আদম আঃ এর কবর কোথায়

আদম আঃ এর কবর কোথায়

আদম আঃ এর কবর কোথায়

হযরত আদম (আঃ) কে কোন জায়গায় দাফন করা হয়েছে সে ব্যাপারে নানামত আছে। খুবই নিশ্চিত তিনটা মতগুলো নিচে দেওয়া হলোঃ

১। ভারতের যে পাহাড়ে হযরত আদম (আঃ) কে নামানো হয় সেখানে।

২। পবিত্র মক্কার জাবালে “আবু কুবাইস” নামক জায়গায়।

 ৩। পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস নামক জায়গায়।

মৃত্যুর সময় হযরত আদম (আঃ) এর বয়স ছিল ১০০০ বছর। (প্রসিদ্ধ মতে)।

হযরত আদম (আঃ) 

এর কবর কোন জায়গায় তা নিশ্চিতভাবে উল্লেখ নাই কোথাও। বিভিন্ন স্থানকে হযরত আদম (আঃ) এর কবর বলে দাবি করেন অনেকে, সে দাবির পক্ষে সঠিক গ্রহণযোগ্য প্রুফ নাই।

তবে এটা জানা যায় যে,

“হযরত জীবরাইল (আঃ) ফেরেশতাগণকে নিয়ে মসজিদুল খায়ফে হযরত আদম (আঃ) জানাজার নামাজ পড়েছিলেন।” (প্রসিদ্ধ মতে)।

শয়তানের ধোকা

আল্লাহ হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করার পর ফেরেশতাগণকে হুকুম দিয়েছেন যে, আদমকে সেজদা করো। ইবলীস ব্যতীত সবাই তাকে সেজদা করেছিল। আল্লাহ ইবলীসকে জিজ্ঞেস করলেন: আমার নির্দেশ সত্ত্বেও কে তোমাকে সেজদা দিতে বাধা দিল।

আমি আদমের চাইতে উত্তম

ইবলীস বললো: আমি আদমের চাইতে উত্তম, তাকে তুমি মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, আর আমাকে আগুন দিয়ে। আল্লাহ বললেন: তোমার অধিকার নেই যে, তুমি এখানে অহংকার করো, তুমি এখান থেকে বের হও। নিশ্চয় তুমি লাঞ্ছিত ও অপমানিত।

শয়তানের ধোকা

ইবলিস আবার বললো: আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত সুযোগ দিন। আল্লাহ বললেন: তোমাকে সুযোগ দেয়া হলো। তখন ইবলীস এ ঘোষণা দিল যে, হে আল্লাহ! যেভাবে তুমি আমাকে (সেজদার নির্দেশ দিয়ে) পথভ্রষ্ট করেছো, এমনিভাবে আমিও মানুষকে সঠিক রাস্তা থেকে পথ ভ্রষ্ট করার জন্য তাদের পিছনে লেগে থাকবো। সামনে পিছনে ডানে বামে সকল দিক থেকে তাদেরকে ঘিরে রাখবো, আর তাদের অধিকাংশকেই তুমি অকৃতজ্ঞ পাবে।

আদম আঃ কোন ফল খেয়েছিলেন

আল্লাহ বললেন: তুমি এখান থেকে লাঞ্ছিত ও পদদলিত হয়ে বের হয়ে যাও, আর জেনে রাখ যে, মানুষের মধ্য থেকে যারা তোমার কথা মানবে তুমি সহ তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। অতপর আল্লাহ আদম (আ) কে লক্ষ্য করে বললেন: তুমি এবং তোমার স্ত্রী এ জান্নাতে বসবাস করো। সেখান থেকে যা খুশি তা খাও, কিন্তু ঐ বৃক্ষের নিকটবর্তী হইও না।

গন্ধম ফল

অন্যথায় তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। হিংসা ও প্রতিরোধ প্রত্যাসী ইবলীস আদম (আ)-এর নিকট এসে বললো: তোমার রব তো তোমাকে ঐ বৃক্ষ (গন্ধম ফল) থেকে বারণ করেছে এজন্য যে, তুমি যেন ঐ বৃক্ষের নিকট গিয়ে ফেরেশতা না বনে যাও বা চিরস্থায়ীভাবে জান্নাতের অধিবাসী না হয়ে যাও।

