মানুষের উৎপত্তি কোথা থেকে

  

মানুষের উৎপত্তি কোথা থেকে

মানুষের উৎপত্তি কোথা থেকে

যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে একটা ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে, আদম (আ) ও বিবি হাওয়া পৃথিবীর আদি মানব-মানবী। তার আগে পৃথিবীতে আর কোন মানুষ ছিল না। একথা একশত ভাগ সত্য এ ভাবে যে, আদম (আ) ছিলেন পৃথিবীর প্রথম খেলাফত ধারী মানুষ এবং হাওয়া ছিলেন তাঁর সঙ্গীনী। তাঁদের ছিল ইচ্ছাশক্তির স্বাধীনতা। 

তাঁরা ন্যায়-অন্যায় যাই করুক না কেন, ফেরেশতাগণের ছিল তাঁদের কর্মের আনুগত্য করার হুকুম ৷ কিন্তু তাঁদের আগেও পৃথিবীতে নিম্নধাপের মানুষ বসবাস করত। তারা ছিল বন্য, বর্বর, পশু শ্রেণীর জীব আত্মার মানুষ। তাদের পরম আত্মা ছিল না। তাদের ছিল না ভাষা জ্ঞান এবং ছিল না ইচ্ছা শক্তির স্বাধীনতা। 

তারা অন্যায় ও রক্তারক্তি করলেই তাদেরকে ফেরেশতাগণ আযাব-গজব দিয়ে শাস্তি দিত। তারা এতই বর্বর ছিল যে, তারা পরস্পর সর্বদাই রক্তারক্তি ও ঝগড়া-বিবাদে লেগে থাকত। আল কোরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে এ ধরনের মানুষের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

হে রাসূল (স্মরণ করুন) যখন আপনার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, আমি পৃথিবীতে খলিফা পাঠাচ্ছি। তখন তারা বলল, আপনি কি এমন কাউকে নিয়োগ করতে চান, যে সেখানে ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং খুনাখুনি করবে? আমরাই তো আপনার তাসবীহ ও তাকদীস করছি। তখন আল্লাহ বলেন আমি যা জানি তোমরা তা জান না।” (সূরা বাকারাহ)

মানুষ কোথা থেকে এলো

ফেরেশতাগণ পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া কোন কথাই বলতে পারে না। তাদেরকে কোন কাজের দায়িত্ব দেয়ার আগে সে সম্পর্কে পূর্বেই জ্ঞান দিয়ে দিতে হয়। ফেরেশতাগণের পূর্ব অভিজ্ঞতার বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, আদমের আগেও পৃথিবীতে বন্য ও বর্বর পশু শ্রেণীর মানুষ বসবাস করত। বর্তমানে পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে কোথাও পশু শ্রেণীর মানুষ বন-

জঙ্গলে বাস করতে দেখা যায় না। তাই প্রশ্ন জাগতে পারে এদের প্রজাতি গেল কোথায়? কিন্তু নিম্নের আয়াত থেকে এদের প্রজাতির যে বিলুপ্তি ঘটেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

“তিনি (আল্লাহ) চাইলে তোমাদেরকে বিলুপ্ত করতে পারেন এবং তিনি যাদেরকে চাইবেন, উত্তরাধিকারী হিসেবে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন-ঠিক যেভাবে অন্য মানুষের বংশধর হতে তোমাদের উদ্ভব ঘটিয়েছেন।” (৬: ১৩৩)

মানুষের উৎপত্তি কোথা থেকে বিস্তারিত

ধর্ম ও বিজ্ঞান পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব নিয়ে নিজ নিজ পরিসরে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছে। গবেষণাহীন ধর্মীয় ব্যাখ্যাতে যেমন রয়েছে প্রচুর কুসংস্কার তেমনি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ডারউইনের বিবর্তনবাদে রয়েছে মনগড়া তথ্য।

এর ফলে ধর্ম ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে চলছে বিতর্ক ও বাদানুবাদ। কিন্তু আধুনিক কালের গবেষণাধর্মী ধর্মীয় ব্যাখ্যায় যেমন জীবনের সাংগঠনিক উদ্দেশ্যমুখী বিবর্তনের পক্ষে রায় পাওয়া যায় তেমনি বিজ্ঞানের সর্বশেষ গবেষণায়ও সে সত্যের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু এরপরও আদম (আ) ও বিবি হাওয়ার দুনিয়াতে আবির্ভাব নিয়ে এখনও কোন সঠিক তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ সাংগঠনিক বিবর্তনের রূপটা কেমন ছিল, কোন পদ্ধতিতে তাঁরা পৃথিবীতে আসলেন তার কোন উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

ডঃ মরিস বুকাইলি তাঁর লেখা

ডঃ মরিস বুকাইলি তাঁর লেখা “মানুষের আদি উৎস” বইয়ে সাংগঠনিক বিবর্তনের পক্ষে জোরালোভাবে সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি সাংগঠনিক বিবর্তনের পদ্ধতিটা কোন ধরনের ছিল তা বলেননি। সম্প্রতি প্রকাশিত “মানুষ ও মহাবিশ্ব” গ্রন্থে “বিবর্তন সম্পর্কে জোরালো সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, “বিবর্তনবাদ একটা ভাল তত্ত্ব।

সম্ভবতঃ মানুষ (তথাকথিত আধুনিক মানুষ) বাদে অন্যান্য সব প্রাণী বিবর্তনের মাধ্যমেই আবির্ভূত হয়েছিল।” পৃষ্ঠা-৯১

