সুরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ

সুরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ

সুরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ

কুল ইয়াআইয়ুহাল কা-ফিরুন। লাআবুদুমা~তাবুদুন। ওয়ালাআ’নতুম~বিদুনা মা~বুদ। ওয়ালাআন~বিদুম মা~ ‘আবাত্তুম, ওয়ালাআ’নতুম~বিদুনা মা~বুদ। লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়া দিন।

সুরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ পর আমরা জানবো জাহান্নামে কাফেরদের কিভাবে শাস্তি দেওয়া হবে। নিচে জাহান্নামীদের শাস্তির বিবরণ আলোচনা করা হলো।

কাফিরদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে

কোনো কোনো কাফিরদেরকে বহু কঠিন শাস্তি দেয়া হবে:

অর্থ: যারা কুফরীতে দ্রুত ধাবিত হয় তারা যেন তোমাকে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত না করে, নিশ্চয় তারা আল্লাহর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ চান যে, তাদের জন্য আখিরাতে কোনো অংশ রাখবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা আজাব। (সূরা আলে ইমরান ১৭৬)

কাফিরদেরকে কঠিন আজাব

কোনো কোনো কাফিরদেরকে কঠিন আজাব দেয়া হবে:

অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি অবিশ্বাস করে তাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে।” (সূরা আলে ইমরান ৪)

অর্থ: “আর যারা মন্দ কর্মের ফন্দি আঁটে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সূরা ফাতির ১০)

ভয়ঙ্কর কবরের আজাব

কুরআন হাদীসে আগুন ব্যতীত অন্যান্য বহু প্রকার আজাবের যেখানে সাধারণ বর্ণনা হয়েছে, সেখানে কোনো কোনো গুনাহর বিশেষ বিশেষ আজাবের উল্লেখও করা হয়েছে। কিন্তু এর সাথে সাথে আল্লাহ তা'আলা একথাও উল্লেখ করেছেন:

অর্থ: “আরো আছে এরূপ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি (সূরা সোয়াদ ৫৮)

আবার কোথাও শুধু অর্থ: “বেদনাদায়ক আজাব আবার কোথাওপ্রকাণ্ড আজাবআবার কোথাওকঠিন আজাববলেই শেষ করা হয়েছে।

জাহান্নামের আজাব

এরূপ বিভিন্ন ধরনের শাস্তিবেদনাদায়ক আজাব” “প্রকাণ্ড আজাব” “কঠিন আজাবইত্যাদি কি ধরনের হবে তার সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহই ভাল রাখেন।

মনে হচ্ছে যে, জেলখানায় যেমন সন্ত্রাসীদের শাস্তি সুনির্দিষ্ট থাকে, কিন্তু এর পরও কিছু কিছু বড় বড় সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে, অফিসাররা কোনো কোনো সময় শুধু বলে দেয় যে, অমুক সন্ত্রাসীকে ইচ্ছামত শিক্ষা দাও। আর জল্লাদ ভাল করেই জানে যে, নির্দেশের মাধ্যমে অফিসারদের উদ্দেশ্য কি এবং ধরনের সন্ত্রাসীদেরকে শিক্ষা দেয়ার কি ব্যবস্থা আছে।

জাহান্নামের প্রহরী

এমনিভাবে আল্লাহ কাফিরদের বড় বড় নেতাদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য, শুধু এতটুকু বলেছেন যে, অমুক অমুক মুজরেমকে বেদনাদায়ক শাস্তি দেয়া হবে। জাহান্নামের প্রহরী ভাল করে জানে যে, বেদনাদায়ক শাস্তি দেয়ার কি কি পদ্ধতি আছে। আর যে মুজরেম প্রকাণ্ড আজাবের হকদার, তাকে প্রকাণ্ড আজাব কিভাবে দিতে হবে, তাও তাদের জানা আছে। ( ব্যাপারে আল্লাহই ভাল জানেন)

জাহান্নাম এবং তার শাস্তি

হলো জাহান্নাম এবং তার শাস্তি যা থেকে সতর্ক করার জন্য আল্লাহ রাসূল সাঃ ভয় প্রদর্শনকারী রূপে প্রেরিত হয়েছিলেন। আর তিনি লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন করতে কোনো প্রকার ত্রুটি করেন নি। লোকদেরকে বারবার সতর্ক করেছেন যে,

