ঈমানের মূল বিষয় কয়টি

ঈমান অর্থ কি তাওহিদ সহ বিস্তারিত - iman,Tawheed, with quran, hadith

ঈমানের মূল বিষয় কয়টি

ঈমানের মূল বিষয় কয়টি জানতে হলে আজকের পোস্টে নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ঈমান শব্দের অর্থ

ঈমান শব্দের অর্থ মজবুত বিশ্বাস। একজন ঈমানদারকে অবশ্যই প্রথমে তার অন্তরকে অন্য যে কোন দেবদেবী বা উপাস্য থেকে এবং অন্য যেকোন পূজার বস্তু থেকে মুক্ত ও পবিত্র করতে হবে ঈমানের আলো এর মাধ্যমে। 

কেবল তখনই তার অন্তরে আল্লাহর একত্বের বিশ্বাস মজবুত হতে পারে। একটি উদাহরণের সাহায্যে আমরা বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করতে পারি। মনে করুন আমাদের এক খণ্ড জমি আছে; জমিটি আগাছা ও লতাগুল্মে পরিপূর্ণ। আমরা এ জমিটিতে ধানের চাষ করতে চাই। 

এখন আমরা যদি জমিটির আগাছা ও লতাগুল্ম পরিস্কার না করেই সেখানে খুব ভাল জাতের ধানের চাষ করি তো আমরা সেখান থেকে ধানের ভাল ফসল আশা করতে পারি না। তাহলে আমাদেরকে কি করতে হবে? আমাদেরকে অবশ্যই জমিটি চাষ করতে হবে, আগাছা ও লতাগুলা সাফ করতে হবে এবং ধানের বীজ বপনের আগে জমিটিকে ভালভাবে প্রস্তুত করতে হবে। 

কেবল তাহলেই আমরা ভাল ফসল আশা করতে পারি। আমরা এ জমিটিকে মানুষের অন্তরের সাথে তুলনা করতে পারি। মানুষের অন্তর যদি মিথ্যা মাবুদের বা মিথ্যা খোদার ওপরে বিশ্বাসে পরিপূর্ণ থাকে তো আমরা সেখানে তাওহীদ মজবুত হওয়ার আশা করতে পারি না।

ঈমানে মুফাসসাল

এ মৌলিক বিশ্বাসসমূহের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কলেমা, (আমানতু বিল্লাহি ওয়া মালায়ি কাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি ওয়া ইয়াওমিল আখিরি ওয়াল কারি খাইরিহি ওয়া শারিহি মিনাল্লাহি তা'আলা ওয়াল্ বাছি বাদাল মাওত।)’

ঈমান মোট সাত প্রকার হয়ে থাকে যথাঃ

  • ১. আমি ঈমান আনছি আল্লাহপাকের উপর, 
  • ২. আল্লাহপাকের ফেরেশতাগণের উপর, 
  • ৩. আল্লাহপাকের কিতাবসমূহের উপর, 
  • ৪. আল্লাহপাকের রাসূলগণের উপর, 
  • ৫. শেষ দিবসের উপর (বিচারদিবসে), 
  • ৬. সর্বশক্তিমান আল্লাহর পক্ষ থেকে ভালমন্দ সবকিছু নির্ধারিত হওয়ার উপর এবং 
  • ৭. মৃত্যুপরবর্তী জীবনের উপর।

তাওহীদের মূল শিক্ষা কি

অতএব, অন্তরকে অবশ্যই অন্য মাবুদ, যে কোন দেবদেবী বা পূজার বস্তু থেকে মুক্ত ও পবিত্র করতে হবে। কেবল তখনই হৃদয়ে তাওহীদ মজবুত হবে ও ঈমানের আলোতে তা আলোকিত হবে। তাওহীদ আমাদের গোটা জীবনধারাকে গড়ে তোলে ও প্রভাবিত করে। 