ঐ বইয়ের ৯৭ পৃষ্ঠায় লেখা আছে- “যাহোক আদম ও হাওয়া জান্নাত থেকে এসেছিল ধরে নিলে, বিবর্তনবাদের সাথে কোন বিরোধ নেই বরং পূর্বে বর্ণিত সূরা নূর-এর ৪৫ নং আয়াত বিবর্তনবাদের স্বপক্ষে ইঙ্গিত দেয়। সম্ভবত মানুষ বাদে পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী আল্লাহ বিবর্তনের মাধ্যমেই সৃষ্টি করেছেন।

এখানে উল্লেখ করতে হয় যে, এ বইয়ের লেখক ডারউইনের বিবর্তনবাদের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। মূলতঃ ডারউইনের বিবর্তনবাদ প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে রায় দেয়। এ থেকে স্রষ্টার অভিব্যক্তির কোন প্রকাশ পাওয়া যায় না। তবে বিবর্তন যে হয়েছে এটা সত্য। 

এ বিবর্তন স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন। এ বিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবীর সব প্রাণীসহ আধুনিক মানুষেরও আবির্ভাব যে ঘটেছে এতে কোন সন্দেহ নেই ৷ আল- কোরআনের বেশ কিছু আয়াত থেকে বিবর্তনের স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

নিম্নে আয়াতগুলো উপস্থাপন করা হলো- “আল্লাহ সমস্ত প্রকারের প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে।” (সূরা নূর: আয়াত ৪৫)

“(আল্লাহ) সেই একক সত্তা যিনি মানুষকে পানি হতে গঠন করেছেন।” (৪ : ১)

‘আমরা মানুষকে গঠন করেছি কর্দম থেকে, নকশা কাটা নরম মাটি থেকে।” (সূরা হিজর আয়াত ২৬)

“তিনিই সেই আল্লাহ, যিনি সমস্ত জিনিসকে সুন্দরভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষের সৃষ্টি শুরু করেছেন কাদা মাটি হতে এবং পরবর্তী বংশধরদের সৃষ্টি করেছেন ঘৃণিত পানির নির্যাস থেকে। অতঃপর ইহাকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন এবং তার মধ্যে স্বীয় আত্মা ফুঁকে দিয়েছেন এবং তোমাদের জন্য কৰ্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণসমূহ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা অতি অল্পই কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।” (৩২: ৭-৯)

“আমরা গঠন করেছি মানুষকে কাদা মাটির বিশুদ্ধ সারভাগ থেকে।” (২৩-১২) “তোমরা ভয় কর সেই প্রভুকে যিনি এক আত্মা সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তা হতে সৃষ্টি করেছেন তার সহধর্মীনীকে এবং সেই দুইজন (আদম এবং হাওয়া) হতে তিনি সকল পুরুষ ও নারীকে সারা দুনিয়া ছড়িয়ে দিয়েছেন।” (সূরা নিসা: আয়াত ১)

মানুষের পূর্বপুরুষ কারা

ডারউইন জীবের আঙ্গিক গঠন ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে উদ্ভব হওয়ার ব্যাখ্যা করেছেন এবং তিনি “যোগ্যতমের টিকে থাকা” পদ্ধতির মাধ্যমে বুঝাতে চাচ্ছেন যে, প্রকৃতি নিজেই সবলদের সংরক্ষণ করে এবং দুর্বলদের বাদ দিয়ে দেয়। অর্থাৎ দুর্বলদের বিলুপ্তি ঘটে এবং সবলরা টিকে থাকে। 

কিন্তু আল্লাহ বলেন, তিনি চাইলেই বিলুপ্তি ঘটে এবং তিনি সে স্থান নতুনদের মাধ্যমে পূরণ করেন। সুতরাং কোন প্রজাতির বিলুপ্তি ও নতুনের উদ্ভব স্রষ্টার ইচ্ছার উপরই নির্ভরশীল এবং তিনিই প্রত্যেক জিনিসের আকার, আকৃতি, স্বভাব দান করেন। 

তাই ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী বিবর্তন ভিন্ন প্রকৃতির ধারণা দিয়ে থাকে। দু'টি ধারণা ভিন্ন হলেও আদম ও হাওয়ার জড়দেহ যে পৃথিবীর জীব মানুষের (বন্য মানুষের) থেকে উদ্ভব হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই।

অপর দিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গবেষণা ছাড়াই আদম ও হাওয়ার দুনিয়ায় আবির্ভাব সম্পর্কে এমন সব তথ্য আবিষ্কার করা হয়েছে, যার কোন সহীহ দলিল খুঁজে পাওয়া যায় না। নিম্নে মাসিক মদিনার মে, ২০০২ সংখ্যার ২৭নং পৃষ্ঠার এমনি একটি তথ্য তুলে ধরা হলো।

আদম পর্বত নামে খ্যাত

“আল্লাহ-তা'আলা প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ) কে কুদরতী হাতে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করে রূহ ফুঁকে দেন। অতঃপর আদমের (আ) সঙ্গিনী মানব জাতির আদি মাতা মা হাওয়াকে আদমের পাঁজর থেকে সৃষ্টি করেন। তাঁরা তখন জান্নাতে ছিলেন। পরে আল্লাহর একটি নির্দেশ লঙ্ঘন করে নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করার অপরাধে জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হন। 

জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হবার ফলে আদম (আ) অবতারিত হন সন্দ্বীপে, বর্তমান শ্রীলংকায়। আদম (আ) অবতারিত হয়েছিলেন একটা পর্বতের ওপর যেটি আদম পর্বত নামে খ্যাত সে পর্বতের শীর্ষ দেশে বিরাট আকৃতির একটা মানুষ্য পদচিহ্ন আজও অংকিত আছে। 

পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি লম্বা ও দুই ফুট ছয় ইঞ্চি চওড়া পদচিহ্ন খানা হযরত আদমের বলে নির্ভরযোগ্য তফসীর ও ইতিহাসের গ্রন্থে উল্লেখিত রয়েছে।” (মাসিক মদীনা মে, ২০০২)

মানুষের উৎপত্তি  ক্রমবিকাশ

আবার “আদম ও শয়তান' নামক গ্রন্থে আদমকে দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গার মাটি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে বর্ণনা রয়েছে। মূলতঃ এসব বর্ণনার কোরআন ও হাদীসের কোন দলিল নেই। এগুলো পৌরণিক কাহিনীর মতো। 

যা আল-কোরআন নাজিলের আগে মানুষের বদ্ধমূল ধারণা। মাসিক মদিনার লেখক যে তথ্য দিয়েছেন, সেখানে তিনি লিখেছেন আদমকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করে বেহেশতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু লেখকের জানা উচিত ছিল যে, বেহেশতে কখনো মাটির জিনিস রাখার স্থান নয়। আর আদমের বুকের পাঁজর দিয়ে তার সঙ্গীনি সৃষ্টির কথাটি কোরআন, হাদীসে, কোথাও নেই। তবে এ ধরনের কথা বাইবেলে উল্লেখ আছে।

এ প্রসঙ্গে বলা যায় পরম আত্মার আদম ও হাওয়া জড়দেহ মাটির সারভাগ দিয়েই জননযন্ত্রের মাধ্যমে উদ্ভব ঘটানো হয়। যখন তাদের জড়দেহ স্রষ্টার সাংগঠনিক উদ্দেশ্যমূখী বিবর্তন প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত রূপ নেয়, তখন পরম আত্মার আদম ও হাওয়া তাদের জড়দেহে স্রষ্টার নির্দেশে প্রবিষ্ট হয়।

একটা মানুষ যখন মারা যায় তখন আমরা বলি “অমুক” সাহেব মারা গেছেন। অথচ তার জড়দেহ দুনিয়াতেই থাকে। কিন্তু জড়দেহ আসল মানুষ হলে, আমরা কখনো এ কথা বলতাম না। মূলতঃ যে মানুষের আসল পরিচয় বহন করে সে সকলের অজান্তেই চলে যায়।

এ অর্থে আদম ও হাওয়ার বেহেশতে থাকার ব্যাপারটি পরম আত্মার সাথে সম্পর্কিত। নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ ও জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার বিষয়টি তাদেরকে শয়তান সম্পর্কে ঐশী জ্ঞান দিয়ে দেয়ার সাথে সম্পর্কিত। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায় বর্তমানে মাতৃগর্ভে যেভাবে সন্তানের রূহ দিয়ে দেয়া হয়, আদম ও বিবি হাওয়ার ক্ষেত্রে একই রীতি প্রযোজ্য ছিল।

তাই শ্রীলংকায় ও জিদ্দায় তাঁদের দু'জন অবতারিত হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। সূরা আনআমের ১৩৩নং আয়াতে যেমন মানব প্রজাতির রূপান্তরের ইঙ্গিত পাওয়া যায় তেমনি পূর্বের কাঠামোর মানব প্রজাতির বিলুপ্তির ধারণা রয়েছে। রূপান্তর ও বিলুপ্তি দু'টিই জেনেটিক পর্যায়ে ঘটে।

মানুষ কোন শ্রেণীর প্রাণী

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আদম (এক আত্মা) থেকে যেহেতু তার সঙ্গীনী সৃষ্টি করা হয়েছে, সেহেতু আদম ও হাওয়া একই জনন যন্ত্ৰ (জরায়ু) থেকে জন্ম হয়েছিল। আমার গবেষণালব্ধ তথ্য আমাকে এমনি ধারণা পোষণ করতে বাধ্য করেছে। 

অথচ এ তথ্য কোরআন ও বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়, তবে পূর্বের প্রচলিত তথ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত চিন্তা। আদম ও হাওয়ার জড়দেহ যে পৃথিবী মাটির সারভাগ দিয়ে পৃথিবীতেই উদ্ভব ঘটানো হয়েছে, তা নিম্নের আয়াত থেকে অনুধাবন করা যায় ৷

“বরং আল্লাহ তোমাদেরকে উদ্ভুত করেছেন ভূমি হতে উদ্ভিদের ন্যায়। অতঃপর তিনি উহাতে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেবেন এবং তিনি তোমাদেরকে সেখান থেকে বের করবেন-এক (নতুন) জাত হিসাবে।” (সূরা নূহ: আয়াত ১৭ ও ১৮)

তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের উদ্ভব ঘটিয়েছেন জমিন থেকে

“তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের উদ্ভব ঘটিয়েছেন জমিন থেকে।” (১১ : ৬১) “(আল্লাহ) মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন কর্দম থেকে।” (৩২ : ৭) মাটি থেকে বীজ বা কাণ্ডের মাধ্যমে নতুন গাছের জন্ম হয়। এর জন্য মাটিতে (জমিতে) চাষ দিতে হয় অথবা চাষ ছাড়াও গাছ জমিতে হতে পারে। 