জাহান্নাম থেকে বাঁচ

অর্থ: “একটি খেজুরের (সামান্য) অংশ দান করার বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচ। আর যার পক্ষে এতটুকুও সম্ভব নয়, সে যেন ভাল কথা বলার মাধ্যমে তা থেকে বাঁচে।” (মুসলিম)

অর্থাৎ, জাহান্নাম থেকে বাঁচা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, যার নিকট দান করার মত কোনো কিছুই নেই, সে যেন একটি খেজুরের একটু অংশ দান করে, জাহান্নাম থেকে নিজেকে বাঁচায়। আর যার পক্ষে তাও সম্ভব নয়, সে যেন ভাল কথা বলার মাধ্যমে নিজেকে তা থেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করে

জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার দোয়া
আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার

রাসূল সাঃ -এর বাণীর শেষ অংশটিযার নিকট খেজুরের একটি টুকরাও নেইএকথা প্রমাণ করছে যে, তিনি তার উম্মতকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর জন্য কত আগ্রহী সু-কামনা করতেন। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, (নাসায়ী)

জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ

মালেক বিন দিনার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যদি আমার নিকট কোনো সাহায্যকারী থাকত তাহলে আমি তাকে সমগ্র পৃথিবীতে আহ্বানকারী রূপে পাঠাতাম যে, সে ঘোষণা করবে যে, হে লোকেরা! জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ।

হে লোকেরা! জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। সমগ্র পৃথিবীতে না হোক, অন্তত এতটুকুতো আমরা প্রত্যেকে করতে পারি যে, নিজের সন্তান-সন্ততিদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করি। নিজের আত্মীয়-স্বজনদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করি।

নিজের বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে সতর্ক করি। যে হে লোকেরা! খেজুরের একটি টুকরা দান করার মাধ্যমে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচ, আর তা সম্ভব না হলে ভাল কথার মাধ্যমে তা থেকে বাঁচ। (মুসলিম)

জাহান্নামের আগুন শাস্তি

জাহান্নামের আগুন তার বিভিন্ন প্রকার শাস্তির কথা অধ্যয়নের সময় মানুষের পশম দাঁড়িয়ে যায় এবং মনের অজান্তেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করতে থাকে। কিন্তু সাথে সাথে একথাও মনে পড়ে যে, জীবনের সমস্ত গুনাহ যতই হোকনা কেন গুনাহসমূহের শাস্তির জন্য একটি পরিসীমা থাকা দরকার ছিল।

জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন

আর সত্তা যিনি স্বীয় বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াবান, তিনি সবসময়ের জন্য কি করে মানুষকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন? প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে প্রথমে আল্লাহর শাস্তি সাজা সম্পর্কে, একটি নিয়ম আমরা পাঠকদের দৃষ্টি গোচর করতে চাই যে,

মানুষকে হেদায়েতের পথে আহ্বান

রাসূল সাঃ বলেছেন: যে ব্যক্তি মানুষকে হেদায়েতের পথে আহ্বান করে, তার আমলনামায় সমস্ত লোকদের আমলের সমান সওয়াব লেখা হবে, যারা তার আহ্বানে হেদায়েত প্রাপ্ত হয়েছে। অথচ তাদের (পরস্পরের) সওয়াবের মধ্যে মোটেও কমতি হবে না।

গুনাহর সমান গুনাহ লিখা হবে

এমনিভাবে যে ব্যক্তি মানুষকে গোমরাহির পথে আহ্বান করে, তার আমলনামায় সমস্ত লোকদের গুনাহর সমান গুনাহ লিখা হবে, যারা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাপে লিপ্ত হয়েছে অথচ গুনাহকারীদের পরস্পরের গুনাহর মধ্যে কোনো কমতি হবে না। (মুসলিম)

নিয়মের বিস্তারিত বর্ণনা হাবীল কাবীলের ঘটনার মাধ্যমেও স্পষ্ট হয়। যে ব্যাপারে নবী সাঃ সাক্ষাতকারে বলেছেন: পৃথিবীতে কোনো ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিহত হলে আদম ()-এর প্রথম সন্তান কাবীল (হত্যাকারী) গুনাহর ভাগী হবে। কেননা সে সর্বপ্রথম হত্যার প্রথা চালু করেছে। (বুখারী মুসলিম)