আদম আঃ তাঁর স্ত্রীকে ধোকায় ফেললো

এবং সাথে সাথে ইবলীস কসম খেয়ে দৃঢ় বিশ্বাস করাল যে, আমি তোমার কল্যাণকামী এবং তোমার বন্ধু। এভাবে ইবলীস আদম ও তাঁর স্ত্রীকে ধোকায় ফেলার ব্যাপারে সফল হয়ে গেল, যার ফলে আদম (আ) ও হাওয়া (আ) বড় নিআমত জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল।

হজরত আদম আ কে প্রথম কোথায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল

ভারতের পাহাড়ে তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তখন আল্লাহ আদম ও হাওয়াকে পৃথিবীতে থাকার নির্দেশ দিলেন। তাদেরকে কিছু নির্দেশ ও বিধি-বিধান দিয়ে তাদেরকে সতর্ক করে দিলেন যে, হে আদম সন্তান। আর যেন এমন না হয় যে, শয়তান আবার তোমাদেরকে এভাবে ফেতনায় ফেলে, যেভাবে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে ফেতনায় ফেলে জান্নাত থেকে বের করেছিল এবং তাদের পোশাক তাদের শরীর থেকে খুলে দিয়েছিল। যেন তাদের লজ্জাস্থান একে অপরের সামনে খুলে যায়। (বিস্তারিত দেখুন সূরা আরাফ)

নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা

আল্লাহ কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে, আদম সন্তানদেরকে বার বার সতর্ক করেছেন যে, হে আদম সন্তান! শয়তান তোমাদের স্পষ্ট শত্রু। তার চক্রান্তে পড় না। তাহলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

কিছু আয়াতের উদ্ধৃতি:

১. হে লোকেরা! শয়তানের অনুসরণ করো না, সে তোমাদের স্পষ্ট দুশমন। (সূরা বাকারা: ২০৮)

২. শয়তান মানুষকে ওয়াদা দেয়, তাদেরকে আশার আলো দেখায়, কিন্তু স্মরণ রাখ শয়তানের সমস্ত ওয়াদা চক্রান্ত ব্যতীত আর কিছুই নয়।

৩. (লোকেরা)! সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সে শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে। (সূরা লুকমান: ৩৩)

ওয়াসওয়াসা শয়তানের কুমন্ত্রণা

আল্লাহর স্পষ্ট সতর্কতা সত্ত্বেও মানুষ কতইনা সহজভাবে শয়তানের চক্রান্তে পড়ে নিজেকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করেছে। এর অনুমান প্রত্যেক মানুষ তার বাস্তব জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে নিয়ে চিন্তা করলে নিজেই তা বুঝতে পারবে।

দুনিয়ার জীবন ধোকা

দুনিয়ার এ সংক্ষিপ্ত জীবনের তুলনায় পরকালের দীর্ঘজীবনকে রাসূলুল্লাহ এভাবে বুঝিয়েছেন যে, যদি কোনো ব্যক্তি তার হাতের আঙ্গুলকে কোনো সমুদ্রের মধ্যে রেখে আবার তুলে নেয় তাহলে তার আঙ্গুলের সাথে যে সামান্য পানি লেগেছে এটা দুনিয়ার জীবনের ন্যায়, আর বিশাল সমুদ্র পরকালের জীবনের ন্যায়। (মুসলিম)

উম্মতে মুহাম্মদীর বয়স ষাট সত্তর বছর

যদি এ উদাহরণকে আমরা গাণিতিকভাবে বুঝতে চাই, তাহলে এভাবে তা বুঝা যেতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বর্ণনা অনুযায়ী, উম্মতে মুহাম্মদীর বয়স ষাট ও সত্তর বছরের মাঝামাঝি। এ বাণী অনুযায়ী দুনিয়াতে মানুষের জীবন বেশি থেকে বেশি হলে সত্তর বছর ধরা যায়।

দুনিয়ার সত্তর বছর জীবন যাপনকারী ব্যক্তি

দুনিয়ার গণনার সর্বশেষ সংখ্যার দশগুণকে, পরকালের জীবনের সাথে অনুমান করে উভয়ের তুলনা করলে, দুনিয়ার সত্তর বছর জীবন যাপনকারী ব্যক্তি, দুনিয়ার প্রতি মিনিটের বিনিময়ে, পরকালে এক কোটি তের লক্ষ চব্বিশ হাজার নয়শত বছর জীবন যাপন করবেচাই সে জান্নাতের অফুরন্ত নিআমতের মধ্যে থাকুক আর জাহান্নামের কঠিন শাস্তি তে থাকুক

