জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম

জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম

জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম

জান্নাতি ২০ সাহাবীর নামসহ জান্নাতী লাভের ক্ষেত্রে যে কি কষ্ট সহ্য করে জান্নাতীরা জান্নাত লাভ করে তার বিষয়ে আজকের এই পোস্টে জানতে পারবেন।

জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম

জান্নাত প্রত্যাশীর ঈমানী দৃঢ়তার অপূর্ব নমুনা

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “মদীনায় উপস্থিত না থাকার কারণে আমার চাচা আনাস ইবনে নাযর রাদিয়াল্লাহু আনহু বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এ কারণে তিনি বলেন, 'হে রাসূলুল্লাহ, আমি কুফর ও ইসলামের মধ্যে প্রথম যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পারিনি। 

যদি আবার মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ হয় ও আল্লাহ আমাকে তাতে অংশ গ্রহণ করার তওফিক দান করেন তাহলে আমি কি করি তা আল্লাহ দেখে নেবেন। সুতরাং যখন ওহুদের যুদ্ধ হয় ও মুসলমানরা পলায়ন করে তখন আনাস ইবনে নাযর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 'হে আল্লাহ, মুসলমানরা আজ যে কাজ করে বসেছে আমি তার জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আর মুশরিকরা যা করছে তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই।' 

তারপর তিনি আরো অগ্রসর হলে সাদ ইবনে মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হয়। তিনি তাঁকে বলেন, 'হে সাদ ইবনে মুয়ায, সাহায্যকারী আল্লাহর কসম, আমি জান্নাতের দিকে যাচ্ছি, আমি ওহুদের ওপর থেকে জান্নাতের সুগন্ধ পাচ্ছি।

সাদ ইবনে মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, 'হে রাসূলুল্লাহ! আনাস ইবনে নাযর রাদিয়াল্লাহু আনহু যে কাজ করেছে আমি তা করতে পারতাম না।' এই হাদীসের বর্ণনাকারী আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, 'আমি আমার চাচার শরীরে আশির অধিক অস্ত্রাঘাত দেখেছি। তার মধ্যে কিছু তলোয়ারের আঘাত, কিছু বর্শার আঘাত আর কিছু তীরের আঘাত ছিল। 

তিনি মুশরিকদের হাতে শহীদ হয়েছেন এবং তাঁকে এমন নির্দয়ভাবে মারা হয়েছে যে, তাঁকে চেনা যাচ্ছিল না। তাঁর বোন তাঁর হাতের আঙ্গুল দেখে তাকে চিনতে পারেন। আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘সূরা আহযাবের নিম্নোক্ত আয়াতটি এইসব ব্যক্তিদের জন্যই প্রযোজ্য। 

আয়াতটি হলো, এই মুমিনদের একদল লোক আল্লাহর কাছে তাদের ওয়াদা সত্য বলে প্রমাণ করে দেখিয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু লোক তাদের ওয়াদা পূরণ করে ফেলেছে আর কিছু লোক ওয়াদা পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তারা তাদের প্রতিজ্ঞা সামান্যতমও পরিবর্তন করেনি।” [আল-আহযাব : ২৩] (বোখারী, মুসলিম ও নাসাঈ)

নেতাকে সব সময় আগেই থাকতে হয়

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সঙ্গী সাহাবাগণ মদীনা থেকে রওয়ানা হয়ে মুশরিকদের আগেই বদরে গিয়ে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন মুজাহিদ সঙ্গীদের বললেন, 'তোমাদের কেউ যেন আগে না যায়, আমি সকলের আগে থাকবো আর সবাই আমার পিছনে থাকবে।' 

তারপর মুশরিকরা এগিয়ে যখন ইসলামী সৈন্যদলের নিকটে এলো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘জান্নাত লাভ করার জন্যে এগিয়ে যাও যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আকাশ ও পৃথিবীর সমান।' উমায়ের ইবনে হামাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “জান্নাতের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কি আকাশ ও পৃথিবীর সমান?' হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'হ্যাঁ।' 

তিনি বললেন, 'বাঃ বাঃ! হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেন, 'তুমি বাঃ বাঃ কেন বলছো?' তিনি বললেন, 'আমি কেবল এ জন্য বাঃ বাঃ বলছি যে, আমার জান্নাতে যাবার আকাঙ্খা আছে।'