তবে উভয় ক্ষেত্রে বীজ বা কাণ্ডের প্রয়োজন। অর্থাৎ উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য মাটি, পানি, বীজ লাগবেই। এ তিনটি উপাদান একত্র হলেই উদ্ভিদ জন্মাবে, এটাই রীতি। আর মানুষ জন্মানোর জন্যে লাগে নারীর জননযন্ত্র (সুরক্ষিত স্থান), শুক্রকীট আর ডিম্বাণু। একটা শুক্রকীটকে যদি মাটিতে পুঁতে রাখা হয় তবে সেখান থেকে মানুষ জন্মাবে, এমন কোন প্রক্রিয়া পৃথিবীতে চালু নেই। 

তবে মাটি পানির সংমিশ্রণে সৃষ্টি এককোষী অ্যামিবার ন্যায়, শুক্রকীট সৃষ্টি করে, সেটি যদি কোন সুরক্ষিত স্থানে (জরায়ুতে) সংস্থাপন করা হয় তবে সেখান থেকে মানুষ তৈরী পারে। এ ধরনের রীতি বা প্রথা মানুষের ক্ষেত্রে চালু আছে। এখানে ভূমি থেকে মানুষের উদ্ভূত হওয়ার ব্যাপারটি অনেকটা এরূপ। কিন্তু এ ব্যাপারটাকে অনেকে অন্য ভাবে চিন্তা করছেন। 

তাদের ধারণা মাটি থেকেই যেহেতু মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাই মাটির মূর্তি বানানো ছাড়া মানুষ সৃষ্টি করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাদের এ ধরনের ধারণা কোরআন ও বিজ্ঞানের পরিপন্থী। তবে আমার বর্তমান তথ্য অতীতের সকল তথ্যের ব্যতিক্রম। তাই পাঠকের মনে বিতর্ক ও প্রশ্নের ঝড় উঠতে পারে। সে দিক বিবেচনা করে আমি কিছু সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর এ অধ্যায়ের সাথে সংযোগ করেছি। নিম্নে সম্ভাব্য প্রশ্ন ও তার উত্তর দেয়া হলঃ

প্রশ্নঃ আদমের আগে পৃথিবীতে মানুষ কোন প্রজাতির ছিল কি?

উত্তরঃ আদমের আগেও পৃথিবীতে পশু শ্রেণীর মানুষের প্রজাতি ছিল। এরা ছিল জীব আত্মার বন্য ও বর্বর মানুষ। তাদের মস্তিষ্কের আকৃতি ছিল বর্তমান মানুষের চেয়ে কিছুটা ছোট। তাই তাদের জ্ঞান-বুদ্ধি, চিন্তাশক্তি ছিল স্রষ্টার মনোনিত প্রতিনিধিদের তুলনায় অনেক কম। 

তারা ছিল প্রতিহিংসাপরায়ণ, ঝগড়াটে স্বভাবের। পাহাড়ের গুহায়, বড় বড় গাছের আড়ালে দলবদ্ধভাবে তারা বাস করত। বর্তমান মানুষের আকার-আকৃতির সাথে তাদের বহুলাংশে মিল ছিল।

প্রশ্নঃ পশু শ্রেণীর মানুষের প্রজাতি কি এখনও পৃথিবীতে আছে?

উত্তরঃ আল কোরআনের বক্তব্য অনুসারে বুঝা যায় মানব প্রজাতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে রূপান্তর যেমন ঘটেছে তেমনি তাদের ক্ষেত্রে বিলুপ্তিও ঘটেছে। সাথে সাথে নতুন মানব প্রজাতি তাদের স্থান দখল করেছে। কিন্তু পশু শ্রেণীর মানুষের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটেছে কি না তা জোর দিয়ে বলা যাবে না। 

কারণ এখনও পার্বত্য এলাকার পাহাড়ে-জঙ্গলে কিছু কিছু উলঙ্গ- অসভ্য মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়। তারা সভ্য জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এ ধরনের মানুষ আমাদের দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও রুশ ককেশাস অঞ্চলের জাদ্দান পার্বত্য এলাকায় বসবাস করতে দেখা যায়। এরা আদিম পশু শ্রেণীর মানুষের বংশধর।

প্রশ্নঃ পশু শ্রেণীর মানুষের রূপান্তর  বিলুপ্তি কি প্রক্রিয়ায় ঘটেছে?

উত্তর: মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পশু শ্রেণীর মানুষের কিভাবে রূপান্তর ও বিলুপ্তি ঘটিয়েছেন তা তিনিই ভাল জানেন। আমরা আধুনিক বিজ্ঞানের জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং-এর গবেষণালব্ধ ধারণা থেকে বলতে পারি যে, Mutation প্রক্রিয়ায় এক জীব থেকে অন্য জীবের উদ্ভব ঘটেছে। অপর দিকে Genetic drift এর মাধ্যমে যে কোন প্রজাতির প্রজনন ক্ষেত্রে সহায়ক জিন উধাও হয়ে ঐ প্রজাতির চির দিনের জন্য বিলুপ্তি ঘটতে পারে।

প্রশ্নঃ জীব  উদ্ভিদ কি বিবর্তনের মাধ্যমেই উন্নতর প্রজাতিতে রূপ নিয়েছে?