উল্লেখ্য: দুনিয়া ও আখেরাতের এ পরিসংখ্যানও একান্তই আনুমানিক বাস্তবিক নয়। চিন্তা করুন আমরা কি আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টা এক মিনিটের জীবনকে সুন্দর ও কারুকার্যময় করার জন্য ব্যয় করবো, না এক কোটি তের লক্ষ চব্বিশ হাজার নয়শত বছরের জীবনকে সুন্দর ও কারুকার্যময় করার জন্য ব্যয় করবো কিন্তু

শয়তানের ধোঁকায় চক্রান্তে

ইবলীস শুধু এক সেকেন্ডের জীবনকে আমাদের জন্য এত চিত্তাকর্ষক করে দিয়েছে যে, এর ফলে আমরা কোটি বছর দীর্ঘ চিরস্থায়ী নিআমতসমূহ থেকে আমরা গাফেল হয়ে আছি, আর এক সেকেন্ডের সংক্ষিপ্ত জীবনের রং তামাশায় পিনপতন হীন নিমগ্ন হয়ে আছি, এ শয়তানের ধোঁকায় ও চক্রান্তে পরকালে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছি।

দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী

দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে নিমগ্ন থাকা, আর পরকালের দীর্ঘজীবনের কথা ভুলে যাওয়ার চিত্র কদমে কদমে আমাদের সামনে ফুটে উঠে। রাসূলূল্লাহ সাঃ বলেন: “ফজর নামাযের দু'রাকআত (সুন্নাত) দুনিয়া ও এর মাঝে যাকিছু আছে তা থেকে উত্তম।” (তিরমিযী)

চিন্তা করুন “দুনিয়া ও এর মাঝে যাকিছু আছে” এতে আমেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়া এবং বাকী সমস্ত রাষ্ট্রের সম্পদ অন্তর্ভুক্ত আছে। পৃথিবীর অনুদঘাটিত সম্পদও এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এ দু'রাকআত সুন্নাত আদায়ের জন্য কতজন মুসলমান ফজরের আযানের সাথে সাথে উঠে?

মুসলমান ফজরের আযানের আগে উঠে যায়

অথচ দুনিয়া কামানোর উদ্দেশ্যে কত মুসলমান ফজরের আযানের আগে উঠে যায়। কত ব্যবসায়ী এমন আছে যে, তার ব্যবসার জন্য সারা রাত জাগ্রত থাকে, কত কৃষক এমন আছে যে সে তার যমীনে কাজ করার জন্য সারা রাত কষ্ট করে।

কত ছাত্র এমন আছে যে, সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় সারা রাত পড়াশুনার মাঝে কাটায়। কিন্তু ফজরের নামাযের দু'রাকআত (সুন্নাত) পড়ার ভাগ্য কজনের হয়? দুনিয়ার লোভ আশা- আকাঙ্খা আমাদেরকে পরকালের চিরস্থায়ী নিআমতে ভরপুর জান্নাত থেকে বঞ্চিত করতেছে।

রাসূলূল্লাহ সঃ বলেন: “দানের মাধ্যমে সম্পদ কমে না।” (মুসলিম)

দান করার উপকারিতা (সামান্যও)

অর্থাৎ: প্রকাশ্যভাবে সম্পদ কমা সত্ত্বেও আল্লাহ তাতে এত বরকত দেন যে, সামান্য দান হওয়া সত্ত্বেও এর মাধ্যমে আল্লাহু বহু মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে দেন। কিন্তু শয়তান বাহ্যিক পরিমাণ গুণে আমাদেরকে দেখায় যে, হাজার টাকা থেকে যদি একশত টাকা দান করা হয় তাহলে নয়শত টাকা থাকবে এতে সম্পদ বাড়বে কি করে বরং কমবে।