এ কারণেই আমাদের জন্য তাওহীদের অর্থ সুস্পষ্টভাবে জানা জরুরী। নিখুঁত নিয়মশৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনাসহ এই বিশাল ও জমকালো মহাবিশ্ব সুস্পষ্টভাবে এটাই বুঝাচ্ছে যে, এসবের একজন স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রণকারী রয়েছেন। 

আমরা যখন এ বিশ্বলোকের চমৎকার ব্যবস্থা ও পূর্ণাঙ্গ নিয়ম-শৃঙ্খলা-ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে চিন্তা করি তখন আমরা দেখতে পাই যে, এতে কোন বিশৃঙ্খলার অস্তিত্ব নেই ৷ সূর্য, চন্দ্র ও ছায়াপথ একই সার্বভৌম ক্ষমতার আনুগত্য করে চলেছে। গোটা ব্যবস্থায়ই পূর্ণ সামঞ্জস্য ও সমন্বয় বিদ্যমান। প্রতিটি বস্তুকেই অত্যন্ত সুন্দরভাবে সঠিক জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে। 

এর কোন কিছু সম্পর্কেই “আরো উন্নত করা যেত”- এমন কথা বলার কোন সুযোগ নেই এবং কোথাও কোন খুঁত নেই। শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্যের এই জমকালো ও পুর্ণাঙ্গ সমাহার একজন সর্বজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময় ও সর্বশক্তিমান স্রষ্টা ও পরিচালকের অস্তিত্বের সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করছে। (সূরাহ আল্-মূল্ক- ৬৭: ৩-৫) উদাহরণ স্বরূপ, গ্রহ-নক্ষত্রসমূহের যদি একাধিক স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রণকারী থাকত তাহলে অবশ্যই সংঘাতের সৃষ্টি হত ও তার পরিণতিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিত।

কিন্তু বিশ্বজগতে আমরা এ ধরনের কোন বিশৃঙ্খলা দেখতে পাই না। একটি বিদ্যালয়ের ভালভাবে পরিচালনা এবং একটি গাড়ী বা জাহাজের সঠিকভাবে পথ চলার জন্য একজন প্রধান শিক্ষক বা একজন চালক বা একজন ক্যাপ্টেনের প্রয়োজন। 

একই সময়ে একটা গাড়ীকে যেমন একাধিক চালক চালাতে পারে না ঠিক সেভাবেই একটি প্রতিষ্ঠান একাধিক নেতার নেতৃত্বে সমস্যাহীন ভাবে পরিচালিত হতে পারে না। অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র নিয়ে গঠিত এ বিশ্বজগত একটি একক জগত। 

এর প্রতিটি অংশেরই অভিন্ন উৎস ও অভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে। কেননা একজন সর্বশক্তিমান সত্তা এ বিশ্বজগতকে এক বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। তাই একটি মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মত এ বিশ্বলোকের সবকিছুই পারস্পরিক সমন্বয় ও সহযোগিতা সহকারে কর্মতৎপর রয়েছে।

মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন কাজ রয়েছে বলে মনে হয়, কিন্তু তারা একই উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে, তা হচ্ছে, শরীরকে ঠিক রাখা ও ঠিকমত কাজ করতে সাহায্য করা।

ঈমান অর্থ কি? তাওহিদ সহ বিস্তারিত - iman,Tawheed, with quran, hadith?

তাওহিদ কাকে বলে

তাওহীদ মানে আল্লাহর একত্ব। এটা হচ্ছে ঈমানের (ইসলামে বিশ্বাসের) প্রধান অংশ কুর’আন মজীদের সূরা ইখলাছে এ বিষয়টি অত্যন্ত চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে যেমন,

আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কিত সূরা কোনটি

সূরা ইখলাস বাংলা অনুবাদ?