নিয়মের আলোকে একজন কাফির শুধু তার নিজের পাপের সাজাই ভোগ করবে না, বরং তার সন্তান, সন্তানদের সন্তান এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত তার বংশে যত কাফির জন্মগ্রহণ করবে সমস্ত কাফিরদের কুফরীর সাজা, প্রথম কাফির পাবে, যে আল্লাহ তাঁর রাসূল সাঃ -কে মানতে অস্বীকার করেছে।

জাহান্নাম তার চিরস্থায়ী ঠিকানা

সাথে সাথে সমস্ত কাফিররা তাদের স্ব স্ব কুফরীর সাজাও পাবে। আচরণ সমস্ত কাফিরের সাথে করা হবে, যারা তাদের সন্তানদেরকে কুফরীর সবক দিয়েছে এবং কুফরীর ওপর অটল রেখেছে। নিয়মের আলোকে প্রত্যেক কাফিরের পাপের সূচী এত বৃহৎ মনে হয় যে, জাহান্নামে তার চিরস্থায়ী ঠিকানা ন্যায়পরায়ণতার আলোকে সঠিক বলেই স্পষ্ট হয়।

একক কুফরীর কথা

এতো গেল ব্যক্তিগত একক কুফরীর কথা, কোনো রাষ্ট্র, বা সমগ্র পৃথিবীতে তা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে, তাহলে সম্মিলিত চেষ্টা প্রচেষ্টা তার মূল গুনাহর সাথে আরো গুনাহ বৃদ্ধির কারণ হবে। আর বৃদ্ধির পরিমাপ বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে যে, সম্মিলিত চেষ্টা-প্রচেষ্টার ফলে কত লোক পথভ্রষ্ট হয়েছে। আর আন্দোলনকে প্রচার করার জন্য কত কত এবং কি কি পাপ করা হয়েছে।

লেনিনের তত্ত্ব ভ্রান্ত মতবাদ

যেমনলেনিনের তত্ত্ব নামক ভ্রান্ত মতবাদ আবিষ্কার করেছিল, এরপর ভ্রান্ত মতবাদকে বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লাখ লাখ মানুষ নির্দ্বিধায় হত্যা করেছে। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী লাখ মানুষের ওপর নির্যাতনের পাহাড় চালিয়েছে। শহর কি শহর, গ্রাম কি গ্রাম পদদলিত করা হয়েছে।

মুসলিম অধ্যুসিত এলাকা

মুসলিম অধ্যুসিত এলাকাসমূহে ইসলামের রাস্তা বন্ধ করার জন্য সর্বপ্রকার হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহ তাঁর রাসূলের নাম নেয়াতে নিয়মানুবর্তিতা, আযানে নিয়মানুবর্তীতা, নামাযে নিয়মানুবর্তীতা, কুরআনে নিয়মানুবর্তিতা, মসজিদ মাদরাসায় নিয়মানুবর্তিতা, আলেম উলামাদের প্রতি দূরাচরণ। সমস্ত অপরাধ লেলিনের গুনাহ বৃদ্ধির কারণ হবে।

জাহান্নামের চেয়ে অধিক উপযুক্ত

সে শুধু তার বংশগত কাফিরদের কুফরিরই জিম্মাদার নয়, বরং অসংখ্য মানুষকে পথভ্রষ্ট করার পাপের বোঝা বহন করে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। হত্যা, মরামারি, পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাপের সূচীও তার বদ আমলের সাথে সম্পৃক্ত হবে। সর্বশেষ ধরনের ইসলামের শত্রু কট্টর কাফিরের জন্য জাহান্নামের চেয়ে অধিক উপযুক্ত স্থান আর কি হতে পারে?