ইবলীস আদম সন্তানকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করার

তোমার ঘরের প্রয়োজনীয়তা, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া, চিকিৎসা, অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয়তার এত বিশাল চার্ট তুমি কিভাবে পূরণ করবে। মানুষ তখন তার ঘনিষ্ট কল্যাণকামীর সামনে চলে আসে, অথচ এ ইবলীস আদম সন্তানকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করার পাথেয় যোগাচ্ছে।

আল্লাহর বাণী আমি সুদের মাধ্যমে সম্পদ কমিয়ে দেই।” (সূরা বাকারা: ২৭৬)

নবী সাঃ বলেন: যেকোনভাবে অর্জিত হারাম সম্পদে লালিত শরীর সর্বপ্রথম জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। (ত্বাবারানী)।

জাহান্নামীদের পোশাকের রং

আগুন যার এক মুহূর্ত দুনিয়ার সমস্ত নিআমত আরাম আয়েশকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। আগুনের পোশাক, আগুনের উড়না, আগুনের বিছানা, আগুনের ছাদ, আগুনের ছাতা, পান করার জন্য গরম পানি, খাওয়ার জন্য বিষাক্ত কাঁটাদার খাদ্য, আগুনে সৃষ্ট সাপ বিচ্ছু

আরামদায়ক জীবন

কিন্তু সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, আরামদায়ক জীবন, সন্তানদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষা, একে অপরের তুলনায় বড় হওয়া, পার্থিব মর্যাদা সম্মান লাভ করা, মিথ্যা আমিত্ব, মিথ্যা সম্মান, মিথ্যা শান্তি প্রতিষ্ঠার ধারণাকে অভিশপ্ত ইবলীস এতো চিত্তাকর্ষক করেছে যার ফলে রাসূলূল্লাহ সাঃ-এর সতর্কবাণী পরাজিত, আর ইবলীসের চক্রান্ত বিজয়ী হয়েছে।

আল্লাহর বাণী: লা-হাওলা ওয়ালাকুয়্যাতা ইল্লাহ বিল্লাহ”

অর্থ: অবশ্যই আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে আত্মা তৃপ্তি লাভ করে।” (সূরা রা'দ ২৮)

পীরের কদম বুসীতে তৃপ্তি হাসিল করায়

আল্লাহর স্পষ্ট বাণী সত্ত্বেও অভিশপ্ত ইবলীশ মানুষকে বিভিন্ন প্রকার শান্তি লাভের চক্রান্তে ফেলে রেখেছে, কাউকে স্বীয় পীর সাহেবের কবরে মান্নত মানার মধ্যে শান্তি মনে করায়, আবার কারো স্বীয় পীরের কদম বুসীতে তৃপ্তি হাসিল করায়।

মদ পানে শান্তি লাগে

কারো মদ পানে শান্তি লাগে, কারো অন্য মহিলার কণ্ঠ শোনা, গান-বাজনা শোনার মধ্যে তৃপ্তি মনে হয়। কারো সোনা-চান্দ সম্পদের পাহাড় গড়ার মধ্যে শান্তি মনে হয়, কারো সরকারী উচ্চ পদ লাভে শান্তি মনে হয়, কারো সাংসদ মন্ত্রী হওয়ায় বা উপদেষ্টা হওয়ায় শান্তি মনে হয়।

আল্লাহর স্মরণে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে আগ্রহী

চিন্তা করুন আদম সন্তানের কত মানুষ এমন হবে যে, আল্লাহর স্মরণে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে আগ্রহী, আর কত লোক এমন যে অভিশপ্ত ইবলীসের চক্রান্তে পড়ে আছে, আর এই হলো ঐ বাস্তব অবস্থা যা থেকে আল্লাহ আমাদেরকে আগেই সতর্ক করেছেন।

অর্থ: “শয়তান তাদের কাজকে তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল এবং তাদেরকে সৎ পথ অবলম্বনে বাধা দিয়েছিল, যদিও তারা ছিল বিচক্ষণ।” (সূরা আনকাবুত ৩৮)

দুনিয়ার প্রতি লোভ

দুনিয়া হাসিলের জন্য সমস্ত মানুষ নীতির ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ পরিশ্রমী না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ঘরে বসে থেকে কেউ আরাম দায়ক জীবন যাপন করতে পারবে না। কৃষক ফসল লাভের জন্য রাত-দিন মাঠে কাজ করে, ব্যবসায়ী লাভবান হওয়ার জন্য রাত-দিন দোকানে বসে থাকে।