“বল, তিনিই আল্লাহ্; তিনি এক। আল্লাহ্ চিরন্তন, অবিনশ্বর । তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং তিনি জন্ম নেন নি কিছু থেকে। তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।” (সূরাহ আল-ইখলাছ সূরাহ নং-১১২)

ইসলামের বিশ্বাসসমূহের মধ্যে তাওহীদ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাওহীদ মানে হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার সকল ক্ষমতাসহ তাঁর ওপরে বিশ্বাস পোষণ করা। তাওহীদ, মানে পৃথিবীর বুকে যা কিছু আছে তার সবই আল্লাহ্ তা'আলার সৃষ্টি। তিনি প্রতিটি সৃষ্টিকে লালন পালন করেন এবং তিনি আমাদের হেদায়াতের একমাত্র উৎস। 

আল্লাহর পরিচয়

আল্লাহ তাআলা পরম জ্ঞানময় ও সর্বশক্তিমান। তিনি পরম দয়াময়, মেহেরবান ও সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেমময়। তিনি সদাসর্বদা আমাদের সাথে আছেন। তিনি আমাদেরকে দেখছেন যদিও আমরা তাঁকে দেখতে পাচ্ছি না। তিনি ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। 

তিনিই আদি, তিনিই অন্ত। তাঁর কোন অংশীদার বা পুত্র-কন্যা নেই, বা তিনি কারো মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেন নি। তিনিই আমাদেরকে জীবন দান করেন এবং আমাদের জীবন নিয়ে নেন (আমাদেরকে মৃত্যু দেন)। মৃত্যুর পরে সকলকেই তাঁর নিকট ফিরে যেতে হবে। 

একজন মুসলমানের প্রথম কর্তব্য হচ্ছে তার ঈমানের ঘোষণা দেয়া। এ ঘোষণা দেয়ার উদ্দেশ্যে তাকে মুখে বলতে হবেঃ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এর অর্থ

(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ; আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই; মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর রাসূল)। এই আরবী বাক্যটি উচ্চারণকে শাহাদাহ (ঈমানের ঘোষণা) বলা হয়। 

এ ঘোষণার দুটি অংশ: (১) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, (২) মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। 

প্রথম অংশের অর্থাৎ; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-র দু’টি দিক রয়েছে। একটি দিক নেতিবাচক, অপর দিকটি ইতিবাচক। 'লা ইলাহা’ হচ্ছে নেতিবাচক দিক, আর ইল্লাল্লাহ’ হচ্ছে ইতিবাচক দিক।

লা ইলাহা (কোন উপাস্য নেই) নেতিবাচক; ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ব্যতীত) ইতিবাচক; নেতিবাচক NEGATIVE ইতিবাচক POSITIVE. lailaha illallah (কোন উপাস্য নেই) (আল্লাহ্ ব্যতীত)

মানবজীবনে তাওহীদের প্রভাব

আমাদের জীবনের ওপর 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বা তাওহীদে বিশ্বাসের সুদূর প্রসারী প্রভাব রয়েছে ৷

(ক) একজন তাওহীদে বিশ্বাসী ব্যক্তি নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইচ্ছার নিকট সমর্পণ করে এবং তাঁর খাঁটি বান্দাহ্ ও প্রজায় পরিণত হয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে তার সবকিছুই আল্লাহ্ তা'আলা মানুষের খেদমতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। 

একজন মানুষ যখন নিজেকে আল্লাহ্ তা'আলার আদেশ-নিষেধের নিকট সমর্পণ করে তখন সে বুঝতে পারে যে, আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর সকল সৃষ্টিকেই তার কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন। কুর'আন মজীদে একথাই বলা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে :

 الم تر أن الله سخر لكم ما في الار –“তুমি কি দেখ নি যে, আল্লাহ্ পৃথিবীর সব কিছুকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন?” (সূরাহ আল্-হাজ্জ- ২২ : ৬৫)

আল্লাহ্ তা'আলা আরো এরশাদ করেন :

 الم تروا أن الله سخر لكم مافي السموات ومافي الأرض و أسبغ عليكم نعمـه ظـاهرة وباطنة.