জাহান্নামের আগুন ব্যতীত আর কি

১৮৪৬ ইং মার্চ মাসে মহারাজা গোলব শিং কাশ্মীর খরিদ করে, তার জোরপূর্বক শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করল। তখন দু'জন নেতৃস্থানীয় মুসলমান মল্লি খান এবং সবজ আলী খান, তার প্রতিবাদ জানাল। তখন গোলব শিং উভয় নেতাকে উল্টা করে ঝুলিয়ে, জীবন্ত অবস্থায় তাদের চামড়া ছিলার নির্দেশ দিল।

দৃশ্য এত ভয়ানক ছিল যে, গোলাব শিংয়ের ছেলে রামবীর শিং সহ্য না করতে পেরে দরবার থেকে উঠে গেল, তখন গোলাব শিং তাকে ডাকিয়ে বলল: যদি তোমার মধ্যে দৃশ্য দেখার মত সাহস না থাকে, তাহলে তোমাকে যুবরাজের পদ থেকে হটিয়ে দেয়া হবে। ইসলাম মুসলমানদের দুশমনীর ধরনের শিক্ষা প্রশিক্ষণের উপযুক্ত শাস্তি, জাহান্নামের আগুন ব্যতীত আর কি হতে পারে?

জাহান্নামের আগুন

ভারত বিভক্তির সময় লর্ড, মাউন্টবেটিন, স্যার, পেটিল, হেজাক্সী লেন্সী, নেহেরু, আনজহানী, গান্ধীরা জেনে বুঝে যেভাবে ইসলামের শত্রুতার ঝড় তুলে, নির্দ্বিধায় মুসলমানদেরকে হত্যা করিয়েছে, মুসলিম মহিলাদের ইজ্জত হরণ করেছে, মাসুম বাচ্চাদেরকে কতল করেছে এর প্রতিশোধ যতক্ষণ পর্যন্ত জাহান্নামের আগুন, তার সাপ,

বিচ্ছুরা না নিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপরাধে নিহত মুসলমান, পবিত্র মুসলিম মহিলা, মাসুম মুসলিম বাচ্চাদের কলিজা কি করে ঠাণ্ডা হবে? এমনিভাবে বসনিয়া, কসোভা, সিসান ইত্যাদি।

অতএব মহাজ্ঞানী অভিজ্ঞ সত্তা যিনি মানুষের অন্তরের গোপন আকাঙ্খার খরব রাখেন, কাফিরের জন্য যত শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন, তা কাফিরের উপযুক্ত শাস্তি, তার প্রাপ্যের চেয়ে বিন্দু পরিমাণ কমও হবে না আবার বেশিও না। বরং ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে তার উপযুক্ত শাস্তিই হবে।

আর আল্লাহ যিনি তার সমস্ত সৃষ্টি জীবের জন্য কোনো পার্থক্যহীনভাবে, অত্যন্ত দয়ালু তিনি কারো ওপর বিন্দু পরিমাণ জুলুম করেন না

অর্থ: “তোমার রব কারো ওপর বিন্দু পরিমাণ জুলুম করেন না।” (সূরা কাহাফ ৪৯)

জাহান্নামে পাপের নির্দিষ্ট শাস্তি

যাকাত না আদায় কারীদের জন্য টাক মাথাওয়ালা বিষাক্ত সাপের দংশনের মাধ্যমে আজাব

অর্থ: “আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন: যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন আর সে তার যাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিন তার সম্পদ টাক মাথাওয়ালা বিষধর সাপের আকৃতি ধারণ করবে, যার চোখের ওপর দু'টি ফোটা থাকবে, তা তার গলায় মালা বানানো হবে।

কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী

অতঃপর সাপটি ব্যক্তির উভয় অধর প্রান্ত ধরে বলবে: আমি তোমার ধন-সম্পদ। অতঃপর তিনি আয়াত পাঠ করলেন: আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, কার্পণ্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের জন্য একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে।

যাতে তারা কার্পণ্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদ কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে।" (সূরা আলে ইমরান ১৮০)

যে ব্যক্তি যাকাত আদায় করে না

যে ব্যক্তি যাকাত আদায় করে না তাদের জন্য তাদের সম্পদকে পাত বানিয়ে জাহান্নামদের আগুনে গরম করে তাদের কপাল, পিঠ, রানে হেঁক দেয়ার মাধ্যমে আজাব দেয়া হবে:

জীব-জন্তুর যাকাত যে আদায় করবে না সমস্ত জীব-জন্ত দিয়ে তাকে পদদলিত করা হবে:

জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে

অর্থ: “আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন: সোনা রূপা যে মালিক তার যাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিন সোনা রূপা দিয়ে তার জন্য আগুনের অনেক পাত তৈরী করা হবে,