দুনিয়ার মোহে পড়বেন না

চাকুরীজীবী বেতন লাভের জন্য মাসভর ডিউটি করতে থাকে, শ্রমিক পয়সা লাভের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠিন পরিশ্রম করতে থাকে, ছাত্র পরীক্ষায় পাস করার জন্য বছর ব্যাপী লেখা-পড়া করতে থাকে। মানব জীবনে ধরনের পরিশ্রম করা এতো স্বাভাবিক ব্যাপার যে, ব্যাপারে কেউ কাউকে সবক দেয়ারও প্রয়োজন হয় না।

শয়তানের ধোঁকা চক্রান্ত

কিন্তু দ্বীনের ব্যাপারে শয়তানের ধোঁকা ও চক্রান্ত পরিলক্ষিত হয় যে, মুসলমানদের বহু সংখ্যক লোক এমন আছে যারা মনে করে আমাদের জান্নাত ও জাহান্নামে যাওয়া আল্লাহ আগেই লিখে রেখেছেন, তাহলে আমল করার আর কি প্রযোজন।

আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব যখন চাইবেন তখন নামায পড়ব

আবার কোনো লোক এ চক্রান্তে পড়ে আছে যে, যখন আল্লাহ চাইবেন তখন নামায পড়ব। বা আপনি আমাদের জন্য দুআ করুন যেন আল্লাহ আমাদেরকে নামায পড়ার তাওফীক দেন। আবার কোনো কোনো লোক এ ধোকায় পড়ে আছে যে, আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু তিনি সবকিছু ক্ষমা করে দিবেন।

আমল ত্যাগ করা শয়তানের ধোঁকা

দুনিয়ার ব্যাপারে কঠোর পরিশ্রম এবং ধারাবাহিক প্রচেষ্টা আর দ্বীনের ব্যাপারে ভাগ্য আল্লাহর দয়ার দোহাই দিয়ে আমল ত্যাগ করা অভিশপ্ত শয়তানের ধোঁকা চক্রান্ত যে ব্যাপারে কুরআনুল কারীমে স্পষ্ট এরশাদ হয়েছে,

অর্থাৎ: “যদি কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তুমি আমাকে অবকাশ দাও তাহলে আমি অল্প কয়েকজন ব্যতীত তার বংশধরদের সমূলে নষ্ট করে ফেলবো”। (সূরা বনী ইসরাঈল ৬২)

জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না

নবী সাঃ এরশাদ করেন, যাকে মুসলমানদের দায়িত্বশীল করা হলো অথচ সে তা যথোপোযুক্তভাবে আদায় করলো না সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। (বুখারী ও মুসলিম)

সরকারী দায়িত্ব থেকে দূরে থাকতেন

রাসূলুল্লাহ সাঃ -এর এ বাণীর ফলে সালফে সালেহীনগণ সবসময় সরকারী দায় দায়িত্ব থেকে দূরে থাকতেন। আর যদি কাউকে এ দায়িত্ব পালন করতে হতো তাহলে সে আল্লাহ ভীতি, দ্বীনদারী ও আমানতদারীর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কায়েম করেছেন।

হযরত ওমর রাঃ এর শাসনকালে

ওমর ফারুক (রা)-এর যুগে হিমস শহরের গভর্নর ইয়াজ বিন গনম (রাঃ) মৃত্যু বরণ করেন, তখন ওমর ফারুক (রা) সাঈদ বিন আমের (রা) কে হিমস শহরের গভর্নর নিযুক্ত করেন। তাতে সাঈদ অপারগতা প্রকাশ করলেন, তখন ওমর জোর করেই তাকে দায়িত্ব দিলেন।

ফকির ও মিসকিন এর মাঝে বন্টন

গভর্নর থাকাকালে অল্পতুষ্টি ও দুনিয়া বিমুখতায় সাঈদের অবস্থা ছিল এই যে, মাসিক বেতন পাওয়ার পর স্বীয় পরিবারের খরচের পয়সা রেখে বাকী ফকীর মিসকীনদের মাঝে বন্টন করে দিতেন। স্ত্রী জিজ্ঞেস করত যে আপনি বাকী পয়সা কোথায় খরচ করেন? উত্তরে তিনি বলতেন আমি তা ঋণ দিয়ে দেই।

সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী

একদা ওমর ফারুক (রা) হিমসে আসলেন এবং দায়িত্বশীলদেরকে বললেন যে, এখানকার গরীব লোকদের লিষ্ট তৈরী কর, যাতে তাদের চাকুরীর ব্যবস্থা করা যায়। তাঁর নির্দেশক্রমে লিষ্ট তৈরী করা হলো, আর লিষ্টের প্রথমেই সাঈদ বিন আমের (রা)-এর নাম ছিল, ওমর (রা) জিজ্ঞেস করলেন কে এ সাঈদ?

টাকা নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে খরচ করো

লোকেরা বলল: আমাদের গভর্ণর। তার সংসারের খরচ মিটিয়ে যা থাকে সে তা গরীব দুঃখীদের মাঝে বন্টন করে দেয়। একথা শুনে ওমর (রা) আশ্চর্য হলেন এবং এক হাজার দীনারের একটি ব্যাগ সাঈদ (রা) এর নিকট এ নির্দেশ নামা দিয়ে পাঠালেন যে, এ টাকা নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে খরচ করো।

এর চেয়েও বড় ঘটনা ঘটেছে

দূত ব্যাগটি নিয়ে তাঁকে দিল, আর অনিচ্ছাসত্ত্বেই তিনি বলে ফেললেন: ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। স্ত্রী শুনে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে, আমীরুল মু'মিনীন ইন্তেকাল করেছেন নাকি? তিনি বললেন: না এর চেয়েও বড় ঘটনা ঘটেছে।

কিয়ামতের কোনো আলামত দেখা দিয়েছে

স্ত্রী জিজ্ঞেস করল: কি কিয়ামতের কোনো আলামত দেখা দিয়েছে? তিনি বললেন: না এর চেয়েও বড় ঘটনা ঘটেছে, স্ত্রী খুব গভীরভাবে জিজ্ঞেস করল: বলুন তো মূল ঘটনাটি কি?

দুনিয়ার জীবন ধোকার বস্তু

সাঈদ (রা) বললেন: দুনিয়া ফেতনা সহ আমার ঘরে প্রবেশ করেছে: স্ত্রী বলল: চিন্তিত হবেন না বরং তার কোনো সমাধান দেখুন। গভর্ণর ব্যাগটি একদিকে রেখে নামাযে দাড়িয়ে গেলেন সারা রাত আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি করলেন, সকাল বেলা দেখতে পেল ইসলামী সেনাদল ঘরের সামনে দিয়ে অতিক্রম করছে, তখন তিনি ব্যাগটি হাতে নিয়ে সমস্ত টাকা সৈন্যদের মাঝে বণ্টন করে দিলেন।

আব্দুল্লাহ বিন হুজাইফা ইয়ামান (রা)

হুযাইফা বিন ইয়ামান (রা)-কে মাদায়েনের গভর্ণর করে পাঠানো হলো, মাদায়েন বাসীকে একত্র করে আমীরুল মু'মিনীন ওমর (রা)-এর দেয়া ফরমান পড়ে শোনালেন। হে দেশবাসী! হুযাইফা বিন ইয়ামান (রা)-কে তোমাদের আমীর নিযুক্ত করা হলো।

তার নির্দেশ শোন এবং তার অনুসরণ করো। আর সে যা কিছু তোমাদের নিকট চায় তোমরা তা তাকে দাও। ফরমান পাঠ শেষ হলে, লোকেরা জিজ্ঞেস করলো আপনার কি কি প্রয়োজন তা আমাদেরকে বলুন আমরা আপনার জন্য তা ব্যবস্থা করছি।

হুযাইফা বলল: আমি যতদিন এখানে থাকবো ততদিন দু'বেলা খাবার আর আমার গাধার জন্য তার আহার। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি তোমাদের নিকট চাই না।

ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর ঘটনা

সরকারী উচ্চপদ থেকে পশ্চাদপসরণের যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ইমাম আবু হানিফা (রা) কায়েম করেছেন, ইসলামের ইতিহাস কিয়ামত পর্যন্ত তা স্মরণ করবে। আব্বাসীয় খলিফা আবু জা'ফর মানসূর তাকে ডেকে প্রধান বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে চাইলেন।