উত্তরঃ বিবর্তন শব্দটা শুনলেই হয়ত আমরা মনে করি এটা ডারউইনের তথাকথিত বিবর্তনবাদ। মূলত: জীব ও উদ্ভিদ ডারউইনের বিবর্তনবাদের মাধ্যমে উন্নতর প্রজাতিতে রূপ নেয়নি। কারণ ডারউইনের বিবর্তনবাদ অদ্যাবধি কোন বিজ্ঞ জীব বিজ্ঞানীর মাধ্যমেও সঠিক বলে প্রমানিত হয়নি। 

তবে সৃষ্টি প্রক্রিয়াতে একটা সুনির্দিষ্ট সাংগঠনিক বিবর্তন পদ্ধতি অবশ্যই চালু ছিল। কারণ আল কোরআনের বিভিন্ন আয়াতেও রয়েছে বিবর্তন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। তবে এ বিবর্তন স্রষ্টার মহতী পরিকল্পনার মাধ্যমেই সংগঠিত হয়েছে। মূলতঃ জীব দেহের কাঠামোগত পরিবর্তন ও রূপান্তর স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তনের ফসল।

প্রশ্নঃ স্রষ্টার উদ্দেশ্য মূখী সাংগঠিক বিবর্তন পদ্ধতি নতুন উন্নতর প্রজাতির জীবের উদ্ভব ঘটেছে কি প্রক্রিয়ায়?

মানুষ কোথা থেকে এলো class 6

উত্তরঃ পৃথিবীতে জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং ও আড় পরাগায়ণের মাধ্যমে উদ্ভিদের যেমন উদ্দেশ্য প্রণোদিত রূপান্তর ঘটানো সম্ভব হয়েছে তেমনি জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং ও ক্লোনিং-এর মাধ্যমে জীবেরও উদ্দেশ্য প্রণোদিত রূপান্তর ঘটানো সম্ভব হয়েছে। আড় পরাগায়ণ হলো পরোক্ষ পদ্ধতি। 

আর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং হলো প্রত্যক্ষভাবে একটি জীব বা উদ্ভিদ থেকে একটি জিনকে আলাদা করে অন্য একটি জীব বা উদ্ভিদের কোষে প্রবিষ্ট করিয়ে সমূদয় জীব বা উদ্ভিদকে নতুনভাবে সৃষ্টি করা। এ ধরনের প্রযুক্তি মানুষেরই আবিষ্কার। 

মানুষ যেখানে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জীব বা উদ্ভিদের রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে স্রষ্টার পক্ষে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটানো অসম্ভব কিছু নয় বরং তা স্রষ্টার পক্ষে খুবই সহজ ব্যাপার। স্রষ্টা যখনি পূর্বতন প্রজাতি থেকে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটাতে চেয়েছেন, তখন সৃষ্টি প্রক্রিয়ার তিন নম্বর রীতি কাজে লাগিয়েছেন। 

এ প্রক্রিয়ায় যৌন প্রজনন রীতি বহির্ভূত পন্থায় পিতা ছাড়াই কোন না কোন মাতৃ-গর্ভে ডিম্বাণুর সাথে পরোক্ষভাবে উৎপন্ন শুক্রকীটকে নিষিক্ত করে ভ্রূণ রূপান্তরের মাধ্যমে পুরাতন প্রজাতির কাঠামো পরিবর্তন করে নতুনের উদ্ভব ঘটিয়েছেন। এখানে পরোক্ষভাবে উৎপন্ন শুক্রাণুকীট কাদা মাটির সারভাগ থেকে স্রষ্টার নির্দেশেই উৎপন্ন হয়।

টেষ্ট টিউব বেবি বা জীবের ক্লোনিং

এটি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতির মতই একটা প্রক্রিয়া। টেষ্ট টিউব বেবি বা জীবের ক্লোনিং এর ক্ষেত্রে যেমন জননযন্ত্র বা জরায়ুর প্রয়োজন তেমনি সৃষ্টিকর্তাও নতুন প্রজাতি উদ্ভব ঘটানোর সময় পুরাতন প্রজাতির নারীর জননযন্ত্র বা জরায়ু ডাইছ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। 

মূলত: স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন পদ্ধতিটি অনেক ক্ষেত্রে এমনই মনে হয়। সম্ভবত: এ পদ্ধতিতে জিন রূপান্তরের মাধ্যমে পূর্বতন প্রজাতির মানুষের জননযন্ত্র থেকে নতুন প্রজাতির আধুনিক মানুষের উদ্ভব ঘটিয়েছেন।

প্রশ্নঃ আদমের (আগে পৃথিবীতে পশু শ্রেণীর মানুষ যে ছিল তার প্ৰমাণ কি?