অতঃপর তা জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে, যখনই ঠাণ্ডা হয়ে আসবে পুনরায় তা উত্তপ্ত করা হবে, আর তার সাথে এরূপ করা হবে এমন একদিন যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান, আর তার এরূপ শাস্তি লোকদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে।

কেউ জাহান্নামের দিকে

অতঃপর তাদের কেউ পথ ধরবে হয় জান্নাতের দিকে, আর কেউ জাহান্নামের দিকে। জিজ্ঞেস করা হলো হে আল্লাহর রাসূল সাঃ! উটের মালিকদের কি হবে? তিনি বললেন: যে উটের মালিক তার উটের হক আদায় করবে না, আর উটের হক গুলোর মধ্যে পানি পানের তারিখে তার দুধ দোহন করে, তা অন্যদেরকে দান করাও একটি হক।

যখন কিয়ামতের দিন আসবে, তখন তাকে এক সমতল ভূমিতে উপুড় করে ফেলা হবে, অতঃপর তার উটগুলো মোটা তাজা হয়ে আসবে, বাচ্চাগুলোও এদের অনুসরণ করবে, এগুলো আপন আপন খুর দ্বারা তাকে মাড়াই করতে থাকবে এবং মুখ দ্বারা কামড়াতে থাকবে,

এভাবে যখন একটি পশু তাকে অতিক্রম করবে তখন অপরটি তার দিকে অগ্রসর হবে, সমস্ত দিন তাকে এরূপ শাস্তি দেয়া হবে। দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। অতঃপর বান্দাদের বিচার শেষ হবে। তাদের কেউ জান্নাতে আর কেউ জাহান্নামের পথ ধরবে।

গরু-ছাগলের মালিকদের জাহান্নামে

এরপর জিজ্ঞেস করা হলো হে আল্লাহর রাসূল সাঃ! গরু-ছাগলের (মালিকদের) কি হবে? তিনি বললেন: যে সব গরু-ছাগলের মালিক তাদের হক আদায় করে না, কিয়ামতের দিন তাকে এক সমতল ভূমিতে উপুড় করে ফেলে রাখা হবে, আর তার সেসব গরু ছাগল তাকে শিং দিয়ে আঘাত করতে থাকবে এবং খুর দিয়ে মাড়াতে থাকবে,

সেদিন তার একটি গরু-ছাগলেরও শিং বাঁকা বা শিং ভাঙ্গা হবে না এবং তাকে মাড়ানোর ব্যাপারে একটিও বাদ থাকবে না। যখন এদের প্রথমটি অতিক্রম করবে তখন দ্বিতীয়টি এর পিছে পিছে এসে যাবে। সমস্ত দিন তাকে এভাবে পিষা হবে। এই দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। অতঃপর বান্দাদের বিচার শেষ হবে এবং তাদের কেউ জান্নাতে আর কেউ জাহান্নামের পথ ধরবে।” (মুসলিম /৯৮৭)

রোজা ভঙ্গের শাস্তি

রোজা ভঙ্গের শাস্তি উপুড় করে লটকিয়ে মুখ বিদীর্ণ করা হবে:

অর্থ: “আবু উমামা বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন: আমি শুয়েছিলাম, এমতাবস্থায় আমার নিকট দু'জন লোক আসল, তারা আমাকে পার্শ্ব ধরে একটি দূরহ পাহাড়ের নিকট নিয়ে আসল, তারা উভয়ে আমাকে বলল: যে, পাহাড়ে আরোহণ করুন, আমি বললাম: আমি তাতে আরোহণ করতে পারব না।

তারা বলল: আমরা আপনার জন্য তা সহজ করে দিব। তখন আমি সেখানে আরোহণ করলাম, এমন কি আমি পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে গেলাম। সেখানে আমি কঠিন চিল্লা চিল্লির আওয়াজ পেলাম, আমি জিজ্ঞেস করলাম যে, আওয়াজ কিসের?

