আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করার দৃষ্টান্ত

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়

হযরত আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এই আদেশ পাঠান, ‘তুমি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধের পোষাক পরে আমার কাছে এসো। যখন আমি অস্ত্র সজ্জিত হয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হই তখন দেখি তিনি ওযু করছেন। 

তিনি আমাকে বললেন, 'আমি তোমাকে এ জন্যে ডেকেছি যে, আমি তোমাকে এক যুদ্ধে পাঠাতে চাচ্ছি। আল্লাহ তোমাকে এই যুদ্ধ থেকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনবেন এবং তোমাকে গণিমতের মাল দেবেন। এছাড়া আমিও তোমাকে কিছু মাল পুরস্কার স্বরূপ দান করবো।'

আমি বলি, 'হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো সম্পদ লাভ করার জন্য হিজরত করিনি। কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে পাওয়ার জন্যই আমার হিজরত হয়েছিল।' তিনি বললেন, “আচ্ছা, ঠিক আছে। সম্পদ তো নেক মানুষের জন্য খুব ভাল জিনিস।” (মেশকাত)

  • ব্যাখ্যা: কেবলমাত্র আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহুই এ অবস্থা ছিল না। প্রত্যেক সাহাবীরই মনের অবস্থা এ রকম ছিল। তাঁরা যা কিছুই করেছেন, তা সবই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে করছেন। তাঁরা যা কিছু কোরবানী করেছেন তা আল্লাহর জন্যেই করেছেন। 
  • তাদের সামনে অন্য কোন উদ্দেশ্য আদৌ ছিল না। তাঁদের প্রত্যেক কাজের লক্ষ্য ছিল আখেরাতের পুরস্কার। যদি তা না হতো তাহলে আল্লাহর সাহায্য এভাবে পাওয়া যেতো না। এই জিনিসই রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভের পরও তাদের পথভ্রষ্ট হতে দেয়নি। তারা আর্থিক প্রাচুর্যের যুগেও সাদাসিধা জীবন যাপন করতেন।

সচ্ছলতার সময় অভাবের কষ্টকর যাতনার কথা স্মরণ করা

মোহাম্মদ ইবনে সিরীন বর্ণনা করেছেন, “আমরা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে বসেছিলাম। তিনি কাতানের দুটো পাতলা কাপড় পরেছিলেন। তার মধ্যে একটি কাপড়ে তিনি নাক মোছেন। তারপর বলেন, ‘বাঃ! বাঃ! আবু হুরায়রাহ ‘কাতান' কাপড় দিয়ে নাক মুছছে! 

(তারপর তিনি পূর্বের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা উল্লেখ করে বলেন) অথচ এর পূর্বে আমার অবস্থা এই ছিল, আমি ক্ষুধায় অজ্ঞান হয়ে পড়তাম। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বর ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমার ঘরের মাঝখানে আমাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হতো। 

লোকেরা আসতো, আর আমার ঘাড়ের ওপর পা ফেলতো। তারা মনে করতো, আমি পাগল হয়ে গেছি। কিন্তু আসলে তা নয়, বরং ক্ষুধার কারণে আমার এ অবস্থা হয়ে যেত” (তারগীব ও তারহীব, বোখারী)

খালিদ বিন ওমায়ের আদাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “উতবা ইবনে গাযওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু, যিনি বসরার গভর্নর ছিলেন, এই ভাষণ দান করেন (যাতে তিনি আরো অনেক কথার মধ্যে এ কথা বলেন) আমি আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এমন অবস্থায় দেখেছি যে, আমি সপ্তম ব্যক্তি ছিলাম এবং অন্য আরো ছয়জন ছিল। 

আমাদের কাছে বাবলা পাতা ছাড়া আর কিছুই ছিল নাএমন কি পাতা খেতে খেতে আমাদের মুখে দাগ পড়ে গিয়েছিল। কাপড় এত কম ছিল যে, একবার যখন আমি একটা চাদর পাই, তখন সেটাকে দু টুকরো করিএক টুকরো সা'আদ ইবনে মালিক পরেন এবং এক টুকরো আমি পরি  কিন্তু আজ আমরা সাতজন কোন না কোন অঞ্চলের গভর্নরআমি এই পদে অধিষ্ঠিত থাকার জন্য নিজেকে বড় বলে মনে করে আল্লাহর কাছে হীন ও নীচ হয়ে যাবো এ অবস্থা থেকে আমি আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।” (তারগীব ও তারহীব, মুসলিম)

সম্পদ ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর, তিনি যখন ইচ্ছা বান্দাকে তা দান করেন

হযরত তারিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু খলীফা থাকা কালে উটে চড়ে সরকারী কাজে সিরিয়ার দিকে রওনা হন। আবু ওবায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন। রাস্তায় এক জায়গায় তাঁদের নদী পার হতে হয়। তাতে পানি কম ছিল। 

হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু উট থেকে নেমে আসেন। চামড়ার মোজা খুলে নিয়ে কাঁধের ওপর রাখেন। তারপর উটের লাগাম ধরে পানিতে নামেন। হযরত আবু ওবায়দা বলেন, 'আপনি আমীরুল মুমেনীন ও খলীফা হয়ে এ রকম কাজ করছেন? শহরের (খৃস্টান) বাসিন্দারা আপনাকে এ অবস্থায় দেখবে তা আমার ভাল লাগবে না।' (অর্থাৎ উট বাদ দিয়ে কোন তেজস্বী ঘোড়ায় চড়ন যাতে প্যালেস্টাইনের খৃস্টান বাসিন্দারা আপনাকে হীন মনে না করে।)

হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, 'হে আবু ওবায়দা! তুমি এ রকম কথা বলছো আর এমনটি চিন্তা করছো! অন্য কেউ যদি এ কথা বলতো তাহলে আমি তাকে এই দুনিয়াপরস্ত কথার জন্য কঠিন শাস্তি দিতাম। কিন্তু আমি জানি, তুমি আল্লাহভীরু ব্যক্তি, হয়তো এরকম কথা খুব সম্ভব না ভেবেচিন্তেই বলে ফেলেছো।

দেখো আৰু ওলায়দা, আমরা খুবই ঘৃণিত জাতি ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ তাঁর দ্বীনের বদৌলতে আমাদেরকে সম্মান দান করেছেন। তাই যখন আমরা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে সম্মান পেতে চাইবো তখন আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে অপমানিত করবেন। (সম্মান ও ক্ষমতা আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হবে। কুফর ও শিরকের গোলামী ও অধীনতা আমাদের ভাগ্যে নেমে আসবে)। (তারগীব ও তারহীব, হাকিম)

  • ব্যাখ্যা: হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত কালে হযরত আবু উবায়দার সেনাপতিত্বে ফিলিস্তিন বিজয় হয়। তখন ফিলিস্তিন সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। পতনের পর খৃস্টানরা শহর হস্তান্তরের জন্য শর্ত আরোপ করে, স্বয়ং খলীফা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ফিলিস্তিন আসতে হবে। সে উপলক্ষে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু ফিলিস্তিন আগমন কালে ঘটনা ঘটে।

সম্পদ ক্ষমতা মুমিনকে বিভ্রান্ত করতে পারে না

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খলীফা থাকাকালে এ অবস্থায় দেখেছি যে, তাঁর জামার দুই কাঁধের উপর তিনটি তালি লাগানো আছে, একটার ওপর আর একটা সেলাই করা।” (তারগীব)

  • ব্যাখ্যা: অর্থাৎ প্রথম তালি ছিড়ে যাবার পর তার উপর দ্বিতীয় তালি এবং দ্বিতীয় তালি ছিড়ে যাবার পর তার উপর তৃতীয় তালি লাগানো হয়েছিল।

কখন মুসলমানদের জীবনে অপমান জিল্লতি নেমে আসে

হযরত তারিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু খলীফা থাকা কালে উটে চড়ে সরকারী কাজে সিরিয়ার দিকে রওনা হন। আবু ওবায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন। রাস্তায় এক জায়গায় তাঁদের নদী পার হতে হয়। তাতে পানি কম ছিল। 

হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু উট থেকে নেমে আসেন। চামড়ার মোজা খুলে নিয়ে কাঁধের ওপর রাখেন। তারপর উটের লাগাম ধরে পানিতে নামেন। হযরত আবু ওবায়দা বলেন, 'আপনি আমীরুল মুমেনীন ও খলীফা হয়ে এ রকম কাজ করছেন? শহরের (খৃস্টান) বাসিন্দারা আপনাকে এ অবস্থায় দেখবে তা আমার ভাল লাগবে না।' (অর্থাৎ উট বাদ দিয়ে কোন তেজস্বী ঘোড়ায় চড় ন যাতে প্যালেস্টাইনের খৃস্টান বাসিন্দারা আপনাকে হীন মনে না করে।)

হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, 'হে আবু ওবায়দা! তুমি এ রকম কথা বলছো আর এমনটি চিন্তা করছো! অন্য কেউ যদি এ কথা বলতো তাহলে আমি তাকে এই দুনিয়াপরস্ত কথার জন্য কঠিন শাস্তি দিতাম। কিন্তু আমি জানি, তুমি আল্লাহভীরু ব্যক্তি, হয়তো এরকম কথা খুব সম্ভব না ভেবেচিন্তেই বলে ফেলেছো ।

দেখো আৰু ওলায়দা, আমরা খুবই ঘৃণিত জাতি ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ তাঁর দ্বীনের বদৌলতে আমাদেরকে সম্মান দান করেছেন। তাই যখন আমরা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে সম্মান পেতে চাইবো তখন আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে অপমানিত করবেন।

(সম্মান ও ক্ষমতা আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হবে। কুফর ও শিরকের গোলামী ও অধীনতা আমাদের ভাগ্যে নেমে আসবে)। (তারগীব ও তারহীব, হাকিম)

  • ব্যাখ্যা: হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত কালে হযরত আবু উবায়দার সেনাপতিত্বে ফিলিস্তিন বিজয় হয়। তখন ফিলিস্তিন সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। পতনের পর খৃস্টানরা শহর হস্তান্তরের জন্য শর্ত আরোপ করে, স্বয়ং খলীফা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ফিলিস্তিন আসতে হবে। সে উপলক্ষে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু ফিলিস্তিন আগমন কালে এ ঘটনা ঘটে।

পোস্ট ট্যাগঃ

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করার দৃষ্টান্ত
আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উপায়
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আমল
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উপায়
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের দোয়া
আল্লাহর সন্তুষ্টি
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url