উত্তরঃ পৃথিবীতে আদমের আগেও যে নিম্ন ধাপের পশুর শ্রেণীর বর্বর মানুষের প্রজাতি ছিল, সেটি প্রমাণের উৎস হলো আল কোরআন; জীবাশ্ম বিজ্ঞান বা নৃ-বিজ্ঞান এবং জিন তথ্য ও দর্শন বিজ্ঞান মহাবিজ্ঞানময় গ্রন্থ আল-কোরআনের কিছু সূরার বিভিন্ন আয়াতে পুরাতন মানব প্রজাতির বিলপ্তি এবং তাদের থেকে নতুন প্রজাতির মানুষের উদ্ভব ঘটানোর ইঙ্গিত রয়েছে। সেগুলো হলো সূরা দাহর ৭৬ : আয়াত ২৮ এবং সূরা আনআম ৬ : আয়াত ১৩৩।

মানুষ কোথা থেকে এলো class 6

এ আয়াতগুলো থেকে বুঝা যায় আল্লাহ পৃথিবীতে খেলাফতের উপযোগী মানুষ পাঠানোর জন্য মহা সাংগঠনিক পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে মানব প্রজাতির দেহাবয়বগত কাঠামোর বার বার রূপান্তর পরিবর্তন ও সংশোধন করেছেন। 

চূড়ান্ত পর্যায়ে পরম আত্মার আদম (আ) কে খেলাফতের দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীর দেহাবয়বগত বাহন দিয়ে মাটির ভুবনে প্রেরণ করলেন। সৃষ্টিকর্তা আদম (আ)-এর দেহাবয়বগত এই বাহন পৃথিবীর পশু শ্রেণীর মানব প্রজাতির বংশধর থেকেই যে উদ্ভব ঘটিয়েছেন তার সাক্ষী হলো আল কোরআন। এ বইয়ের বিভিন্ন স্থানে কোরআনের ঐ আয়াতগুলোর উল্লেখ রয়েছে। 

অপর দিকে সূরা বাকারার কয়েকটি আয়াতের (৩০: ৩৭) বক্তব্যে ফেরেশতাগণের পূর্ব অভিজ্ঞতার ধারণা থেকেও আদমের আগেও যে পশু শ্রেণীর মানুষের অস্তিত্ব ছিল তার সন্ধান মেলে। ফেরেশতাগণ পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকেই কথা বলে থাকে, তাই 'আল্লাহ যখন পৃথিবীতে খলিফা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেরেশতাগণকে অবহিত করলেন তখন তারা পশু শ্রেণীর মানুষের দোষ-গুণ বর্ণনা করলেন। আল কোরআনের সূরা বাকারার কয়েকটি আয়াত থেকে একথাই প্রমাণ হয় যে, আদমের আগেও পৃথিবীতে বর্বর পশু শ্রেণীর মানুষ ছিল।

মানুষের পূর্বপুরুষ কারা

বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগে আধুনিক জীবাশ্ম বিজ্ঞানীগণ মাটির নীচের অতি প্রাচীন কালের মানুষের ক্ষয়প্রাপ্ত হাড়ের কঙ্কালের নমূনা পরীক্ষা- নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ পেয়েছেন যে, আদমের আগেও পৃথিবীতে মানুষের অনেক প্রজাতি ছিল। সেগুলোর মধ্যে যথাক্রমে প্রাইমেট, হোমোহ্যাবিলাস, হোমো ইরেকটাস, হোমো স্যাপিয়ানস ইত্যাদি প্রসিদ্ধ। এদের মধ্যে প্রাইমেট প্রজাতি ছিল বানরের চেয়ে বেশী বুদ্ধিমানের।

হোমো স্যাপিয়েন্স গোত্রের মানুষ

আবার হোমো-স্যাপিয়ানস গোত্রের মানুষ ছিল বর্তমান মানুষের চেয়ে কম বুদ্ধিমানের। তবে আমাদের মতো আধুনিক মানুষের শারীরিক কাঠামোর সাথে তাদের দেহাবয়বগত গঠনের ছিল অনেক মিল। সে কারণে অনুমান করা হয় হোমো-স্যাপিয়ানস গোত্রের মানব প্রজাতির 'জিন' রূপান্তরের মাধ্যমে বর্তমান মানুষের আদি পিতা মাতার উদ্ভব হয়েছে। 

এখানে হোমো স্যাপিয়ানস শব্দের অর্থ-জ্ঞানী মানুষ। (হোমো-মানুষ, স্যাপিয়ানস-জ্ঞানী) এ জ্ঞানী মানুষের থেকেই উদ্ভব হয়েছে খেলাফতধারী মানুষের। জ্ঞানী মানুষের মস্তিষ্কের কোঠরের ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১২০০ সিসি। অপরদিকে খেলাফতধারী মানুষের মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা ১৪০০-১৬০০ সিসি। জীবাশ্ম বিজ্ঞানের এসব তথ্য প্রমাণ করে যে, আদমের (আ) আগেও পুথিবীতে পশু শ্রেণীর মানুষ ছিল।

প্রতিটি প্রজাতির বংশগতিরধারা বজায় থাকে জিনের মাধ্যমে। এ জিনের থাকে ডি.এন.এ. কোডে । যা বংশগতির ধারার তথ্য বহন করে।

মানুষের উৎপত্তি কোথা থেকে হলো?

শারীরিক কাঠামো থেকে নিয়ে চারিত্রিক দোষগুণের তথ্য “জিনের” ডি.এন.এ. (DNA) কোড মওজুদ থাকে। পুরুষের শুক্রকীটের জিন ও নারীর ডিমাণুর জিন সংমিশ্রণের ফলে মাতৃ-গর্ভে ভ্রূণ রূপান্তরের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ মানব শিশুর আকার আকৃতি গঠিত হয়। 

এদের মধ্যে থাকে মা বাবার দেহগত ও চরিত্রের মিল। পৃথিবী জুড়ে মানুষে মানুষে চলছে রক্তারক্তি আর যুদ্ধবিগ্রহ। গোত্রে গোত্রে যেমন চলছে মারামারি কাটাকাটি তেমনি রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে চলছে উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রতিহিংসার রোষানল। 