জাহান্নামীদের কান্না

তারা বলল হলো জাহান্নামীদের কান্না-কাটির আওয়াজ। অতঃপর তারা আমাকে নিয়ে আগে চলল, সেখানে আমি কিছু লোককে উল্টা ঝুলন্ত অবস্থায় দেখলাম যাদের মুখ ফাটা এবং রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, আমি জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা? তারা বলল: তারা সমস্ত লোক যারা রোযার দিন সময় হওয়ার আগেই ইফতার করে নিত।” (ইবনে খুযাইমা, ইবনে হিব্বান)

ইলম গোপনকারীকে জাহান্নামে

কুরআন হাদীসের ইলম গোপনকারীকে জাহান্নামে আগুনের লাগাম পরানো হবে:

অর্থ: “আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি দ্বীন সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হলো আর সে তা গোপন করল, কিয়ামতের দিন তাকে জাহান্নামে আগুনেরআগুনের লাগাম পরানো হবে” (তিরমিযী ২৬৪৯)

জাহান্নামের আগুন কেমন আগুনের মুখ

দ্বিমুখী লোকদের কিয়ামতের দিন জাহান্নামে আগুনের দু'টি মুখ থাকবে:

অর্থ: “আম্মার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলূল্লাহ সাঃ বলেছেন: দুনিয়াতে যে ব্যক্তি দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করেছে, কিয়ামতের দিন জাহান্নামে তার আগুনের দু'টি মুখ থাকবে।” (আবু দাউদ ৪৮৭৩)

মিথ্যা বলার কুফল জাহান্নামে

মিথ্যা প্রচারকারী ব্যক্তিকে তার জিহ্বা, নাক চোখ গর্দান পর্যন্ত বিদীর্ণ করার মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবে

জিনাকার নারী পুরুষকে উলঙ্গ শরীরে এক চুলায় জ্বালানোর মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবে

সুদের ভয়াবহতা

সুদ খোরদেরকে নদীতে ডুবানো এবং পাথর গিলানোর মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবে:

অর্থ: “সামুরা বিন জুন্দুব (রাঃ) নবী সাঃ থেকে (স্বপ্নের ঘটনায়) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: তারা উভয়ে (ফেরেশতাগণ) আমাকে জিজ্ঞেস করল, (যে দৃশ্যসমূহ আপনাকে দেখানো হয়েছে তার মধ্যে) সর্বপ্রথম আপনি যেখান দিয়ে অতিক্রম করেছেন, যার জিহ্বা, নাক চোখ, গর্দান পর্যন্ত বিদীর্ণ করা হচ্ছিল সে ছিল ব্যক্তি,

যেনাকারী কি জান্নাতে যাবে না জাহান্নামে

যে সকালে ঘর থেকে বের হত এবং মিথ্যা সংবাদ প্রচার করতে থাকত, যা সমগ্র দুনিয়াতে ছড়িয়ে যেত। আর উলঙ্গ নারী পুরুষ যাদেরকে আপনি চুলায় জ্বলতে দেখেছেন, তারা হলো জিনাকার নারী পুরুষ। আর ব্যক্তি যাকে আপনি রক্তের নদীতে ডুবন্ত অবস্থায় দেখেছেন, যার মুখে বার বার পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছিল, সে ছিল ব্যক্তি যে দুনিয়াতে সুদ খেত।” (বুখারী)

মৃত ব্যক্তির জন্য যে সমস্ত নারী বা পুরুষ উচ্চ স্বরে কান্না কাটি করে তাদেরকে কিয়ামতের দিন গন্দকের পায়জামা এবং এমন জামা পরানো হবে যা তাদের শরীরে এলার্জি সৃষ্টি করবে:

অর্থ: “আবু মালেক আশআরী (রাঃ) নবী সাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন: নিশ্চয়ই নবী সাঃ বলেছেন: আমার উম্মতের মাঝে চারটি জাহিলিয়াতের অভ্যাস রয়েছে, যা তারা ত্যাগ করবে না। স্বীয় বংশ গৌরব করা, অপরের বংশকে দোষারোপ করা,

মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ কারী

তারকার মাধ্যমে বৃষ্টি কামনা করা, মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চ স্বরে কান্না কাটি করা। মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চ স্বরে কান্না কাটিকারী, মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করলে কিয়ামতের দিন তাকে গন্দকের পায়জামা এবং শরীরে এলার্জি সৃষ্টিকারী পোশাক পরানো হবে।” (মুসলিম ৯৩৪)

