায়খানা, পেশাব, বায়ু বের হওয়া ধরনের অন্যান্য অবস্থা)
  • ২) শরীরের যে কোন জায়গা থেকে রক্ত বা পুঁজ বেরিয়ে গড়িয়ে গেলে।
  • ) মুখভরে বমি হলে।
  • 8) ঘুমিয়ে পড়লে বা বেহুশ হয়ে পড়লে।
  • ) গুপ্তাঙ্গ স্পর্শ করলে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url