মানুষ তৈরী করছে মানুষকে মারার জন্য ভয়ানক আগ্নেয়াস্ত্র। মানুষের সংস্কৃতি চাল-চলন পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। মানবের চরিত্রের এসব গুণাগুণের উৎস কি? এর উত্তরে অবশ্যই বলা যায়, পশু শ্রেণীর মানুষের জিনের ডি.এন.এ. কোড বহন করে এনেছে এসব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আধুনিক মানুষের দেহে।

মানুষের উৎপত্তি কোথা থেকে পশু শ্রেণীর মানুষের থেকে

আধুনিক মানুষ যে পশু শ্রেণীর মানুষের থেকে উদ্ভব হয়েছে, তার প্রমাণ দর্শন ও বিজ্ঞানের তথ্য নির্ভর যুক্তির মাধ্যমেও দেয়া সম্ভব। আমরা দেখে আসছি পশুর দেহ থাকে লোমে আবৃত। লোমযুক্ত পশুগুলো শীত নিবারণ করে লোম দিয়ে। 

আর লেজ দিয়ে পশুরা মশা-মাছি তাড়ায় এবং যৌনাঙ্গ ঢেকে রাখে। কিন্তু আধুনিক মানুষের শরীরে যে ধরনের লোম (যৌনাঙ্গের এরিয়া ব্যতীত) থাকে এর দ্বারা শীত নিবারণ করা কঠিন। তাই আধুনিক মানুষ কাপড় পরিধান করে। এর মাধ্যমে তারা শীত নিবারণ ও যৌনাঙ্গ ঢেকে রাখে। 

আদিম মানুষ কাপড় বুনতে জানত না। শীতের দিনে তারা পশুর চামড়া, গাছের ছাল এবং পাহাড়ের গুহায় বসবাস করে শীত নিবারণ করত। কিন্তু গরমের দিনে উলঙ্গই থাকত। তখন তাদের যৌনাঙ্গগুলো ঢেকে থাকত পিউবিছ হেয়ার (Pubis hair) দিয়ে। সমস্ত শরীরের চুল ছোট থাকলেও যৌনাঙ্গের চারপাশের চুলগুলো থাকত লম্বা। এতে সহজে যৌনাঙ্গগুলো ঢেকে থাকত।

মানব প্রজাতি পশু শ্রেণীর মানুষ থেকে উদ্ভব হয়েছে

বর্তমান মানব প্রজাতি পশু শ্রেণীর মানুষ থেকে উদ্ভব হয়েছে বলেই এখনও আমাদের গোপ্তাঙ্গের চুলগুলো লম্বা হয়। এই চুলগুলো পশু শ্রেণীর উলঙ্গ মানুষের প্রয়োজন থাকলেও বর্তমান মানুষের কোন প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে বরং যৌনাঙ্গের চুলগুলো একটা বাড়তি ঝামেলা। কিন্তু পশু শ্রেণীর মানুষের 'জিন' থেকে যেহেতু উত্তরাধিকার সূত্রে আমাদের মাঝে এ 'জিন' চলে এসেছে তাই এই অবাঞ্চিত চুলগুলো থেকে আমরা মুক্ত হতে পারিনি। এসব তথ্যের আলোকে বলা যায় আদমের আগেও পৃথিবীতে পশু শ্রেণীর মানুষ ছিল।

পৃথিবীতে খলিফা পাঠানোর সিদ্ধান্ত

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যখন পৃথিবীতে খলিফা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তখন ফেরেশতাগণকে কেন অবহিত করেছিলেন? এর মূল কারণ হলো, পূর্বে যে পশু শ্রেণীর মানুষ-পৃথিবীতে ছিল তাদের উপর কর্তৃত্ব করার অধিকার ছিল ফেরেশতাদের। তাই খেলাফতধারী মানুষের উপর থেকে ফেরেশতাগণের কর্তৃত্ব রহিত করার জন্যই তাদেরকে অবহিত

করলেন। এ সব সূত্র থেকে একথাই প্রমাণ হয় যে, আদমের আগেও পৃথিবীতে নিম্ন ধাপের পশুর শ্রেণীর মানুষের প্রজাতি ছিল।

প্রশ্নঃ আদম ( বিবি হাওয়াকে বেহেশত থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে কথাই স্বীকৃততাহলে তাঁরা মাতৃগর্ভে জন্ম নেয় কি করে?

উত্তর: এ প্রসঙ্গে একটা উদাহরণ দেয়া হল-সেটি এরূপ, একটা অত্যাধুনিক রিমোট কন্ট্রোল গাড়ী কোন এক কারখানায় তৈরী করা হয়েছে। তাতে তৈল, মবিল সব কিছু মওজুদ আছে এবং সুইচও দেয়া আছে। কিন্তু রিমোট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটার মালিকের হাতে। 

তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত রিমোট কন্ট্রেল ট্রান্সমিটারের সুইচে টিপ না দিবেন ততক্ষণ পর্যন্ত গাড়ীটি চলবে না এটাই সত্য। অতঃপর যখন গাড়ী তৈরী সমাপ্ত হয়ে যায় তখন গাড়ীর মালিক রিমোট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটারের সুইচ টিপলে তখন গাড়ীটি সচল হবে এটাই স্বাভাবিক।

মানুষ কোথা থেকে এলো রিমোট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটারের উদাহরণ