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'তুমি জান্নাতে যাবে। তারপর তিনি নিজের ঝুলি থেকে কিছু খেজুর বের করে তা খেতে শুরু করেন। খাওয়া শুরু করেই তাঁর মনে চিন্তার উদয় হয়, খেতে তো অনেক সময় লেগে যাবে। 

যুদ্ধ যখন শুরু হয়ে গেছে তখন এত সময় পর্যন্ত বেঁচে থেকে কি হবে? তারপর তিনি খেজুর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে দিলেন। যুদ্ধে তিনি অনেককে নিহত করে শেষ পর্যস্ত শাহাদাত লাভ করেন। (আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট হোন)। (মুসলিম)

  • ব্যাখ্যা: এই হাদীস থেকে জানা গেল, বদরের যুদ্ধে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি আরামের সঙ্গে ঘরে বসে বিজয় ও সাহায্যের জন্যে মাত্র দোয়া করছিলেন, আর সাহাবাগণ যুদ্ধ করছিলেন, বিষয়টি এমন ছিল না। বরং তিনি আপন সৈন্য বাহিনীদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এবং সকলের আগে ছিলেন।

বার বার শাহাদাত লাভের তামান্না

হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “যখন আমার পিতা আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ওহুদের যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, 'হে জাবির, শহীদ হয়ে যাবার পর আল্লাহ তোমার পিতাকে যা বলেছেন, তা কি আমি তোমাকে বলব না?' 'আমি বলি, 'হ্যাঁ, বলুন।' 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'নবী ছাড়া আল্লাহতায়ালা সর্বদা পর্দার আড়াল থেকে কথা বলেন, কিন্তু তোমার পিতার সঙ্গে তিনি সামনাসামনি কথাবার্তা বলেছেন এবং বলছেন, 'হে আবদুল্লাহ, তোমার মন যা চায় তাই চাও, আমি তোমার আকাঙ্খা পূরণ করে দেবো।'

তোমার পিতা বলে, ‘হে আমার প্রভু, আমার আকাঙ্খা কেবলমাত্র এই যে, আমি যেনো দুনিয়াতে গিয়ে আপনার দ্বীনের পথে আবারও নিহত হতে পারি সে জন্য আমাকে দ্বিতীয় বার জীবন দান করুন। আল্লাহতায়ালা জবাব দেন, 'আমার পক্ষ থেকে একথা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে, যে আমার কাছে ফিরে আসবে সে আর দ্বিতীয় বার যাবে না।'

তখন তোমার পিতা বলে, 'হে আমার প্রভু, আমার এই আকাঙ্খা আমার জীবিত সঙ্গীদের কাছে পৌঁছে দিন।' তখন আল্লাহতায়ালা সূরা আল ইমরানের ১৬৯-১৭০ নম্বর আয়াত নাযিল করেন। তাতে তিনি বলেন, 'যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে মৃত মনে করো না, বরং তাঁরা জীবিত। 

তাঁরা তাঁদের প্রভুর কাছে আছে। তাঁরা পুরস্কার উপভোগ করছে। আল্লাহ তাঁদের ওপর যে অনুগ্রহ করেছেন তাতে তাঁরা সন্তুষ্ট। তাঁদের যে সব সঙ্গী এখনো দুনিয়ায় আছে তাঁরাও এ চিন্তা করে আনন্দ পাচ্ছে যে, তাঁরাও জীবনপণ করার ফলে এ রকম পুরস্কারই পাবে।” (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)

  • ব্যাখ্যা: এটা ওহুদের যুদ্ধ সম্পর্কিত হাদীস। সূরা আলে ইমরানে ওহুদের যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এখানে আয়াত নং ১৬৯-১৭০ সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আয়াত সমূহের অর্থ হলো, যেসব লোক আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদের মৃত মনে করো না। 
  • তারা মরেনি। তারা আপন প্রভুর কাছে জীবিত আছে এবং পুরস্কার উপভোগ করছে। আল্লাহ তাদের উপর যে অনুগ্রহ করেছেন তাতে তারা সন্তুষ্ট। তাদের যে সব সঙ্গী-সাথী এখনও পর্যন্ত দুনিয়াতে আছে, তাঁরাও এ চিন্তা করে আনন্দ পাচ্ছে যে, জীবনপণ করার ফলে আল্লাহর এ রকম পুরস্কার তারাও পাবে।