“তোমরা কি দেখ নি যে, যা কিছু আসমানে আছে ও যা কিছু যমীনে আছে আল্লাহ্ তার সবকিছুকেই তোমাদের অধীন বানিয়ে রেখেছেন এবং তাঁর প্রকাশ্য ও গোপন নে'আমতসমূহ তোমাদের অধীনস্ত করে দিয়েছেন?” (সূরাহ লুকমান- ৩১ : ২০) 

এ দু'টি আয়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, আল্লাহ্ তা'আলা আসমান ও যমীনের প্রতিটি প্রাণী ও বস্তুকে মানুষের খেদমত ও কল্যাণের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। তবে অন্যান্য বস্তু ও প্রাণী আমাদের অধীন হয়ে তখনই আমাদের অধিকারে আসবে যখন আমরা তাওহীদে বিশ্বাস করব এবং তার ভিত্তিতে আমল করব। অর্থাৎ আমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ্ তা'আলার অনুগত হতে হবে।

(খ) তাওহীদে বিশ্বাস ঈমানদার ব্যক্তির মধ্যে অত্যন্ত উঁচু স্তরের আত্মসম্মানবোধ, আত্মবিশ্বাস ও প্রশান্তি সৃষ্টি করে। কারণ সে জানে যে, সে তার অভাব-অভিযোগ ও প্রয়োজন পূরণের জন্যে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারোর ওপরই নির্ভরশীল নয়। 

সে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, তার সকল প্রয়োজন পূরণের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলারই রয়েছে এবং তিনি ছাড়া আর কারোরই তার কল্যাণ বা ক্ষতি করার ক্ষমতা নেই। একজন ঈমানদার কখন আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মসম্মানবোধের অধিকারী হতে পারে? 

যখন সে অনুভব করে যে, সে তার প্রয়োজন সমূহ পূরণের জন্য একমাত্র তার স্রষ্টা ছাড়া আর কারো ওপরই নির্ভরশীল নয় কেবল তখনই সে এর অধিকারী হতে পারে। সে কখনো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় না। কারণ সে জানে যে, সে সত্যি সত্যিই আল্লাহর অনুগত বান্দাহ্ হয়ে থাকলে আল্লাহই তার সকল প্রয়োজন পূরণ করবেন।

(গ) তাওহীদের বিশ্বাস ঈমানদার ব্যক্তিকে বিনয় ও নম্রতার অধিকারী করে। সে কখনোই উদ্ধত ও অহঙ্কারী হয় না। সে সব সময়ই এ ব্যাপারে পুরোপুরি সচেতন থাকে যে, পৃথিবীর বুকে যা কিছু আছে তার সবই আল্লাহর এবং কেবল আল্লাহ্ তা'আলার একজন প্রজা হিসেবেই সে অন্যান্য সৃষ্টির ওপরে নিয়ন্ত্রণ লাভের অধিকারী। সে খুব ভালভাবে এও জানে যে, তার যা কিছু আছে তার সবই আল্লাহপাকের। তাই তার উদ্ধত বা অহঙ্কারী হবার কোন কারণ নেই।

(ঘ) তাওহীদে বিশ্বাস একজন ঈমানদারকে কর্তব্যপরায়ণ, সৎ ও ন্যায়পরায়ণে পরিণত করে। ঈমানদার ব্যক্তি জানে যে, ইহকাল ও পরকালীন জীবনে সাফল্যের অধিকারী হতে হলে তাকে অবশ্যই তার স্রষ্টার আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী আমল করতে হবে। এ সচেতনতা তাকে কর্তব্যে অবহেলা ও অন্যান্য পাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে।

