একই বিছানায় দুই স্ত্রী নিয়ে ঘুমানো কি ইসলামসম্মত?

একই বিছানায় দুই স্ত্রী নিয়ে ঘুমানো কি ইসলামসম্মত?


📖 ভূমিকা


ইসলামে বিবাহিত জীবনে শান্তি, ন্যায়বিচার এবং পরস্পরের মর্যাদা রক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একজন মুসলিম পুরুষ যদি একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করে, তবে তার জন্য প্রতিটি স্ত্রীর মাঝে ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখা ফরজ। কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন আসে—একই বিছানায় দুই স্ত্রী নিয়ে ঘুমানো কি ইসলামসম্মত? চলুন কুরআন, হাদিস ও আলেমদের ব্যাখ্যার আলোকে বিষয়টি জেনে নেই।


📖 কুরআনের নির্দেশ


আল্লাহ তাআলা বলেনঃ


> “তোমরা যদি ভয় কর যে স্ত্রীদের মাঝে ন্যায়বিচার করতে পারবে না, তবে একজনেই সীমাবদ্ধ থাকো।”

(সূরা নিসা 4:3)



➡️ এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, একাধিক স্ত্রী থাকলে ন্যায়বিচার করা আবশ্যক। ন্যায়বিচার শুধু খরচে নয়, বরং সময়, সঙ্গ, শয্যা—সবকিছুতে সমান হওয়া চাই।


📜 সহিহ হাদিস থেকে প্রমাণ


1. রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ


> “যে ব্যক্তি দুই স্ত্রী রাখল আর তাদের মধ্যে সমতা বজায় করল না, কিয়ামতের দিন তার দেহ এক পাশে হেলে থাকবে।”

(সুনান আবু দাউদ: 2133, সহিহ)



➡️ অর্থাৎ স্ত্রীর অধিকারে অবিচার করলে ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে।


2. সহিহ হাদিসে বর্ণিতঃ


> রাসূলুল্লাহ ﷺ স্ত্রীদের মাঝে রাত কাটানোর ক্ষেত্রে সমান আচরণ করতেন।

(সহিহ বুখারি: 5212, সহিহ মুসলিম: 1461)


➡️ তিনি কখনও এক স্ত্রীকে অন্যজনের সাথে একত্রে শয্যায় রাখেননি।


🕌 আলেমদের মতামত


ইমাম নববী (রহ.): স্বামী কর্তব্য হলো প্রতিটি স্ত্রীর জন্য আলাদা রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা। একই শয্যায় দুই স্ত্রীকে রাখা গোপনীয়তা নষ্ট করে এবং ন্যায়পরায়ণতার পরিপন্থী।


ইবনে হাজার (রহ.): এতে এক স্ত্রীর অধিকার অন্যজনের দ্বারা ক্ষুণ্ণ হয়, তাই এটি জায়েয নয়।



🤲 দোয়া


স্ত্রীদের মাঝে ন্যায়বিচার বজায় রাখার জন্য কিছু দোয়া করা যায়—


1. اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى أَهْلِي وَارْزُقْنِي حُسْنَ الْمُعَاشَرَةِ

“হে আল্লাহ! আমাকে আমার পরিবারের ব্যাপারে সাহায্য করুন এবং সুন্দর আচরণ করার তাওফিক দান করুন।”


2. رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ

(সূরা ইবরাহীম: 40)

“হে আমার রব! আমাকে এবং আমার সন্তান-সন্ততিকে নামাজ কায়েমকারীর অন্তর্ভুক্ত করুন, হে আমাদের রব! আমার দোয়া কবুল করুন।”


🌸 হিকমত

প্রতিটি স্ত্রীর জন্য আলাদা সময় ও মর্যাদা নিশ্চিত করা পরিবারে ভালোবাসা ও শান্তি বৃদ্ধি করে।


স্ত্রীদের মাঝে অবিচার করলে শুধু দুনিয়ায় নয়, আখিরাতেও ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে।


যে স্বামী ন্যায়পরায়ণ, তার জন্য জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।


⚖️ উপসংহার


একই বিছানায় দুই স্ত্রী নিয়ে ঘুমানো ইসলামসম্মত নয়।


এটি স্ত্রীর অধিকার নষ্ট করা এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।


রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিটি স্ত্রীকে আলাদা সময় ও মর্যাদা দিয়েছেন—এটাই সুন্নাহ।


👉 তাই একজন মুসলিম স্বামীর উচিত, প্রতিটি স্ত্রীর জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করা, তাদের ব্যক্তিগত মর্যাদা রক্ষা করা এবং ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখা।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url