আশ্চার্যের ব্যাপার রিমোট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটারের সুইচে টিপ দেয়ার পর গাড়ী চলতে থাকলেও এটি থেকে যে জিনিস বের হলো তা কিন্তু দেখা গেল না। মূলতঃ সে জিনিসটি না দেখা গেলেও, এ থেকে যে কোন একটা কিছু বের হয়েছে, এতে সন্দেহ নেই। 

সে জিনিসটি কি? মূলতঃ যে জিনিসটি বের হলো তাকে বলা হয় ইলেকট্রো ম্যাগনেটিভ ওয়েভ (তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গ)। এটাই গাড়ীটার প্রাণ বা জীবনি শক্তি বা চালিত শক্তি। এটা রিসিভ করেছে গাড়ী ভেতরের “রিমোট কন্ট্রোলে রিসিভার”। এটা না হলে যুগ যুগ ধরে গাড়ীটি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। তেমনি আদম ও বিবি হাওয়ার দেহ গাড়ী পৃথিবীর কোন না কোন ডাইছে, মাতৃথলির ডাইছে (জননযন্ত্রে) জন্ম হলেও প্রাণ বা জীবনি শক্তি প্রেরিত হয় বেহেশত থেকেই। 

কার্যতঃ এ জীবনি শক্তিই দেহ গাড়ীর মূল সত্তা। এ জীবনি শক্তি চলে গেলেই দেহ গাড়ী অচল হয়ে পড়ে। তখন আর সেটিকে ঠেলেও সচল করা যাবে না। সে অর্থে আদম ও বিবি হাওয়ার দেহ গাড়ী পৃথিবীতেই তৈরী হয়। আর প্রাণ বা জীবনি শক্তি প্রেরিত হয় বেহেশত থেকেই ৷

আরও পড়ুনঃ  ক্রোমোজোম কাকে বলে

প্রশ্নঃ এক আত্মা থেকে তার সঙ্গীনি এবং তাদের মাধ্যমে পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করে দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া হলো। দুনিয়ার ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়াটি কিভাবে সম্ভব?

উত্তরঃ প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের ডিম্বাশয় (Ovarys) থেকে দু'টি ডিম্বাণু (Ovum) বের হয়ে সেগুলো যদি পুরুষের শুক্রকীটের মাধ্যমে নিসিক্ত হয়ে দু'টি ভ্রুণ সৃষ্টির মাধ্যমে মায়ের জননযন্ত্রে (Uterus) প্রোথিত হয়, তবে এ প্রক্রিয়ায় সেখান থেকে দু'টি সন্তান হতে পারে। কিন্তু এখানে এক আত্মা বা একটি মাত্র জীবকোষের মাধ্যমে দু'টি সন্তান জন্ম হয়নি।

আবার দ্বিতীয় আর একটি প্রক্রিয়া হলো-নারীর একটি ডিম্বাণুর সাথে ঘটনাক্রমে দু'টি ভ্রূণে বিভক্ত হয়েও দু'টি সন্তান হতে পারে। এ ক্ষেত্রেও এক আত্মা বা একটি মাত্র জীবকোষের (শুক্রকীট) থেকে দু'টি সন্তান হয়নি।

শুক্রকীটের মাধ্যমে নারীর একটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে 

অপরদিকে তৃতীয় আর একটি প্রক্রিয়া হলো-একটি মাত্র জীবকোষ বা একটি শুক্রকীটের মাধ্যমে নারীর একটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে স্রষ্টার নির্দেশে ঘটনাক্রমে বা বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে (Positive Information bit বা ধ্বনাত্মক তথ্যকণার বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে) সেটি দু'টি ভ্রুণে পরিণত হয়ে দু'টি সন্তান জন্ম হতে পারে।

এটিই হলো দুনিয়ার ক্ষেত্রে এক আত্মা বা একটি মাত্র জীবকোষ (শুক্রকীট) থেকে তার সঙ্গীনী পয়দা হওয়ার মূল প্রক্রিয়া। অতঃপর তাদের মাধ্যমেই পরবর্তিতে প্রজনন রীতিতে পুরুষ ও নারী সৃষ্টি হয়ে দুনিয়ায় ছড়িয়ে যায় ৷

অবশেষে

অতঃপর পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি যেন না ঘটে সে দিক চিন্তা করে সম্ভাব্য প্ৰশ্ন- উত্তর পর্বের এখানেই ইতি টানা হলো। পরবর্তি পর্যায়ে সংস্করণ করা হলে সরাসরি পাঠকের প্রশ্নোত্তর সংযোগ করে ছাপানোর আশা রাখি। 

তাই পাঠক মহলের কাছ থেকে আদম ও হাওয়ার আদি উৎস, দুনিয়ায় আগমন ইত্যাদির সম্পর্কে আমার দেয়া তথ্যের সাথে কারও দ্বিমত থাকলে সরাসরি আমার কাছে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তরসহ নতুন সংস্করণ বের করব এটাই আমার অঙ্গীকার।

সংগৃহীতঃ আদমের আদি উৎস
লেখকঃ আল মেহেদী

পোস্ট ট্যাগঃ

মানুষের উৎপত্তি কোথা থেকে
মানুষের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে
মানুষের উৎপত্তি
মানুষের উৎপত্তি কিভাবে
মানুষের অস্তিত্ব
মানুষের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে
আসমানের উপরে কি আছে
কোন মানুষ
ঈশ্বর কোথায় থাকে
মানুষের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
ফালতু কথা জিজ্ঞেস করেন কেন
কতো মানুষ
কোন মানুষের

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url