তাওহীদে বিশ্বাস

(ঙ) তাওহীদে বিশ্বাস ব্যক্তিকে সাহসী করে তোলে। এ বিশ্বাস তার মন থেকে মৃত্যুর ভয় ও নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ দূর করে দেয়। সে জানে যে, আল্লাহ্ তা'আলাই সুনির্দিষ্ট সময়ে তার মৃত্যু ঘটাবেন এবং তিনি ছাড়া অন্য কেউই ঈমানদার ব্যক্তির ক্ষতি করতে পারবে না। তাই সে যদি আল্লাহ্ তা'আলার আনুগত্য করে তো তার ভয় করার মত কিছুই নেই। সে কোন রকম ভয়-ভীতি ছাড়াই তার কর্তব্য পালন অব্যাহত রাখে।

(চ) একজন তাওহীদ-বিশ্বাসী ব্যক্তি সচেতনভাবেই নিজেকে গোটা সৃষ্টিজগতের একটি অংশ বলে মনে করে। সে হচ্ছে সৃষ্টিলোকের সর্বশক্তিমান প্রতিপালক আল্লাহ তা'আলার সকল সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। এ বিশ্বাস তার মন ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করে।

(ছ) তাওহীদে বিশ্বাস ঈমানদার ব্যক্তির মধ্যে দৃঢ় প্রত্যয়, ধৈর্য ও অধ্যবসায় সৃষ্টি করে ঈমানদার ব্যক্তি মনের একাগ্রতার অধিকারী হয় এবং স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করে । একটি নৌকার কথা চিন্তা করে দেখ। নৌকার একটি হাল থাকে যা তার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। হাল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নৌকা তরঙ্গের ওপর দিয়েও অত্যন্ত চমৎকারভাবে সামনে এগিয়ে যায়। 

কিন্তু নৌকাটি যদি হাল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয় তাহলে এক একটি তরঙ্গ আসে আর তাকে একেক বার একেক দিকে ছুঁড়ে দেয়। এমন কি উত্তাল তরঙ্গে নৌকাটি ডুবেও যেতে পারে। একইভাবে, একজন ঈমানদার যখন আল্লাহ্ তা'আলার নিকট আত্মসমর্পণ করে তখন সে জীবনের চলার পথে সকল ক্ষেত্রেই নির্ভয়ে এগিয়ে যেতে পারে। 

কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করে না তাকে চাকরি হারানোর ভয়, বিপদাপদের ভয়, ক্ষুধার ভয় এবং এ ধরনের আরো অনেক মিথ্যা খাদ্যের আনুগত্য করতে হয়। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে তার জীবন এ ধরনের ভয়-ভীতির দ্বারা শাসিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় না।

(জ) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্-তে 

বিশ্বাসের এবং যিকির (Zikir) এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব এই যে, এ বিশ্বাস ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা'আলার আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে বাধ্য করে। একজন তাওহীদবিশ্বাসী ব্যক্তি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, আল্লাহ তাআলা সব কিছু জানেন ও দেখেন এবং সে এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহ্ তা'আলার দৃষ্টিকে ফাঁকি দিতে পারবে না। প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ্ তা'আলা তার ঘাড়ের রগের চেয়েও নিকটে অবস্থান করছেন।

(আল কুরআন-৫০ঃ ১৬)

সুতরাং একজন প্রকৃত ঈমানদার গোপনে বা রাতের অন্ধকারেও কোন গুনাহের কাজে লিপ্ত হয় না। কারণ, সে এ ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে যে, আল্লাহ্ তা'আলা সব সময় সবকিছুই দেখতে পান এবং সব কিছু জানেন। একজন তাওহীদ-বিশ্বাসী ব্যক্তি তার ঈমান অনুযায়ী আমল করার মাধ্যমে আল্লাহ্ - তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে। 

বস্তুতঃ ইসলামে আমলবিহীন ঈমানের কোন গুরুত্ব নেই। আমরা মুসলমানরা তাওহীদে বিশ্বাসী। আমরা আল্লাহ্ তা'আলার বান্দাহ্ ও প্রজা। তাই আমাদের কাজকর্ম ও আচরণে ঈমানের প্রতিফলন একান্তই জরুরী।

ঈমানের ৭৭ টি শাখা বই
ইমাম বায়হাকী
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url