তখন তিনি বললেন: বিচারক এমন দুঃসাহসী হওয়া দরকার যে, বাদশা ও তার সন্তান এবং সিপাহসালারের বিরুদ্ধেও বিচার করতে পারবে। আর আমার মধ্যে এ হিম্মত নেই। একথা শুনে বাদশা তাকে জেলে পাঠিয়ে দিল। সেখানে তাকে বেত্রাঘাতও করা হয়েছিল কিন্তু তবুও তিনি এ পদ গ্রহণ করেন নি। এমন কি জেলেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জান্নাত ও জাহান্নামের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতো

এ ছিল ঐ বিশাল ব্যক্তিত্ব যারা জান্নাত ও জাহান্নামের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতো, যার ফলে ইবলীসের কোনো চক্রান্ত তাদের পা স্পর্শ করতে পারে নি। বর্তমান সমাজের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখুন যে, ইবলীস আদম সন্তানের জন্য সরকারী উচ্চপদ ও দায়িত্ব লাভের জন্য এত হন্য করে তুলেছে যে, এ ময়দানে অজ্ঞ মুর্খরা তো আছেই, বহু জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গও ইবলীসের এ চক্রান্তে পড়ে আছে। ইসলাম, গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, এবং জনসেবা করা সরকারী উচ্চপদ ব্যতীত কি সম্ভব নয়?

ইবলীস আদম সন্তানকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করার জন্য

চিন্তা করুন ঐ উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের আলোকে যে, ইবলীস আদম সন্তানকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করার জন্য কি কি ব্যবস্থা করে রেখেছে। এ পদ ও দায়িত্ব লাভের জন্য মিথ্যা নির্বাচন, ধোঁকাবাজি, চক্রান্ত, মিথ্যা অঙ্গিকার, ঝগড়া-বিবাদ, গালী- গালাজ, মিথ্যা অপবাদ, অভিসম্পাত, মানুষকে অনুগত বাধ্য রাখা, সাধারণ সমর্থনের বেঁচা-কেনা, ভ্রান্তি,

হত্যা লুটপাটের মত কবীরা গুনাহ

এমনকি হত্যা ও লুটপাটের মত কবীরা গুনাহ পর্যন্ত ইবলীস মানুষের জন্য অত্যন্ত সহজ ও আরামদায়ক করে তুলেছে, আর এ মানুষ ইবলীসদের চক্রান্তে পড়ে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার দূর্ভাগ্যকে অন্ধভাবে মেনে নিচ্ছে।

কুরআন মাজীদে আল্লাহর এরশাদ: অর্থ: “যারা মু'মিনদের মধ্যে অশ্লীতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি।” (সূরা নূর: ১৯)

ইবলীসের চক্রান্তে লিপ্ত আদম সন্তান

ইবলীস বে-হায়া ও অশ্লীল কাজ-কর্মকে আদম সন্তানের জন্য এত মনপুত করে তুলেছে যে, আল্লাহর এ স্পষ্ট সতর্কতার পরও ইবলীসের চক্রান্তে লিপ্ত আদম সন্তান বিভিন্নভাবে বে-হায়া ও অশ্লীলতা বিস্তারে নিমগ্ন আছে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম সুন্দর সুন্দর নামে অত্যন্ত সু-বিন্নস্ত ভাবে, সরকারী বে- সরকারী অফিস আদালত, সিনেমা, টিভি, রেডিও, দৈনিক, বিভিন্ন দৈনিকের বিশেষ কোড়পত্র, সাপ্তাহিক, দৈনিক, মাসিক, অত্যন্ত আনন্দ ও গৌরবের সাথে রাত দিন ভরে ইবলীসের অনুসরণে মহাব্যস্ত আছে,

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের গুরুত্ব

অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কিছু কিছু সৎ কাজের আদেশ অন্যায় কাজে বাধা দেয়ার পবিত্র দায়িত্বে নিয়োজিত সাপ্তাহিক, দৈনিক এবং মাসিকও প্রতিষ্ঠান চালানোর মিথ্যা অজুহাতে, মনভোলা ভাব নিয়ে বিনা বাক্য ব্যয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইবলীসের বে- হায়াপনাকে বিস্তারের খেদমত আনজাম দিচ্ছে।