আল্লাহ বান্দা উভয়েই যখন পরষ্পরের ওপর সন্তুষ্ট

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “কিছু লোক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বলে, 'আমাদের সঙ্গে এমন কিছু ব্যক্তিকে পাঠান যারা আমাদের কোরআন আর সুন্নাহর শিক্ষা দান করবেন। সুতরাং তিনি আনসারদের মধ্য থেকে 'সত্তর' জন কোরআনের আলিমকে তাদের সঙ্গে পাঠিয়ে দেন। 

তাঁদের মধ্যে আমার মামা হারামও একজন ছিলেন। এই আলিমগণ মদীনার মসজিদে নববীতে বসে রাতে কোরআন পড়তেন ও শিখতেন। দিনের বেলা তাঁরা পানি এনে মসজিদে নববীতে রাখতেন আর জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে আনতেন। তাঁরা সেই কাঠ বিক্রী করে যে পয়সা পেতেন তা দিয়ে আহলে সুফ্ফা ও অন্যান্য গরীবদের জন্য খাদ্য কিনে আনতেন।

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবেদনকারীদের শিক্ষা ও অনুশীলন দান করার জন্য এদের মধ্য থেকে সত্তরজনকে তাদের সাথে পাঠিয়ে দিলেন। তারা কোরআনের এই সত্তরজন আলিমকে রাস্তায় হত্যা করে। যখন তাঁদের হত্যা করা হচ্ছিল তখন তাঁরা এ দোয়া করছিলেন, 

'হে আল্লাহ, আপনি আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের নবীর কাছে এ খবর পৌঁছে দিন, আমরা আমাদের প্রভুর সঙ্গে গিয়ে মিলিত হয়েছি এবং আমাদের প্রভু আমাদের উপর সন্তুষ্ট আর আমরাও আমাদের প্রভুর উপর সন্তুষ্ট।' বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন, ‘এক ব্যক্তি হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর মামা হারাম রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এসে পিছন থেকে বর্শা মারে। 

বর্শাটি পিঠ দিয়ে ঢুকে বুক দিয়ে বেরিয়ে যায়। তখন তিনি বলেন, 'কাবার প্রভুর কসম, আমি সফলতা লাভ করেছি।'

ওহীর মাধ্যমে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় বসে তা জানতে পারেন এবং সবাইকে বলেন, 'তোমাদের যেসব ভাইকে শিক্ষা প্রচারের জন্য পাঠানো হয়েছিল তাদেরকে রাস্তায় মেরে ফেলা হয়েছে। তারা মরার সময় এ কথা বলে গেছে

‘হে আল্লাহ, আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের নবীর কাছে এই খবর পৌঁছে দিন, আমরা আমাদের প্রভুর সঙ্গে গিয়ে মিলিত হয়েছি আর আমাদের প্রভু আমাদের কোরবানীতে সন্তুষ্ট এবং আমরাও আমাদের প্রভুর কাছ থেকে পুরস্কার লাভ করে সন্তুষ্ট।” (বোখারী )

  • ব্যাখ্যা: যে সত্তর জন আনসারীর কথা এ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা দিনের বেলা আহলে সুফ্ফা ও অন্যান্য গরীবদের জন্য খাদ্য ও পানির ব্যবস্থা করতেন আর রাতে কোরআন পড়তেন ও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শিক্ষা করতেন। 
  • এখানে মনে রাখা দরকার, তাঁরা কেবল কোরআনের শব্দ পড়ে ক্ষান্ত হতেন না বরং তারা এর অর্থ অনুধাবন করতেন এবং সে মত নিজেদের জীবনকে গড়ার চিন্তা করতেন। সে সময়ের পড়ার অর্থ আমাদের সময়ের পড়ার অর্থ থেকে পৃথক ছিল।
সংগৃহীতঃ যাদে রাহ পথের সম্বল 
আল্লামা জলীল আহসান নদভী

পোস্ট ট্যাগঃ

জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম
জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম মহিলা
২০ জন সাহাবীর নাম
১০ জন জান্নাতি সাহাবী নাম
জান্নাতি দশজন সাহাবীর নাম
জান্নাতী সাহাবীদের নাম

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url