নামাজ না পড়ার শাস্তি কোরআন

কুরআন মুখস্ত করে ভুলে গেলে এবং ফরয নামায আদায় না করে ঘুমিয়ে গেলে জাহান্নামেজাহান্নামে সার্বক্ষণিকভাবে মাথা দলিত করা হবে:

অর্থ: “সামুরা বিন জুন্দাব (রাঃ) নবী সাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন : প্রথম ব্যক্তি যার নিকট আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যার মাথা পাথর দিয়ে দলিত করা হচ্ছিল, সে ব্যক্তি যে দুনিয়াতে কুরআন মুখস্ত করে ভুলে গেছে এবং ফরয নামায আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকত।” (বুখারী ৭০৪৭)

ফেরেশতা পাথর নিক্ষেপ করে

হাদীসে এও বর্ণিত হয়েছে যে, ফেরেশতা লোকের মাথায় পাথর নিক্ষেপ করে তা দলিত হওয়ার পর, সে যখন আবার পাথর কুড়াতে যেত তখন তা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসত। তখন ফেরেশতা আবার পাথর নিক্ষেপ করে তার মাথাকে দলিত করত। আর অবস্থা সার্বক্ষণিক ভাবে চলত।

সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ সম্পর্কে ওয়াজ

অপরকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ কারী কিন্তু নিজে তা থেকে বিরত থাকে এমন ব্যক্তির জাহান্নামের শাস্তি:

জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে

অর্থ: “উসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহরাসূলুল্লাহ সাঃ -কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তার নাড়িসমূহ পেটের বাহিরে থাকবে, আর সে তা নিয়ে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে যেমন গাধা চরকি নিয়ে ঘুরে।

জাহান্নামের অধিবাসীরা

আর তার দৃশ্য দেখার জন্য জাহান্নামের অধিবাসীরা একত্রিত হবে এবং তাকে জিজ্ঞেস করবে যে, হে অমুক! তোমার অবস্থা কি করে হলো? তুমি না আমাদেরকে সৎ কাজের নির্দেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করতে!

সে তখন উত্তরে বলবে: আমি তোমাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু আমি সৎ কাজ করতাম না। আর আমি তোমাদেরকে অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করতাম, আর আমি তা থেকে বিরত থাকতাম না।” (বুখারী)

আত্মহত্যা নিয়ে উক্তি

আত্মহত্যাকারী যেভাবে আত্মহত্যা করে সে জাহান্নামে ভাবে সার্বক্ষণিক ভাবে তা করতে থাকবে:

অর্থ: “আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা. বলেছেন: যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করেছে, সে জাহান্নামেও বার বার আত্ম হত্যা করতে থাকবে, আর যে ব্যক্তি কোনো অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে আত্ম হত্যা করেছে, সে জাহান্নামে নিজেকে ভাবে হত্যা করতে থাকবে।” (বুখারী ১৩৬৫)

মদ পানের শাস্তি

মদ পানকারীকে জাহান্নামে জাহান্নামীদের দুর্গন্ধময় ঘাম পান করানো হবে:

লোক দেখানো ইবাদতকারীকে উপুড় করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে:

গীবত সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

গীবতকারী জাহান্নামে নিজের নখ দিয়ে স্বীয় চেহারা বুকের গোশত টেনে টেনে খাবে:

অর্থ: “আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন: আমাকে যখন মে'রাজ করানো হলো, তখন আমি কিছু লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের নখ ছিল লাল তামার, আর তারা তা দিয়ে তাদের চেহারা বুকের গোশত টেনে টেনে ক্ষত-বিক্ষত করছিল,

আমি জিজ্ঞেস করলাম হে জিবরাঈল! এরা কারা, সে বলল: তারা ব্যক্তি যারা মানুষের গীবত করত এবং তাদেরকে অপমান করত।” (আবু দাউদ)

পোস্ট ট্যাগঃ

সুরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ
সুরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ সহ
সূরা কাফিরুন বাংলা অনুবাদ
সূরা কাফিরুন বাংলা অর্থ সহ
সূরা কাফিরুন বাংলায়
সূরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
সূরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ
সূরা আল কাফিরুন বাংলা অনুবাদ
সূরা আল কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ
সূরা কাফিরুন সূরা কাফিরুন
সূরা কাফিরুন এর বাংলা উচ্চারণ
সূরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণউচ্চারণ ছবি
surah baqarah with bangla translation

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url