আর তারা আল্লাহর আযাবের সতর্ক বাণীকে পিছনে ফেলে এবং শয়তানের মনোলোভা সুন্দর দলীল, আশা, আকাঙ্খায় নিমগ্ন আছে, যা তাদেরকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত কারী এবং জাহান্নামের হকদার কারী করে তুলেছে।

এই দুনিয়ার জীবন নিছক খেল তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়

অতএব হে মরদে মু'মিন হুশিয়ার! দুনিয়া সরাসরি ধোঁকা চক্রান্তের স্থান। আল্লাহর বাণী: অর্থ: “আর পার্থিব জীবন প্রতারণার সম্পদ ব্যতীত আর কিছুই নয়।” (সূরা আলে ইমরান: ১৮৫)

দুনিয়ার তিক্ততা হলো আখিরাতের মিষ্টতা

এখানের আসল রূপ সেটা নয় যা বাহ্যত দেখা যাচ্ছে। দুনিয়ার জীবন যাপন এ রঙমহলের পর্দার অন্তরাল অত্যন্ত তিক্ততা ও দুর্দশা এবং পরীক্ষা রয়েছে। দুনিয়ার নায্য নিআমত ও মান-সম্মান নামক পর্দার পিছন অত্যন্ত লাঞ্ছনাময় এবং লজ্জাস্কর।

রাসূলুল্লাহ সাঃ এর এ বাণী দুনিয়ার মিষ্টতা পরকালের তিক্ততা, আর দুনিয়ার তিক্ততা পরকালের মিষ্টতা।” (ত্বাবারানী ও আহমদ)

যাকাত প্রদানের ফলে কি হয়

যাকাতহীন সোনা-চাঁদীর স্তুপ সোনা-চাঁদী নয় বরং জলন্ত আগুন,

সুদ, ঘুষ, জুয়া, চুরি, ডাকাতি, অন্যান্য হারাম মাধ্যম সমূহের অর্জিত সম্পদ, সম্পদ নয় বরং আগুনের সাপ বিচ্ছু।

মিথ্যা, চাল-চক্রান্তের মাধ্যমে অর্জিত পদমর্যাদা, সম্মান, গৌরব হবে আগুনের জিঞ্জির।

বে-হায়াপনার মাধ্যমে বিস্তার কৃত ব্যবসা, ব্যবসা নয় বরং কঠিন আযাব।

পার্থিব জীবন ছলনাময়

হে বনী আদম হুশিয়ার! এ দুনিয়া একটি ক্ষণস্থায়ী ঠিকানা মাত্র, যেখানে তোমাকে পরীক্ষা করা উদ্দেশ্য, তোমার মূল আবাস জান্নাত। যে দিকে তোমাকে খুব দ্রুত যেতে হবেতোমার চিরস্থায়ী শত্রু অভিশপ্ত ইবলীস, সে চায় যেভাবে তোমার পিতা-মাতা আদম ও হাওয়াকে ধোঁকা ও চক্রান্তের মাধ্যমে জান্নাত থেকে বের করেছে, এমনিভাবে তোমাকেও দুনিয়ার চাল চক্রান্তে ফেলে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করতে।

মানুষের প্রতি তার উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ: অর্থ: “হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপদগামী করলেন, তজ্জন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপ কর্মকে অবশ্যই শোভনীয় করে তুলবো এবং আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করেই ছাড়বো।” (সূরা হিজর-৩৯)

শয়তানের সমস্ত ওয়াদা মিথ্যা এবং বাতিল

অতএব হে মরদে মু'মিন হুশিয়ার! খবরদার! অভিশপ্ত শয়তানের সমস্ত ওয়াদা মিথ্যা এবং বাতিল, তার ধোঁকায় কখনো পড়বে না। যেই তার ধোঁকায় পড়বে তাকে সে তার সাথে জাহান্নামে নিয়ে যাবে: অর্থ: “স্মরণ রেখ এটা স্পষ্ট ক্ষতি।” (সূরা যুমার-১৫) 

পোস্ট ট্যাগঃ

আদম আঃ এর কবর কোথায়
আদম আঃ এর কবর কোন দেশে
আদম (আঃ) এর কবর কোথায়
আদম আঃ এর কবর

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url